রাজশাহীর হাইটেক পার্কে সিনেপ্লেক্স, ব্যয় বাড়ল প্রায় ১০০ কোটি টাকা

রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ১২

রাজশাহী শহরে এখন কোনো সিনেমা হল নেই। সবশেষ ‘উপহার’ সিনেমা হলটি ভেঙে ফেলা হয় দুবছর আগে। সেই আক্ষেপ থেকে এবার দুর্গাপূজায় শহরের একটি পূজামণ্ডপ সাজানো হয়েছিল সিনেমা হলের আদলে।

অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর এই আকাঙ্ক্ষার কথা শুনলো। এই প্রকল্পে একটি অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স যুক্ত করা হয়েছে। মূলত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানোর জন্য সিনেপ্লেক্সটি করা হবে। দেখানো হবে সিনেমাও।

হাইটেক পার্কে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন প্রায় ১৪ হাজার কর্মী। তাঁরাও বিনোদনের জন্য যাবেন সিনেপ্লেক্সে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও যেতে পারবেন সেখানে। এই সিনেপ্লেক্সসহ আরও কিছু কাজ যুক্ত হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের নতুন সংযোজনের ডিপিপিও পাস হয়েছে। এখন তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ দিলেই নতুন কাজগুলো শুরু করতে পারবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। 

রাজশাহীতে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ এবং কর্মসংস্থার সৃষ্টির লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। শহরের পশ্চিম প্রান্তে নবীনগর মৌজায় ৩১ একর জমির ওপর এই হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। 

প্রকল্পের কাজ চলাকালে আসে করোনা মহামারি। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। তখন ব্যয় বাড়ে ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুনেও শেষ না হওয়ায় মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। আর এই সময়ে আবারও আরেক দফা ৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ফলে দুই দফায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। এখন প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৩৫ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হওয়ায় ব্যয় বাড়ছে। আগে সিনেপ্লেক্স ও মিলনায়তন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল না। তা ছাড়া প্রকল্প এলাকা ভরাট করার পর কোর্ট এবং আরআরএফ এলাকার পানি নামছিল না। সে জন্য ড্রেন নির্মাণ করতে হয়েছে। আগে পার্কের ভেতর ১ হাজার ৩০০ মিটার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও পরে আরও ৫০০ মিটার বাড়ানো হয়েছে। আগে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের কথা না থাকলেও পরে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন মাটির নিচে দেওয়া, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম ও মসজিদ নির্মাণসহ নানা কাজের জন্য ব্যয় বেড়ে গেছে। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক একেএম ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিনেপ্লেক্সসহ আরও বেশকিছু বিষয় যুক্ত করে আমরা পরিকল্পনা কমিশনে দিয়েছিলাম। সেখানে ডিপিপি পাস হয়েছে। এখন আইসিটি মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ দিলেই আমরা নতুন কাজগুলো শুরু করতে পারব। প্রকল্পের মেয়াদ এখন ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আশা করছি, আমরা এই সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ করতে পারব। 

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এরপর নবীনগরে থাকা ৭৪২টি পরিবারকে পুনর্বাসন করতেই এক বছর সময় চলে যায়। সব মিলিয়ে কাজ শুরু করতেই সময় লাগে দুবছর। করোনার ধাক্কায় কাজ বন্ধ ছিল তিন মাস। হাইটেক পার্কের প্রধান দুই অংশের মধ্যে ‘শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’ এর কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ১০টি প্রতিষ্ঠান স্পেস বরাদ্দ নিয়ে কাজও শুরু করেছে। ‘সজীব ওয়াজেদ জয় সিলিকন টাওয়ার’-এর নির্মাণকাজও শেষের দিকে। সব মিলিয়ে এখন প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত