
বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তর এখন আর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ভিত্তিমূলক রাষ্ট্রীয় রূপান্তর, যার কেন্দ্রে থাকবে ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার। দেশে বহু ডিজিটাল সিস্টেম থাকলেও ইন্টারঅপারেবিলিটির...
৩ ঘণ্টা আগে
স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি দেশে রিয়েলমি সি৮৫ উন্মোচন করেছে। এই ডিভাইসটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী ৭০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের আলট্রা ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সক্ষমতা (যা ১০ ওয়াট রিভার্স চার্জিংও সাপোর্ট করে)।
৯ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও এটি হয়ে উঠছে নতুন ভরসা। বিশেষ করে জেন-জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে এআই ব্যবহার করে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
১ দিন আগে
অনলাইন ক্লাস, গাইডবুক আর মক টেস্টের পরেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত অনুশীলনের অভাবে পিছিয়ে পড়েন। পড়া থাকলেও কোথায় দুর্বলতা, কীভাবে নিজের অগ্রগতি যাচাই করবেন—সে প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় মেলে না।
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ডিজিটাল রূপান্তর মানে শুধু অ্যাপ নয়, রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া।
রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বুধবার ‘বিল্ডিং ট্রাস্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি থ্রু ডেটা গভর্ন্যান্স’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (ইডিজিই প্রকল্প) এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তর এখন আর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ভিত্তিমূলক রাষ্ট্রীয় রূপান্তর, যার কেন্দ্রে থাকবে ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার। দেশে বহু ডিজিটাল সিস্টেম থাকলেও ইন্টারঅপারেবিলিটির অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
তৈয়্যব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে সাইবার সেফটি, ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা ও জাতীয় ডেটা গভর্ন্যান্স—এই তিন আইনি ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে, যা ভবিষ্যৎ ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের (ডিপিআই) মূল স্তম্ভ হবে। ভবিষ্যতে প্রতিটি নাগরিকের একটি ডিজিটাল ডেটা ওয়ালেট থাকবে; যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং নাগরিকের সম্মতিতেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডেটা ব্যবহার করা যাবে।
সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, কার্যকর ডেটা গভর্ন্যান্স কেবল নীতিমালা প্রণয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আন্তখাত সমন্বয় এবং সুস্পষ্ট জবাবদিহি কাঠামো। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ডিজিটাল সেবার পরিসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীল ডেটা ব্যবহার, নিরাপত্তা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা জনআস্থা অর্জন ও টেকসই ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সম্মেলনে তিনটি আলাদা অধিবেশনে ডেটা সুরক্ষা নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাংলাদেশের ডেটা ব্যবস্থাপনার তুলনা এবং ডেটা ব্যবস্থাপনায় পেশাদার হিসাববিদদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (আইএফএসি) সভাপতি জ্যঁ বোকু, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চলের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেসমেসহ সরকারি নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, পেশাদার হিসাববিদ, আইন ও প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ডিজিটাল রূপান্তর মানে শুধু অ্যাপ নয়, রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া।
রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বুধবার ‘বিল্ডিং ট্রাস্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি থ্রু ডেটা গভর্ন্যান্স’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (ইডিজিই প্রকল্প) এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তর এখন আর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ভিত্তিমূলক রাষ্ট্রীয় রূপান্তর, যার কেন্দ্রে থাকবে ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার। দেশে বহু ডিজিটাল সিস্টেম থাকলেও ইন্টারঅপারেবিলিটির অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
তৈয়্যব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে সাইবার সেফটি, ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা ও জাতীয় ডেটা গভর্ন্যান্স—এই তিন আইনি ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে, যা ভবিষ্যৎ ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের (ডিপিআই) মূল স্তম্ভ হবে। ভবিষ্যতে প্রতিটি নাগরিকের একটি ডিজিটাল ডেটা ওয়ালেট থাকবে; যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং নাগরিকের সম্মতিতেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডেটা ব্যবহার করা যাবে।
সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, কার্যকর ডেটা গভর্ন্যান্স কেবল নীতিমালা প্রণয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আন্তখাত সমন্বয় এবং সুস্পষ্ট জবাবদিহি কাঠামো। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ডিজিটাল সেবার পরিসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীল ডেটা ব্যবহার, নিরাপত্তা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা জনআস্থা অর্জন ও টেকসই ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সম্মেলনে তিনটি আলাদা অধিবেশনে ডেটা সুরক্ষা নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাংলাদেশের ডেটা ব্যবস্থাপনার তুলনা এবং ডেটা ব্যবস্থাপনায় পেশাদার হিসাববিদদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (আইএফএসি) সভাপতি জ্যঁ বোকু, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চলের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেসমেসহ সরকারি নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, পেশাদার হিসাববিদ, আইন ও প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি দেশে রিয়েলমি সি৮৫ উন্মোচন করেছে। এই ডিভাইসটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী ৭০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের আলট্রা ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সক্ষমতা (যা ১০ ওয়াট রিভার্স চার্জিংও সাপোর্ট করে)।
৯ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও এটি হয়ে উঠছে নতুন ভরসা। বিশেষ করে জেন-জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে এআই ব্যবহার করে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
১ দিন আগে
অনলাইন ক্লাস, গাইডবুক আর মক টেস্টের পরেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত অনুশীলনের অভাবে পিছিয়ে পড়েন। পড়া থাকলেও কোথায় দুর্বলতা, কীভাবে নিজের অগ্রগতি যাচাই করবেন—সে প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় মেলে না।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি দেশে রিয়েলমি সি৮৫ উন্মোচন করেছে। এই ডিভাইসটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী ৭০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের আলট্রা ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সক্ষমতা (যা ১০ ওয়াট রিভার্স চার্জিংও সাপোর্ট করে)।
ফোনটিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বিজয়ী ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট প্রোটেকশন স্ট্যান্ডার্ড—আইপি ৬৯ প্রো রেটিং রয়েছে, যা এটিকে ৬০ দিন পর্যন্ত পানির নিচে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
এতে রয়েছে ৬.৮ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট সুপার-স্মুথ ১৪৪ হার্জ এবং পিক ব্রাইটনেস ১,২০০ নিট।
ডিভাইসটিতে স্ন্যাপড্রাগন ৬৮৫ ফোরজি প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ফটোগ্রাফির জন্য পেছনে ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা এবং সামনে ৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা রয়েছে।
রিয়েলমি সি৮৫ সোয়ান ব্ল্যাক ও কিংফিশার ব্লু রঙে দুইটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে: ৬ জিবি + ১২৮ জিবি: মূল্য ১৮,৯৯৯ টাকা। ৮ জিবি + ১২৮ জিবি: মূল্য ২০,৯৯৯ টাকা।

স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি দেশে রিয়েলমি সি৮৫ উন্মোচন করেছে। এই ডিভাইসটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী ৭০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের আলট্রা ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সক্ষমতা (যা ১০ ওয়াট রিভার্স চার্জিংও সাপোর্ট করে)।
ফোনটিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বিজয়ী ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট প্রোটেকশন স্ট্যান্ডার্ড—আইপি ৬৯ প্রো রেটিং রয়েছে, যা এটিকে ৬০ দিন পর্যন্ত পানির নিচে টিকে থাকতে সাহায্য করে।
এতে রয়েছে ৬.৮ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট সুপার-স্মুথ ১৪৪ হার্জ এবং পিক ব্রাইটনেস ১,২০০ নিট।
ডিভাইসটিতে স্ন্যাপড্রাগন ৬৮৫ ফোরজি প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ফটোগ্রাফির জন্য পেছনে ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা এবং সামনে ৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা রয়েছে।
রিয়েলমি সি৮৫ সোয়ান ব্ল্যাক ও কিংফিশার ব্লু রঙে দুইটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে: ৬ জিবি + ১২৮ জিবি: মূল্য ১৮,৯৯৯ টাকা। ৮ জিবি + ১২৮ জিবি: মূল্য ২০,৯৯৯ টাকা।

তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তর এখন আর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ভিত্তিমূলক রাষ্ট্রীয় রূপান্তর, যার কেন্দ্রে থাকবে ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার। দেশে বহু ডিজিটাল সিস্টেম থাকলেও ইন্টারঅপারেবিলিটির...
৩ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও এটি হয়ে উঠছে নতুন ভরসা। বিশেষ করে জেন-জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে এআই ব্যবহার করে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
১ দিন আগে
অনলাইন ক্লাস, গাইডবুক আর মক টেস্টের পরেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত অনুশীলনের অভাবে পিছিয়ে পড়েন। পড়া থাকলেও কোথায় দুর্বলতা, কীভাবে নিজের অগ্রগতি যাচাই করবেন—সে প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় মেলে না।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও এটি হয়ে উঠছে নতুন ভরসা। বিশেষ করে জেন-জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে এআই ব্যবহার করে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এরই একটি উদাহরণ কানাডার অন্টারিওভিত্তিক একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা তাকি ওং।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ২৭ বছর বয়সী তাকি ওং ব্যস্ত পেশাজীবীদের জন্য এআই টুল তৈরি করেন। তবে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ পরিচালনায়ও তিনি এআইয়ের ওপর ভরসা রাখেন। গুগলের জেমিনি এআই মডেলকে তিনি নিজের ‘২৪ ঘণ্টার ব্যক্তিগত আর্থিক উপদেষ্টা’ বলে মনে করেন।
ওং জানান, প্রতি মাসে তিনি নিজের ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য খরচের হিসাব নিজে হাতে এআইয়ে ইনপুট দেন। এরপর এআই সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁকে জানায় কোথায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হচ্ছে।
ওংয়ের ভাষায়, এআই কখনো বলে দেয়—‘তুমি হয়তো রেস্তোরাঁয় বেশি খাচ্ছ’, আবার কখনো সতর্ক করে—‘এই সাবস্ক্রিপশনগুলো অপ্রয়োজনীয়।’ এই ধরনের বিশ্লেষণের ফলেই তিনি বাইরে খাওয়ার খরচ মাসে ৬০০ ডলার থেকে কমিয়ে ২০০ ডলারে নামাতে পেরেছেন। একইভাবে টিভি ও অন্যান্য সাবস্ক্রিপশনের খরচ ৩০০ ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ ডলারে।
তবে সুবিধার পাশাপাশি সতর্কতাও অবলম্বন করছেন তিনি। ওং স্পষ্ট করে বলেন, তিনি কখনোই এআইয়ের সঙ্গে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করেন না। শুধুমাত্র মোট খরচের সংখ্যা বা সামগ্রিক তথ্যই তিনি শেয়ার করেন, যাতে ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত থাকে।
এই প্রবণতা শুধু ওংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহারকারী আমেরিকানদের একটি বড় অংশ আর্থিক পরামর্শ নিতে এআইয়ের ওপর নির্ভর করছে। এঁদের মধ্যে জেন জি ও মিলেনিয়ালদের হার ৮২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যেও প্রায় তিনজনের একজন নিয়মিত ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় এআই ব্যবহার করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই সময় বাঁচাতে ও খরচের দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করতে সহায়ক হলেও সব পরামর্শ যাচাই করে নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও এটি হয়ে উঠছে নতুন ভরসা। বিশেষ করে জেন-জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে এআই ব্যবহার করে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এরই একটি উদাহরণ কানাডার অন্টারিওভিত্তিক একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা তাকি ওং।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ২৭ বছর বয়সী তাকি ওং ব্যস্ত পেশাজীবীদের জন্য এআই টুল তৈরি করেন। তবে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ পরিচালনায়ও তিনি এআইয়ের ওপর ভরসা রাখেন। গুগলের জেমিনি এআই মডেলকে তিনি নিজের ‘২৪ ঘণ্টার ব্যক্তিগত আর্থিক উপদেষ্টা’ বলে মনে করেন।
ওং জানান, প্রতি মাসে তিনি নিজের ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য খরচের হিসাব নিজে হাতে এআইয়ে ইনপুট দেন। এরপর এআই সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁকে জানায় কোথায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হচ্ছে।
ওংয়ের ভাষায়, এআই কখনো বলে দেয়—‘তুমি হয়তো রেস্তোরাঁয় বেশি খাচ্ছ’, আবার কখনো সতর্ক করে—‘এই সাবস্ক্রিপশনগুলো অপ্রয়োজনীয়।’ এই ধরনের বিশ্লেষণের ফলেই তিনি বাইরে খাওয়ার খরচ মাসে ৬০০ ডলার থেকে কমিয়ে ২০০ ডলারে নামাতে পেরেছেন। একইভাবে টিভি ও অন্যান্য সাবস্ক্রিপশনের খরচ ৩০০ ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ ডলারে।
তবে সুবিধার পাশাপাশি সতর্কতাও অবলম্বন করছেন তিনি। ওং স্পষ্ট করে বলেন, তিনি কখনোই এআইয়ের সঙ্গে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করেন না। শুধুমাত্র মোট খরচের সংখ্যা বা সামগ্রিক তথ্যই তিনি শেয়ার করেন, যাতে ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত থাকে।
এই প্রবণতা শুধু ওংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহারকারী আমেরিকানদের একটি বড় অংশ আর্থিক পরামর্শ নিতে এআইয়ের ওপর নির্ভর করছে। এঁদের মধ্যে জেন জি ও মিলেনিয়ালদের হার ৮২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যেও প্রায় তিনজনের একজন নিয়মিত ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় এআই ব্যবহার করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই সময় বাঁচাতে ও খরচের দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করতে সহায়ক হলেও সব পরামর্শ যাচাই করে নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তর এখন আর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ভিত্তিমূলক রাষ্ট্রীয় রূপান্তর, যার কেন্দ্রে থাকবে ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার। দেশে বহু ডিজিটাল সিস্টেম থাকলেও ইন্টারঅপারেবিলিটির...
৩ ঘণ্টা আগে
স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি দেশে রিয়েলমি সি৮৫ উন্মোচন করেছে। এই ডিভাইসটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী ৭০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের আলট্রা ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সক্ষমতা (যা ১০ ওয়াট রিভার্স চার্জিংও সাপোর্ট করে)।
৯ ঘণ্টা আগে
অনলাইন ক্লাস, গাইডবুক আর মক টেস্টের পরেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত অনুশীলনের অভাবে পিছিয়ে পড়েন। পড়া থাকলেও কোথায় দুর্বলতা, কীভাবে নিজের অগ্রগতি যাচাই করবেন—সে প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় মেলে না।
২ দিন আগে
অনলাইন ক্লাস, গাইডবুক আর মক টেস্টের পরেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত অনুশীলনের অভাবে পিছিয়ে পড়েন। পড়া থাকলেও কোথায় দুর্বলতা, কীভাবে নিজের অগ্রগতি যাচাই করবেন—সে প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় মেলে না। এই প্রেক্ষাপটে ‘চর্চা’ নিজেকে উপস্থাপন করছে একটি অনুশীলনকেন্দ্রিক লার্নিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। দেশের এডটেক খাতে এই উদ্যোগের ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলেছেন চর্চার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান উল ইসলাম সানজিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আশিকুর রহমান।
আশিকুর রহমান

চর্চার শুরুটা কীভাবে?
চর্চার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন আমি নিজেই ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রতিদিন ক্লাস, লেকচার, গাইডবুক আর প্রশ্নব্যাংকের চাপ—সব মিলিয়ে নিজের মতো করে প্র্যাকটিস করার সময় খুব কম পাওয়া যেত। এই জায়গায় সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। ভাবলাম, যদি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম থাকে, যেখানে গৎবাঁধা নিয়মে আটকে না থেকে নিয়মিত ও সহজভাবে প্র্যাকটিস করা যায়, তাহলে শেখাটা অনেক বেশি আনন্দের হতে পারে। সেই ভাবনা থেকে চর্চার জন্ম। রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির পর কাজটি আরও গতি পায়। ক্লাসরুম থেকেই আমার কো-ফাউন্ডার ও সিএমও নাফিসের সঙ্গে পরিচয়। পরে গালিব কো-ফাউন্ডার ও সিওও হিসেবে যুক্ত হন। শুরু থেকেই মার্কেটিং ও অপারেশনের দায়িত্ব মূলত তাঁরা দুজনই সামলাচ্ছেন।
চর্চা অ্যাপ তৈরির পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনা আর পরীক্ষাকে প্রায় সব সময় ভয়ের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অথচ শেখার প্রক্রিয়াটা হওয়া উচিত আনন্দদায়ক, যেখানে একজন শিক্ষার্থী সমস্যা সমাধান করতে করতেই শিখবেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, পড়ার উপকরণ অনেক থাকলেও নিয়মিত প্র্যাকটিসের সুযোগ খুব সীমিত। এই বাস্তবতা থেকে চর্চার ভাবনা। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকে ভয় না পেয়ে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে শেখার আনন্দ খুঁজে পাক। শেখার প্রতিটি ধাপ যেন চাপ না হয়ে আগ্রহ তৈরি করে—এটিই ছিল চর্চার মূল অনুপ্রেরণা।
শুরুতে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা ‘চর্চা’র বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যেটি একসঙ্গে হাজার হাজার ব্যবহারকারী সামলাতে পারবে এবং সবার জন্য অভিজ্ঞতাটি হবে নিরবচ্ছিন্ন। এর পাশাপাশি বাস্তব চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত ও উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করা। অষ্টম শ্রেণি থেকে বিসিএস—প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা চাহিদা রয়েছে। সেই কনটেন্ট যেন একদিকে নির্ভুল হয়, অন্যদিকে আকর্ষণীয় ও গেমিফাইড হয়। এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা ছিল কঠিন। তবে ধাপে ধাপে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আজ চর্চা একটি গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
‘চর্চা এআই’-এর ধারণা কীভাবে এল?
এটি মূলত এআই এজেন্ট, যা এনসিটিবি পাঠ্যবই এবং আমাদের ১০ লক্ষাধিক প্রশ্নের ডেটাবেইসের ওপর প্রশিক্ষিত। শিক্ষার্থীরা টেক্সট বা ছবি আকারে যেকোনো প্রশ্ন দিতে পারেন, আর চর্চা এআই বইভিত্তিক রেফারেন্সসহ উত্তর দেয়। এটি শুধু ডাউট সলভিং নয়, বরং একটি পার্সোনালাইজড লার্নিং সলিউশন। শিক্ষার্থী বুঝতে পারেন—কোন টপিকে তিনি দুর্বল, কোথায় আরও প্র্যাকটিস দরকার। মাত্র তিন মাসে চর্চা এআই-এ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি চ্যাটরুম তৈরি হয়েছে।
প্রশ্নভান্ডারের মান কীভাবে নিশ্চিত করেন?
চর্চার কনটেন্ট মান নিশ্চিত করতে আমাদের একটি আলাদা কনটেন্ট টিম রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি, এসএসসি, এইচএসসি ও বিসিএস—প্রতিটি সেগমেন্টে আলাদা টিম কাজ করে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিন ধারার জন্য রয়েছে বিষয়ভিত্তিক এক্সপার্টরা। নিয়মিত আপডেট, রিভিউ এবং গবেষণার মাধ্যমে কনটেন্টের মান ধরে রাখাই আমাদের মূল অগ্রাধিকার।
স্ট্রিক, লিডার বোর্ড ও রিপোর্ট কতটা কার্যকর?
চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ ধারণাটিকে প্রাধান্য দেয়। স্ট্রিক শিক্ষার্থীদের দৈনিক অভ্যাস গড়তে সাহায্য করে। আমাদের এমন ব্যবহারকারীও আছেন, যাঁদের স্ট্রিক এক বছরের বেশি। লিডার বোর্ড শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করে। আর মাসিক রিপোর্ট শিক্ষার্থীকে নিজের অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে। কোথায় উন্নতি হচ্ছে বা কোথায় আরও মনোযোগ দরকার, সেসব বোঝা যায় এ থেকে।
ডেটা প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করছেন?
ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় নিজেদের তথ্য বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে পারেন। কোনো তথ্য ব্যবহারকারীর সম্মতি ছাড়া সংগ্রহ করা হয় না। সব ডেটা এনক্রিপটেড থাকে এবং অ্যাপ সার্ভার যোগাযোগ এইচটিটিপিএস সিকিউরিটির মাধ্যমে সুরক্ষিত। এই ব্যবস্থাগুলো ব্যবহারকারীদের নিশ্চিন্ত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আগামী পাঁচ বছরে আমরা চর্চাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লার্নিং অ্যাপে পরিণত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ১০ কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে সেবা দেওয়া। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, শেখার কোনো সীমানা নেই। তাই চর্চাকে একটি গ্লোবাল লার্নিং অ্যান্ড প্র্যাকটিস ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাও আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ থেকে জন্ম নেওয়া একটি প্ল্যাটফর্ম যেন বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের শেখার সঙ্গী হয়ে ওঠে, এই স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।
চর্চার শুরুটা কীভাবে?
চর্চার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন আমি নিজেই ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রতিদিন ক্লাস, লেকচার, গাইডবুক আর প্রশ্নব্যাংকের চাপ—সব মিলিয়ে নিজের মতো করে প্র্যাকটিস করার সময় খুব কম পাওয়া যেত। এই জায়গায় সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। ভাবলাম, যদি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম থাকে, যেখানে গৎবাঁধা নিয়মে আটকে না থেকে নিয়মিত ও সহজভাবে প্র্যাকটিস করা যায়, তাহলে শেখাটা অনেক বেশি আনন্দের হতে পারে। সেই ভাবনা থেকে চর্চার জন্ম। রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির পর কাজটি আরও গতি পায়। ক্লাসরুম থেকেই আমার কো-ফাউন্ডার ও সিএমও নাফিসের সঙ্গে পরিচয়। পরে গালিব কো-ফাউন্ডার ও সিওও হিসেবে যুক্ত হন। শুরু থেকেই মার্কেটিং ও অপারেশনের দায়িত্ব মূলত তাঁরা দুজনই সামলাচ্ছেন।
চর্চা অ্যাপ তৈরির পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনা আর পরীক্ষাকে প্রায় সব সময় ভয়ের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অথচ শেখার প্রক্রিয়াটা হওয়া উচিত আনন্দদায়ক, যেখানে একজন শিক্ষার্থী সমস্যা সমাধান করতে করতেই শিখবেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, পড়ার উপকরণ অনেক থাকলেও নিয়মিত প্র্যাকটিসের সুযোগ খুব সীমিত। এই বাস্তবতা থেকে চর্চার ভাবনা। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকে ভয় না পেয়ে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে শেখার আনন্দ খুঁজে পাক। শেখার প্রতিটি ধাপ যেন চাপ না হয়ে আগ্রহ তৈরি করে—এটিই ছিল চর্চার মূল অনুপ্রেরণা।
শুরুতে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা ‘চর্চা’র বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যেটি একসঙ্গে হাজার হাজার ব্যবহারকারী সামলাতে পারবে এবং সবার জন্য অভিজ্ঞতাটি হবে নিরবচ্ছিন্ন। এর পাশাপাশি বাস্তব চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত ও উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করা। অষ্টম শ্রেণি থেকে বিসিএস—প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা চাহিদা রয়েছে। সেই কনটেন্ট যেন একদিকে নির্ভুল হয়, অন্যদিকে আকর্ষণীয় ও গেমিফাইড হয়। এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা ছিল কঠিন। তবে ধাপে ধাপে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আজ চর্চা একটি গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
‘চর্চা এআই’-এর ধারণা কীভাবে এল?
এটি মূলত এআই এজেন্ট, যা এনসিটিবি পাঠ্যবই এবং আমাদের ১০ লক্ষাধিক প্রশ্নের ডেটাবেইসের ওপর প্রশিক্ষিত। শিক্ষার্থীরা টেক্সট বা ছবি আকারে যেকোনো প্রশ্ন দিতে পারেন, আর চর্চা এআই বইভিত্তিক রেফারেন্সসহ উত্তর দেয়। এটি শুধু ডাউট সলভিং নয়, বরং একটি পার্সোনালাইজড লার্নিং সলিউশন। শিক্ষার্থী বুঝতে পারেন—কোন টপিকে তিনি দুর্বল, কোথায় আরও প্র্যাকটিস দরকার। মাত্র তিন মাসে চর্চা এআই-এ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি চ্যাটরুম তৈরি হয়েছে।
প্রশ্নভান্ডারের মান কীভাবে নিশ্চিত করেন?
চর্চার কনটেন্ট মান নিশ্চিত করতে আমাদের একটি আলাদা কনটেন্ট টিম রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি, এসএসসি, এইচএসসি ও বিসিএস—প্রতিটি সেগমেন্টে আলাদা টিম কাজ করে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিন ধারার জন্য রয়েছে বিষয়ভিত্তিক এক্সপার্টরা। নিয়মিত আপডেট, রিভিউ এবং গবেষণার মাধ্যমে কনটেন্টের মান ধরে রাখাই আমাদের মূল অগ্রাধিকার।
স্ট্রিক, লিডার বোর্ড ও রিপোর্ট কতটা কার্যকর?
চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ ধারণাটিকে প্রাধান্য দেয়। স্ট্রিক শিক্ষার্থীদের দৈনিক অভ্যাস গড়তে সাহায্য করে। আমাদের এমন ব্যবহারকারীও আছেন, যাঁদের স্ট্রিক এক বছরের বেশি। লিডার বোর্ড শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করে। আর মাসিক রিপোর্ট শিক্ষার্থীকে নিজের অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে। কোথায় উন্নতি হচ্ছে বা কোথায় আরও মনোযোগ দরকার, সেসব বোঝা যায় এ থেকে।
ডেটা প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করছেন?
ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় নিজেদের তথ্য বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে পারেন। কোনো তথ্য ব্যবহারকারীর সম্মতি ছাড়া সংগ্রহ করা হয় না। সব ডেটা এনক্রিপটেড থাকে এবং অ্যাপ সার্ভার যোগাযোগ এইচটিটিপিএস সিকিউরিটির মাধ্যমে সুরক্ষিত। এই ব্যবস্থাগুলো ব্যবহারকারীদের নিশ্চিন্ত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আগামী পাঁচ বছরে আমরা চর্চাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লার্নিং অ্যাপে পরিণত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ১০ কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে সেবা দেওয়া। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, শেখার কোনো সীমানা নেই। তাই চর্চাকে একটি গ্লোবাল লার্নিং অ্যান্ড প্র্যাকটিস ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাও আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ থেকে জন্ম নেওয়া একটি প্ল্যাটফর্ম যেন বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের শেখার সঙ্গী হয়ে ওঠে, এই স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।

তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তর এখন আর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ভিত্তিমূলক রাষ্ট্রীয় রূপান্তর, যার কেন্দ্রে থাকবে ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার। দেশে বহু ডিজিটাল সিস্টেম থাকলেও ইন্টারঅপারেবিলিটির...
৩ ঘণ্টা আগে
স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি দেশে রিয়েলমি সি৮৫ উন্মোচন করেছে। এই ডিভাইসটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী ৭০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের আলট্রা ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সক্ষমতা (যা ১০ ওয়াট রিভার্স চার্জিংও সাপোর্ট করে)।
৯ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও এটি হয়ে উঠছে নতুন ভরসা। বিশেষ করে জেন-জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে এআই ব্যবহার করে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
১ দিন আগে