Ajker Patrika

ইনফ্লুয়েন্সার: ঘরে বসে আয় করার দারুণ এক ডিজিটাল পেশা 

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ১১: ১১
ইনফ্লুয়েন্সার: ঘরে বসে আয় করার দারুণ এক ডিজিটাল পেশা 

সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ডিজিটাল নির্মাতা বলা যায়। নিজের দক্ষতা অনুসারে তাঁরা নানা বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করেন। এটি এখন শুধু শখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এর মাধ্যমে আয়ও করা যায়। 

আগ্রহের বিষয় নিয়ে ইনফ্লুয়েন্সাররা কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। ফলোয়ারদের সঙ্গে ডিজিটাল সম্পর্ক তৈরি করেন তাঁরা এবং প্রিয় ব্র্যান্ডের সঙ্গেও কাজ করেন। নিজের বাসায় থেকেই কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন ইনফ্লুয়েন্সাররা। তাই আয়ের জন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। 

ইনফ্লুয়েন্সার কি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সাররা একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নিজেদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এক বা একাধিক প্ল্যাটফরমে দর্শক বা ফলোয়ারদের সঙ্গে তাঁদের জ্ঞান ভাগ করে নেন। 

ইনফ্লুয়েন্সাররা তাঁদের দক্ষতা প্রতিষ্ঠা এবং ফলোয়ারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি ও শেয়ার করেন। নিয়মিতভাবে শ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ কনটেন্ট শেয়ার করার মাধ্যমে নির্মাতারা প্রায়ই তাঁদের ফলোয়ারদের একটি নির্দিষ্ট পণ্য কেনার করার জন্য ‘প্রভাবিত’ করতে পারেন। 

ব্র্যান্ডগুলো পণ্য বা সেবার প্রচারণার জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে অংশীদারত্ব করে। ফলে কোম্পানিগুলো ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে নিজেদের ব্র্যান্ডকে দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করাতে পারে। যেহেতু ফলোয়াররা একজন ইনফ্লুয়েন্সারকে বিশ্বাস করে তাই তারা এসব পণ্যের প্রচারণাকে বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখার পরিবর্তে একজন বন্ধুর সুপারিশ হিসেবে দেখে। 

এই অংশীদারত্বের ফলে ইনফ্লুয়েন্সাররা অর্থ পেতে পারেন বা বিনা মূল্যে কোনো পণ্য পেতে পারেন। 

ইনফ্লূয়েন্সারদের যা যা করতে হয়
একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়মিত পোস্টের মাধ্যমে দর্শকসংখ্যা বাড়াতে হয়। কনটেন্ট তৈরি, নতুন নতুন আইডিয়া বের করা, সম্পাদনা ও পোস্ট করতে হয় একজন ইনফ্লুয়েন্সারকে। ইনফ্লুয়েন্সারের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে নিচের কাজগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে—

• কনটেন্ট তৈরি। 
• সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারণা করা। 
• কনটেন্ট পোস্টের জন্য একটি সময়সূচি নির্ধারণ করা। 
• কী বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করা হবে তা নিয়ে চিন্তা করা। 
• মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখা ও সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা। 
• ফলোয়ারদের মন্তব্যের উত্তর দিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। 
• বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা। 

ইনফ্লূয়েন্সার হওয়ার জন্য যে যে দক্ষতা প্রয়োজন 
ইনফ্লূয়েন্সার হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রবল আগ্রহ, দক্ষতা ও অনন্য জ্ঞান প্রয়োজন। এ ছাড়া এর পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরি করার ইচ্ছাও থাকতে হবে। এ ছাড়া যেসব দক্ষতার প্রয়োজন—
•যোগযোগের দক্ষতা 
•লেখালেখির দক্ষতা
•সৃজনশীলতা 
•সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা 

ইনফ্লূয়েন্সারদের প্রকারভেদ 
ফলোয়ার সংখ্যা অনুযায়ী ইনফ্লূয়েন্সারদের সাধারণত ৫টি স্তরে ভাগ করা যায়- 

মেগা ইনফ্লুয়েন্সার: ১০ লাখ বা তার বেশি ফলোয়ার 
ম্যাক্রো ইনফ্লুয়েন্সার: ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ ফলোয়ার 
মিড টিয়ার ইনফ্লুয়েন্সার: ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ ফলোয়ার 
মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার: ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ফলোয়ার
ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সার: শূন্য থেকে ১০ হাজার ফলোয়ার 

ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রিয় ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেন এবং তাঁদের পছন্দের পণ্যগুলো প্রচার করেন। একজন ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার সুবিধাগুলোর মধ্য রয়েছে—ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আয়, বিনা মূল্যে উপহার পাওয়া এবং বিভিন্ন ইভেন্টে আমন্ত্রণ পাওয়া। তবে যাঁরা ভালোভাবে নিজস্ব সময়সূচি সেট করে, ব্র্যান্ডের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারেন ও নিজেদের কনটেন্টের মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাঁরাই মূলত এসব সুবিধা ভোগ করতে পারে। 

তবে ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার অসুবিধাও রয়েছে। কনটেন্ট ক্রিয়েটররা প্রায়ই নিজেদের কাজের সঙ্গে নিজেদের চিন্তার একটি অসংগতি খুঁজে পেতে পারেন এবং শূন্য থেকে ফলোয়ারের সংখ্যা তৈরি করতে যে সময় লাগে, এর জন্য অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ন। 

ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার সুবিধা 

দূরবর্তী কাজ: একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করা যায়। সেটি নিজের বাড়ি, স্থানীয় লাইব্রেরি, এমনকি প্লেনেও হতে পারে। নিজের পছন্দমতো সময়ে কাজ করতে পারবেন। অর্থাৎ, কখন কনটেন্ট তৈরি করবেন এবং কীভাবে অন্যান্য কাজের সময়সূচি নির্ধারণ করবেন যেমন ব্র্যান্ডের প্রচারণা বা অন্যান্য ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত ইনফ্লুয়েন্সার নিজেই নিতে পারবেন। 

পিআর প্যাকেজ: পাবলিক রিলেশন (পিআর) বা জনসংযোগ প্যাকেজের দাম ইনফ্লুয়েন্সাররা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারেন। এমনকি প্রতিটি কনটেন্টের জন্য আলাদা আলাদাভাবে দামও নির্ধারণ করতে পারেন। পিআর প্যাকেজ কয়েকটি কনটেন্ট তৈরির চুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকে। সাধারণ এসব কনটেন্ট বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করতে হয়। এসব চ্যানেলের প্রসার ও আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

কনটেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ: ইনফ্লুয়েন্সাররা এমন কনটেন্ট তৈরি করেন, যাতে তাঁরা আগ্রহ পান। সমমনা শ্রোতাদের সঙ্গে শেয়ার করা কনটেন্টের ওপর ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ন্ত্রণ থাকে। এর মাধ্যমে তাঁরা একই বিষয়ে আগ্রহী মানুষদের নিয়ে একটি কমিউনিটি তৈরি করতে পারেন। 

এমনকি ব্যান্ডের ক্ষেত্রেও কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের চুক্তি থাকে। ব্র্যান্ডগুলো কনটেন্ট তৈরির দিকনির্দেশ দিয়ে একজন ইনফ্লুয়েন্সারকে সাহায্য করে। আর শ্রোতাদের পছন্দের মিল রেখে কনটেন্ট তৈরি করেন ইনফ্লুয়েন্সাররা। পণ্যের সেবা ও পণ্য প্রচারের জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করতে হয়। 

ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার অসুবিধা

একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে একটি স্থির আয়ের ধারা তৈরি করা একটি চ্যালেঞ্জ। কনটেন্ট তৈরির জন্য অর্থ দেয় এমন ব্র্যান্ড খুঁজে পেতে ইনফ্লুয়েন্সাররা কঠোর পরিশ্রম করেন। এসব ব্যান্ডের সঙ্গে চুক্তিগুলো অনিয়মিত ও অস্থায়ী। ফলে সব সময় একই পরিমাণ আয় না-ও হতে পারে। ফলোয়ার তৈরির জন্য সময় ও কঠোর প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে অর্থ উপার্জন করার জন্য ব্যাপকসংখ্যক ফলোয়ার প্রয়োজন। নিয়মিত শ্রোতা তৈরি করার জন্য অনেক ধৈর্য প্রয়োজন। নিজের দক্ষতা শনাক্ত, কনটেন্ট তৈরি, ব্র্যান্ডদের আকর্ষণ করা এবং যথেষ্ট পরিমাণে শ্রোতা বাড়াতে অনেক সময় লাগতে পারে। 

কারা ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে চুক্তি করেন: বড় বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে এখন সীমিত বাজেটের মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরাও নিজেদের পণ্য প্রচারের জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে চুক্তি করেন। অ্যাডিডাস, পেপসি, ডানকিন ডোনাটস ও মটোরোলার মতো বড় কোম্পানিগুলোও পণ্য প্রচারের জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যবহার করে।

যেভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার হবেন 
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার হতে সময় লাগে। তবে আপনি যে প্রথম পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে পারেন তা হলো—এমন একটি বিষয় খুঁজে বের করা, যাতে আপনার আগ্রহ রয়েছে এবং এসব কনটেন্ট দেখার শ্রোতাও রয়েছে। এটি একটি প্রাথমিক ধাপ। কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা যায়—

১. পছন্দের বিষয় খুঁজুন
নিজের দক্ষতা অনুযায়ী পছন্দের বিষয় খুঁজুন। একটি বিষয় নির্বাচন করলে নিজেই বুঝতে পারবেন এর মাধ্যমে কোনো পণ্য প্রচার করতে পারবেন ও যার মাধ্যমে শ্রোতারা উপকৃত হতে পারবে। এর মাধ্যমে দর্শক আকর্ষণ হবে এবং নতুন ফলোয়ার যুক্ত হবে।

আর পছন্দের বিষয়টি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেয়। নিজে যে বিষয়ে আগ্রহী এবং বিষয়টি নিয়ে আরও শেখার ইচ্ছা রয়েছে, এমন বিষয় বেছে নিতে পারেন।

ইনফ্লুয়েন্সাররা সাধারণত যেসব বিষয় বেছে নেন—
• ফ্যাশন 
• মেকআপ
• ভ্রমণ 
• লাইফস্টাইল 
• সেলিব্রেটি ও বিনোদনের খবর 
• খেলা
• পশু-পাখি
• স্বাস্থ্য ও ফিটনেস 
• গেমিং
• পরিবার ও প্যারেন্টিং 
• ব্যবসা ও প্রযুক্তি 

২. ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়ানো 
প্রকৃত ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জন্য নিজের অ্যাকাউন্টে ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, যেসব ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ১ হাজারের চেয়ে কম ফলোয়ার থাকলে প্রতি ছয় মাসে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ ফলোয়ার বাড়ে। নতুন ফলোয়ারদের আকৃষ্ট করতে কয়েক মাস নিয়মিত কনটেন্ট পোস্ট করতে হয়। 

ফলোয়ার বাড়াতে নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন—
• নিজের প্রোফাইলের বায়োতে নিজের পছন্দের বিষয়গুলো উল্লেখ করুন। 
• উচ্চ মানের কনটেন্ট পোস্ট করুন। 
• স্বকীয়তা বজায় রাখুন। 
• নিয়মিত নিজের ফলোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। 
• কনটেন্ট পোস্টের ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন। 
• পোস্টের সঙ্গে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন। 

৩. নিজস্ব কৌশল খুঁজে বের করুন
কোনো কনটেন্ট শেয়ার করার আগে নিজস্ব কৌশল তৈরি করা ভালো। এসব কৌশল সামঞ্জস্যপূর্ণ, উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করবে। কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে—

• নিজের দর্শক বা ফলোয়ারদের আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তা বোঝা। 
• কনটেন্ট পোস্টের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করা। 
• কনটেন্ট তৈরি, এডিট ও পোস্টের জন্য সময় ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা করা। • দর্শক কী ধরনের কনটেন্ট দেখে তা থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া। 

৪. এসইও ব্যবহার করা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট সরাসরি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনকে (সিইও) প্রভাবিত করে না, তবে নিজের ওয়েবসাইটে ও ব্লগের লিংকে ফলোয়াররা ক্লিক করলেও একই ধরনের প্রভাব দেখা যায়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (সিইও) হলো আপনার ওয়েবসাইট ও এর বিষয়বস্তুকে সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলে উচ্চতর স্থানে দেখানোর প্রক্রিয়া। সার্চের ফলাফলে সিজের ওয়েবসাইটগুলো প্রথম দিকে দেখাতে নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন—

• মানুষকে সাহায্য করবে এমন কনটেন্ট তৈরি করুন। ফলে অন্যান্য ওয়েবসাইটও আপনার লিংকে যুক্ত করবে। 
• দর্শকদের সমর্থনে মেসেজ দিন। অর্থাৎ তাদের মনোভাব ও আবেগের প্রতি নজর রেখে বিভিন্ন মেসেজ পোস্ট করুন। 
• বিশ্বস্ত শ্রোতা ও দর্শক কমিউনিটি তৈরি করুন। 

৫. নিজের ফলোয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা 
উন্নত মানের কনটেন্ট তৈরির পাশাপাশি একজন ইনফ্লুয়েন্সারের বেশ কিছু দায়িত্ব থাকে। দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও গুরুত্বপূর্ণ। ফলোয়ারদের বিভিন্ন মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন বা নিজের সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েও ফলোয়ারদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল সম্পর্ক তৈরি করা যায়। 

আয় ও কাজের দৃষ্টিভঙ্গি 

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং খাত দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়। এই শিল্পের এক জরিপে দেখা যায়, ইনফ্লুয়েন্সারের মাধ্যমে প্রচারকে ৮৩ শতাংশ বিপণনকারীরা সফল বলে মনে করেন। ২০২৩ সালে এই খাত থেকে ২ হাজার ১১০ কোটি ডলার আয় হয়। 

যতক্ষণ না নিয়মিত ও শক্তিশালী আয়ের উৎস বের করতে পারেন, ততক্ষণ ইনফ্লুয়েন্সাররা সাধারণত পার্ট-টাইম ভিত্তিতে এই ক্যারিয়ার শুরু করেন। একবার ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন শেয়ারের থেকে আয় বা তাদের চ্যানেলে সাবস্ক্রিপশন বিক্রির মাধ্যমে একটি স্থির আয় উপার্জন করতে পারলে এটি একটি পূর্ণ সময়ের চাকরি হয়ে উঠতে পারে। 

এ ছাড়া জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সাররা বই লিখে এবং টকশোতে উপস্থিত হয়ে বা নিজস্ব পণ্যও বিক্রি করে আয় করতে পারেন। 
২০২৩ সালের জুনে প্রকাশিত গ্লাসডোরের এক ডেটা থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রতিবছর গড়ে ৪৬ হাজার ৩৫৮ ডলার আয় করতে পারেন। 

তথ্যসূত্র: কোর্সএরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডিজিটাল রূপান্তর মানে শুধু অ্যাপ নয়, রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বুধবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বুধবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ছবি: আজকের পত্রিকা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ডিজিটাল রূপান্তর মানে শুধু অ্যাপ নয়, রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া।

রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বুধবার ‘বিল্ডিং ট্রাস্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি থ্রু ডেটা গভর্ন্যান্স’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (ইডিজিই প্রকল্প) এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের ডিজিটাল রূপান্তর এখন আর খণ্ডিত প্রকল্প বা অ্যাপভিত্তিক উদ্যোগে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ভিত্তিমূলক রাষ্ট্রীয় রূপান্তর, যার কেন্দ্রে থাকবে ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার। দেশে বহু ডিজিটাল সিস্টেম থাকলেও ইন্টারঅপারেবিলিটির অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

তৈয়্যব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে সাইবার সেফটি, ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা ও জাতীয় ডেটা গভর্ন্যান্স—এই তিন আইনি ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে, যা ভবিষ্যৎ ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের (ডিপিআই) মূল স্তম্ভ হবে। ভবিষ্যতে প্রতিটি নাগরিকের একটি ডিজিটাল ডেটা ওয়ালেট থাকবে; যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং নাগরিকের সম্মতিতেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডেটা ব্যবহার করা যাবে।

সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, কার্যকর ডেটা গভর্ন্যান্স কেবল নীতিমালা প্রণয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আন্তখাত সমন্বয় এবং সুস্পষ্ট জবাবদিহি কাঠামো। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ডিজিটাল সেবার পরিসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীল ডেটা ব্যবহার, নিরাপত্তা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা জনআস্থা অর্জন ও টেকসই ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সম্মেলনে তিনটি আলাদা অধিবেশনে ডেটা সুরক্ষা নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাংলাদেশের ডেটা ব্যবস্থাপনার তুলনা এবং ডেটা ব্যবস্থাপনায় পেশাদার হিসাববিদদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।

সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (আইএফএসি) সভাপতি জ্যঁ বোকু, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চলের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেসমেসহ সরকারি নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, পেশাদার হিসাববিদ, আইন ও প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৭০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির সাশ্রয়ী ফোন আনল রিয়েলমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি দেশে রিয়েলমি সি৮৫ উন্মোচন করেছে। এই ডিভাইসটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী ৭০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের আলট্রা ব্যাটারি ও ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সক্ষমতা (যা ১০ ওয়াট রিভার্স চার্জিংও সাপোর্ট করে)।

ফোনটিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বিজয়ী ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট প্রোটেকশন স্ট্যান্ডার্ড—আইপি ৬৯ প্রো রেটিং রয়েছে, যা এটিকে ৬০ দিন পর্যন্ত পানির নিচে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

এতে রয়েছে ৬.৮ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, যার রিফ্রেশ রেট সুপার-স্মুথ ১৪৪ হার্জ এবং পিক ব্রাইটনেস ১,২০০ নিট।

ডিভাইসটিতে স্ন্যাপড্রাগন ৬৮৫ ফোরজি প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ফটোগ্রাফির জন্য পেছনে ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা এবং সামনে ৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা রয়েছে।

রিয়েলমি সি৮৫ সোয়ান ব্ল্যাক ও কিংফিশার ব্লু রঙে দুইটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে: ৬ জিবি + ১২৮ জিবি: মূল্য ১৮,৯৯৯ টাকা। ৮ জিবি + ১২৮ জিবি: মূল্য ২০,৯৯৯ টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এআইকে ব্যক্তিগত অর্থ উপদেষ্টা বানালেন ২৭ বছরের এই সিইও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তাকি ওং। ছবি: রয়টার্স
তাকি ওং। ছবি: রয়টার্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন আর শুধু প্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনাতেও এটি হয়ে উঠছে নতুন ভরসা। বিশেষ করে জেন-জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে এআই ব্যবহার করে খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এরই একটি উদাহরণ কানাডার অন্টারিওভিত্তিক একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা তাকি ওং।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ২৭ বছর বয়সী তাকি ওং ব্যস্ত পেশাজীবীদের জন্য এআই টুল তৈরি করেন। তবে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ পরিচালনায়ও তিনি এআইয়ের ওপর ভরসা রাখেন। গুগলের জেমিনি এআই মডেলকে তিনি নিজের ‘২৪ ঘণ্টার ব্যক্তিগত আর্থিক উপদেষ্টা’ বলে মনে করেন।

ওং জানান, প্রতি মাসে তিনি নিজের ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য খরচের হিসাব নিজে হাতে এআইয়ে ইনপুট দেন। এরপর এআই সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁকে জানায় কোথায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হচ্ছে।

ওংয়ের ভাষায়, এআই কখনো বলে দেয়—‘তুমি হয়তো রেস্তোরাঁয় বেশি খাচ্ছ’, আবার কখনো সতর্ক করে—‘এই সাবস্ক্রিপশনগুলো অপ্রয়োজনীয়।’ এই ধরনের বিশ্লেষণের ফলেই তিনি বাইরে খাওয়ার খরচ মাসে ৬০০ ডলার থেকে কমিয়ে ২০০ ডলারে নামাতে পেরেছেন। একইভাবে টিভি ও অন্যান্য সাবস্ক্রিপশনের খরচ ৩০০ ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ ডলারে।

তবে সুবিধার পাশাপাশি সতর্কতাও অবলম্বন করছেন তিনি। ওং স্পষ্ট করে বলেন, তিনি কখনোই এআইয়ের সঙ্গে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করেন না। শুধুমাত্র মোট খরচের সংখ্যা বা সামগ্রিক তথ্যই তিনি শেয়ার করেন, যাতে ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত থাকে।

এই প্রবণতা শুধু ওংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহারকারী আমেরিকানদের একটি বড় অংশ আর্থিক পরামর্শ নিতে এআইয়ের ওপর নির্ভর করছে। এঁদের মধ্যে জেন জি ও মিলেনিয়ালদের হার ৮২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যেও প্রায় তিনজনের একজন নিয়মিত ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনায় এআই ব্যবহার করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই সময় বাঁচাতে ও খরচের দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করতে সহায়ক হলেও সব পরামর্শ যাচাই করে নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ধারণাকে প্রাধান্য দেয়

রায়হান উল ইসলাম সানজিদ।

অনলাইন ক্লাস, গাইডবুক আর মক টেস্টের পরেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত অনুশীলনের অভাবে পিছিয়ে পড়েন। পড়া থাকলেও কোথায় দুর্বলতা, কীভাবে নিজের অগ্রগতি যাচাই করবেন—সে প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় মেলে না। এই প্রেক্ষাপটে ‘চর্চা’ নিজেকে উপস্থাপন করছে একটি অনুশীলনকেন্দ্রিক লার্নিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। দেশের এডটেক খাতে এই উদ্যোগের ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলেছেন চর্চার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান উল ইসলাম সানজিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আশিকুর রহমান

আশিকুর রহমান

চর্চার শুরুটা কীভাবে?

চর্চার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন আমি নিজেই ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রতিদিন ক্লাস, লেকচার, গাইডবুক আর প্রশ্নব্যাংকের চাপ—সব মিলিয়ে নিজের মতো করে প্র্যাকটিস করার সময় খুব কম পাওয়া যেত। এই জায়গায় সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। ভাবলাম, যদি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম থাকে, যেখানে গৎবাঁধা নিয়মে আটকে না থেকে নিয়মিত ও সহজভাবে প্র্যাকটিস করা যায়, তাহলে শেখাটা অনেক বেশি আনন্দের হতে পারে। সেই ভাবনা থেকে চর্চার জন্ম। রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির পর কাজটি আরও গতি পায়। ক্লাসরুম থেকেই আমার কো-ফাউন্ডার ও সিএমও নাফিসের সঙ্গে পরিচয়। পরে গালিব কো-ফাউন্ডার ও সিওও হিসেবে যুক্ত হন। শুরু থেকেই মার্কেটিং ও অপারেশনের দায়িত্ব মূলত তাঁরা দুজনই সামলাচ্ছেন।

চর্চা অ্যাপ তৈরির পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনা আর পরীক্ষাকে প্রায় সব সময় ভয়ের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অথচ শেখার প্রক্রিয়াটা হওয়া উচিত আনন্দদায়ক, যেখানে একজন শিক্ষার্থী সমস্যা সমাধান করতে করতেই শিখবেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, পড়ার উপকরণ অনেক থাকলেও নিয়মিত প্র্যাকটিসের সুযোগ খুব সীমিত। এই বাস্তবতা থেকে চর্চার ভাবনা। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকে ভয় না পেয়ে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে শেখার আনন্দ খুঁজে পাক। শেখার প্রতিটি ধাপ যেন চাপ না হয়ে আগ্রহ তৈরি করে—এটিই ছিল চর্চার মূল অনুপ্রেরণা।

শুরুতে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা ‘চর্চা’র বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যেটি একসঙ্গে হাজার হাজার ব্যবহারকারী সামলাতে পারবে এবং সবার জন্য অভিজ্ঞতাটি হবে নিরবচ্ছিন্ন। এর পাশাপাশি বাস্তব চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত ও উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করা। অষ্টম শ্রেণি থেকে বিসিএস—প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা চাহিদা রয়েছে। সেই কনটেন্ট যেন একদিকে নির্ভুল হয়, অন্যদিকে আকর্ষণীয় ও গেমিফাইড হয়। এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা ছিল কঠিন। তবে ধাপে ধাপে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আজ চর্চা একটি গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

‘চর্চা এআই’-এর ধারণা কীভাবে এল?

এটি মূলত এআই এজেন্ট, যা এনসিটিবি পাঠ্যবই এবং আমাদের ১০ লক্ষাধিক প্রশ্নের ডেটাবেইসের ওপর প্রশিক্ষিত। শিক্ষার্থীরা টেক্সট বা ছবি আকারে যেকোনো প্রশ্ন দিতে পারেন, আর চর্চা এআই বইভিত্তিক রেফারেন্সসহ উত্তর দেয়। এটি শুধু ডাউট সলভিং নয়, বরং একটি পার্সোনালাইজড লার্নিং সলিউশন। শিক্ষার্থী বুঝতে পারেন—কোন টপিকে তিনি দুর্বল, কোথায় আরও প্র্যাকটিস দরকার। মাত্র তিন মাসে চর্চা এআই-এ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি চ্যাটরুম তৈরি হয়েছে।

প্রশ্নভান্ডারের মান কীভাবে নিশ্চিত করেন?

চর্চার কনটেন্ট মান নিশ্চিত করতে আমাদের একটি আলাদা কনটেন্ট টিম রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি, এসএসসি, এইচএসসি ও বিসিএস—প্রতিটি সেগমেন্টে আলাদা টিম কাজ করে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিন ধারার জন্য রয়েছে বিষয়ভিত্তিক এক্সপার্টরা। নিয়মিত আপডেট, রিভিউ এবং গবেষণার মাধ্যমে কনটেন্টের মান ধরে রাখাই আমাদের মূল অগ্রাধিকার।

স্ট্রিক, লিডার বোর্ড ও রিপোর্ট কতটা কার্যকর?

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ ধারণাটিকে প্রাধান্য দেয়। স্ট্রিক শিক্ষার্থীদের দৈনিক অভ্যাস গড়তে সাহায্য করে। আমাদের এমন ব্যবহারকারীও আছেন, যাঁদের স্ট্রিক এক বছরের বেশি। লিডার বোর্ড শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করে। আর মাসিক রিপোর্ট শিক্ষার্থীকে নিজের অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে। কোথায় উন্নতি হচ্ছে বা কোথায় আরও মনোযোগ দরকার, সেসব বোঝা যায় এ থেকে।

ডেটা প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করছেন?

ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় নিজেদের তথ্য বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে পারেন। কোনো তথ্য ব্যবহারকারীর সম্মতি ছাড়া সংগ্রহ করা হয় না। সব ডেটা এনক্রিপটেড থাকে এবং অ্যাপ সার্ভার যোগাযোগ এইচটিটিপিএস সিকিউরিটির মাধ্যমে সুরক্ষিত। এই ব্যবস্থাগুলো ব্যবহারকারীদের নিশ্চিন্ত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আগামী পাঁচ বছরে আমরা চর্চাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লার্নিং অ্যাপে পরিণত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ১০ কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে সেবা দেওয়া। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, শেখার কোনো সীমানা নেই। তাই চর্চাকে একটি গ্লোবাল লার্নিং অ্যান্ড প্র্যাকটিস ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাও আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ থেকে জন্ম নেওয়া একটি প্ল্যাটফর্ম যেন বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের শেখার সঙ্গী হয়ে ওঠে, এই স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত