আগুনভেদে নেভানোর ধরন

অলকানন্দা রায়, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩, ১৫: ১৮
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৩, ১৫: ৫৬

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বিশাল। অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকার পাশাপাশি জানতে হবে কোন উৎসের আগুন কীভাবে নেভাতে হয়।

বদলেছে আগুনের উৎস
একটা সময় ছিল, চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রায়ই বাড়িতে বাড়িতে আগুন লেগে যেত ছাইয়ের গাদা, রান্নাঘরের কাঠ-কয়লা থেকে। সেসব আগুন পানিতেই নিভে যেত। এখন সময় বদলেছে। আধুনিক হয়েছে মানুষের যাপন। এখন শুধু ছাইয়ের গাদা কিংবা কাঠ-কয়লার থেকেই অগ্নিকাণ্ড ঘটে না, কারখানায় রাখা নানা রকম রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ, শর্টসার্কিট, গ্যাসলাইন বা গ্যাসের চুলার লিকেজ থেকেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই বিভিন্ন উৎসের আগুন শুধু পানি দিয়ে নেভানো যায় না; বরং কখনো কখনো এর ফল হয় উল্টো। ফলে জানতে হবে কোন উৎসের আগুন কীভাবে নেভাতে হয়। এতে কমানো সম্ভব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।

এক্সটিংগুইশার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন একজন নারী আগুনের উৎস চারটি
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মান্নানের সঙ্গে কথা হয় আগুনের উৎস এবং তা নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে। তিনি জানান, আগুন মূলত তাপ, দাহ্যবস্তু ও অক্সিজেন—এই তিনটি উপাদানে তৈরি হয়। যখনই এই তিনটি বস্তুর সংযোগ ঘটে, তখন আগুন লেগে তা প্রতিরোধের অভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই উপাদানগুলোর মধ্যে যদি কোনো একটি উপাদান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলেই আগুন নিভে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে।

দাহ্যবস্তুর ধরন অনুসারে আগুন চার শ্রেণির

কঠিন পদার্থের আগুন: কঠিন পদার্থ তৈরি হওয়া আগুন। এর আকার, আয়তন আছে এবং এই উৎসের আগুন থেকে জ্বলন্ত অঙ্গার সৃষ্টি হয়। যেমন বাঁশ, পাট, কাঠ, তুলা, কাপড় কিংবা এমন উৎস থেকে তৈরি হওয়া আগুন। এ ধরনের আগুন পর্যাপ্ত পানি ছিটিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এই পানিকে আবার কয়েকভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন স্প্রে আকারে, ফগ আকারে, জেট আকারে। রয়েছে বহনযোগ্য রাসায়নিক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ওয়াটার পাইপ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার। আগুনের ঝুঁকি অনুসারে হাইড্রেন্ট, ড্রেনচার, হোজরিল ইত্যাদি আগুন নেভানোর স্থায়ী ব্যবস্থা। 

আগুন নেভাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাতরল পদার্থের আগুন: তেল, মবিল, পেট্রল বা অন্যান্য তরল পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হলে সাবানের ফেনা বা ফোম ছড়িয়ে, ভেজা কম্বল, বস্তা, কাঁথা বা ভারী কাপড় ছড়িয়ে দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হবে। পানি দিয়ে এ ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না; বরং এতে আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। যদি কোনো কিছুই পাওয়া না যায়, তবে শুকনো বালু ছিটিয়েও তরল পদার্থ থেকে সৃষ্ট আগুন বশে আনা যায়।

গ্যাসীয় পদার্থের আগুন: যেকোনো ধরনের গ্যাস থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনের ক্ষেত্রে গ্যাস সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিতে বা রাইজারের নব ঘুরিয়ে দিতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগলে ভেজা কাঁথা, কম্বল, বস্তা বা ভারী কাপড় সিলিন্ডারের গায়ে জড়িয়ে চাপ দিয়ে বা নব ঘুরিয়ে কিংবা পানির জোর ঝাপটা দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, গ্যাস লিক করছে বোঝা গেলে কোনোভাবেই সে জায়গার কাছাকাছি দেশলাই, সিগারেট, জ্বলন্ত মোমবাতি, কুপি জ্বালানো যাবে না।  
গ্যাসের আগুন, লিকুইড গ্যাস এবং মিথেন, প্রোপেন, বিউটেন, এলপি গ্যাস থেকে আগুন লাগলে তা নেভাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও রাসায়নিক পাউডার ব্যবহার করতে হবে।

আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা  ধাতব পদার্থের আগুন: ধাতব পদার্থের আগুন বা সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি থেকে তৈরি হওয়া আগুন সব থেকে আগ্রাসী। সরাসরি পানি ব্যবহার করলে বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের সাহায্যে স্প্রে করে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

সতর্কতা
সিনিয়র স্টেশন অফিসার জহুরুল ইসলাম জানান, অসতর্কতা থেকে মূলত অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে। ফলে কিছু বিষয় নিয়মিত খেয়াল করতে হবে। যেমন:

  • রান্নার পর চুলার আগুন সম্পূর্ণ বন্ধ করুন।
  • রান্নাঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখুন।
  • বিড়ি বা সিগারেটের আগুন নিভিয়ে ফেলুন।
  • অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে নিয়মিত ভবনের বৈদ্যুতিক কেব্‌ল ফিটিংস পরীক্ষা করুন।
  • হাতের কাছে দুই বালতি পানি এবং দুই বস্তা বালু মজুত রাখুন।
  • বৈদ্যুতিক মাধ্যম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটলে কোনোভাবেই পানি দেওয়া যাবে না। প্রথমেই বৈদ্যুতিক লাইনের মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে। তবে মেইন  সুইচে আগুন লেগে গেলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে; যাতে করে লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়।
  • বহুতল ভবনে আগুন লাগলে বের হওয়ার আগে যে ফ্লোরে আগুন লেগেছে, তাদের আগে বের হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বন্ধ হয়ে গেলে নিরাপদ দূরত্ব থেকে পানি ছড়িয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তবে ভালো হয় যদি ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের সাহায্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এ জন্য অফিস-আদালত, কারখানা, হোটেল, মোটেল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এমনকি প্রতিটি বাসায় এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত