পেশা হতে পারে ভিডিও এডিটিং

তারিক আল আজিজ
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮: ২৬
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮: ৩৫

ভিডিও এডিটিং সময়োপযোগী দারুণ এক পেশা। ভিডিও ধারণ ও সম্পাদনার প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়া, বিশ্বব্যাপী ভিডিও কনটেন্ট বিপণন ও প্রদর্শনের অসংখ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি, প্রথাগত পেশাগুলোর বাইরে এই পেশাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তবে এখানেও কথা আছে। 

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে সেখানেই বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে সম্পাদনা করাই সব নয়। প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং ভিন্ন জিনিস। এর জন্য বিস্তর জানাশোনা ও সঠিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা জরুরি। 

ভিডিও এডিটিং

ক্যামেরা বা বর্তমানের মোবাইল ফোন–যেটাই হোক না কেন, আমরা যে ভিডিও ধারণ করি, তাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করি। এই সাজানোটাই হলো ভিডিও এডিটিং। ক্যামেরায় ধারণ করা বিভিন্ন শটকে একটার সঙ্গে অন্যটা মালার মতো গাঁথা, তাতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইফেক্ট দেওয়া, প্রয়োজনীয় টাইটেল বা সাবটাইটেল যোগ করা, কালার কারেকশন—সবই ভিডিও এডিটিংয়ের অংশ। আর এসব কাজ সঠিকভাবে যাঁরা করেন, তাঁরা ভিডিও এডিটর হিসেবে পরিচিত। 

সফটওয়্যার

তরুণদের অনেকে ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য মোবাইল ফোনে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করেন। এগুলোর মধ্যে আছে কিনেমাস্টার, ফিল্মোরা, ভিএন ইত্যাদি। কিন্তু প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য এসব অ্যাপ উপযোগী নয়। সে ক্ষেত্রে অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রো, ইডিয়াস বা ফাইনাল কাট প্রো বেশ প্রচলিত সফটওয়্যার। প্রিমিয়ার প্রো বা ইডিয়াস দিয়ে যে কেউ শুরু করতে পারেন। 

পেশা হিসেবে নিতে হলে

ভিডিও এডিটিংকে পেশা হিসেবে নিতে হলে বেশ কিছু বিষয় চিন্তা করে ধাপে ধাপে এগোনো ভালো। যেমন:

  • ভিডিও এডিটিং পুরোপুরি সৃষ্টিশীল একটি কাজ। আগ্রহ না থাকলে এ পেশায় আসা উচিত নয়। 
  • ভিডিও এডিটিং শেখার ক্ষেত্রে চট করে সফটওয়্যার দিয়ে শুরু করার চেয়ে আগে একটু পড়াশোনা করে নেওয়া ভালো। পড়াশোনা এবং ভালোভাবে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা অন্যদের চেয়ে এ ক্ষেত্রে আপনাকে এগিয়ে দেবে।
  • ভিডিও নির্মাণের ইতিহাস থেকে শুরু করে এডিটিংয়ের বিবর্তন, ক্যামেরার শট ডিভিশন— নির্ধারিতভাবে বিভিন্ন বিষয় জানা থাকলে সম্পাদনা বা এডিটিং বেশ যুক্তিযুক্ত ও নান্দনিক হয়ে ওঠে।
  • যে সফটওয়্যার দিয়েই যাত্রা শুরু হোক না কেন, তা পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে। পাশাপাশি পরিপূরক যেসব সফটওয়্যার, সেগুলোও জানতে হবে। যেমন কেউ হয়তো প্রিমিয়ার শিখলেন, তার সঙ্গে আফটার ইফেক্ট শিখলে কাজ বেশ সহজ হয়ে যায়। 
  • ভিডিও এডিটিং নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, সেসব কমিউনিটিতে নিজেকে যুক্ত করলে শেখার জন্য তা বেশ ফলদায়ক হয়। বর্তমানে ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের গ্রুপ রয়েছে। 
  • নতুন কী প্রযুক্তি আসছে বা সফটওয়্যারে ভার্সন পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন কী ফিচার আসছে, তা সময়ের সঙ্গে জেনে নিজেকে আপডেট রাখা জরুরি। না হলে এই পেশায় গ্রহণযোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা থাকে। 

কীভাবে শিখবেন

ভিডিও এডিটিং ঘরে বসে শেখা সম্ভব। তবে এটা বেশ সময়সাপেক্ষ। অনেকে অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে এডিটিং শিখে থাকেন। সুযোগ থাকলে সরাসরি নির্ভরযোগ্য কোথাও গিয়ে কোর্স করতে পারেন।

অনলাইনে ইউডেমি, টেন মিনিট স্কুলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এটি শেখায়। তবে সরাসরি শেখা ভালো। তাতে খুঁটিনাটি বিষয়ও ভালোভাবে শেখা যায়। পাঠশালা, ক্রিয়েটিভ আইটি, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মিডিয়া ভিশন ইনস্টিটিউটসহ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ভালোভাবে এ ধরনের কোর্স করিয়ে থাকে। কেউ চাইলে কোনো দক্ষ ভিডিও এডিটরের কাছে ব্যক্তিগতভাবেও শিখতে পারেন।

কাজের ক্ষেত্র

ভিডিও এডিটিংয়ে কাজের বেশ ক্ষেত্র বিস্তৃত। নাটক-সিনেমা-ওটিটি কনটেন্ট—সব ক্ষেত্রে দক্ষ ভিডিও এডিটর প্রয়োজন। 
তবে এ ক্ষেত্রে কাজ করতে হলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। ভালো এডিটর হতে হলে লম্বা সময় নিয়ে কাজ করে যেতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাঁরা এ কাজ করেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় যুক্ত থেকে দক্ষ হয়ে ওঠেন।

টেলিভিশন, অনলাইন মিডিয়ায় চাকরির ক্ষেত্রও বেশ বড়। পাশাপাশি এখন প্রিন্ট মিডিয়ায়ও অনলাইন ভার্সন রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানই ফুলটাইম ভিডিও এডিটর নিয়োগ দিয়ে থাকে।

সে অনুযায়ী যোগাযোগ করে সহজেই নিজেকে এই পেশায় জড়ানো যায়। বর্তমানে প্রমোশনের জন্য সব প্রতিষ্ঠানই ভিডিও নির্মাণের দিকে নজর দেয়। তাই প্রাসঙ্গিকভাবে ভিডিও এডিটিং সামনে চলে আসে।

অনলাইন ভিডিও কনটেন্ট বা ওভিসির বাজার এখন বেশ বড়। অনেকে এই ক্ষেত্রে কাজ করছেন। বিভিন্ন অফিসে ডিজিটাল মার্কেটিং বিভাগে ভিডিও এডিটর নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পেশায় বেতনও আকর্ষণীয়।

ফ্রিল্যান্সিং

আলাদাভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা বলতেই হয়। মার্কেটপ্লেসে এই কাজের বেশ চাহিদা রয়েছে। ভিডিও এডিটরদের অনেকে যেমন ক্লায়েন্টের বিভিন্ন কাজ করে দেন, একইভাবে অনেকে বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও নির্মাণ করে সেসব বিক্রিও করেন। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে অর্থ উপার্জন করতে হলে মার্কেটপ্লেসে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

ভিডিও এডিটিংয়ে কাজের ক্ষেত্র দিন দিন আরও বড় হবে। এখন থেকেই কেউ যদি কাজ শিখে দক্ষ হয়ে ওঠেন, তাহলে আজ থেকে ৫ বা ১০ বছর পরে এ পেশায় নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত হিসেবে দেখতে পাওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়।

ছবি: মঞ্জু আলম ও সংগৃহীত

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত