৪৯ ডলারের ক্রিপ্টো টোকেনের জন্য কেনিয়ায় হিড়িক, ওয়ার্ল্ডকয়েনের কার্যক্রম স্থগিত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১৯: ৩৩

স্যাম অল্টম্যানের নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ার্ল্ডকয়েনের নিবন্ধনের কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেনিয়া। জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

ওয়ার্ল্ডকয়েনে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য ‘আই বলে’ চোখের মণি স্ক্যান করাতে হয়। এই নিবন্ধনে আগ্রহী করাতে বিনা মূল্যে ৪৯ ডলার ক্রিপ্টো টোকেন দেওয়ার ঘোষণা দেয় স্যাম অল্টম্যানের কোম্পানি। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আর এই টোকেন পেতে ওয়ার্ল্ডকয়েনের অস্থায়ী নিবন্ধন কেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়ায়। এই বৃহৎ জনসমাগমকে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বলার পর গত বুধবার তাদের অনেকেই নিবন্ধন করতে পারেনি। তাদেরকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। 

কেনিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ল্ডকয়েনের বায়োমেট্রিক ডেটা সংরক্ষণ পদ্ধতি, অর্থের বিনিময়ে তথ্য নেওয়া ও প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে।

ওয়ার্ল্ডকয়েনের কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে কেনিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কার্যক্রমটির সত্যতা ও বৈধতা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা সংস্থা ও ডেটা সুরক্ষায় দায়িত্বরত সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর নাইরোবির একটি অস্থায়ী নিবন্ধন কেন্দ্রে নিবন্ধনের জন্য হাজার হাজার মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। 

ওয়েবস্টার মুসা নামে এক কেনিয়ান বিবিসির প্রতিবেদককে বলেন, তিনি বেকার ও অস্বচ্ছল। তাই ওয়ার্ল্ডকয়েনের ৪৯ ডলারের ক্রিপ্টো টোকেন পেতে নিবন্ধনের জন্য তিন দিন ধরে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

ডিকসন মুলি নামে আরেকজন দুই দিন ধরে লাইনে দাঁড়ালেও নিবন্ধন করতে পারেননি। তিনি বলেন, গতকাল অপেক্ষা করতে করতে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই আজ (বুধবার) আবার এসেছেন। অর্থের বিনিময়ে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। 

কেনিয়ায় কতজনের চোখের মণি স্ক্যান করা হয়েছে, সেবিষয়ে বিবিসিকে কোনো তথ্য দিতে পারেনি ওয়ার্ল্ডকয়েন। তবে এই ক্রিপ্টোকারেন্সির ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, তারা জন পরিষেবা হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিচয় ভাণ্ডার ও আর্থিক নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করছেন। এটার সুযোগ বিশ্বের যেকোনো দেশের সবাই নিতে পারবে। 

চ্যাটজিপিটির প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যান বলেন, চোখের মনি স্ক্যানের মাধ্যমে কেউ মানুষ না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা- নিশ্চিত করা যাবে। তাঁর দাবি, তাদের কার্যক্রমটি বিশ্বের মানুষের সার্বজনীন মৌলিক আয় নিশ্চিত করবে। কিন্তু কীভাবে এই দাবি কার্যকর হবে তা নিয়ে তিনি স্পষ্ট ধারণা দেননি।

ওয়াল্ডকয়েন বলছে, ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হবে না। কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোখের মণি স্ক্যান করার ফলে সংবেদনশীল ডেটা ভুল মানুষের হাতে চলে যেতে পারে। 

কেনিয়ার পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওয়ার্ল্ডকয়েনের চলমান নিবন্ধন নিয়ে নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ওয়ার্ল্ডকয়েন যে আইন মেনে কার্যক্রম চালাচ্ছে না, সেবিষয়ে তারা জনগণকে সতর্ক করেছে। 

কেনিয়ার আইন অনুযায়ী, ‘অপ্রয়োজনীয়ভাবে’ ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ ও সংরক্ষণ করতে না দেওয়ার অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। 

তবে ওয়ার্ল্ডকয়েন যে তথ্য চাচ্ছে, তার জন্য এত আগ্রাসী হওয়ার দরকার নেই বলে মনে করেন ডিজিটাল রাইটস বিষয়ক আইনজীবী মার্সি মুটেমি। তিনি বলেন, ‘কোম্পানির লক্ষ্য যদি শুধু মানুষ প্রমাণ করা হয়, তাহলে ব্যক্তি নিজে হাজির হলেই হয়।’
 
ওয়ার্ল্ডকয়েন বলেছে, কেনিয়ায় প্রযুক্তিগত বিকাশ হচ্ছে। দেশটির ৪০ লাখ মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করছে। তাই তারা আফ্রিকায় প্লাটফর্মটি চালুর জন্য কেনিয়াকে প্রথম দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছে।  

কেনিয়া ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ওয়ার্ল্ডকয়েনের কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। কিছু দেশের ডেটা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ল্ডকয়েনের কার্যক্রমকে নজরদারিতে রেখেছে। 

২০২২ সালে নভেম্বরে ওপেন এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চ টুল চ্যাটজিটিপি বাজারে আনার পর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপর গত জুলাইতে স্যাম অল্টম্যান বিটকয়েনের মতো নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি চালুর ঘোষণা দেয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত