জাহাঙ্গীর আলম
আজকাল আর পকেটভর্তি নগদ টাকা নিয়ে দূরে ভ্রমণ করার দরকার পড়ে না। মানিব্যাগের একপাশে গুঁজে রাখা ছোট্ট একটি ইলেকট্রনিক চিপ বসানো পলিমারের কার্ড থাকাই যথেষ্ট। দু-একশ থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত এই কার্ড ঘষেই লেনদেন করা সম্ভব।
সারা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিসা কার্ড। বাংলাদেশেও তাই। ভিসা কার্ডের সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, প্রিপেইড এবং গিফট কার্ড।
ক্রেডিট কার্ড: আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে গ্রাহক কেনাকাটা করতে পারেন। আবার এটিএম বুথ থেকে নগদ অর্থও উত্তোলন করা যায়। তবে এর জন্য ব্যাংক নির্ধারিত হারে সুদ দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সাধারণত ৪৫ দিন) বিনা সুদ বা মাশুলে সেই অর্থ পরিশোধ করা যায়। সোজা কথা, এটি একপ্রকার ঋণ।
এ ছাড়া বিনা সুদে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ, নগদ অর্থ ফেরত, নির্দিষ্ট খুচরা বিক্রেতার কাছে কেনাকাটা করার সময় বিশেষ সুবিধা ইত্যাদি অফারও থাকে।
ডেবিট কার্ড: ডেবিট কার্ড গ্রাহকদের তাদের সেভিং অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেনের সুযোগ দেয়। ক্রেডিট কার্ডের মতো এখানেও নানা অফার থাকতে পারে। তবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে অবশ্যই ব্যালেন্স থাকতে হয়।
প্রিপেইড এবং গিফট কার্ড: প্রিপেইড এবং গিফট কার্ড দিয়েও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করা যায়।
প্রিপেইড কার্ডগুলো ডিপোজিট ব্যালেন্স বা ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত নয়। এই কার্ডগুলোর বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আগে থেকেই ভরা থাকে। এটি ক্রেডিট সীমা হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ কার্ডধারী এই সীমার বেশি খরচ করতে পারেন না।
গিফট কার্ডও একই রকম। তবে সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু বিক্রেতার কাছে সুবিধা দিতে এই কার্ড ইস্যু করা হয়।
এসব কার্ড ব্যবহারের জন্য লেনদেন প্রক্রিয়ার পেছনের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা কিন্তু মোটেও আবশ্যক নয়। কারণ এক ঘষাতেই লেনদেন সম্পন্ন হয়ে যায়। কার্ডের মালিককে আক্ষরিক অর্থে কিছুই করতে হয় না। কিন্তু বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয় সে সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা থাকা ভালো। কারণ এখানে পুরো সিস্টেমের বিভিন্ন পর্যায়ে ফি কেটে নেওয়া হয়। লেনদেন প্রক্রিয়ার স্তরগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে কীভাবে এসব কার্ড নেওয়া যায়, কোথায় কীভাবে ব্যবহার করলে সুযোগ-সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে এবং ন্যূনতম খরচে এই সেবা পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে জানা হবে।
পুরো প্রক্রিয়াটিকে সংক্ষেপে বর্ণনা করলে দাঁড়ায়- ব্যাংক কার্ড নেটওয়ার্কগুলো মার্চেন্ট, প্রসেসর এবং ব্যাংকের মধ্যে শত শত কোটি টাকার লেনদেন করে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার কার্ডের চিপটি একটি প্রসেসরের কাছে লেনদেনের তথ্য পাঠায়, এরপর কার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য ইস্যুকারী ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়। ইস্যুকারী ব্যাংক কার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রসেসরের কাছে অনুমোদন পাঠায়। সর্বশেষ চূড়ান্ত ভাবে সেই নির্দেশনা মার্চেন্টের টার্মিনাল বা সফটওয়্যারে পৌঁছায়। আর তখনই লেনদেন সম্পন্ন হয়। ঘটনাটি ঘটে নিমেষের মধ্যে।
পুরো লেনদেন প্রক্রিয়ায় অনুমোদন (অথোরাইজেশন) পাওয়া কেবল প্রথম ধাপ। মার্চেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চাহিদার অর্থ জমা হওয়ার আগে অনুমোদনগুলো নিষ্পত্তি করতে হয়। ক্রেডিট কার্ড লেনদেন অনুমোদন এবং নিষ্পত্তি এই দুই-ধাপে প্রক্রিয়াটি নিষ্পন্ন হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রতিটি পর্যায়ে বিভিন্ন পরিমাণে ফি নির্ধারিত থাকে। আর উভয় ধাপে বা আংশিক ব্যর্থতার ফলে খরচ বেড়ে যেতে পারে এবং/অথবা লেনদেন সম্পন্ন নাও হতে পারে।
ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন নিষ্পত্তি হয় কীভাবে: মূল ভূমিকা কাদের
অনুমোদন এবং নিষ্পত্তিতে জড়িত মূল পক্ষগুলো হলো- কার্ডধারী, মার্চেন্ট (ব্যবসা প্রতিষ্ঠান), অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক (মার্চেন্ট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক), ইস্যুকারী ব্যাংক (কার্ডধারীর ব্যাংক) এবং কার্ড অ্যাসোসিয়েশন (ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ডিসকভার ইত্যাদি)।
কার্ডধারী
আপনার যদি একটি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থাকে তাহলে আপনি নিশ্চয়ই কার্ডধারীর ভূমিকা সম্পর্কে জানেন। তবে বিস্তারিত বলতে গেলে—একজন কার্ডধারী হলেন এমন একজন যিনি কার্ড প্রদানকারী ব্যাংক থেকে একটি ব্যাংক কার্ড (ক্রেডিট বা ডেবিট) পান। এরপর পণ্য বা পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদানের উদ্দেশ্যে লেনদেনের জন্য তিনি কার্ডটি উপস্থাপন করেন।
মার্চেন্ট
মার্চেন্ট বলতে বোঝায় যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোনো পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করে। কিন্তু কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দেয় যারা এখানে শুধু সেই মার্চেন্টের কথা বলা হচ্ছে। যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাদের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট আছে, যেটির মাধ্যমে তারা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড গ্রাহকদের পণ্য বা পরিষেবার বিনিময়ে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দিতে পারে তারাই মার্চেন্ট। ব্যবসার মালিক হিসেবে আপনি একজন মার্চেন্ট বলে গণ্য হতে পারেন।
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক বা মার্চেন্ট’স ব্যাংক
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক হলো কার্ড অ্যাসোসিয়েশনের (ভিসা বা মাস্টারকার্ড) নিবন্ধিত সদস্য। অ্যাকোয়ারিং ব্যাংককে সাধারণত মার্চেন্ট ব্যাংক বলা হয়। এই ধরনের ব্যাংক এমন একটি অ্যাকাউন্ট (যেটিকে বলে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট) পরিচালনার জন্য মার্চেন্টদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকে, যা মার্চেন্টকে ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড গ্রহণ করার অনুমতি দেয়। অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকগুলো মার্চেন্টদের কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং সফটওয়্যার সরবরাহ করে। এ ছাড়া গ্রাহক পরিষেবা এবং কার্ড গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রয়োজনীয় দিকগুলোও তারা পরিচালনা করে। অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পরিশোধিত মূল্যের বিপরীতে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে সেই পরিমাণ ডিপোজিট (তহবিল) জমা করে।
কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক
অবশ্য নাম দেখেই বুঝতে পারার কথা- ইস্যুকারী ব্যাংক গ্রাহকদের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। ইস্যুকারী ব্যাংক একই সঙ্গে কার্ড অ্যাসোসিয়েশনের (ভিসা এবং মাস্টারকার্ড) সদস্যও।
ইস্যুকারী ব্যাংকগুলো তাদের কার্ডধারীরা যে কেনাকাটা করেন তার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংককে অর্থ প্রদান করে। এরপরে কার্ডধারীর দায়িত্ব হয় তাঁদের ক্রেডিট কার্ড চুক্তির শর্তাবলির অধীনে কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংককে সেই অর্থ পরিশোধ করা।
কার্ড অ্যাসোসিয়েশন (ভিসা এবং মাস্টারকার্ড)
ভিসা এবং মাস্টারকার্ড কিন্তু কোনো ব্যাংক নয়। তারা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড বা মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ইস্যু করে না। বরং তারা নিজ নিজ কার্ড ব্র্যান্ডের জন্য অভিভাবক (কাস্টডিয়ান) এবং ক্লিয়ারিং হাউস হিসেবে কাজ করে। তারা ক্রেডিট কার্ড বা ইলেকট্রনিক লেনদেন প্রক্রিয়াকরণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্ডিপেনডেন্ট সেলস অর্গানাইজেশন (আইএসও) এবং মেম্বারশিপ সার্ভিস প্রভাইডার্সের (এমএসপি) সঙ্গে একটি গভর্নিং বডি হিসেবেও কাজ করে। এখান থেকে ‘কার্ড অ্যাসোসিয়েশন’ নাম এসেছে।
কার্ড অ্যাসোসিয়েশনের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের পরিচালনা করা। যার মধ্যে রয়েছে ইস্যুকারী এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিনিময় ফি এবং যোগ্যতা নির্দেশিকা নির্ধারণ করা, কার্ড নেটওয়ার্ক এবং নিজ ব্র্যান্ডের উন্নয়ন এবং অবশ্যই পুরো প্রক্রিয়া থেকে মুনাফা করা। মুনাফার বিষয়টি এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, ফলত ভিসা এবং মাস্টারকার্ড এখন পাবলিক কোম্পানি (পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত)।
অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানের জন্য ভিসা ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব ভিসানেট প্ল্যাটফর্ম। আর এ কাজে মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে তাদের ব্যাংকনেট নেটওয়ার্ক।
ক্রেডিট কার্ড অনুমোদন (অথোরাইজেশন) প্রক্রিয়া
অথোরাইজেশন প্রক্রিয়ায় ওপরে উল্লিখিত সব পক্ষই নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে। নিচে কোন পক্ষের কী ভূমিকা থাকে তা তুলে ধরা হলো:
কার্ডধারী
একজন কার্ডধারী পণ্য বা পরিষেবার জন্য অর্থ পরিশোধ করতে একটি মার্চেন্টের কাছে তাঁর কার্ডটি উপস্থাপন করেন। এরপরই ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের সূচনা হয়।
মার্চেন্ট
মার্চেন্ট তাদের ক্রেডিট কার্ড মেশিন, সফটওয়্যার বা গেটওয়ে ব্যবহার করে কার্ডধারীর তথ্য এবং লেনদেনের বিশদ বিবরণ তাদের মার্চেন্ট ব্যাংক বা লেনদেন প্রক্রিয়াকারী ব্যাংকের কাছে পাঠায়।
অ্যাকোয়ারিং বা প্রসেসর
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক (বা এর প্রসেসর) লেনদেনের তথ্য গ্রহণ করে এবং যথাযথ কার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য কার্ডধারীর ইস্যুকারী ব্যাংকে পাঠায়।
ভিসা/মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্ক
মাস্টারকার্ড লেনদেনের তথ্য তাদের নিজস্ব ব্যাংকনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক এবং প্রক্রিয়াকারীর (অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক বা এর প্রসেসর) মধ্যে বিনিময় করে। আর ভিসা কার্ড লেনদেনের তথ্য তাদের ভিসানেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই কাজটি করে।
ইস্যুকারী
ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী ব্যাংক ব্যাংকনেট বা ভিসানেটের মাধ্যমে অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকের (বা এর প্রসেসর) কাছ থেকে লেনদেনের তথ্য পায়। এরপর সে লেনদেনের তথ্য যাচাই করে। সেই সঙ্গে লেনদেনটি বৈধ কি-না, কার্ডধারীর যথেষ্ট ব্যালেন্স আছে কি-না সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর লেনদেনের অনুমোদন দেয় বা প্রত্যাখ্যান করে তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।
ভিসা/মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্ক
কার্ড প্রদানকারী ব্যাংক যথাযথ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকে (বা এর প্রসেসর) একটি কোড পাঠায়।
মার্চেন্ট
কোডটি মার্চেন্টের টার্মিনাল, সফটওয়্যার বা গেটওয়েতে পৌঁছায় এবং লেনদেন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা একটি ব্যাচ ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়।
ক্লিয়ারিং এবং নিষ্পত্তি যেভাবে সম্পন্ন হয়
ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড লেনদেন যেভাবে কাজ করে সেই প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় অংশ হলো ক্লিয়ারিং এবং নিষ্পত্তি (সেটেলমেন্ট)। অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও সঞ্চালিত হওয়ার পরে এটি ঘটে। নিষ্পত্তির জন্য মার্চেন্ট প্রসেসরে অনুমোদনের জন্য একটি ‘ব্যাচ’ পাঠায়। সাধারণত দিনে একবার এই কাজটি হয়। প্রসেসর অনুমোদন প্রক্রিয়ার পুনঃসমন্বয় করে এবং কার্ড অ্যাসোসিয়েশন নেটওয়ার্কে ব্যাচ জমা দেয়। প্রসেসর তখন পণ্য বা সেবা বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত তহবিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির (পণ্য বা সেবা বিক্রয়কারী মার্চেন্ট) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে। পাশাপাশি প্রসেসিং ফি কেটে নেয়। এই পর্যায়ে লেনদেনটি সম্পন্ন হয়।
এদিকে কার্ড ইস্যুকারী এবং অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক যোগাযোগ এবং অর্থ স্থানান্তর অব্যাহত রাখে। অর্থাৎ ইস্যুকারী ব্যাংক কার্ডধারীর কেনাকাটার অর্থ অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকে পাঠায়। অবশেষে কার্ডধারীকে সেই অর্থ সেই কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংককেই দিতে হয়। এই পদক্ষেপগুলোর কোনটির সঙ্গেই আসলে কার্ডধারীর কোনো সম্পৃক্ততা লাগে না।
মার্চেন্ট
এবার মার্চেন্ট তাদের অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকে (বা ব্যাংকের প্রসেসর) অনুমোদিত অথোরাইজেশনের একটি ব্যাচ পাঠিয়ে নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া শুরু করে। অনুমোদনের ব্যাচগুলো সাধারণত প্রতি কার্যদিবসের শেষে পাঠানো হয়। কার্ড থেকে একাধিক লেনদেন হলে সব মিলে একটি ব্যাচ তৈরি হয়।
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক (বা এর প্রসেসর) যথাযথ কার্ড অ্যাসোসিয়েশন নেটওয়ার্কের (ভিসানেট বা ব্যাংকনেট) মাধ্যমে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে অনুমোদনের ব্যাচগুলো পুনরায় একত্রিত করে এবং পাঠিয়ে দেয়।
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক অটোমেটেড ক্লিয়ারিংহাউসের (এসিএইচ) মাধ্যমে মার্চেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা করে এবং মার্চেন্টের সঙ্গে চুক্তির ওপর ভিত্তি করে মাসিক, দৈনিক বা উভয় হিসাবে নির্দিষ্ট প্রসেসিং ফি কেটে নেয়।
কার্ড নেটওয়ার্ক
কার্ড অ্যাসোসিয়েশন কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ফি কেটে নেয় এবং অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তাদের পাওনা পাঠিয়ে দেয়।
ইস্যুকারী
কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক মূলত তার কার্ডধারীর কেনাকাটার জন্য অ্যাকোয়ারিং ব্যাংককে অর্থ প্রদান করে।
কার্ডধারী
কার্ডধারী তার কেনাকাটার জন্য ইস্যুকারী ব্যাংক এবং কার্ড চুক্তির সঙ্গে যুক্ত সুদ এবং ফি পরিশোধের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।
তহবিল এবং ফি
ওপরে নিষ্পত্তি এবং ক্লিয়ারিংয়ের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রসেসর ক্রেডিট কার্ডে বিক্রয় থেকে মার্চেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তহবিল জমা করবে এবং প্রক্রিয়াকরণ ফি কেটে নেবে। যাইহোক, ঠিক কীভাবে ফি কেটে নেওয়া হয় এবং কখন তহবিল জমা করা হয় তাতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
ক্রেডিট কার্ড ডিপোজিট
আজকাল, বেশির ভাগ প্রসেসর পণ্য কেনার পরের দিন তহবিল জমা করে। এর অর্থ মার্চেন্ট আজকের ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের জন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ পাবে আগামীকাল।
কিছু ক্ষেত্রে, প্রসেসরেরা মার্চেন্টের তহবিল আটকে দিতে পারে। লেনদেনে জালিয়াতির সন্দেহ বা অন্য কোনো কারণে লেনদেনটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে তাৎক্ষণিক তহবিল জমা হবে না। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক কার্ড ঘষার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট জমা হওয়া দেখতে পাবেন না মার্চেন্ট।
আজকাল আর পকেটভর্তি নগদ টাকা নিয়ে দূরে ভ্রমণ করার দরকার পড়ে না। মানিব্যাগের একপাশে গুঁজে রাখা ছোট্ট একটি ইলেকট্রনিক চিপ বসানো পলিমারের কার্ড থাকাই যথেষ্ট। দু-একশ থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত এই কার্ড ঘষেই লেনদেন করা সম্ভব।
সারা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিসা কার্ড। বাংলাদেশেও তাই। ভিসা কার্ডের সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, প্রিপেইড এবং গিফট কার্ড।
ক্রেডিট কার্ড: আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে গ্রাহক কেনাকাটা করতে পারেন। আবার এটিএম বুথ থেকে নগদ অর্থও উত্তোলন করা যায়। তবে এর জন্য ব্যাংক নির্ধারিত হারে সুদ দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সাধারণত ৪৫ দিন) বিনা সুদ বা মাশুলে সেই অর্থ পরিশোধ করা যায়। সোজা কথা, এটি একপ্রকার ঋণ।
এ ছাড়া বিনা সুদে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ, নগদ অর্থ ফেরত, নির্দিষ্ট খুচরা বিক্রেতার কাছে কেনাকাটা করার সময় বিশেষ সুবিধা ইত্যাদি অফারও থাকে।
ডেবিট কার্ড: ডেবিট কার্ড গ্রাহকদের তাদের সেভিং অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেনের সুযোগ দেয়। ক্রেডিট কার্ডের মতো এখানেও নানা অফার থাকতে পারে। তবে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে অবশ্যই ব্যালেন্স থাকতে হয়।
প্রিপেইড এবং গিফট কার্ড: প্রিপেইড এবং গিফট কার্ড দিয়েও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করা যায়।
প্রিপেইড কার্ডগুলো ডিপোজিট ব্যালেন্স বা ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত নয়। এই কার্ডগুলোর বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আগে থেকেই ভরা থাকে। এটি ক্রেডিট সীমা হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ কার্ডধারী এই সীমার বেশি খরচ করতে পারেন না।
গিফট কার্ডও একই রকম। তবে সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু বিক্রেতার কাছে সুবিধা দিতে এই কার্ড ইস্যু করা হয়।
এসব কার্ড ব্যবহারের জন্য লেনদেন প্রক্রিয়ার পেছনের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা কিন্তু মোটেও আবশ্যক নয়। কারণ এক ঘষাতেই লেনদেন সম্পন্ন হয়ে যায়। কার্ডের মালিককে আক্ষরিক অর্থে কিছুই করতে হয় না। কিন্তু বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয় সে সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা থাকা ভালো। কারণ এখানে পুরো সিস্টেমের বিভিন্ন পর্যায়ে ফি কেটে নেওয়া হয়। লেনদেন প্রক্রিয়ার স্তরগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে কীভাবে এসব কার্ড নেওয়া যায়, কোথায় কীভাবে ব্যবহার করলে সুযোগ-সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে এবং ন্যূনতম খরচে এই সেবা পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে জানা হবে।
পুরো প্রক্রিয়াটিকে সংক্ষেপে বর্ণনা করলে দাঁড়ায়- ব্যাংক কার্ড নেটওয়ার্কগুলো মার্চেন্ট, প্রসেসর এবং ব্যাংকের মধ্যে শত শত কোটি টাকার লেনদেন করে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার কার্ডের চিপটি একটি প্রসেসরের কাছে লেনদেনের তথ্য পাঠায়, এরপর কার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য ইস্যুকারী ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়। ইস্যুকারী ব্যাংক কার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রসেসরের কাছে অনুমোদন পাঠায়। সর্বশেষ চূড়ান্ত ভাবে সেই নির্দেশনা মার্চেন্টের টার্মিনাল বা সফটওয়্যারে পৌঁছায়। আর তখনই লেনদেন সম্পন্ন হয়। ঘটনাটি ঘটে নিমেষের মধ্যে।
পুরো লেনদেন প্রক্রিয়ায় অনুমোদন (অথোরাইজেশন) পাওয়া কেবল প্রথম ধাপ। মার্চেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চাহিদার অর্থ জমা হওয়ার আগে অনুমোদনগুলো নিষ্পত্তি করতে হয়। ক্রেডিট কার্ড লেনদেন অনুমোদন এবং নিষ্পত্তি এই দুই-ধাপে প্রক্রিয়াটি নিষ্পন্ন হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রতিটি পর্যায়ে বিভিন্ন পরিমাণে ফি নির্ধারিত থাকে। আর উভয় ধাপে বা আংশিক ব্যর্থতার ফলে খরচ বেড়ে যেতে পারে এবং/অথবা লেনদেন সম্পন্ন নাও হতে পারে।
ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন নিষ্পত্তি হয় কীভাবে: মূল ভূমিকা কাদের
অনুমোদন এবং নিষ্পত্তিতে জড়িত মূল পক্ষগুলো হলো- কার্ডধারী, মার্চেন্ট (ব্যবসা প্রতিষ্ঠান), অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক (মার্চেন্ট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক), ইস্যুকারী ব্যাংক (কার্ডধারীর ব্যাংক) এবং কার্ড অ্যাসোসিয়েশন (ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ডিসকভার ইত্যাদি)।
কার্ডধারী
আপনার যদি একটি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থাকে তাহলে আপনি নিশ্চয়ই কার্ডধারীর ভূমিকা সম্পর্কে জানেন। তবে বিস্তারিত বলতে গেলে—একজন কার্ডধারী হলেন এমন একজন যিনি কার্ড প্রদানকারী ব্যাংক থেকে একটি ব্যাংক কার্ড (ক্রেডিট বা ডেবিট) পান। এরপর পণ্য বা পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদানের উদ্দেশ্যে লেনদেনের জন্য তিনি কার্ডটি উপস্থাপন করেন।
মার্চেন্ট
মার্চেন্ট বলতে বোঝায় যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোনো পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করে। কিন্তু কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দেয় যারা এখানে শুধু সেই মার্চেন্টের কথা বলা হচ্ছে। যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাদের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট আছে, যেটির মাধ্যমে তারা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড গ্রাহকদের পণ্য বা পরিষেবার বিনিময়ে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দিতে পারে তারাই মার্চেন্ট। ব্যবসার মালিক হিসেবে আপনি একজন মার্চেন্ট বলে গণ্য হতে পারেন।
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক বা মার্চেন্ট’স ব্যাংক
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক হলো কার্ড অ্যাসোসিয়েশনের (ভিসা বা মাস্টারকার্ড) নিবন্ধিত সদস্য। অ্যাকোয়ারিং ব্যাংককে সাধারণত মার্চেন্ট ব্যাংক বলা হয়। এই ধরনের ব্যাংক এমন একটি অ্যাকাউন্ট (যেটিকে বলে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট) পরিচালনার জন্য মার্চেন্টদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকে, যা মার্চেন্টকে ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড গ্রহণ করার অনুমতি দেয়। অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকগুলো মার্চেন্টদের কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং সফটওয়্যার সরবরাহ করে। এ ছাড়া গ্রাহক পরিষেবা এবং কার্ড গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রয়োজনীয় দিকগুলোও তারা পরিচালনা করে। অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পরিশোধিত মূল্যের বিপরীতে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে সেই পরিমাণ ডিপোজিট (তহবিল) জমা করে।
কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক
অবশ্য নাম দেখেই বুঝতে পারার কথা- ইস্যুকারী ব্যাংক গ্রাহকদের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। ইস্যুকারী ব্যাংক একই সঙ্গে কার্ড অ্যাসোসিয়েশনের (ভিসা এবং মাস্টারকার্ড) সদস্যও।
ইস্যুকারী ব্যাংকগুলো তাদের কার্ডধারীরা যে কেনাকাটা করেন তার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংককে অর্থ প্রদান করে। এরপরে কার্ডধারীর দায়িত্ব হয় তাঁদের ক্রেডিট কার্ড চুক্তির শর্তাবলির অধীনে কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংককে সেই অর্থ পরিশোধ করা।
কার্ড অ্যাসোসিয়েশন (ভিসা এবং মাস্টারকার্ড)
ভিসা এবং মাস্টারকার্ড কিন্তু কোনো ব্যাংক নয়। তারা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড বা মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ইস্যু করে না। বরং তারা নিজ নিজ কার্ড ব্র্যান্ডের জন্য অভিভাবক (কাস্টডিয়ান) এবং ক্লিয়ারিং হাউস হিসেবে কাজ করে। তারা ক্রেডিট কার্ড বা ইলেকট্রনিক লেনদেন প্রক্রিয়াকরণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্ডিপেনডেন্ট সেলস অর্গানাইজেশন (আইএসও) এবং মেম্বারশিপ সার্ভিস প্রভাইডার্সের (এমএসপি) সঙ্গে একটি গভর্নিং বডি হিসেবেও কাজ করে। এখান থেকে ‘কার্ড অ্যাসোসিয়েশন’ নাম এসেছে।
কার্ড অ্যাসোসিয়েশনের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের পরিচালনা করা। যার মধ্যে রয়েছে ইস্যুকারী এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিনিময় ফি এবং যোগ্যতা নির্দেশিকা নির্ধারণ করা, কার্ড নেটওয়ার্ক এবং নিজ ব্র্যান্ডের উন্নয়ন এবং অবশ্যই পুরো প্রক্রিয়া থেকে মুনাফা করা। মুনাফার বিষয়টি এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, ফলত ভিসা এবং মাস্টারকার্ড এখন পাবলিক কোম্পানি (পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত)।
অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানের জন্য ভিসা ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব ভিসানেট প্ল্যাটফর্ম। আর এ কাজে মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে তাদের ব্যাংকনেট নেটওয়ার্ক।
ক্রেডিট কার্ড অনুমোদন (অথোরাইজেশন) প্রক্রিয়া
অথোরাইজেশন প্রক্রিয়ায় ওপরে উল্লিখিত সব পক্ষই নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে। নিচে কোন পক্ষের কী ভূমিকা থাকে তা তুলে ধরা হলো:
কার্ডধারী
একজন কার্ডধারী পণ্য বা পরিষেবার জন্য অর্থ পরিশোধ করতে একটি মার্চেন্টের কাছে তাঁর কার্ডটি উপস্থাপন করেন। এরপরই ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের সূচনা হয়।
মার্চেন্ট
মার্চেন্ট তাদের ক্রেডিট কার্ড মেশিন, সফটওয়্যার বা গেটওয়ে ব্যবহার করে কার্ডধারীর তথ্য এবং লেনদেনের বিশদ বিবরণ তাদের মার্চেন্ট ব্যাংক বা লেনদেন প্রক্রিয়াকারী ব্যাংকের কাছে পাঠায়।
অ্যাকোয়ারিং বা প্রসেসর
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক (বা এর প্রসেসর) লেনদেনের তথ্য গ্রহণ করে এবং যথাযথ কার্ড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য কার্ডধারীর ইস্যুকারী ব্যাংকে পাঠায়।
ভিসা/মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্ক
মাস্টারকার্ড লেনদেনের তথ্য তাদের নিজস্ব ব্যাংকনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক এবং প্রক্রিয়াকারীর (অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক বা এর প্রসেসর) মধ্যে বিনিময় করে। আর ভিসা কার্ড লেনদেনের তথ্য তাদের ভিসানেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই কাজটি করে।
ইস্যুকারী
ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী ব্যাংক ব্যাংকনেট বা ভিসানেটের মাধ্যমে অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকের (বা এর প্রসেসর) কাছ থেকে লেনদেনের তথ্য পায়। এরপর সে লেনদেনের তথ্য যাচাই করে। সেই সঙ্গে লেনদেনটি বৈধ কি-না, কার্ডধারীর যথেষ্ট ব্যালেন্স আছে কি-না সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর লেনদেনের অনুমোদন দেয় বা প্রত্যাখ্যান করে তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।
ভিসা/মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্ক
কার্ড প্রদানকারী ব্যাংক যথাযথ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকে (বা এর প্রসেসর) একটি কোড পাঠায়।
মার্চেন্ট
কোডটি মার্চেন্টের টার্মিনাল, সফটওয়্যার বা গেটওয়েতে পৌঁছায় এবং লেনদেন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা একটি ব্যাচ ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়।
ক্লিয়ারিং এবং নিষ্পত্তি যেভাবে সম্পন্ন হয়
ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড লেনদেন যেভাবে কাজ করে সেই প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় অংশ হলো ক্লিয়ারিং এবং নিষ্পত্তি (সেটেলমেন্ট)। অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও সঞ্চালিত হওয়ার পরে এটি ঘটে। নিষ্পত্তির জন্য মার্চেন্ট প্রসেসরে অনুমোদনের জন্য একটি ‘ব্যাচ’ পাঠায়। সাধারণত দিনে একবার এই কাজটি হয়। প্রসেসর অনুমোদন প্রক্রিয়ার পুনঃসমন্বয় করে এবং কার্ড অ্যাসোসিয়েশন নেটওয়ার্কে ব্যাচ জমা দেয়। প্রসেসর তখন পণ্য বা সেবা বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত তহবিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির (পণ্য বা সেবা বিক্রয়কারী মার্চেন্ট) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে। পাশাপাশি প্রসেসিং ফি কেটে নেয়। এই পর্যায়ে লেনদেনটি সম্পন্ন হয়।
এদিকে কার্ড ইস্যুকারী এবং অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক যোগাযোগ এবং অর্থ স্থানান্তর অব্যাহত রাখে। অর্থাৎ ইস্যুকারী ব্যাংক কার্ডধারীর কেনাকাটার অর্থ অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকে পাঠায়। অবশেষে কার্ডধারীকে সেই অর্থ সেই কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংককেই দিতে হয়। এই পদক্ষেপগুলোর কোনটির সঙ্গেই আসলে কার্ডধারীর কোনো সম্পৃক্ততা লাগে না।
মার্চেন্ট
এবার মার্চেন্ট তাদের অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকে (বা ব্যাংকের প্রসেসর) অনুমোদিত অথোরাইজেশনের একটি ব্যাচ পাঠিয়ে নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া শুরু করে। অনুমোদনের ব্যাচগুলো সাধারণত প্রতি কার্যদিবসের শেষে পাঠানো হয়। কার্ড থেকে একাধিক লেনদেন হলে সব মিলে একটি ব্যাচ তৈরি হয়।
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক (বা এর প্রসেসর) যথাযথ কার্ড অ্যাসোসিয়েশন নেটওয়ার্কের (ভিসানেট বা ব্যাংকনেট) মাধ্যমে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে অনুমোদনের ব্যাচগুলো পুনরায় একত্রিত করে এবং পাঠিয়ে দেয়।
অ্যাকোয়ারিং ব্যাংক অটোমেটেড ক্লিয়ারিংহাউসের (এসিএইচ) মাধ্যমে মার্চেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা করে এবং মার্চেন্টের সঙ্গে চুক্তির ওপর ভিত্তি করে মাসিক, দৈনিক বা উভয় হিসাবে নির্দিষ্ট প্রসেসিং ফি কেটে নেয়।
কার্ড নেটওয়ার্ক
কার্ড অ্যাসোসিয়েশন কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ফি কেটে নেয় এবং অ্যাকোয়ারিং ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তাদের পাওনা পাঠিয়ে দেয়।
ইস্যুকারী
কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক মূলত তার কার্ডধারীর কেনাকাটার জন্য অ্যাকোয়ারিং ব্যাংককে অর্থ প্রদান করে।
কার্ডধারী
কার্ডধারী তার কেনাকাটার জন্য ইস্যুকারী ব্যাংক এবং কার্ড চুক্তির সঙ্গে যুক্ত সুদ এবং ফি পরিশোধের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।
তহবিল এবং ফি
ওপরে নিষ্পত্তি এবং ক্লিয়ারিংয়ের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রসেসর ক্রেডিট কার্ডে বিক্রয় থেকে মার্চেন্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তহবিল জমা করবে এবং প্রক্রিয়াকরণ ফি কেটে নেবে। যাইহোক, ঠিক কীভাবে ফি কেটে নেওয়া হয় এবং কখন তহবিল জমা করা হয় তাতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
ক্রেডিট কার্ড ডিপোজিট
আজকাল, বেশির ভাগ প্রসেসর পণ্য কেনার পরের দিন তহবিল জমা করে। এর অর্থ মার্চেন্ট আজকের ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের জন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ পাবে আগামীকাল।
কিছু ক্ষেত্রে, প্রসেসরেরা মার্চেন্টের তহবিল আটকে দিতে পারে। লেনদেনে জালিয়াতির সন্দেহ বা অন্য কোনো কারণে লেনদেনটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে তাৎক্ষণিক তহবিল জমা হবে না। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক কার্ড ঘষার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট জমা হওয়া দেখতে পাবেন না মার্চেন্ট।
এক্সের (সাবেক টুইটার) প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম থ্রেডসের অ্যালগরিদম পরিবর্তন করল মেটা। এর ফলে যেসব অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা ফলো করেন সেগুলোর কনটেন্টই বেশি দেখানো হবে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ফিচারটি চালু হয়।
৪ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইম ম্যাগাজিন–এর কভারে ধনকুবের ইলন মাস্কের ‘টু ডু লিস্ট’ বা দিনের কাজের তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে এটি মাস্কের ব্যক্তিগত চেকলিস্ট নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন মাস্ক।
৫ ঘণ্টা আগেটাইপ করার চেয়ে ভয়েস মেসেজ পাঠানো বেশ সহজ। তবে অনেক সময় ভয়েস মেসেজ সবার সামনে শোনা যায় না। সে ক্ষেত্রে মেসেজ না শুনে রিপ্লাই–ও দেওয়া যায়না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য মেসেজ ট্রান্সক্রাইব ফিচার যুক্ত করল হোয়াটসঅ্যাপ। এই ফিচারের মাধ্যমে ভয়েস মেসেজগুলো সহজে টেক্সটে রূপান্তর করা যাবে।
৭ ঘণ্টা আগেনিয়মিত নতুন উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার জন্য পরিচিত জাপান। এবার ‘মানুষ ধোয়ার মেশিন’ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিল দেশটি। এটি মানুষ গোসলের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। যন্ত্রটির কার্যকারিতা ও ডিজাইন দেখে একে ‘মানুষ ধোয়ার ওয়াশিং মেশিন’ বলে আখ্যা দিয়েছে অনেকই।
৭ ঘণ্টা আগে