ফ্রিল্যান্স মার্কেট: ভবিষ্যতে যা কাজে লাগবে

নাহিদ ইসলাম
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭: ৪৬
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ১৪

‘গিগ ইকোনমি’কে বাংলায় প্রকল্পভিত্তিক কাজের অর্থনীতি বললে অনেকটা কাছাকাছি অর্থ হয়। প্রতিবছর এর আকার বাড়ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদান আছে এই অর্থনৈতিক খাতের বিকাশে।

চুক্তিভিত্তিক এমন গিগজাতীয় কাজ করে যাঁরা উপার্জন করেন, তাঁদের ফ্রিল্যান্সার বলা হয়। সারা বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের ১৪ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে কাজ করছেন! প্রবাসী ফ্রিল্যান্সারদের ধরলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ৫০ হাজার। ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। বেসিসের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিজিটাল সেবা রপ্তানি আয় ছিল ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে বৈশ্বিক গড় উপার্জনের তুলনায় ঘণ্টাপ্রতি ফ্রিল্যান্সিং আয়ের দিক থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। অথচ বৈশ্বিক গিগ ইকোনমি ২০১৯ সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম দ্রুত বর্ধনশীল ফ্রিল্যান্স মার্কেট।

পিছিয়ে থাকার কারণ
গড় আয়ে পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার বেশি উপার্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেন না। সার্বিকভাবে এ জন্য বাংলাদেশিরা ফিলিপাইন, ভারত ও পাকিস্তান থেকে পিছিয়ে। কেবল সস্তা শ্রমের কারণে দেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন অনলাইন জব মার্কেটপ্লেসে জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যেখানে দুর্বার গতিতে কাজের ধরন প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছে, সেখানে স্বল্প দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের কাজ পাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে যেসব দক্ষতা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, সেই সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করার এখনই সময়। যে বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন ভবিষ্যতের জন্য:

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
বিজনেস রিসার্চ ইনসাইটসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০২১ সালে বিশ্বে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট খাতের আকার ছিল ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৭ সালে এটি ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। ২০৩১ সাল পর্যন্ত এ খাতে কর্মসংস্থান ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে; বিশেষ করে পাইথন, জাভা, জাভা স্ক্রিপ্টসহ অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানা ডেভেলপারদের বিরাট চাহিদা রয়েছে। ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি ক্রমেই ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

কপি রাইটিং
ভিডিও স্ক্রিপ্ট থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য পোস্ট, বিজ্ঞপ্তি কিংবা পণ্যের বিবরণ, মার্কেটিং মেসেজ, ই-মেইল মাধ্যম যা-ই হোক না কেন, অডিয়েন্সের মনোযোগ ধরে রাখার মতো অভিনব আর মজাদার কপি লিখতে পারলে বিজ্ঞাপনজগতে তার বেশ কদর রয়েছে। ভালো কপিরাইটার হওয়ার বিশেষ প্রতিভা থেকেও অনেক বেশি জরুরি অসংখ্য বেস্টসেলার বই পড়া, ভাইরাল কনটেন্ট বিশ্লেষণ করা আর নিত্যনতুন ট্রেন্ড সম্পর্কে সচেতন থাকা। অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স কপিরাইটারদের জন্য ৫০ থেকে ১০০ বা এরও বেশি ডলার প্রতি ঘণ্টায় উপার্জন করা বেশ সাধারণ ব্যাপার।

ডিজিটাল মার্কেটিং
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাড ম্যানেজমেন্ট, গুগল অ্যাডস, কনটেন্ট মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠলে ডিজিটাল মার্কেটিং খাতে সফল হওয়া সম্ভব।

কনটেন্ট রাইটিং
ব্লগ, আর্টিকেল, ওয়েব কনটেন্টসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের জন্য ফ্রিল্যান্স কনটেন্ট রাইটারদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ইংরেজি ভাষা এবং বিষয়ভিত্তিক ওয়েব রিসার্চের দক্ষতা অর্জন করলে কনটেন্ট রাইটার হিসেবে অনলাইন জব মার্কেটপ্লেসে প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে।

ডেটা অ্যানালিস্ট
জব মার্কেটপ্লেসে ডেটা অ্যানালিস্ট ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এক্সেলের পিভট টেবিল দিয়ে এক্সপেন্স বা সেলস ডেটা অ্যানালাইসিস থেকে শুরু করে পাওয়ার বিআই এবং পাইথন কোডিং করে ডেটা ভিজুয়ালাইজেশনের মতো উচ্চতর দক্ষতা সব ধরনের ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুগল ও আইবিএমের ডেটা অ্যানালিস্ট সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম নতুনদের জন্য বেশ উপকারী। আরও উচ্চতর দক্ষতা অর্জন করতে চাইলে মাইক্রোসফট ডেটা অ্যানালিস্ট সার্টিফিকেশন বেশ কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য।

এআই ইঞ্জিনিয়ার
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তবে এ খাতে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য বিশেষায়িত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। অ্যালগরিদম উদ্ভাবন করা অথবা মানুষের কথা ও লেখার ভাষা বুঝতে পারার মতো ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং মডেল ডেভেলপ করার জন্য বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অনলাইনে খুব কম খরচে দারুণ সব কোর্স পাওয়া যায় এআইয়ের ওপর; বিশেষ করে নতুনদের জন্য কোর্সেরা প্ল্যাটফর্মের এআই ফর এভরিওয়ান খুবই ভালো একটি ভিত্তি তৈরি করে দিতে পারে।

 গ্রাফিক ডিজাইনার
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের একটি বড় অংশই গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। গ্রাফিক ডিজাইনের কাজের যথেষ্ট চাহিদা থাকলেও প্রতিযোগিতা বেশি। তবে বিশেষায়িত দক্ষতা অর্জন করে একজন ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার ভালো উপার্জন করতে পারবেন। ভবিষ্যতে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটরের মতো জনপ্রিয় টুলস ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে জেনারেটিভ এআই এবং প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে ধারণা থাকাও জরুরি। ইউডেমির প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং বেসিকস কোর্স এ জন্য সহায়ক হবে। এ ছাড়া ক্যানভায় এখন ম্যাজিক স্টুডিও টুলস দিয়ে অবজেক্ট সিলেকশন, টেমপ্লেট রিসাইজ, প্রম্পট দিয়ে ইমেজ জেনারেট করা যায় খুব সহজে।

প্রজেক্ট ম্যানেজার
নির্মাণ, প্রকৌশল, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণা, মার্কেটিং, উৎপাদন, প্রকাশনাসহ বেশির ভাগ খাতে সময়মতো ও বাজেটের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রয়োজন হয়। প্রতিষ্ঠানের আকার যত বড়, কর্মীর সংখ্যা যত বেশি, সঠিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনা তত জরুরি। না হলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট ম্যানেজারদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো প্রকল্পের সব সদস্য ও বিভাগের কাজের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা। এ জন্য দুনিয়াজোড়া যেসব সফটওয়্যার জনপ্রিয়, এর মধ্যে স্ল্যাক আর টিমস সেরা। এ ছাড়া নবিশদের জন্য ট্রেলো বেশ কার্যকর।

তথ্যসূত্র: বিজনেস রিসার্চ ইনসাইটস ও ইন্ডিয়া নেক্সট

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত