Ajker Patrika

স্মার্টফোন ছেড়ে ফিচারবিহীন ফোনে ঝুঁকছে জেনারেশন জেড 

অনলাইন ডেস্ক
স্মার্টফোন ছেড়ে ফিচারবিহীন ফোনে ঝুঁকছে জেনারেশন জেড 

স্মার্টফোনের কারণে বাড়তি উদ্বেগে পেরেশান জেনারেশন জেড বা জেন জেড ফিচারবিহীন ফোনে ঝুঁকছে। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণ প্রজন্মের চাহিদাকে সামনে রেখে বাজারে এসেছে ‘বোরিং ফোন’ নামে নতুন ফিচারবিহীন ফ্লিপ ফোন। 

অ্যালকোহল প্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘হেইনেকেন বিয়ার’ ও পোশাক খুচরা বিক্রেতা ‘বোডেগা’ এর  অংশীদারত্বে নতুন ফোনটি এইচএমডি (নকিয়া ফোনের মূল কোম্পানি)   তৈরি করেছে। গত ১৬ থেকে ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ‘মিলান ডিজাইন উইক’ নামের এক ইভেন্টে ফোনটি উন্মোচন করা হয়। এই ইভেন্টে বিশ্ববিখ্যাত ডিজাইনাররা পুরো বছরের ট্রেন্ড নির্ধারণ করে। 

বোরিং ফোনটি ‘ডাম্বফোন’ শ্রেণির আওতাভুক্ত। যেসব ফোনে আধুনিক যুগের ফিচার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপওগুলো নেই ও শুধু ফোন কল, অ্যালার্ম সেট, সময় দেখার মতো অল্প কিছু কাজে ব্যবহার করা যায় সেগুলোকেই ডাম্বফোন বলা হয়। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই ধরনের ডাম্বফোনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কারণ জেন জেডের মধ্যে নিজেদের ব্যক্তিগত ডেটা চুরি হওয়া ও মনোযোগ আকৃষ্ট করার প্রযুক্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। 

এই সন্দেহ থেকেই জেন জেডের প্রজন্ম ২০ থেকে ৩০ বছরের আগের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছে। এই প্রবণতা ‘নিউট্রো’ নামে পরিচিত। জেনারেশন জেডের প্রজন্ম ভিনাইল রেকর্ড, ক্যাসেট প্লেয়ার,৮– বিটের ভিডিও গেম ও পুরোনো যুগের মোবাইল ফোনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। 

 ২৯ বছর বয়সী রানা আলী একজন সাবেক ফিন্যান্স অফিসার ছিলেন। বর্তমানে সূর্য সেন ছদ্মনামে সংগীত প্রযোজনা ও র‍্যাপ মিউজিক তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘সবসময়ই সবার কাছে সুলভ থাকাকে আমি ঘৃণা করি। আপনি যদি কাউকে হোয়াটসঅ্যাপে কোনো মেসেজ পাঠান ও তারা অবিলম্বে রিপ্লাই না করে তাহলে নিজের কাছেই মনে হবে কোনো সমস্যা হয়েছে। এসব ভাবনা মনে আসা ঠিক নয়। আমি স্মার্টফোন ব্যবহার করার কয়দিন পরই আবার বাটনযুক্ত সাধারণ ফোনে ফিরে আসি।’ 

নকিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফোন ‘নকিয়া ৩৩১০’ মডেলটি ব্রিক (ইট) ফোন হিসেবে পরিচিত। কারণ এই ফোন অনেক মজবুত ও টেকসই। সেই সঙ্গে চার্জও অনেকক্ষণ থাকে। ২০১৭ সালে নকিয়া এই ফোন নতুনভাবে বাজারে ছাড়ে। তবে গত বছর টিকটকের ব্যবহারকারীরা #bringbackflipphones হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে ফোনটিকে আবারও আলোচনায় নিয়ে আসে। তাই ২০২৩ সালে এপ্রিলে এইচএমডির তৈরি করা ফ্লিপ ফোনগুলোর বিক্রি দ্বিগুণ হয়। এ ছাড়া ‘পুংক্ট’ নামের আরেকটি মিনিম্যাল বা কম ফিচারযুক্ত ফোনের বিক্রিও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

বাজার গবেষণা কোম্পানি মিন্টলের প্রযুক্তি বিশ্লেষক জো বার্চ বলেন, অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের ফোনের বিক্রি এখনো হুমকির মুখে পড়েনি। প্রতি দশজনের মধ্যে ৯ জনই স্মার্টফোন ব্যবহার করে ও ডাম্বফোনগুলো এখনো কম তা জায়গায় রয়েছে। 

স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা কম দেখা যায় এই প্রজন্মের মধ্যে। কারণ ক্রমাগত ডিজিটালভাবে সংযুক্ত থাকার নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে এই প্রজন্মের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। জেনারেশন জেডের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ডিজিটাল জগতের সঙ্গে কম সংযুক্ত থাকতে চান। 

আরেক গবেষণা কোম্পানি জিডাব্লুআই বলছে, জেন জেড প্রজন্মের ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও কম ব্যবহার করে থাকে। তারাই একমাত্র প্রজন্ম যাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতি ২০২১ সাল থেকে কমে গেছে। 

এইচএমডি চিফ মার্কেটিং অফিসার লার্স সিলবারবাওয়ার বলে, বয়স্ক ব্যক্তিরাও ডিজিটাল মাধ্যম কম ব্যবহার করছেন। 

বোরিং ফোনে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপ নেই।  ছবি: এইচএমডি প্রযুক্তি বিশ্লেষক কোম্পানি পোর্টুলাসন ইন্সটিটিউট বলছে, ২০ বছরের বেশি বয়সীরাও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ বিভিন্ন ব্র্যান্ড, সরকার ও হ্যাকারদের জন্য ইন্টারনেট একটি নজরদারি করার টুলে পরিণত হয়েছে। 

তবে পুরোনো প্রযুক্তিগুলো মানুষের স্বাধীনতা কম বিঘ্ন করে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উদীয়মান শিল্পীদের হিপ–হপ বা ড্যান্স মিউজিককে সামনে আনা কঠিন হয় উঠেছে। কারণ স্পটিফাই ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদমগুলো গানের মধ্যে কপিরাইট অংশগুলোকে চিহ্নিত করে। ফলে বেশির ভাগ মিউজিক প্ল্যাটফর্মগুলোকে আপলোড হতে পারে না। তবে একজন শিল্পী তার ভিনাইল রেকর্ডগুলো শ্রোতাদের কাছে কপিরাইটের কথা না ভেবেই বিক্রি করতে পারবে। 

নিউ ইয়র্কের স্কুলছাত্রদের দল দ্য লুডিইট ক্লাব ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা করেছিল যে তারা আইফোনের বদলে ফ্লিপ ফোন ব্যবহার করবে। তবে পুংক্ট ফোনের প্রতিষ্ঠাতা পিটার নেবাই বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে স্মার্টফোন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ স্কুলের বিভিন্ন অনলাইন কার্যক্রম, হোমওয়ার্কের জন্য স্মার্টফোনের প্রয়োজন। আমি নিজের বাচ্চাদের জন্যও স্মার্টফোনের ব্যবহার বন্ধ করতে চাই। কিন্তু তা সম্ভব না। তবে স্মার্টফোনের ব্যবহারে একটি ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।’ 

পিয়ার্স গেরেট একজন ২৭ বছর বয়সী টেক সেলস এক্সিকিউটিভ, ফিচারবিহীন ফোন ব্যবহার মাধ্যমে সেই ভারসাম্য অর্জন করার চেষ্টা করেছিলেন। অ্যাপবিহীন ই-রিডারদের জন্য তৈরি একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেন। 

তিনি বলেন, এটি একটি চমৎকার ধারণা ছিল, তবে মাত্র ছয়মাস তিনি এই অভ্যাস ধরে রাখতে পেরেছিলেন। যোগাযোগের জন্য সবাই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। তবে তিনি সীমিত অ্যাপ ব্যবহার করেন। শুধু ব্যাংকিং ও ট্রেনের অ্যাপ ব্যবহার করেন। বাকি অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশনও তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই তিনি ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ কফি খেয়ে বই পড়ার সুযোগ পান। এই অভ্যাসের মাধ্যমে নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পারেন গ্যারেট। তার মনও আগের চেয়ে শান্ত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত