টেলিযোগাযোগ আইনের সময়োপযোগী সংস্কারের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
আগারগাঁওয়ের বিটিআরসি ভবনে গোলটেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইনে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নিতে হয়। ফলে সময়ক্ষেপণ হয়। এছাড়াও এই আইনে কিছু ত্রুটি রয়েছে। ফলে আইনটির সময়োপযোগী সংস্কার প্রয়োজন।

আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিটিআরসি ভবনে ‘লিভারেজিং টেলিকমিউনিকেশন পাওয়ার ফর এস্কেলেটিং ডিজিটাল সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ’-শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। তাঁরা সুলভে মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত, সময়োপযোগী পলিসি প্রণয়ন, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ, প্রান্তিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল লিটারেসি ও ডিজিটাল সেবার বহুমাত্রিক ব্যবহারের লক্ষ্যে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানান।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) এমদাদ-উল-বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দায় চৌধুরিসহ টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) এমদাদ-উল-বারী বলেন, বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইনে মন্ত্রণালয় থেকে পূর্বানুমোদন নিতে হয় বিধায় লাইসেন্স প্রদানে বিলম্ব হয়। সে ক্ষেত্রে লাইসেন্স অথোরিটি থাকা দরকার বিটিআরসির কাছে। পলিসি তৈরি করবে মন্ত্রণালয় এবং আইন তৈরি করবে সংসদ।

আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিউ) নিয়মানুযায়ী কোনো গ্রাহক তিন মাসে একবার ডাটা ব্যবহার করলে তাকে ব্যবহারকারী ধরা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রাহকের ডাটা প্রোটেকশন গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য একটা চলনসই আইন প্রয়োজন হবে। গবেষণা রেগুলেটর এর কাজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রির ও একাডেমিয়া গবেষণা করবে সে ক্ষেত্রে বিটিআরবি ইনসেনটিভ প্রদান করতে পারে।

বিটিআরসির সিস্টেমস্ অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিফ আলিম। তিনি বলেন, ভারতে ই-কমার্স বাজার ৭৫ বিলিয়ন ডলার অন্যদিকে বাংলাদেশ ১.৩ বিলিয়ন এবং ইন্দোনেশিয়ার ৪৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে ৬০ লাখ অনলাইন গ্রাহক রয়েছে অন্যদিকে ভারতের ১৫ কোটি আর ইন্দোনেশিয়ার ৪ কোটি অনলাইন কাস্টমার রয়েছে।

বিডিজবস ডট কম-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, ব্রডব্যান্ডের ন্যায় মোবাইল ডাটার দামও কমিয়ে আনা প্রয়োজন এবং ব্রডব্যান্ডের ন্যায় আনলিমিটেড মাসিক মোবাইল ডাটা মূল্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার মধ্যে আনা উচিত। মোবাইল অপারেটর কর্তৃক কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনার সুযোগ দিলে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী বাড়বে বলেও জানান তিনি।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এএইচএম হাসিনুল কুদ্দুস রুশো বলেন, গ্রাহককে এসএসএম প্রদানের ক্ষেত্রে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরগুলো এক বছর মেয়াদি চুক্তিবদ্ধ হয়ে কম খরচে সাবস্ক্রিপশন সুবিধা প্রদান

করতে পারে। যারা বেশি এসএমএস ব্যবহার করে, তাঁদের জন্য ছাড় বেশি দেওয়া যেতে পারে।

রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের জন্য ডাটা লোকালাইজেশন ও ডাটা প্রোটেকশন আইন জরুরি। দেশের ৬০ ভাগ ডিজিটাল কমার্স ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফেসবুকে প্রায় ৩ লাখের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছে, যাদের বেশির ভাগ নারী। তাই একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে যাতে গ্রাহকের ডাটার সঙ্গে কানেক্ট করা যায় সে ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, যদি শতকরা ১০ ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ে তাহলে তা জিডিপিতে ১.৮ শতাংশ ভূমিকা রাখে। ভয়েস সেবা থেকে আয় কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটরদের ডিজিটাল সার্ভিস দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য ভার্টিক্যাল ইন্ট্রেগরেশন অব পলিসি করার ওপর তাগিদ দেন তিনি।

বিটিআরসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) ওয়াহিদুজ্জামান টেলিযোগাযোগ আইন সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাংলাদেশের বাজার এ মুহূর্তে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণ করতে সক্ষম নয়। ডাটা শেয়ার করার জন্য একটি ইউনিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির তাগিদ দেন তিনি।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে বিটিআরসি কাজ করছে। এনইআইআর সিস্টেম চালু করতে কয়ে কমাস সময় লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে অপারেটরদের বিদ্যমান স্পেকট্রাম যথাযথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশে ডিজিটাল ডিভাইড কমে আসছে ধীরে ধীরে। টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য সরকার-একাডেমিয়া ও খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটা সহযোগিতা প্রয়োজন। আইসিটি বিভাগ ডিজিটাল সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান, কমিশনার, মহাপরিচালক এবং ডিজিটাল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত