বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ঘড়ি তৈরি করলেন রাশিয়ার কারিগর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৫৭
রাশিয়ার কনস্টানটিন চায়কিন তার নতুন ‘থিনকিং’ নামের প্রোটোটাইপ ঘড়ি তৈরি করছেন। ছবি: কনস্টানটিন চায়কিন

বিগত কয়েক বছরে ইউরোপীয় ঘড়ি তৈরির বড় কোম্পানিগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে পাতলা মেকানিক্যাল ওয়াচ ডিজাইন করার জন্য এক তীব্র প্রতিযোগিতা করছে। ২০১৮ সাল থেকে বুলগারি, পিয়াগেট এবং রিচার্ড মিল–এর মতো দামি ব্র্যান্ডগুলো একে অপরের রেকর্ডগুলো ভাঙছে। গত এপ্রিল মাসে বুলগারির স্লিক ১ দশমিক ৭ মিলিমিটার পুরু ‘অক্টো ফিনিশিমো আলট্রা মার্ক ২’ সবচেয়ে পাতলা ঘড়ি তৈরি করে। এবার সম্ভবত সকল নামীদামি ব্রান্ডকে ছাপিয়ে গেছেন একজন স্বাধীন রুশ ঘড়ি প্রস্তুতকারী ও উদ্ভাবক।

রাশিয়ার কনস্টানটিন চায়কিন ‘থিনকিং’ নামের নতুন প্রোটোটাইপ ঘড়ি তৈরি করছেন। তিনি আগস্ট মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ওয়াচ ডেজ মেলায় এই ঘড়িটি উন্মোচন করেছিলেন। এই ঘড়িটি মাত্র ১ দশমিক ৬৫ মিলিমিটার পুরু (এক ইঞ্চির পঁচিশ ভাগের এক ভাগেরও কম)। তিনি এটিকে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে হালকা ঘড়ি বলে মনে করেন। স্ট্র্যাপ ছাড়া এর ওজন মাত্র ১৩ দশমিক ৩ গ্রাম।

চায়কিন বলেন, কার্যকারিতা নিয়ে কোনো আপস না করেই ঘড়িটি পাতলার করে ডিজাইন করা হয়েছে। এর ব্যারেলের সঙ্গে ঘোরার প্রক্রিয়া যুক্ত করা হয়েছে। ঘড়িটিতে একটি ‘ডাবল ব্যালান্স’ হুইল রয়েছে, যা ঘড়ির চলাফেরার স্তরের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করেছে।

ঘড়ির ডায়াল অ্যাডজাস্ট ও ঘোরানোর মেকানিজমগুলো একটি আলাদা ৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার পুরু ক্যারিয়ার কেসে থাকে। এর ফলে ঘড়ির ভেতরের জায়গা মুক্ত থাকে।

চায়কিন বলেছেন, তিনি বেশ কিছু পেটেন্ট আবেদন দাখিল করেছেন। তবে এখনো কোনটি অনুমোদিত হয়নি। ঘড়িটি স্টেইনলেস স্টিল এবং টাংস্টেন কারবাইড দিয়ে তৈরি। এই উপাদানটি হালকা কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী। তিনি ভবিষ্যৎ সংস্করণগুলোতে স্যাফায়ার বা হিরা ব্যবহার করার কথা ভাবছেন।

ঘড়িতে ঘণ্টা ও মিনিটের কাঁটাগুলো আলাদাভাবে থাকে। এই ডিজাইনে ঘড়িতে একটু মুখের অবয়ব হবে। প্রতিটি ডায়াল দশমিক ৩৫ মিলিমিটার পুরু স্যাফেয়ার ক্রিস্টালের আবরণ দিয়ে সুরক্ষিত।

অতি পাতলা ঘড়ি যা নির্ভরযোগ্য, সঠিক এবং পরিধান যোগ্যভাবে টেকসই হয় তা তৈরি করা অনেক কঠিন হয়। তবে শেষ কয়েক বছরে পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে পাতলা ঘড়ি ডিজাইন করার প্রতিযোগিতা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

২০১৮ সালে সুইস ব্র্যান্ড পিয়াগেট তার ২ মিলিমিটার পুরু ‘আল্টিপ্লানো আলটিমেট কনসেপ্ট’ উন্মোচন করেছিল, যা তখন বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ঘড়ি ছিল। এর দুই বছর পর তা উৎপাদন শুরু করা হয়। এরপর লাক্সারি জায়ান্ট বুলগারি প্রথমবারের মতো তার ‘অক্টো ফিনিশিমো আলট্রা’–এর প্রথম সংস্করণ উন্মোচন করে, যার পুরুত্ব ছিল মাত্র ১ দশমিক ৮ মিলিমিটার। এরপর গত এপ্রিল মাসে বুলগারির স্লিক ১ দশমিক ৭ মিলিমিটার পুরু ‘অক্টো ফিনিশিমো আলট্রা মার্ক ২’ ঘড়ি উন্মোচন করে যার দাম প্রায় ৫ লাখ ডলারেরও বেশি।

চায়কিনের ঘড়িটি বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ঘড়ি নাকি তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ প্রথমত, ‘থিনকিং’ বর্তমানে একটি প্রোটোটাইপ মাত্র। দ্বিতীয়ত, এর কার্যকারিতা ও সঠিকতা এখনো স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।

ডিজাইনটি এতটাই পাতলা যে, এটি দৈনন্দিন ব্যবহারের চাপ থেকে রক্ষা পেতে একটি বিশেষ স্ট্র্যাপের প্রয়োজন। স্ট্র্যাপটি টাইটানিয়াম সাপোর্ট এবং ইলাস্টিক ইনসার্ট দিয়ে তৈরি।

চায়কিন বলছে জেনেভার একটি মেলায় ‘শত শত মানুষ’ ঘড়িটি দেখতে পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই মেলায় দর্শকেরা ঘড়িটি হাতে ধরে সময় দেখতে এবং এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পেরেছিলেন।’ ঘড়িটি সঠিকভাবে কাজ করছিল।

আগামী এপ্রিল মাসে জেনেভায় ‘ওয়াচস অ্যান্ড ওয়ান্ডার’ ট্রেড শো অনুষ্ঠিত হবে। এই অনুস্ঠানে তার ডিজাইনের একটি ‘চূড়ান্ত’ সংস্করণ উপস্থাপন করবেন। সেই সময়ের মধ্যে আপডেট করা ঘড়িটি আরও সঠিকতা, শক্তি সংরক্ষণসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থাকবে। তবে ঘড়িটির মূল্য ‘এখনো জানা যায়নি।’

একটি পৃথক বিবৃতিতে চায়কিন বলেন, ২০০৩ সালে তার নিজ নামকৃত ঘড়ি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর পাতলা ঘড়ির প্রতি আগ্রহ জন্মে যখন তিনি প্রায় ২০ বছর আগে একটি অতি পাতলা ১৯শ শতকের ‘ব্যাগনোলেট’ পকেট ওয়াচ দেখেছিলেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত