শিল্পা শেঠির ভূত বন্ধু 

রজত কান্তি রায়
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২১, ১৫: ২৯
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২১, ১৫: ৩০

‘রাজা মরিলে রানি আমার। বাকি জীবন রানি–রাজপুত্র–রাজকন্যা–পাইক–পেয়াদা–চাকর–নোকর নিয়ে আরামসে কাটাইয়া দেব।’ গোপাল ভাঁড়ের এমন উইশ কখনো ছিল বলে শোনা যায় না। তবে বাঙালির উইশ এমনই। 

অন্যের বিপদে বাঙালির যে আনন্দ হয়, তেমনটা আর সম্ভবত কোথাও দেখা যায় না। এত আনন্দ দিয়ে তাঁরা কী করেন, সেটা আমার পূর্বপুরুষ শ্রীযুক্ত পূর্ণচন্দ্র খাচুয়ারও বোধগম্য নয়। সে জন্যই হয়তো তিনি খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে আমাকে দেখা দেন মাঝেমধ্যে। আমি তাঁর কাছ থেকে জ্ঞানলাভ করি। তিনিও আমার কাছ থেকে তথ্যউপাত্ত নিয়ে নিজেকে হালনাগাদ রাখার চেষ্টা করেন। গতকাল রাতে তিনি খটাখট খটাখট করে হাঁটতে হাঁটতে যখন আমাকে দেখা দিলেন, বুঝলাম সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তিনি কিছু তথ্যউপাত্ত চান, যাতে অবসর সময়ে গবেষণা করতে পারেন।

বললাম, সমস্যা কী? 
তিনি বললেন, ঠিক সমস্যা নয়। এই যে নায়িকার সঙ্গে তোর ছবি দেখলাম ফেসবুকে…

আমি কিঞ্চিৎ চমকিত হয়ে বললাম, ফেসবুকে! অ্যাকাউন্ট খুলেছেন নাকি? 
তিনি উদাস হয়ে বললেন, খুলেছি। 
-বলেন কী! 
-কেন? তোদের ছেলের ছবি দেওয়া, মেয়ের ছবি দেওয়া একটার পর একটা অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে। আমার একটা থাকলেই দোষ? 
-না। দোষ নয়। মানে আপনার অ্যাকাউন্ট খুলে দিল কে? 
-শিল্পা শেঠি। 

এই সেরেছে। শিল্পা শেঠি! ধাক্কা সামলে বললাম, তার সঙ্গে আপনার দেখা হলো কোথায়? 
-স্বামী শোকে পাথর হয়ে আছে। তাই দেখা করতে গিয়েছিলাম। 
-যাব্ব্বা। সানি লিয়নির সঙ্গে দেখা হয়নি? 
-তা হয়নি। তিনি দৃষ্টি মাটির দিকে নিক্ষেপ করে বললেন, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। 
-লে কাক্কা, ক্ষীর খা। 
-কেন? এতে সমস্যা কী? 
-না না। সমস্যা নেই। বলছি, বাড়িতে জানে? 
-তোরা কী রে! বাইরে একটু আনন্দ ফুর্তি করবি। সেটা বাড়িতে জানবে কেন? 
-সে তো বটেই। তা সানি এক্সেপ্ট করেছেন? 
-পেন্ডিং। 
-তা ফেসবুক ঘেঁটে কী বুঝলেন? 

আমার পূর্বপুরুষ পূর্ণচন্দ্র খাচুয়া জ্বলজ্বলে মুখে বললেন, দারুণ ব্যাপার কিন্তু। ভাবছি, আর একটা অ্যাকাউন্ট খুলব। সেখানে শিল্পার ছবি থাকবে। 
-কীহ! 
-শিল্পার ছবি দিয়ে আর একটা অ্যাকাউন্ট খুলব ফেসবুকে। 
-আপনি না…
-কেন, নিজের তো দুই খান অ্যাকাউন্ট আছে। তার বেলা? 
-আমার দুই খান অ্যাকাউন্ট আছে মানে! 
-হেহ। সাত দিন গবেষণা করে বাইর করছি ডুড। সে অ্যাকাউন্টে তো…
-দাঁড়ান দাঁড়ান। মানে… বলছিলাম যে…
-হাওয়া বেরিয়ে গেল! এখন যদি একটা স্ট্যাটাস দিই তোর নামে ডুড! খুব ভাব না। ভাজা মাছ উল্টে খেতে জান না। 
–না মানে, ভাজা মাছ আমি কচকচ করে চিবিয়ে খেতে জানি। কিন্তু…
–হ্যাঁ। ওই কিন্তুটাই বিষয়। ছি ছি ছি। সচ্চরিত্রবান বেঙ্গলির ফেক অ্যাকাউন্টে কী কী থাকে আমার জানা শেষ। তুমি যতই অজ্জিনিয়াল অ্যাকাউন্টে বল, ফ্রি অমুক তমুক, কে বিশ্বাস করবে? 
–না মানে স্যার…
–স্যার। এবার প্রাণ খুলে হাসলেন আমার পূর্বপুরুষ। স্যার, না। তা হ্যাঁ রে, ওই যে আমার অ্যাকাউন্ট খুলে দিলি যে শিল্পা শেঠির অ্যাকাউন্ট দিয়ে, ওটা কত বছর ধরে চালাস? 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত