Ajker Patrika

খাঁচায় চেপে পানির নিচে কুমিরের সঙ্গে রোমাঞ্চকর খেলা

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৪: ৪৫
খাঁচায় চেপে পানির নিচে কুমিরের সঙ্গে রোমাঞ্চকর খেলা

অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনের ক্রোকোসরাস কোভ নামের পার্কটিতে নানা ধরনের সরীসৃপের দেখা পাবেন। তবে এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণের নাম কেইজ অব ডেথ। কাচের মতো দেখতে প্লাস্টিকের ছোট্ট এক খাঁচায় চেপে নামবেন পানির নিচে। যেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ালদর্শন এক কুমির। তবে আগেই বলে রাখছি, দুর্বলচিত্তদের কেইজ অব ডেথ বা মৃত্যু খাঁচায় চেপে ভ্রমণ না করাটাই মনে হয় ভালো হবে। 

অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরির রাজধানী ডারউইনের প্রাণকেন্দ্রে ২০০৮ সালের জুলাইয়ে উদ্বোধন হয় ক্রোকোসরাস কোভের। শহরের দুই ব্যবসায়ী ডাগ গ্যাম্বল ও মিক বার্নস প্রায় পতিত এক জায়গাকে রূপ দেন আজকের বড় পর্যটন আকর্ষণে। প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার ছিল তাঁদের সেই সময়কার বিনিয়োগ।  

কুমির আর আপনার মধ্যে থাকবে দেড় ইঞ্চি পুরু দেয়ালের একটি খাঁচা। ছবি: ফেসবুকতবে ক্রোকোসরাস কোভের আজকের এই জনপ্রিয়তার মূলে নিঃসন্দেহে কেইজ অব ডেথ। এতে দেড় ইঞ্চি পুরু একটি কাচ-প্লাস্টিকের খাঁচায় চেপে পানির তলে নামবেন আপনি। সেখানে আপনার অপেক্ষায় থাকবে পার্কের ভয়ালদর্শন লোনাজলের কুমিরগুলোর একটি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় যেটি, সেটির দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট। অধীর আগ্রহ নিয়ে চমৎকার একটি ভোজের অপেক্ষায় থাকে এই কুমিরগুলো।

৭০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপের দেখা মেলে পার্কে। ছবি: টুইটারকুমিরের খাবারটা আটকানো থাকে খাঁচার নিচে কিংবা ওপর থেকে খাঁচার পাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কাজেই বুঝতেই পারছেন, দাঁত বের করে থাকা ভয়ালদর্শন প্রাণীটা খাঁচার গায়ে মুখ ঘষতে থাকা কিংবা ছোটখাটো একটা ঢুঁ মারাটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। অবশ্য পার্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, দেড় ইঞ্চি চওড়া খাঁচার দেয়াল বিশাল সরীসৃপদের যেকোনো আক্রমণ মোকাবিলার মতো করে তৈরি। ছোটখাটো দুর্বিপাক ছাড়া ডেথ অব কেউজে করে নেমে বড় দুর্ঘটনায় পড়েছেন এমন নজিরও নেই। তার পরও দুই হাজার পাউন্ডের সরীসৃপটির ধারালো দাঁত যখন এত কাছ থেকে দেখবেন, তখন অতি সাহসী মানুষটিরও বুকে কাঁপন ধরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশালদেহী সরীসৃপের সান্নিধ্যে আপনি থাকবেন ১৫ মিনিট। 

কেইজ অব ডেথে যে কুমিরগুলো পর্যটকদের রোমাঞ্চিত করে সেগুলোর হলো ওয়েনডেল, বারু, লিও, উইলিয়াম ও কেট। সাধারণত সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে ক্রোকোসরাস কোভ। মৃত্যুখাঁচায় একবারে নামতে পারেন সর্বোচ্চ দুজন। পার্কের তিনতলা মূল দালানটির আয়তন ৫ হাজার বর্গমিটার।

ডেথ অব কেইজে চড়াসহ পার্কে সারা দিন সময় কাটানোর জন্য একজনকে গুনতে হবে ১৮৫ ডলার। ছবি: ফেসবুকএখন বরং মৃত্যুখাঁচা ছাড়া আর কী আছে পার্কটিতে, সে সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। ধারণা করা হয়, এক জায়গায় এত বেশি অস্ট্রেলিয়ান সরীসৃপের দেখা মেলে না পৃথিবীর আর কোথাও। এখানে ৭০ প্রজাতির বেশি অস্ট্রেলীয় সরীসৃপের কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবেন। এই সরীসৃপদের একটি বড় অংশের বাসস্থান নর্দার্ন টেরিটরির টপ অ্যান্ড ও কিম্বার্লি এলাকায়। পার্কের সাম্প্রতিক বড় আকর্ষণ একটি মরু এলাকা, যেখানে রেড সেন্টার এলাকার বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর দেখা পাবেন।

পার্কে স্বাদু পানির হুইপরেদের (একধরনের স্টিংরে) সঙ্গে সময় কাটানোরও সুযোগ পাবেন। অভিজ্ঞ গাইডদের তদারকিতে ছয় ফুটি একটি হুইপরেকে নিজ হাতে খাওয়াতেও পারবেন। এদিকে শিশুদের জন্য আছে দুই ঘণ্টার জুনিয়র রেপটাইল রেঞ্জার প্রোগ্রাম। যেখানে পার্কের সরীসৃপদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা লোকদের সঙ্গে সরীসৃপদের অন্দরমহলে ঘুরে বেড়াতে পারে তারা, খাওয়াতে পারে কুমিরের বাচ্চাদের। 

পার্কের একজন এক্সপার্টের হাতে এক সরীসৃপ। ছবি: ফেসবুকপার্কটি গোড়াপত্তনের সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকৃষ্ট করলেও প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা মানুষেরা অভিযোগ করেন, এখানে খেলার নামে কুমিরদের হয়রানি করা হয়। তবে এটা এখানে পর্যটক আসায় বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি কখনোই। কুমিরের সঙ্গে কেবল দেড় ইঞ্চি দূরত্বে থাকার রোমাঞ্চ হাতছাড়া করতে চান না সাহসীরা। 

এবার বরং পার্কটি ভ্রমণে কিংবা মৃত্যুখাঁচায় চড়ে পানির নিচে নামায় কেমন খরচ পড়বে জেনে নেওয়া যাক। ডেথ অব কেইজে চড়াসহ একজনের পার্কে সারা দিন সময় কাটানোর জন্য পড়বে ১৮৫ ডলার বা সাড়ে ১৯ হাজার টাকা। দুজন হলে মোট খরচ পড়বে ২৮৫ ডলার বা ৩০ হাজার ২০০ টাকা। আর শুধু পার্ক ভ্রমণ এবং এর ৯টি শো দেখার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পড়বে ৩৮ ডলার বা ৪ হাজার টাকার মতো।

কেইজ অব ডেথে চেপে একসঙ্গে জলে নামতে পারবেন সর্বোচ্চ দুজন। ছবি: ফেসবুককাজেই পাঠক আপনি যদি রোমাঞ্চপ্রেমী হন, পরবর্তী অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে ডেথ অব কেইজে চেপে বসার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি। আর ডারউইনে যদি যানই, ক্রোকোসরাস কোভ ছাড়াও এখানে দেখার অনেক কিছুই আছে। ডারউইনকে বলতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত কিছু জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার। এর মধ্যে অন্যতম কাকাডু ন্যাশনাল পার্ক। ২০ হাজার বর্গকিলোমিটারের পার্কটি বন্যপ্রাণী, প্রকৃতির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। তা ছাড়া যেতে পারেন লিচফিল্ড ন্যাশনাল পার্কে। এখানকার পাথুরে গর্ত আর জলপ্রপাতগুলো মশহুর। ডারউইন থেকে কিছুটা দূরে অ্যাডিলেড নদীতে নৌকাভ্রমণে গিয়ে লোনাপানির কুমিরদের দেখতে পাবেন প্রাকৃতিক পরিবেশে। 

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, ক্রোকোসরাস কোভ ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত