ইশতিয়াক হাসান
কল্পনা করুন, গহিন এক জঙ্গলে আছেন। এ সময়ই একটি গাছের সামনে চলে এলেন, বিশাল পাতাগুলো কেমন যেন শুঁড়ের মতো। চারপাশ ভারী হয়ে আছে মিষ্টি এক গন্ধে। গাছটির নিচে কোনো একটি প্রাণীর কঙ্কাল পড়ে আছে। পাতাগুলো নড়ছে। এটা কি শুধুই বাতাসের কারণে? আরেকটু কাছে গেলেন, গাছের পাতাগুলো আপনার দিকে ঝুঁকে আসছে...। বিশাল মাংসখেকো কোনো গাছের চিন্তা যদি কোনোভাবে আপনার মস্তিষ্কে ঢুকে যায় তবে, একে সেখান থেকে বের করা মুশকিল। আফ্রিকা, মধ্য কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে এমন মানুষখেকো গাছের নানা গল্পগাথা ডালপালা মেলেছে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে।
তবে শুনে আনন্দিত হবেন, মানুষকে খেয়ে ফলতে পারে এমন কোনো উদ্ভিদের অস্তিত্বে মোটেই বিশ্বাসী নয় বিজ্ঞান। এখন পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, তাতে মাংসাশী যেকোনো গাছের জন্য একটা ইঁদুরই খাবার হিসেবে বেশ বড়। তবে মানুষ যুগে যুগে মানুষের রক্তের তৃষ্ণা আছে এমন উদ্ভিদকে কল্পনায়, গল্পে হাজির করেছে বারবারই।
মানুষখেকো গাছের গল্প ব্যাপকভাবে ছড়ানো শুরু করে ১৮৮০-র দশকে। সাধারণত গল্পগুলো এমন হতো, একজন সাহসী ইউরোপীয় দুর্গম কোনো দ্বীপে বা অরণ্যে হাজির হন। এ সময়ই অদ্ভুত কোনো একটি গাছের সামনে চলে আসেন। তারপরই দেখেন স্থানীয় কোনো অধিবাসী অসাবধানতাবশত ওই গাছের গ্রাসে পরিণত হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব গল্প সরাসরি যার অভিজ্ঞতা তার থেকে অন্য কেউ শুনে কিংবা তার থেকে আরও কেউ শুনে ছড়িয়ে দেন। এভাবে মূল কাহিনি অনেকটা ফুলেফেঁপে প্রকাশ পায়।
উদাহরণ হিসেবে ফিল রবিনসনের ১৮৮১ সালের বই আন্ডার দ্য পুনকাহ ট্রির কথা বলতে পারেন। লেখকের চাচা আশ্চর্য এক গাছ খুঁজে পান। ওটার বিশাল মোমের মতো ফুল, ফল রসে টইটম্বুর। পাতাগুলো ছোট্ট হাতের মতো খুলছে, বন্ধ হচ্ছে। একটি স্থানীয় কিশোর একটি হরিণকে তাড়া করতে গিয়ে গাছের লতাপাতার মাঝখানে চলে আসে। তারপর শ্বাসরোধ হয়ে আসছে এমন একটা ফ্যাসফ্যাসে চিৎকার। তারপর যে পাতাগুলোর ভেতরে ছিল ছেলেটি, সেগুলোর পাগলাটে নড়াচড়া চোখে পড়ে। এ ছাড়া জীবনের আর কোনো চিহ্ন নেই। জে ডব্লিউ বুয়েলের ‘সি অ্যান্ড ল্যান্ড’ প্রকাশ পায় ১৮৮৯ সালে। এর মধ্যে অভিযাত্রীদের মুখ থেকে শোনা মোটা গুঁড়ির এক গাছের গল্পও আছে, যে কিনা শিকার থেকে রক্ত শুষে নেয়, তারপর রক্তশূন্য দেহটাকে ছুড়ে দিয়ে নতুন শিকারের প্রতীক্ষায় থাকে।
তবে মানুষখেকো গাছের সবচেয়ে ভয়ানক গল্পটি ফার্স্ট হ্যান্ড অ্যাকাউন্ট বা সরাসরি যার অভিজ্ঞতা তাঁর বিবরণে পাওয়া। কার্ল লেচে নামের এক বিজ্ঞানী সংবাদপত্রগুলোকে বলেন এমন এক গাছের কথা, যেটার নিচের অংশ আনারসের মতো। এর দীর্ঘ, স্বাস্থ্যবান ও কাঁটাযুক্ত আটটি পাতা আছে, সাদা ছয়টি টেনড্রিল ছিল, যেগুলো বাতাসে প্রবলভাবে নড়ছিল। যখন একজন নারীকে গাছটার ওপরে জমা হওয়া মিষ্টি তরল খেতে পাঠানো হয়, তখন তাঁকে আঁকড়ে ধরে টেনড্রিল। পাতাগুলো বন্ধ হয়ে আড়াল করে ফেলে মেয়েটিকে। তারপর গাছের গুঁড়ি বেয়ে নেমে আসে উদ্ভিদের রস আর মানুষের রক্তের একটি মিশেল।
একটা সময় পর্যন্ত গল্পগুলো যে বানানো, এটি পরিষ্কার ছিল না। বুয়েলের মানুষখেকো উদ্ভিদের বর্ণনার পর বাস্তব কিছু আশ্চর্য গাছের খবর মেলে। এর মধ্যে আছে ব্রেড ফ্রুট বা পাউরুটি ফলের গাছ, পিচার প্ল্যান্ট বা কলসগাছ এবং তিরের আগা বিষাক্ত করতে ব্যবহার করা হয় এমন বিষ তৈরি করে এমন গাছ ইত্যাদি। বুয়েল যদিও সন্দিহান ছিলেন, তবে তিনি লেখেন, নির্ভরযোগ্য অনেক অভিযাত্রী এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। লিচের কাহিনিটা বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রে প্রকাশ পায়। কয়েক দশক পরে জানা যায় এটি আসলে বানানো।
তবে সত্যিকারের মাংসাশী গাছেরা কিন্তু এতটা ভয়ংকর নয়। আর তাদের কোনো ছোটখাটো প্রাণীকে খেয়ে ফেলার যুক্তিসংগত কারণও আছে। উদ্ভিদের নাইট্রোজেন প্রয়োজন। কিন্তু কিছু কিছু জায়গার মাটি অনুর্বর। এসব জায়গায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে ছোট ছোট প্রাণী ধরে। ছয় শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ পোকামাকড়সহ ছোটখাটো প্রাণী খায় বলে জানা গেছে।
এসব উদ্ভিদের মধ্যে অস্বস্তিকর কিছু ব্যাপার আছে তাতে সন্দেহ নেই। পিচার প্ল্যান্ট বা কলস উদ্ভিদের কথা যদি ধরেন, ফাঁদে ফেলা পোকামাকড়টিকে হজম করতে অনেকটা অম্লীয় একটি তরল ব্যবহার করে। তবে তাদের কলস কখনো আবর্জনা উগরে দেয় না।
‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি পোকামাকড়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে পূর্ণ হয়ে যায়। সবকিছু হজম করতে পারে না এরা,’ বলেন সান ডিয়েগো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাংসাশী উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করা উদ্ভিদবিদ তানিয়া রেনার, ‘এটাকে অনেকটা শ্মশানের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন।’
বড় আকারের কলস উদ্ভিদদের ইঁদুর পর্যন্ত খেয়ে ফেলার রেকর্ড আছে। তবে এটা এদের হজমের জন্য একটু বাড়াবাড়ি। সে ক্ষেত্রে বুঝতেই পারছেন একজন মানুষকে হজম করা আকাশকুসুম কল্পনাকে হার মানায়।
অবশ্য মানুষখেকো গাছ নিয়ে বহু গল্প-উপন্যাসও রচিত হয়েছে। যেমন—এ ধরনের একটি গল্পে দেখা যায় এক উদ্ভিদবিদ এমন একটি মাংসাশী উদ্ভিদ খুঁজে পেয়ে এটাকে লুকিয়ে এটার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতেন। একপর্যায়ে নিজেই এর খাবারে পরিণত হন।
এইচ জি ওয়েলসের এক গল্পে রক্তখেকো একটি অর্কিডের শিকার হতে চলেছিলেন এক উদ্ভিদবিদ। সৌভাগ্যক্রমে হাউসকিপারের কল্যাণে বেঁচে যান। এদিকে হাওয়ার্ড আর গেরিসের ১৯০৫ সালে প্রকাশিত গল্প ‘প্রোফেসর জনকিন’স ক্যানিবাল প্ল্যান্টে’ দেখা যায় উদ্ভিদটি অধ্যাপককে খাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ক্লোরোফরম দিয়ে গাছটিকে সাময়িক নিষ্ক্রিয় করে দেন অধ্যাপকের বন্ধু। শুধু তাই নয়, ওটার হজম করার কাজে ব্যবহার করা তরলে পৌঁছার আগেই তাঁকে সরিয়ে নেন বন্ধুটি।
এবার বরং মাংসাশী গাছদের ব্যাপারে কিছু তথ্য দেওয়া যাক। উদ্ভিদবিদ ও অভিযাত্রী ডালটন হুকার ১৮৫৯ যখন প্রথম কলস উদ্ভিদদের দেখেন, এদের পরিচয় করিয়ে দেন ‘আকর্ষণীয় এক সবজি হিসেবে’। তবে এই উদ্ভিদরা আসলেই কতটা অস্বাভাবিক, এটি প্রথম কারও নজরে আসে ১৮৬২ সালে।
আর এই পিচার প্ল্যান্ট বা কলস উদ্ভিদদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নেপেনথেস রাজা। একই সঙ্গে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাংসভোজী উদ্ভিদও এটি। কখনো কখনো একে ‘কলস উদ্ভিদের রাজা’ হিসেবেও পরিচয় করে দেওয়া হয়।
আপনি সাড়ে তিন লিটার পানি এবং আড়াই লিটার হজম করতে সক্ষম তরল সমৃদ্ধ একটি ফাঁদ বলতে পারেন একে। এটি পোকামাকড়কে তার দিকে আকৃষ্ট করে। যখন কোনো পোকামাকড় ওই তরলে পড়ে গিয়ে পালাতে ব্যর্থ হয় এবং উদ্ভিদটি একে হজম করে ফেলে। নেপেনথেস রাজা বা জায়ান্ট মালয়েশিয়ান পিচার প্ল্যান্টরা সাধারণত পোকামাকড়, যেমন পিঁপড়া ধরেই সন্তুষ্ট থাকে। তবে কখনো কখনো এদের ফাঁদে তুলনামূলক বড় শিকারও ধরা পড়ে।
কালেভদ্রে কলসের ভেতরে আধা হজম হওয়া ইঁদুর পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তেমনি ছোট পাখি, সরীসৃপ এমনকি ব্যাঙও শিকারে পরিণত হয় হঠাৎ হঠাৎ এই মাংসাশী উদ্ভিদের।
এই উদ্ভিদের অদ্ভুত এক সম্পর্ক আছে মালয়েশিয়ার জঙ্গলের গেছো ছুঁচোদের সঙ্গে। গেছো ছুঁচোদের আকৃষ্ট করে উদ্ভিদটির মধ্যে থাকা রস বা মধু। এই মধু পানের পাশাপাশি নিজেদের খাবারের এলাকা চিহ্নিত করতে গিয়ে গেছো ছুঁচোরা সরাসরি কলসের বা কাপের মধ্যে মল ত্যাগ করে। এটা এই মাংসাশী গাছদের গুরুত্বপূর্ণ নাইট্রোজেনের জোগান দেয়। ইঁদুর কিংবা পাখি কালেভদ্রে মিললেও ছুঁচোর মল নিয়মিতই জোটে। অবশ্য একই ধরনের একটি সম্পর্ক এই উদ্ভিদের সামিট রেট নামের একধরনের ইঁদুরেরও থাকে বলে জানা গেছে। অবশ্য সামিট রেট বা গেছো ছুঁচোরা কখনো এই উদ্ভিদের খাবারে পরিণত হয়েছে বলে জানা যায়নি।
কাজেই এখন পর্যন্ত যে তথ্য, তাতে মানুষখেকো গাছ তো দূরের কথা, হরিণ এমনকি খরগোশের মতো প্রাণী হজম করতে পারে এমন কোনো মাংসাশী উদ্ভিদের খোঁজ মেলেনি। তবে ঘটনা হলো, পৃথিবীতে নতুন নতুন অনেক কিছুর খোঁজই তো মেলে, যার অস্তিত্ব সম্পর্কে আগে মানুষের কোনো ধারণা ছিল না। তাই রহস্যময় প্রাণী বা উদ্ভিদে যাঁদের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ তাঁরা ঠিক এই মুহূর্তে পৃথিবীর দুর্গম কোনো অরণ্যে এ ধরনের ভয়ংকর কোনো গাছ বড় শিকারের প্রতীক্ষায় আছে ফাঁদ পেতে, এমন তর্ক জুড়তেই পারেন।
সূত্র: অ্যাটলাস অবসকিউরা, উইকিপিডিয়া
কল্পনা করুন, গহিন এক জঙ্গলে আছেন। এ সময়ই একটি গাছের সামনে চলে এলেন, বিশাল পাতাগুলো কেমন যেন শুঁড়ের মতো। চারপাশ ভারী হয়ে আছে মিষ্টি এক গন্ধে। গাছটির নিচে কোনো একটি প্রাণীর কঙ্কাল পড়ে আছে। পাতাগুলো নড়ছে। এটা কি শুধুই বাতাসের কারণে? আরেকটু কাছে গেলেন, গাছের পাতাগুলো আপনার দিকে ঝুঁকে আসছে...। বিশাল মাংসখেকো কোনো গাছের চিন্তা যদি কোনোভাবে আপনার মস্তিষ্কে ঢুকে যায় তবে, একে সেখান থেকে বের করা মুশকিল। আফ্রিকা, মধ্য কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে এমন মানুষখেকো গাছের নানা গল্পগাথা ডালপালা মেলেছে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে।
তবে শুনে আনন্দিত হবেন, মানুষকে খেয়ে ফলতে পারে এমন কোনো উদ্ভিদের অস্তিত্বে মোটেই বিশ্বাসী নয় বিজ্ঞান। এখন পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, তাতে মাংসাশী যেকোনো গাছের জন্য একটা ইঁদুরই খাবার হিসেবে বেশ বড়। তবে মানুষ যুগে যুগে মানুষের রক্তের তৃষ্ণা আছে এমন উদ্ভিদকে কল্পনায়, গল্পে হাজির করেছে বারবারই।
মানুষখেকো গাছের গল্প ব্যাপকভাবে ছড়ানো শুরু করে ১৮৮০-র দশকে। সাধারণত গল্পগুলো এমন হতো, একজন সাহসী ইউরোপীয় দুর্গম কোনো দ্বীপে বা অরণ্যে হাজির হন। এ সময়ই অদ্ভুত কোনো একটি গাছের সামনে চলে আসেন। তারপরই দেখেন স্থানীয় কোনো অধিবাসী অসাবধানতাবশত ওই গাছের গ্রাসে পরিণত হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব গল্প সরাসরি যার অভিজ্ঞতা তার থেকে অন্য কেউ শুনে কিংবা তার থেকে আরও কেউ শুনে ছড়িয়ে দেন। এভাবে মূল কাহিনি অনেকটা ফুলেফেঁপে প্রকাশ পায়।
উদাহরণ হিসেবে ফিল রবিনসনের ১৮৮১ সালের বই আন্ডার দ্য পুনকাহ ট্রির কথা বলতে পারেন। লেখকের চাচা আশ্চর্য এক গাছ খুঁজে পান। ওটার বিশাল মোমের মতো ফুল, ফল রসে টইটম্বুর। পাতাগুলো ছোট্ট হাতের মতো খুলছে, বন্ধ হচ্ছে। একটি স্থানীয় কিশোর একটি হরিণকে তাড়া করতে গিয়ে গাছের লতাপাতার মাঝখানে চলে আসে। তারপর শ্বাসরোধ হয়ে আসছে এমন একটা ফ্যাসফ্যাসে চিৎকার। তারপর যে পাতাগুলোর ভেতরে ছিল ছেলেটি, সেগুলোর পাগলাটে নড়াচড়া চোখে পড়ে। এ ছাড়া জীবনের আর কোনো চিহ্ন নেই। জে ডব্লিউ বুয়েলের ‘সি অ্যান্ড ল্যান্ড’ প্রকাশ পায় ১৮৮৯ সালে। এর মধ্যে অভিযাত্রীদের মুখ থেকে শোনা মোটা গুঁড়ির এক গাছের গল্পও আছে, যে কিনা শিকার থেকে রক্ত শুষে নেয়, তারপর রক্তশূন্য দেহটাকে ছুড়ে দিয়ে নতুন শিকারের প্রতীক্ষায় থাকে।
তবে মানুষখেকো গাছের সবচেয়ে ভয়ানক গল্পটি ফার্স্ট হ্যান্ড অ্যাকাউন্ট বা সরাসরি যার অভিজ্ঞতা তাঁর বিবরণে পাওয়া। কার্ল লেচে নামের এক বিজ্ঞানী সংবাদপত্রগুলোকে বলেন এমন এক গাছের কথা, যেটার নিচের অংশ আনারসের মতো। এর দীর্ঘ, স্বাস্থ্যবান ও কাঁটাযুক্ত আটটি পাতা আছে, সাদা ছয়টি টেনড্রিল ছিল, যেগুলো বাতাসে প্রবলভাবে নড়ছিল। যখন একজন নারীকে গাছটার ওপরে জমা হওয়া মিষ্টি তরল খেতে পাঠানো হয়, তখন তাঁকে আঁকড়ে ধরে টেনড্রিল। পাতাগুলো বন্ধ হয়ে আড়াল করে ফেলে মেয়েটিকে। তারপর গাছের গুঁড়ি বেয়ে নেমে আসে উদ্ভিদের রস আর মানুষের রক্তের একটি মিশেল।
একটা সময় পর্যন্ত গল্পগুলো যে বানানো, এটি পরিষ্কার ছিল না। বুয়েলের মানুষখেকো উদ্ভিদের বর্ণনার পর বাস্তব কিছু আশ্চর্য গাছের খবর মেলে। এর মধ্যে আছে ব্রেড ফ্রুট বা পাউরুটি ফলের গাছ, পিচার প্ল্যান্ট বা কলসগাছ এবং তিরের আগা বিষাক্ত করতে ব্যবহার করা হয় এমন বিষ তৈরি করে এমন গাছ ইত্যাদি। বুয়েল যদিও সন্দিহান ছিলেন, তবে তিনি লেখেন, নির্ভরযোগ্য অনেক অভিযাত্রী এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। লিচের কাহিনিটা বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রে প্রকাশ পায়। কয়েক দশক পরে জানা যায় এটি আসলে বানানো।
তবে সত্যিকারের মাংসাশী গাছেরা কিন্তু এতটা ভয়ংকর নয়। আর তাদের কোনো ছোটখাটো প্রাণীকে খেয়ে ফেলার যুক্তিসংগত কারণও আছে। উদ্ভিদের নাইট্রোজেন প্রয়োজন। কিন্তু কিছু কিছু জায়গার মাটি অনুর্বর। এসব জায়গায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে ছোট ছোট প্রাণী ধরে। ছয় শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ পোকামাকড়সহ ছোটখাটো প্রাণী খায় বলে জানা গেছে।
এসব উদ্ভিদের মধ্যে অস্বস্তিকর কিছু ব্যাপার আছে তাতে সন্দেহ নেই। পিচার প্ল্যান্ট বা কলস উদ্ভিদের কথা যদি ধরেন, ফাঁদে ফেলা পোকামাকড়টিকে হজম করতে অনেকটা অম্লীয় একটি তরল ব্যবহার করে। তবে তাদের কলস কখনো আবর্জনা উগরে দেয় না।
‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি পোকামাকড়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে পূর্ণ হয়ে যায়। সবকিছু হজম করতে পারে না এরা,’ বলেন সান ডিয়েগো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাংসাশী উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করা উদ্ভিদবিদ তানিয়া রেনার, ‘এটাকে অনেকটা শ্মশানের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন।’
বড় আকারের কলস উদ্ভিদদের ইঁদুর পর্যন্ত খেয়ে ফেলার রেকর্ড আছে। তবে এটা এদের হজমের জন্য একটু বাড়াবাড়ি। সে ক্ষেত্রে বুঝতেই পারছেন একজন মানুষকে হজম করা আকাশকুসুম কল্পনাকে হার মানায়।
অবশ্য মানুষখেকো গাছ নিয়ে বহু গল্প-উপন্যাসও রচিত হয়েছে। যেমন—এ ধরনের একটি গল্পে দেখা যায় এক উদ্ভিদবিদ এমন একটি মাংসাশী উদ্ভিদ খুঁজে পেয়ে এটাকে লুকিয়ে এটার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতেন। একপর্যায়ে নিজেই এর খাবারে পরিণত হন।
এইচ জি ওয়েলসের এক গল্পে রক্তখেকো একটি অর্কিডের শিকার হতে চলেছিলেন এক উদ্ভিদবিদ। সৌভাগ্যক্রমে হাউসকিপারের কল্যাণে বেঁচে যান। এদিকে হাওয়ার্ড আর গেরিসের ১৯০৫ সালে প্রকাশিত গল্প ‘প্রোফেসর জনকিন’স ক্যানিবাল প্ল্যান্টে’ দেখা যায় উদ্ভিদটি অধ্যাপককে খাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ক্লোরোফরম দিয়ে গাছটিকে সাময়িক নিষ্ক্রিয় করে দেন অধ্যাপকের বন্ধু। শুধু তাই নয়, ওটার হজম করার কাজে ব্যবহার করা তরলে পৌঁছার আগেই তাঁকে সরিয়ে নেন বন্ধুটি।
এবার বরং মাংসাশী গাছদের ব্যাপারে কিছু তথ্য দেওয়া যাক। উদ্ভিদবিদ ও অভিযাত্রী ডালটন হুকার ১৮৫৯ যখন প্রথম কলস উদ্ভিদদের দেখেন, এদের পরিচয় করিয়ে দেন ‘আকর্ষণীয় এক সবজি হিসেবে’। তবে এই উদ্ভিদরা আসলেই কতটা অস্বাভাবিক, এটি প্রথম কারও নজরে আসে ১৮৬২ সালে।
আর এই পিচার প্ল্যান্ট বা কলস উদ্ভিদদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নেপেনথেস রাজা। একই সঙ্গে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাংসভোজী উদ্ভিদও এটি। কখনো কখনো একে ‘কলস উদ্ভিদের রাজা’ হিসেবেও পরিচয় করে দেওয়া হয়।
আপনি সাড়ে তিন লিটার পানি এবং আড়াই লিটার হজম করতে সক্ষম তরল সমৃদ্ধ একটি ফাঁদ বলতে পারেন একে। এটি পোকামাকড়কে তার দিকে আকৃষ্ট করে। যখন কোনো পোকামাকড় ওই তরলে পড়ে গিয়ে পালাতে ব্যর্থ হয় এবং উদ্ভিদটি একে হজম করে ফেলে। নেপেনথেস রাজা বা জায়ান্ট মালয়েশিয়ান পিচার প্ল্যান্টরা সাধারণত পোকামাকড়, যেমন পিঁপড়া ধরেই সন্তুষ্ট থাকে। তবে কখনো কখনো এদের ফাঁদে তুলনামূলক বড় শিকারও ধরা পড়ে।
কালেভদ্রে কলসের ভেতরে আধা হজম হওয়া ইঁদুর পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তেমনি ছোট পাখি, সরীসৃপ এমনকি ব্যাঙও শিকারে পরিণত হয় হঠাৎ হঠাৎ এই মাংসাশী উদ্ভিদের।
এই উদ্ভিদের অদ্ভুত এক সম্পর্ক আছে মালয়েশিয়ার জঙ্গলের গেছো ছুঁচোদের সঙ্গে। গেছো ছুঁচোদের আকৃষ্ট করে উদ্ভিদটির মধ্যে থাকা রস বা মধু। এই মধু পানের পাশাপাশি নিজেদের খাবারের এলাকা চিহ্নিত করতে গিয়ে গেছো ছুঁচোরা সরাসরি কলসের বা কাপের মধ্যে মল ত্যাগ করে। এটা এই মাংসাশী গাছদের গুরুত্বপূর্ণ নাইট্রোজেনের জোগান দেয়। ইঁদুর কিংবা পাখি কালেভদ্রে মিললেও ছুঁচোর মল নিয়মিতই জোটে। অবশ্য একই ধরনের একটি সম্পর্ক এই উদ্ভিদের সামিট রেট নামের একধরনের ইঁদুরেরও থাকে বলে জানা গেছে। অবশ্য সামিট রেট বা গেছো ছুঁচোরা কখনো এই উদ্ভিদের খাবারে পরিণত হয়েছে বলে জানা যায়নি।
কাজেই এখন পর্যন্ত যে তথ্য, তাতে মানুষখেকো গাছ তো দূরের কথা, হরিণ এমনকি খরগোশের মতো প্রাণী হজম করতে পারে এমন কোনো মাংসাশী উদ্ভিদের খোঁজ মেলেনি। তবে ঘটনা হলো, পৃথিবীতে নতুন নতুন অনেক কিছুর খোঁজই তো মেলে, যার অস্তিত্ব সম্পর্কে আগে মানুষের কোনো ধারণা ছিল না। তাই রহস্যময় প্রাণী বা উদ্ভিদে যাঁদের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ তাঁরা ঠিক এই মুহূর্তে পৃথিবীর দুর্গম কোনো অরণ্যে এ ধরনের ভয়ংকর কোনো গাছ বড় শিকারের প্রতীক্ষায় আছে ফাঁদ পেতে, এমন তর্ক জুড়তেই পারেন।
সূত্র: অ্যাটলাস অবসকিউরা, উইকিপিডিয়া
৯১১-তে ফোন দিয়ে কত জরুরি প্রয়োজনেই তো সাহায্য চায় মানুষ। তাই বলে নিশ্চয় আশা করবেন না কেউ অঙ্ক মিলিয়ে দিতে বলবে। কিন্তু ৯১১-তে ফোন দিয়ে এ আবদারই করে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের ১০ বছরের এক বালক।
১ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এক ফ্লাইটের যাত্রীরা অপর এক যাত্রীকে মাঝপথে চেপে ধরে হাত-পা টেপ দিয়ে আটকে দেন। অবশ্য ওই যাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। তিনি উড়োজাহাজটি ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
১ দিন আগেবিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
৩ দিন আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
৩ দিন আগে