অনলাইন ডেস্ক
আচ্ছা, কোন প্রাণীর আক্রমণে কিংবা এর কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়, বলুন তো? আপনি নিশ্চয় সিংহ, কুমির, বাঘ, হাতি, সাপ কিংবা বাঘের কথা ভেবে বসে আছেন। স্বাভাবিক; কারণ, এদের আক্রমণে কেউ মারা গেলে আমাদের চোখে পড়ে বেশি। যেমন শেরপুর-জামালপুর অঞ্চলে হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার খবর আসছে (অবশ্য হাতিরও প্রাণ যাচ্ছে)। হলিউডের সিনেমাগুলোতেও আমরা বড় শত্রু হিসেবে দেখি হাঙর কিংবা অ্যানাকোন্ডার মতো প্রাণীগুলোকে।
কিন্তু শুনে অবাক হবেন, আপাতদৃষ্টে যাদের ভয়ংকর প্রাণী হিসেবে ভাবি আমরা, এদের অনেকগুলোর অবস্থান তালিকার নিচের দিকেই। আবার বাঘ কিংবা হাঙরের এই তালিকায় স্থানই হয়নি; কারণ, এদের আক্রমণে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা আদপে খুব একটি বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে সবার ওপরে থাকা প্রাণীটি মোটেই এমন বিশাল কিছু নয়। সে হলো আমাদের অতি পরিচিত পুঁচকে মশা। এখন তাহলে কোন প্রাণীর কারণে কেমনসংখ্যক মানুষ মারা যায়, তা জেনে নেওয়া যাক। তবে আমরা তালিকাটি করেছি উল্টো দিক থেকে।
সিংহ
অনেকের হয়তো ধারণা ছিল, তালিকায় একেবারে ওপরের দিকে থাকবে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও ভারতের জঙ্গলে বিচরণ করা প্রাণীটি। বিশেষ করে এর গর্জন শুনলে যে কারও অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতে বাধ্য। সাভোর মানুষখেকোসহ কুখ্যাত কিছু মানুষখেকো সিংহের কথা শোনা গেলেও সিংহের আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার সংখ্যা খুব বেশি নয়। বিবিসি সায়েন্স ফোকাসের হিসেবে বছরে সংখ্যাটি ২০০-এর আশপাশে। কোনো কোনো সূত্রের দাবি, সংখ্যাটি আরও অনেক কম।
এদের নখ খুব ধারালো। কামড়ে হাড় চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলা থেকে শুরু করে খুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। সাধারণত ছোট দলে ভাগ হয়ে শিকার করে এরা। কোনো দলের কাছাকাছি চলে গেলে আক্রমণ করতে পারে। সঙ্গে বাচ্চা থাকলে এরা খুব বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
জলহস্তী
জলহস্তীর আক্রমণে প্রতিবছর মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যাটা একেবারে কম নয়, শ পাঁচেক মানুষকে প্রাণ হারাতে হয় এদের হাতে। একেকটি পুরুষ জলহস্তীর ওজন হতে পারে ১৫০০ কেজি। প্রায় আধা মিটার লম্বা ধারালো শ্বদন্তের একটি কামড়ে একজন মানুষের শরীর দুই টুকরো হয়ে যেতে পারে। বলা হয় একটি জলহস্তীর কামড়ের শক্তি সিংহের কামড়ের তিন গুণ।
জলহস্তীর এলাকায় কোনো মানুষ চলে এলে আক্রমণ করে বসা এদের জন্য খুব স্বাভাবিক। কখনো কখনো অন্য কোনো প্রাণী ভেবে নৌকা আক্রমণ ও উল্টে দেওয়ার অভ্যাস আছে এদের।
হাতি
হাতির আক্রমণে মৃত্যু হওয়া মানুষের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০। পা দিয়ে মাড়িয়ে, শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় মেরে কিংবা দাঁত দিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ মারার রেকর্ড আছে হাতিদের। তেমনি মানুষের কারণে প্রাণ যায় হাতিদেরও। বুনো হাতির দেখা পাওয়া যায় আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে।
হাতি-মানুষ সংঘাতে দায় আছে মানুষেরও। হাতির বিচরণের জায়গাগুলোয় মানুষের বসতি ও চাষবাদের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় মানুষের সঙ্গে সংঘাত বাড়ছে এদের।
কুমির
প্রতিবছর কুমিরের আক্রমণে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়, হাজারের মতো। এদের দাঁতগুলোই জানিয়ে দেয়, কতটা বিপজ্জনক হতে পারে সরীসৃপটি। নীল ক্রোকোডাইলের কামড়কে ধরা হয় পৃথিবীর তাবৎ প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কামড় হিসেবে। তেমনি লোনাপানির কুমিরের কামড়ও প্রচণ্ড শক্তিশালী।
এসকারিস রাউন্ডওয়র্ম
এই গুবরে পোকারা সরাসরি মানুষ মারে না। তবে বহু মানুষের মৃত্যুর জন্য এরাই দায়ী। এটি অন্য প্রাণীর দেহে বাস করে তার ক্ষতি করে। কোনো মানুষ দুর্ঘটনাবশত তাদের ডিম খেয়ে ফেললে মানুষের শরীরের প্রবেশের সুযোগ পায়। এটি মানুষের শরীরের খাদ্যনালির নিচের অংশে অবস্থান করে খাবার খায় এবং নতুন প্রাণীর জন্ম দেয়। এতে যে রোগের সৃষ্টি হয়, তার নাম এসকারিয়াসিস। এই রোগে প্রতিবছর প্রায় আড়াই হাজার মানুষ মারা যান।
মাকড়সা
লেজ দিয়ে হুল ফুটিয়ে শিকারের শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয় মাকড়সারা। অবশ্য এদের সবাই এমন ক্ষতিকর নয়। ২৬০০ প্রজাতির মাকড়সার মধ্যে কেবল ২৫ জাতের মাকড়সা মানুষকে মারার মতো বিষ থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর বলা চলে ডেথস্টকারকে। উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু এলাকায় মৃত্যুর বার্তাবাহী এই হলুদ প্রাণীর দেখা মেলে। এদের শরীরে যে পরিমাণ বিষ থাকে, তা শিশু, বৃদ্ধ কিংবা শারীরিক জটিলতায় ভোগা মানুষদের মারার জন্য যথেষ্ট। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষও এদের হুলে মারা যেতে পারেন, তবে আশঙ্কা কম। মাকড়ার কামড়ে প্রতিবছর মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ২৬০০ থেকে ৩৩০০।
গুপ্তঘাতক বাগ
অ্যাসাসিন বাগ বা গুপ্তঘাতক ছারপোকা ছাগাস রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী। রক্তচোষা এই কীট মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় বড় বিপদের কারণ। এ ধরনের পোকার কামড়ে কিংবা এদের দ্বারা সংক্রামিত কোনো খাবার খেলে এ রোগ হয়। প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এ রোগে হার্ট, পরিপাকতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এ রোগ মাতৃগর্ভে মা থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। এ রোগে বছরে ১০ হাজারের মতো মানুষ মারা যান।
কুকুর
কুকুর মানুষের বড় বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তবে এরা কখনো কখনো বড় শত্রুও হয়ে উঠতে পারে। সেটি র্যাবিস বা জলাতঙ্ক রোগ ছড়ানোর মাধ্যমে। এমনিতে সরাসরি কুকুরের আক্রমণে কারও মৃত্যুর খবর শোনা যায় না বললেই চলে, তবে কুকুরের কামড়ে হওয়া জলাতঙ্ক রোগে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। সাধারণত এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জলাতঙ্কজনিত মৃত্যুর হার বেশি। প্রতিবছর জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৯ হাজারের মতো।
ওয়ার্ল্ড হেথ অর্গানাইজেশনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জলাতঙ্কের কারণে যত মানুষ মারা যান, তার বেশির ভাগই কুকুরের কারণে। মোট জলাতঙ্ক রোগের ৯৯ শতাংশ হয় কুকুরের কামড়ে।
সাপ
এই বিষধর সরীসৃপদের প্রতি ইন্ডিয়ানা জোনসের যে ভীতি ছিল, তা একেবারে অমূলক নয়। বিপজ্জনক সব সাপ আছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। বিভিন্নভাবে সাপের আক্রমণে মারা যেতে পারে মানুষ। উদাহরণ হিসেবে ব্ল্যাক মামবা এক কামড়ে শরীরে দুই ফোঁটা বিষ ঢুকিয়ে মারতে পারে মানুষকে, আবার খুব বড় আকারের অজগরের পক্ষে এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে পর্যন্ত গিলে ফেলা সম্ভব। বছরে সাপের আক্রমণে মৃত্যু হওয়া মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার। এদের বেশির ভাগ মারা যায় বিষধর সাপের কামড়ে।
স্বাদুপানির শামুক
সিসটোসোমায়োসিস সিসটোসোমা ধরনের পরজীবী কৃমি দ্বারা সৃষ্টি রোগ। এটি স্নেইল ফিভাব নামেও পরিচিত। এটি মূত্রনালি অথবা অন্ত্রগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে। পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, রক্ত পায়খানা অথবা মূত্রে রক্ত চিহ্ন অথবা উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমিতরা যকৃতের ক্ষতি, কিডনি অকার্যকর, বন্ধ্যত্ব, মূত্রাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। সংক্রমিত মিঠাপানির শামুক দ্বারা এই পরজীবীগুলো ছড়ায়। ওয়ার্ল্ড হেথ অর্গানাইজেশনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ এর আক্রমণে মারা যায়।
মশা
মশাকে কারও পছন্দ করার কারণ নেই। মশা নানা ধরনের রোগ ছড়ায়, এটাও সত্যি। তবে আমরা যেটা কল্পনাও করতে পারি না, কোনো প্রাণী যদি আমাদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হয়, সেটি মশা। খুদে এই উড়ুক্কু প্রাণী বছরজুড়ে সাড়ে সাত লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর এই মৃত্যুগুলোর বড় একটি অংশ আসে ম্যালেরিয়ার কারণে। এটির প্রভাব সবচেয়ে বেশি আফ্রিকায়। পৃথিবীর মোট ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ৯৫ শতাংশ ও মৃত্যুর ৯৬ শতাংশ আফ্রিকায়। আরও যেসব বড় রোগের বাহক ছোট্ট এই প্রাণী, এর মধ্যে আছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, জিকা, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। এ বছর ইতিমধ্যে এডিস মশার কারণে সৃষ্টি হওয়া ডেঙ্গু জ্বরে বাংলাদেশে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১০০-তে পৌঁছেছে।
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, বিবিসি ওয়াইল্ডলাইফ ম্যাগাজিন
আচ্ছা, কোন প্রাণীর আক্রমণে কিংবা এর কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়, বলুন তো? আপনি নিশ্চয় সিংহ, কুমির, বাঘ, হাতি, সাপ কিংবা বাঘের কথা ভেবে বসে আছেন। স্বাভাবিক; কারণ, এদের আক্রমণে কেউ মারা গেলে আমাদের চোখে পড়ে বেশি। যেমন শেরপুর-জামালপুর অঞ্চলে হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার খবর আসছে (অবশ্য হাতিরও প্রাণ যাচ্ছে)। হলিউডের সিনেমাগুলোতেও আমরা বড় শত্রু হিসেবে দেখি হাঙর কিংবা অ্যানাকোন্ডার মতো প্রাণীগুলোকে।
কিন্তু শুনে অবাক হবেন, আপাতদৃষ্টে যাদের ভয়ংকর প্রাণী হিসেবে ভাবি আমরা, এদের অনেকগুলোর অবস্থান তালিকার নিচের দিকেই। আবার বাঘ কিংবা হাঙরের এই তালিকায় স্থানই হয়নি; কারণ, এদের আক্রমণে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা আদপে খুব একটি বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে সবার ওপরে থাকা প্রাণীটি মোটেই এমন বিশাল কিছু নয়। সে হলো আমাদের অতি পরিচিত পুঁচকে মশা। এখন তাহলে কোন প্রাণীর কারণে কেমনসংখ্যক মানুষ মারা যায়, তা জেনে নেওয়া যাক। তবে আমরা তালিকাটি করেছি উল্টো দিক থেকে।
সিংহ
অনেকের হয়তো ধারণা ছিল, তালিকায় একেবারে ওপরের দিকে থাকবে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও ভারতের জঙ্গলে বিচরণ করা প্রাণীটি। বিশেষ করে এর গর্জন শুনলে যে কারও অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতে বাধ্য। সাভোর মানুষখেকোসহ কুখ্যাত কিছু মানুষখেকো সিংহের কথা শোনা গেলেও সিংহের আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার সংখ্যা খুব বেশি নয়। বিবিসি সায়েন্স ফোকাসের হিসেবে বছরে সংখ্যাটি ২০০-এর আশপাশে। কোনো কোনো সূত্রের দাবি, সংখ্যাটি আরও অনেক কম।
এদের নখ খুব ধারালো। কামড়ে হাড় চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলা থেকে শুরু করে খুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। সাধারণত ছোট দলে ভাগ হয়ে শিকার করে এরা। কোনো দলের কাছাকাছি চলে গেলে আক্রমণ করতে পারে। সঙ্গে বাচ্চা থাকলে এরা খুব বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
জলহস্তী
জলহস্তীর আক্রমণে প্রতিবছর মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যাটা একেবারে কম নয়, শ পাঁচেক মানুষকে প্রাণ হারাতে হয় এদের হাতে। একেকটি পুরুষ জলহস্তীর ওজন হতে পারে ১৫০০ কেজি। প্রায় আধা মিটার লম্বা ধারালো শ্বদন্তের একটি কামড়ে একজন মানুষের শরীর দুই টুকরো হয়ে যেতে পারে। বলা হয় একটি জলহস্তীর কামড়ের শক্তি সিংহের কামড়ের তিন গুণ।
জলহস্তীর এলাকায় কোনো মানুষ চলে এলে আক্রমণ করে বসা এদের জন্য খুব স্বাভাবিক। কখনো কখনো অন্য কোনো প্রাণী ভেবে নৌকা আক্রমণ ও উল্টে দেওয়ার অভ্যাস আছে এদের।
হাতি
হাতির আক্রমণে মৃত্যু হওয়া মানুষের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০। পা দিয়ে মাড়িয়ে, শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় মেরে কিংবা দাঁত দিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ মারার রেকর্ড আছে হাতিদের। তেমনি মানুষের কারণে প্রাণ যায় হাতিদেরও। বুনো হাতির দেখা পাওয়া যায় আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে।
হাতি-মানুষ সংঘাতে দায় আছে মানুষেরও। হাতির বিচরণের জায়গাগুলোয় মানুষের বসতি ও চাষবাদের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় মানুষের সঙ্গে সংঘাত বাড়ছে এদের।
কুমির
প্রতিবছর কুমিরের আক্রমণে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়, হাজারের মতো। এদের দাঁতগুলোই জানিয়ে দেয়, কতটা বিপজ্জনক হতে পারে সরীসৃপটি। নীল ক্রোকোডাইলের কামড়কে ধরা হয় পৃথিবীর তাবৎ প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কামড় হিসেবে। তেমনি লোনাপানির কুমিরের কামড়ও প্রচণ্ড শক্তিশালী।
এসকারিস রাউন্ডওয়র্ম
এই গুবরে পোকারা সরাসরি মানুষ মারে না। তবে বহু মানুষের মৃত্যুর জন্য এরাই দায়ী। এটি অন্য প্রাণীর দেহে বাস করে তার ক্ষতি করে। কোনো মানুষ দুর্ঘটনাবশত তাদের ডিম খেয়ে ফেললে মানুষের শরীরের প্রবেশের সুযোগ পায়। এটি মানুষের শরীরের খাদ্যনালির নিচের অংশে অবস্থান করে খাবার খায় এবং নতুন প্রাণীর জন্ম দেয়। এতে যে রোগের সৃষ্টি হয়, তার নাম এসকারিয়াসিস। এই রোগে প্রতিবছর প্রায় আড়াই হাজার মানুষ মারা যান।
মাকড়সা
লেজ দিয়ে হুল ফুটিয়ে শিকারের শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয় মাকড়সারা। অবশ্য এদের সবাই এমন ক্ষতিকর নয়। ২৬০০ প্রজাতির মাকড়সার মধ্যে কেবল ২৫ জাতের মাকড়সা মানুষকে মারার মতো বিষ থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর বলা চলে ডেথস্টকারকে। উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু এলাকায় মৃত্যুর বার্তাবাহী এই হলুদ প্রাণীর দেখা মেলে। এদের শরীরে যে পরিমাণ বিষ থাকে, তা শিশু, বৃদ্ধ কিংবা শারীরিক জটিলতায় ভোগা মানুষদের মারার জন্য যথেষ্ট। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষও এদের হুলে মারা যেতে পারেন, তবে আশঙ্কা কম। মাকড়ার কামড়ে প্রতিবছর মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ২৬০০ থেকে ৩৩০০।
গুপ্তঘাতক বাগ
অ্যাসাসিন বাগ বা গুপ্তঘাতক ছারপোকা ছাগাস রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী। রক্তচোষা এই কীট মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় বড় বিপদের কারণ। এ ধরনের পোকার কামড়ে কিংবা এদের দ্বারা সংক্রামিত কোনো খাবার খেলে এ রোগ হয়। প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এ রোগে হার্ট, পরিপাকতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এ রোগ মাতৃগর্ভে মা থেকে শিশুর শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। এ রোগে বছরে ১০ হাজারের মতো মানুষ মারা যান।
কুকুর
কুকুর মানুষের বড় বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তবে এরা কখনো কখনো বড় শত্রুও হয়ে উঠতে পারে। সেটি র্যাবিস বা জলাতঙ্ক রোগ ছড়ানোর মাধ্যমে। এমনিতে সরাসরি কুকুরের আক্রমণে কারও মৃত্যুর খবর শোনা যায় না বললেই চলে, তবে কুকুরের কামড়ে হওয়া জলাতঙ্ক রোগে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। সাধারণত এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জলাতঙ্কজনিত মৃত্যুর হার বেশি। প্রতিবছর জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৯ হাজারের মতো।
ওয়ার্ল্ড হেথ অর্গানাইজেশনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জলাতঙ্কের কারণে যত মানুষ মারা যান, তার বেশির ভাগই কুকুরের কারণে। মোট জলাতঙ্ক রোগের ৯৯ শতাংশ হয় কুকুরের কামড়ে।
সাপ
এই বিষধর সরীসৃপদের প্রতি ইন্ডিয়ানা জোনসের যে ভীতি ছিল, তা একেবারে অমূলক নয়। বিপজ্জনক সব সাপ আছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। বিভিন্নভাবে সাপের আক্রমণে মারা যেতে পারে মানুষ। উদাহরণ হিসেবে ব্ল্যাক মামবা এক কামড়ে শরীরে দুই ফোঁটা বিষ ঢুকিয়ে মারতে পারে মানুষকে, আবার খুব বড় আকারের অজগরের পক্ষে এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে পর্যন্ত গিলে ফেলা সম্ভব। বছরে সাপের আক্রমণে মৃত্যু হওয়া মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার। এদের বেশির ভাগ মারা যায় বিষধর সাপের কামড়ে।
স্বাদুপানির শামুক
সিসটোসোমায়োসিস সিসটোসোমা ধরনের পরজীবী কৃমি দ্বারা সৃষ্টি রোগ। এটি স্নেইল ফিভাব নামেও পরিচিত। এটি মূত্রনালি অথবা অন্ত্রগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে। পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, রক্ত পায়খানা অথবা মূত্রে রক্ত চিহ্ন অথবা উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমিতরা যকৃতের ক্ষতি, কিডনি অকার্যকর, বন্ধ্যত্ব, মূত্রাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। সংক্রমিত মিঠাপানির শামুক দ্বারা এই পরজীবীগুলো ছড়ায়। ওয়ার্ল্ড হেথ অর্গানাইজেশনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ এর আক্রমণে মারা যায়।
মশা
মশাকে কারও পছন্দ করার কারণ নেই। মশা নানা ধরনের রোগ ছড়ায়, এটাও সত্যি। তবে আমরা যেটা কল্পনাও করতে পারি না, কোনো প্রাণী যদি আমাদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হয়, সেটি মশা। খুদে এই উড়ুক্কু প্রাণী বছরজুড়ে সাড়ে সাত লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর এই মৃত্যুগুলোর বড় একটি অংশ আসে ম্যালেরিয়ার কারণে। এটির প্রভাব সবচেয়ে বেশি আফ্রিকায়। পৃথিবীর মোট ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ৯৫ শতাংশ ও মৃত্যুর ৯৬ শতাংশ আফ্রিকায়। আরও যেসব বড় রোগের বাহক ছোট্ট এই প্রাণী, এর মধ্যে আছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, জিকা, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। এ বছর ইতিমধ্যে এডিস মশার কারণে সৃষ্টি হওয়া ডেঙ্গু জ্বরে বাংলাদেশে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১০০-তে পৌঁছেছে।
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, বিবিসি ওয়াইল্ডলাইফ ম্যাগাজিন
বিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
১৯ ঘণ্টা আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
১ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই আলোচনায় এখন ট্রাম্প। তবে তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইতালির সার্দানিয়া দ্বীপের একটি গ্রামে একেবারেই ভিন্ন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হিসেবে।
২ দিন আগেটাইটানিকের ৭০০-র বেশি যাত্রী এবং ক্রুকে উদ্ধার করেছিল একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপহার দেওয়া একটি সোনার ঘড়ি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
৩ দিন আগে