দুর্বলচিত্তদের যে বাড়িতে ঢোকা বারণ

ইশতিয়াক হাসান
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৪: ৩৯
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৪: ৫৪

অনেকের চোখেই এটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভুতুড়ে বাড়ি। রহস্যময় ছায়ামূর্তির আনাগোনা, ভয়ানক চিৎকার, দর্শনার্থীদের ছুড়ে ফেলাসহ নানা ধরনের অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডকীর্তির গুজব শোনা যায় একে ঘিরে। এমনকি এটি তৈরির ইতিহাসটিও ঠিক স্বাভাবিক নয়। গল্পটা গ্লুচেস্টারশায়ারের দ্য অ্যানশেন্ট রাম ইন নামে পরিচিত এক বাড়ির, একসময় যেটি ছিল একটি সরাইখানা।

একে বিবেচনা করা হয় ওটন-আন্ডার-এজের সবচেয়ে পুরোনো দালান হিসেবে। ব্রিস্টল থেকে ছোট্ট গ্রামটিতে যেতে সময় লাগে মিনিট চল্লিশেক। বাড়িটির ইতিহাস যেমন রহস্যে ঘেরা, তেমনি এখানে বিভিন্ন সময় বাস করা মানুষ এবং এখানে যাঁদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাঁরা এখনো বাড়িটির মায়া কাটাতে পারেননি বলে বিশ্বাস স্থানীয়দের।

১১৪৫ সালে দালানটি তৈরির কাজ শুরুর আগে এই এলাকাটি ছিল প্যাগানদের (বিশেষ এক ধরনের মত বা বিশ্বাসের অনুসারীরা) সমাধি এলাকা। তারপর আবার এটি পড়েছে গ্রেট ব্রিটেনের প্রাচীন একটি পথ বা লে লাইনের মধ্যে। এই পথের সঙ্গে এমনকি সংযোগ আছে রহস্যময় স্থাপনা স্টোনহেঞ্জেরও। তাই এই বাড়িটি নির্মাণের পর একে ঘিরে যখন নানা রহস্যময়, ভুতুড়ে ঘটনা ঘটতে শুরু করে, তখন পুরোনো ওই ইতিহাস স্মরণ করে নানান কিংবদন্তি ডালপালা মেলতে থাকে। 

ভুতুড়ে বাড়ির অভ্যন্তরে১১৪৫ সালে দালানটি বানানো হয় কাছের সেন্ট মেরি চার্চ তৈরিতে কাজ করা রাজমিস্ত্রিসহ বিভিন্ন শ্রমিকদের বাসস্থান হিসেবে। স্থানীয় মানুষদের দাবি, এই কাজের সময় প্যাগানদের বিভিন্ন আচারে ব্যবহার করা কালো শক্তির দুয়ার খুলে যায়। এটিই পরবর্তী সময়ে এখানে নানা ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনার অন্যতম কারণ।

রাজমিস্ত্রি এবং অন্য শ্রমিকেরা বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার পর এখানে বাস করেন একজন যাজক। পরে এটি সরাইখানা হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে জন হামফ্রিজ একে কিনে নিয়ে নিজের বসতবাড়ি হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। ঐতিহাসিক এ বাড়িটির পুরোনো রূপ অক্ষত রেখে একে রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। ২০১৭ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর মেয়ে ক্যারোলিন হামফ্রিজ এর মালিক হন।

অ্যানশেন্ট রাম ইনের একটি কামরাতবে কয়েক শ বছরে এই সরাইখানা বা বাড়িটি ঘিরে এমন সব ভৌতিক গল্প ছড়িয়ে আছে যে স্থানীয় অনেক বাসিন্দা রাতে এর পাশ দিয়ে হাঁটতে সাহস পান না। অনেকেই বলেন দালানটির ভেতরে ঢুকলে এক ধরনের অস্বস্তি, আরও পরিষ্কারভাবে বললে আসন্ন বিপদের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে মনে। নগ্ন দেয়াল, হেঁটে যাওয়ার সময় কাঠের মেঝেতে মচমচ শব্দ, কখনো কখনো রহস্যময় ছায়া—সব মিলিয়ে পিঠ দিয়ে শীতল একটা স্রোত নেমে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। তারপর আবার আপনার যদি একে ঘিরে জন্ম নেওয়া ভুতুড়ে ঘটনাগুলো জানা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই!  

প্রথম যে কামরাটায় পর্যটকেরা ঢোকেন সেটি পরিচিত মেন’স কিচেন নামে। বলা হয় এই কামরাটির অবস্থান প্যাগানদের সমাধি এলাকার ঠিক পাশে। মাঝে মাঝেই এ কামরায় এক শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পাওয়ার অভিযোগ করেন ভ্রমণকারীরা। আবার খাড়া সিঁড়ি ধরে ওপরে উঠতে থাকা লোকেদের অদৃশ্য কোনো হাত সিঁড়িতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ শোনা যায় মাঝে মাঝেই। ১৯৯৯ সালের জুনে এখানে তোলা এক ছবিতে মানুষের উচ্চতার রহস্যময় এক সাদা কুয়াশাকে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখা যায়।

বিড়ালের ৫০০ বছরের মমিদুই তলাতেই পাবেন সরাইখানার সবচেয়ে ভীতিকর কামরাটিকে। এটি পরিচিত বিশপ’স রুম বা যাজকের কামরা নামে। শোনা যায় একবার এক লোক দরজা ঠেলে কামরাটায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য এক শক্তি তাকে বারান্দায় ছুড়ে ফেলে। ভেতরের আবহাওয়াটাও কেমন ভারী ও অস্বস্তিকর বলে দাবি করেন পর্যটকেরা। এখানেই ড্রেসিং টেবিলের ভেতর থেকে ভুতুড়ে এক অশ্বারোহীকে বের হয়ে ওপাশের দেয়ালে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখেন বলে জানান অনেকে। কামরাটির এক কোণে হঠাৎ হঠাৎ দেখা মেলে দুজন যাজকের। কখনো কখনো একজন লোকের ভয়াবহ আর্তচিৎকার শোনা যায়। এখানে আসা মানুষদের ধারণা, এই কামরায় আগুনে মাথা ঢুকিয়ে যে লোকটিকে হত্যা করা হয়েছিল তার চিৎকার এটি।

দরজার কাছে দেখা মেলে ভৌতিক এক মেষ পালক এবং তাঁর কুকুরের। কামরায় যাঁরা রাত কাটান তাঁরা হঠাৎ অদৃশ্য কিছু তাঁদের জাপটে ধরার অভিযোগ করেন।

বাড়ির চিলেকোঠাটিরও ভুতুড়ে বলে বদনাম আছে। এক সরাইখানা মালিকের মেয়েকে ওই চিলেকোঠায় নাকি খুন করা হয়েছিল। চিলেকোঠার নিচে বিশপের কামরায় যাঁরা শুয়েছেন তাঁদের অনেকেই ওপরে ভারী কিছু টেনে নেওয়ার আওয়াজ পেয়েছেন।

ওটন-আন্ডার-এজ গ্রামে দেখা পাবেন বাড়িটিরবাড়িটির একটি দেয়ালের ভেতর পাওয়া গেছে ৫০০ বছর বয়সী মমিতে রূপান্তর করা একটি বিড়াল। বাড়ির বর্তমান মালিক ক্যারোলিনের ধারণা ডাইনির প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য এটি এখানে স্থাপন করা হয়েছিল। 

দ্য অ্যানশেন্ট রাম ইন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক টিভি শো, বিখ্যাত হন্টেড আর ঘোস্ট অ্যাডভেঞ্চার শোগুলোতেও নিয়মিত উপস্থিতি এর। শুধু ইংল্যান্ড নয়, গোটা পৃথিবী জুড়েই ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে এর পরিচিতি। এদিকে বাড়িটির নতুন মালিক ক্যারোলিন হামফ্রিজ বছরের নির্দিষ্ট কিছুদিনে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এটিকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন অ্যানশেন্ট রাম ইনের ভেতর যেসব অশুভ আত্মাদের বিচরণ তারা এখনো প্রবলভাবে সক্রিয়। এটা এমন এক জায়গা যেখানে তাই দুর্বলচিত্তদের না যাওয়াটাই ভালো। তবে সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে ভূতপূর্ব এই সরাইখানাটিতে পা রাখামাত্রই যেন কয়েক শ বছর পিছিয়ে যাবেন, আর আপনি যদি সৌভাগ্যবান বা দুর্ভাগ্যবান হন তবে এখানকার অশরীরীদের কোনো একটির দেখা পেয়েও যেতে পারেন।

সূত্র: স্ট্রাউড টাইমস ডট কম, হন্টেড ব্রিটেন ডট কম, ট্র্যাভেল এওয়েটস ডট কম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত