গোলচত্বরের মাঝখানে এক বাড়ি

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২০ মে ২০২৩, ১১: ১২
Thumbnail image

বৃত্তাকার একটি সড়ক মোড় বা গোলচত্বরের মাঝখানে যদি আপনার বাড়িটি হয়, কেমন হবে বলুন তো? ভাবছেন এটা আবার হয় নাকি! এমন জায়গায় কারও বাড়ি হয়! কিন্তু ওয়েলসের একটি পরিবারের বেলায় কথাটি সত্যি। একদিন-দুদিন নয়, চার দশকের বেশি সময় ধরে এই বাড়িতে বাস তাঁদের। বৃত্তাকার পথটি যখন তাঁদের বাড়ির চারপাশে তৈরি হচ্ছিল, তখন এখান থেকে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় পরিবারটি। তারপর থেকে আছে এখানেই।

১৯৬০ সাল। ডেভিড জন হাওয়াটসন ও এরিয়ান হাওয়াটসন ওয়েলসে তাঁদের ডেনবেশায়ারের বাংলোয় উঠে এলেন। দুই দশক কোনো ঝামেলা ছাড়াই চলল সবকিছু। তারপরই কর্তৃপক্ষ জানাল, তাঁদের বাড়িটি যেখানে, সেখানেই একটু নতুন গোলচত্বর তৈরি হতে চলেছে। হাওয়াটসনরা তাঁদের জায়গা ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানালেন। অতএব তাঁদের বাড়িটিকে মাঝখানে রেখেই তৈরি হলো গোলচত্বরটি। 

গোলচত্বরের কাজ শেষ হয় ১৯৮০ সালের দিকে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই সময়ই ডেভিড জন মারা যান। তবে পরিবারের বাকি সদস্যরা সেখানেই বাস করতে লাগলেন।

এখন এই বাড়িতে স্ত্রী অ্যানওয়েনকে নিয়ে থাকেন ডেভিড জন ও এরিয়ান দম্পতির ছেলে ৬৪ বছর বয়স্ক ক্লুইড হাওয়াটসন। ক্লুইড জানান, এখান থেকে চারপাশের বিশেষ করে ওয়েলসের শহরতলির দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে তাঁদের। 

ক্লুইড হাওয়াটসন ও তাঁর স্ত্রী অ্যানওয়েন থাকেন বাড়িটিতে‘এই গোলচত্বরের মধ্যখানে চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে থাকছি, এটাই আমি জানি। এটা তৈরির ২০ বছর আগে থেকেই আমার পরিবার এখানে বাস করে আসছে।’ নর্থ ওয়েলস লাইভে ক্লুইড হাওয়াটসন বলেন, ‘প্রতিবেশীদের নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় না আমাদের। অবশ্য গোলচত্বরের মাঝে এই জীবনও কখনো খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যখন নাতি–নাতনিরা বেড়াতে আসে।’ ক্লুইড জানান, তাঁর সাত ছেলে-মেয়ে ও ১২ জন নাতি-নাতনি আছে। তাঁরা তাঁদের দুজনকে দেখতে মাঝে মাঝেই এই বাড়িতে আসেন।

ক্লুইড বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবার একটি গোলচত্বরের মাঝখানে থাকেন এটা শোনার পর বেশির ভাগ মানুষের দুটি প্রশ্ন থাকে। এক. কীভাবে এই বাড়ি পেলেন আর দুই. এখানে শব্দটা কী খুব বেশি হয় না?

তবে ক্লুইডের কাছে এটি অনেকটা সাধারণ কোনো রাস্তার ধারে থাকার মতোই। মূলত দিনে কেবল কয়েক বারই রাস্তাটা খুব ব্যস্ত থাকে বলে জানান তিনি।

অবশ্য এখানে থাকায় একেবারেই চ্যালেঞ্জ নেই, তা নয়। বিশেষ করে রাস্তাগুলো যখন ব্যস্ত থাকে তখন বাড়িটি থেকে গাড়ি চালিয়ে বের হওয়াটা বেশ মুশকিল হয়।

বাড়িটিকে ঘিরে বড় কোনো দুর্ঘটনারও রেকর্ড নেইচারপাশে রাস্তার মাঝখানে এ রকম একটি বাড়ি এই এলাকায় নতুন গাড়ি নিয়ে আসা চালকদের কখনো কখনো বিভ্রান্তিতে ফেলে। তবে গোলচত্বর তৈরির পর একেবারে গোড়ার দিকে দুই-একটি ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটা ছাড়া বড় কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। ১৯৬০-্এ দশকে কাছাকাছি একটি রেলওয়ে ট্র্যাক ছিল। তবে এখন চার কামরার বাংলোটাকে অতিক্রম করে যায় উপকূলের দিকে চলে যাওয়া এ৫২৫ রোড ব্যবহার করা হাজারো গাড়ি।

গোলচত্বরের মাঝখানে বাড়ি থাকার একটি বড় ঝামেলা ডাক বা কুরিয়ারে আসা বিভিন্ন জিনিস ডেলিভারি দেওয়া নিয়ে। কারণ একটু দূরের অন্য বাড়িগুলোর এবং এই বাড়ির পোস্টাল কোড একই। যারা জিনিসটা ডেলিভারি দেন, তাঁদের কখনো কখনো বুঝতে একটু সময় লাগে বাড়িটি আসলে গোলচত্বরের মাঝখানে।

‘যখন আমরা এ ব্যাপারে তথ্য দিই, সব ঠিক থাকে। তার পরই যখন বলি আমরা গোলচত্বরের পাশে নয়, এর মাঝখানে থাকি, তখন তাঁরা একটু বিভ্রান্তিতে পড়েন। তবে এখানে পৌঁছে যাওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে যান তাঁরা।’ বলেন ক্লুইড হাওয়াটসন।

বুঝতেই পারছেন গোলচত্বরের বাড়িটায় বহু বছর ধরেই থাকছে পরিবারটি, আর এর বর্তমান বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আপাতত অন্য কোথাও সরে পড়ার পরিকল্পনাও নেই। তাদের বাড়িটা একটু অদ্ভুত আর অন্য বাড়ির চেয়ে আলাদা হতে পারে, তবে এটাই তাঁদের পছন্দ।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল, মিরর, দ্য সান, ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত