২০ বছর আলাস্কার এক শহরের মেয়র ছিল স্টাবস নামের বিড়ালটি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১১: ৪১

মেয়র পদটি একটি শহরের জন্য নিশ্চয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরবাসীর দেখভালের দায়িত্ব তাঁরই। কিন্তু এখন আপনি যদি শোনেন একটি শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছে একটি বিড়াল, তাও এক-দুই বছর নয়, ২০ বছর! আপনার নিশ্চয় চোখ কপালে উঠবে। আজ ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক বিড়াল দিবসে থাকছে স্টাবস নামের ওই বিড়ালটির গল্প। 

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট এক শহর টালকিটনা। মেরে-কেটে হাজার খানিক লোকের বাস সেখানে। উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু চূড়া ডেনালির অবস্থান শহরটি থেকে খুব দূরে নয়। ১৯৯০-র দশকের বিখ্যাত টিভি শো নর্দার্ন এক্সপোজারে সিসেলি নামে যে কাল্পনিক শহরকে উপস্থাপিত করা হয়েছে সেটির অনুপ্রেরণা সম্ভবত টালকিটনা। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্ববাসীর কাছে এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছে একটি বিড়ালকে মেয়র নির্বাচিত করায়।

টালকিটনার প্রধান সড়কে নাগলে’স নামে একটি মুদি দোকান ছিল। এর ইতিহাস একেবারে আলাস্কার গোল্ডরাশ বা ‘সোনা জ্বরে’র সময়কার। ১৯২১ সালে গোড়াপত্তন হওয়া নাগলে’স প্রথমে ছিল একটি লগ কেবিন। এটি স্বর্ণসন্ধানীরা বিশ্রাম বা রাত কাটানোর জন্য ব্যবহার করতেন তখন। পরবর্তীতে ডাকঘর এমনকি আঞ্চলিক সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৭০-র দশক থেকে সব সময়ই এখানে রেসিডেন্ট কেট বা আবাসিক বিড়াল ছিল।

২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদপত্রে আসতে শুরু করে টালকিটনা শহর এবং তার বিড়াল মেয়রের কাহিনি। ছবি: লরি স্টেক১৯৯৭ সালে নাগলে’সের জন্য নতুন একটি বিড়াল দরকার হয়ে পড়ে। ম্যানেজার লরি স্টেক খাটো লেজের ম্যানক্স মিক্স জাতের একটি বিড়ালকে দত্তক নেন। এটির নাম দেন স্টাবস। অল্প সময়ের মধ্যে শহরের বাসিন্দাদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সে। কেনাকাটা করতে আসা মানুষদের অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি প্রতিদিন বিকেলে পাশের ওয়েস্ট রিব পাব অ্যান্ড গ্রিলে হাজির হতো। তারপর আয়েশ করে ওয়াইনের গ্লাসে পান করত পুদিনার রস মেশানো পানি। ওই সময়ই মানে ১৯৯৭ সালেই ওই অবিশ্বাস্য কাণ্ডটি করে শহরবাসী। মানে বিড়ালটিকে মেয়র বানানো হয়।

একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদপত্রে আসতে শুরু করে টালকিটনা শহর এবং তার বিড়াল মেয়রের কাহিনি। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য বলছে, শহরের বাসিন্দারা মেয়র পদটির জন্য যেসব মানুষ আবেদন করেছিলেন তাঁদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছিলেন না মোটেই। অতএব টালকিটনার বাসিন্দারা ওই সব প্রার্থীর বদলে বিড়ালটির নাম লিখে ভোট দিয়ে একে মেয়র নির্বাচিত করে ফেলে।

টালকিটনার প্রধান সড়কে নাগলে’স নামের মুদি দোকান ছিল স্টাবসের আস্তানা। ছবি: এটলাস অবসকিউরাযদিও এটা পরিষ্কার বিড়াল স্টাবসের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল কঠিন। তার পদটি ছিল সম্মানসূচক। সে আসলে ছিল প্রতীকী মেয়র। শহর পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটি করতেন বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই। ১৯৯৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২০ বছর শহরটির মেয়রের দায়িত্ব পালন করে স্টাবস।

বিড়ালটিকে মেয়র বানানোর পর থেকে এটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার পর এটি রীতিমতো তুঙ্গে পৌঁছে। এমনকি আশপাশের শহরের মানুষেরাও একে দেখতে আসা শুরু করে। স্টাবসের নামে ডাক যোগে আসত প্রচুর কার্ড ও চিঠি।

অনেক সময়ই বলা হয় বিড়ালের নাকি নয়টি জীবন আছে। মেয়রের অফিসে থাকাকালীন স্টাবস যেন এর সবগুলোই ব্যবহার করতে বদ্ধ পরিকর ছিল। একবার যেমন একটি রেস্তোরাঁর ফ্রাইয়ারের (যেখানে তেল ঢেলে কিছু ভাজি করা হয়) মধ্যে পড়ে যায় সে। সৌভাগ্যক্রমে ওই সময় এটি জ্বালানো ছিল না ও শীতল ছিল। আরেকবার এলাকার কিশোররা বিবি গান দিয়ে তাকে গুলি করে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় স্টাবস।

২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করে স্টাবস। ছবি: ফেসবুকময়লা বোঝাই এক ট্রাকে লাফিয়ে ওঠে শহর থেকে বেশ দূরেও চলে গিয়েছিল স্টাবস। তবে বিষয়টি বুঝতে পেরে আবার ফিরে আসে। ২০১৩ সালে একটা কুকুরের ভয়ানক আক্রমণের শিকার হয় সে। এতে রীতিমতো প্রাণী সংশয় দেখা দেয়।

তাকে কাছের তুলনামূলক বড় শহর ওয়াসিলার এক পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় স্টাবসের ফুসফুসে ছিদ্র, পাঁজরের হাড়ে চিড় এবং শরীরের এক পাশে বড় ও দীর্ঘ একটি ক্ষত আবিষ্কার করেন চিকিৎসক। মোটা ১২টি সেলাই লাগে স্টাবসের। সমর্থকেরা অবশ্য তার চিকিৎসার খরচে কার্পণ্য করেনি। এমনকি স্টাবসের জন্য যে টাকা ওঠে তা ছিল চিকিৎসার বিলের চেয়ে অনেক বেশি। পরে বেঁচে যাওয়া অর্থ স্থানীয় পশু দাতব্য সংস্থাগুলিতে দান করা হয়।

একসময় সুস্থ হয়ে জেনারেল স্টোরে ফিরে আসে স্টাবস। পালন করতে থাকে মেয়রের দায়িত্ব। ২০১৭ সালে বয়স হয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুই হয় স্টাবসের। তার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়ে গোটা শহরের মানুষ। পরে নাগলি’সের যমজ দুই বিড়াল অরোরা এবং ডেনালিকে নতুন প্রতীকী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করে শহরটি ঐতিহ্য বজায় রাখে শহরবাসীরা। ২০২২ সালে ডেনালি মারা গেলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অরোরা নাগলি’সে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, সিএনএন, উইকিপিডিয়া

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত