বিবাহিত-অবিবাহিতের মধ্যে কারা বেশি সুখী, জানা গেল উত্তর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৫১
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ৫৫

বিবাহিতরা বেশি সুখী, নাকি অবিবাহিতরা? প্রশ্নের উত্তরটা বেশ জটিল। এ বিষয়ে নানা মুনির নানা মত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে নতুন এক জরিপে এর উত্তর মিলেছে। 

বিবাহিত হওয়ার সুখী জীবনের গল্পটা আর মোটেই গল্প নয়। প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিতরা অন্য যেকোনো সম্পর্কের তুলনায় অনেক বেশি সুখী। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত আমেরিকান বহুজাতিক বিশ্লেষণ এবং পরামর্শক কোম্পানি গ্যালাপের এক জরিপের ফলাফলে (গ্যালাপ পোল) এ তথ্য জানা গেছে। 

‘আপনি যেভাবেই এই ডেটা বিশ্লেষণ করুন না কেন, লোকেরা কীভাবে তাদের জীবনকে মূল্যায়ন করে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিবাহিত হওয়ার একটি মোটামুটি বড় ও উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেখতে পাচ্ছি।’ বলেন গ্যালাপের প্রধান অর্থনীতিবিদ জনাথন রথওয়েল। 

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ লাখের বেশি প্রাপ্তবয়স্ককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাঁরা তাঁদের বর্তমান জীবনকে কেমন রেটিং দেবেন, শূন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ রেটিং এবং ১০ সর্বোচ্চ। তারপরে গবেষকেরা উত্তরদাতাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁরা আগামী পাঁচ বছরে তাঁদের সুখের স্তর কেমন হবে বলে আশা করেছিলেন। 

সমীক্ষা অনুসারে, ভালো বা সমৃদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য, এক ব্যক্তিকে তাঁদের বর্তমান জীবনকে ৭ বা তার বেশি এবং তাঁদের প্রত্যাশিত ভবিষ্যৎকে ৮ বা তার বেশি পয়েন্ট দিতে হয়। জরিপকারী সংস্থার সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সমীক্ষার সময়কালের মধ্যে বিবাহিত ব্যক্তিরা ধারাবাহিকভাবে অবিবাহিতদের তুলনায় সুখের মাত্রা বেশি বলে জানিয়েছেন। তথ্য বলছে, বছরের ওপর নির্ভর করে এটি ১২ থেকে ২৪ শতাংশ বেশি। 

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বয়স, জাতি, জাতিসত্তা, লিঙ্গ ও শিক্ষার মতো বিষয়গুলো গবেষকেরা বিবেচনায় আনার পরেও এই ব্যবধান ছিল। 

শিক্ষাকে সুখের একটি শক্তিশালী নিয়ামক মনে করা হয়। তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চবিদ্যালয়েও যেতে পারেননি এমন বিবাহিত প্রাপ্তবয়স্করা স্নাতক ডিগ্রিধারী অবিবাহিত প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তাঁদের জীবনকে আরও ভালো মূল্যায়ন করেন। 

‘জাতি, বয়স ও লিঙ্গ এবং শিক্ষার মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন আপনার সেরা জীবনযাপন পরিমাপের মতো কিছু আসে, তখন বিয়ে সেই জিনিসগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।’ বলেন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ন্যাশনাল ম্যারেজ প্রজেক্টের ডিরেক্টর ব্র্যাডফোর্ড উইলকক্স। তিনি গ্যালাপ পোল গবেষণা পর্যালোচনা ও সম্পাদনা করেছেন। 

একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিবাহ ও পারিবারিক থেরাপিস্ট এবং সিএনএনের সম্পর্কবিষয়ক প্রদায়ক ইয়ান কার্নার ই-মেইলে বলেন, ‘এক দশকের বেশি আমার অনুশীলনে আমি “রোমান্টিক বিয়ে” থেকে “সহচর বিয়ের” দিকে ক্রমশ আগ্রহ বাড়ার বিষয়টি লক্ষ করেছি, যার অর্থ হলো লোকেরা ক্রমবর্ধমানভাবে এমন জীবনসঙ্গী বেছে নিচ্ছে, যারা আবেগ-অংশীদারদের চেয়ে সেরা বন্ধু হবে।’ 

‘যদিও এর ফলে আকর্ষণ অনুভবের ব্যাপারে সমস্যা হতে পারে। তবে এর অর্থ হলো, সেই ব্যক্তিরা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও সন্তুষ্টির কথার সম্ভাবনার ভিত্তিতে জীবনসঙ্গী বেছে নিচ্ছেন।’ মন্তব্য করেন কার্নার। 

ডেটা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। তবে বিয়েই বেশি সুখের কারণ কি না, তা বলা কঠিন বলে মনে করেন রথওয়েল। 

‘এটা হতে পারে যে সুখের দিকে পরিচালনা করার মতো গুণাবলি রয়েছে যাঁদের, তাঁরাও বিয়ের বিষয়েও আগ্রহী।’ বলা হয় সমীক্ষায়। 

তবে ব্যক্তিগত পরিস্থিতি, সামাজিক পরিবর্তন এবং বিয়ে সম্পর্কে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জনাথন রথওয়েল। 

উদাহরণস্বরূপ, যে সম্প্রদায়গুলোতে বিয়ে একটি প্রয়োজনীয় বিষয়, সেখানে প্রাপ্ত তথ্য যেখানে মানুষ সঙ্গী বেছে নিতে বেশি সক্ষম, তার তুলনায় সুখের ওপর কম প্রভাব ফেলে।

এদিকে বোস্টনের মনোবিজ্ঞানী ড. মনিকা ও’নিল জানান, একটি অসুখী বৈবাহিক সম্পর্ক সামগ্রিকভাবে জীবনে ভালো প্রভাব ফেলবে এটা কখনোই মনে করেন না তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত