Ajker Patrika

কখনো সাগরে কখনো ডাঙায় যে রেস্তোরাঁ

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ১৫: ০২
কখনো সাগরে কখনো ডাঙায় যে রেস্তোরাঁ

আপনি হয়তো দেশ-বিদেশের নামী অনেক রেস্তোঁরায়ই গিয়েছেন। তবে আফ্রিকার দেশ তাঞ্জানিয়ার মিছামবির ‘দ্য রক’ একেবারেই আলাদা। বিশেষ করে জোয়ারের সময় যে পাথরের ওপর রেস্তোঁরাটি তৈরি হয়েছে, সেটি নিজেই ছোট্ট এক দ্বীপে পরিণত হয়। তখন মনে হবে আপনি সাগরের মাঝখানের এক রেস্তোঁরায় বসেই খাওয়া-দাওয়া করছেন। 

তাঞ্জানিয়ার জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জের এক দ্বীপ উনগুজা। এখানেই মিছামভি পিংওয়ি সৈকতের অবস্থান। ভাটার সময় দ্য রক রেস্তোরাঁটা যে পাথরের ওপর সেটি থাকে বালুর ওপর। মানে, তখন একে সৈকতের অংশই বলতে পারেন। অর্থাৎ বালুর ওপর পায়ে হেঁটে কিংবা বড়জোর পায়ের পাতা ভিজিয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন রেস্তোরাঁটিতে। 

তবে জোয়ারের সময় ওই রেস্তোরাঁয় গেলেই উপভোগ করতে পারবেন বেশি। তখন ওই পাথর একটি দ্বীপে পরিণত হয়। আর আপনি সেখানে যাবেন নৌকায় চেপে। তখন ভারত মহাসাগরের বুকে পাথরের ওপর এক রেস্তোঁরায় বসে এখানকার বিশেষ বিশেষ সব ম্যানু উপভোগ করতে পারবেন। অর্থাৎ দিনের কোন সময় যাবেন সেটার ওপর নির্ভর করছে পায়ে হেঁটে রেস্তোঁরায় পৌঁছাবেন নাকি নৌকায় চেপে। 

নৌকায় চেপে রেস্তোঁরায় খেতে যাচ্ছেন সবাই।পাথরের ওপরের রেস্তোরাঁর ধারে পৌঁছার পর কাঠের একটি সিঁড়িতে চেপে উঠবেন রেস্তোঁরায়। মাকুতি পাম গাছের ছাদের নিচে ২০টি আরামদায়ক টেবিল পাতা। সেখানে বসে উপভোগ করবেন লাঞ্চ বা ডিনার। ভাটার সময় তিন পাশেই পাবেন ভারত মহাসাগরের স্বচ্ছ জল, আর জোয়ারে তো জল পাবেন চারদিকেই। 

ভাটায় ‘দ্য রকে’ পৌঁছে যেতে পারবেন পায়ে হেঁটেএখন আপনার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে এখানকার খাবার ম্যানুতে কি থাকে। রেস্তোঁরাটি বেশি পরিচিত এখানকার নানা ধরনের সি ফুডের জন্য। আছে বিভিন্ন রকম পাস্তাও। পাবেন সবজির বিভিন্ন ম্যানু ও নানা ধরনের পানীয়ের ব্যবস্থাও। 

ওপর থেকে এমনই দেখায় রেস্তোরাঁটিকেরেস্তোরাঁটির শেফেরা এখানকার খাবারগুলো তৈরিতে পাশ্চাত্যের বিখ্যাত কিছু রেসিপি অনুসরণ করেন। একই সঙ্গে প্রতিটি ম্যানুতেই জাঞ্জিবার অঞ্চলের ঐতিহ্যের ছাপও যেন থাকে, সে বিষয়েও খেয়াল থাকে ষোলো আনা। যেমন মাছের একটি পদ পাবেন যেটা নারিকেল, লেবুর রস, গোলমরিচের গুঁড়া সহযোগে রান্না করা হয়। চকোলেট সালামি থেকে শুরু করে আনারসের ফ্লামবি যেই ডেজার্টই দেওয়া হোক না কেন, ওপরে থাকে জাঞ্জিবারের বিখ্যাত মসলা আইসক্রিম। 

রেস্তোরাঁর গরুর মাংসের জোগান আসে কাছের খামার থেকে। মশলা, শাক-সবজিও স্থানীয় বাগানে চাষ করা। 

রেস্তোরাঁর অন্দরমহলেএখানে লাঞ্চের সময় দুটো ১২টা আর দুইটা। ডিনারের টাইমটা হয় বেশ আগেভাগে বিকেল চারটা আর সন্ধ্যা ছয়টায়। অবশ্য কখনো কখনো ব্রাঞ্চ অর্থাৎ নাশতা ও দুপুরের খাবারের মাঝামাঝিতে কিংবা একটু রাত করেও খাবার মিলবে। তবে আগে থেকে অবশ্যই আপনাকে অর্ডার করতে হবে, না হলে খাবার মিলবে না। অন্তত ছয়জনের জন্য রিজার্ভেশন নেওয়া হয় এখানে। 

বুঝতেই পারছেন এই রেস্তোরাঁর অবস্থান ও খাবারের বিশেষত্বের কারণে দাম কিছুটা চড়া, অন্তত জাঞ্জিবারের অন্যান্য জায়গার তুলনায়। মোটামুটি ১০ থেকে ৪০ ডলারের মতো খরচ হবে আপনার এখানে। ২০১০ সালে চালু হয় রেস্তোরাঁটি, কিচানগা ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। এর আগে অবশ্য ওই পাথরটার তেমন গুরুত্ব ছিল না। স্থানীয় জেলেরা ব্যবহার করত মাছ রাখা ও বিক্রির জন্য। 

রেস্তোরাঁর বাইরে আছে বসার চমৎকার ব্যবস্থাজাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জ দেখার মতো জায়গা। কাজেই ভ্রমণপ্রেমী মানুষ হলে আপনি সেখানে যেতেই পারেন। আর একবার পৌঁছে গেলে এমন চমৎকার একটি রেস্তোঁরায় খাওয়ার সৌভাগ্য থেকে আশা করি নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। রেস্তোরাঁটির আশপাশে বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। পাজে ও বুয়েনজু গ্রাম থেকে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন। এ ছাড়া আসতে পারেন জাঞ্জিবারের মূল শহর স্টোন টাউন থেকেও। 

ও আরেকটি কথা, যারা খেয়েছেন তাঁরা কিন্তু বলেছেন এখানকার খাবার যথেষ্ট সুস্বাদু। তার মানে, চমৎকার স্বাদের খাবার আর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুটিই উপভোগের সুযোগ মিলবে পাথরের ওপরের রেস্তোরাঁটিতে গেলে। 

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, ফার্দার আফ্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত