জার্মানির যে সেতুতে উঠতে মানা

ইশতিয়াক হাসান
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩৪
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১: ১৭

জার্মানির ক্রোমলাউয়ের ক্রোমলাউ জাতীয় উদ্যানে অবস্থান রেকোৎজব্রুক সেতুর। ঘন গাছগাছালির মধ্যে অবস্থিত আশ্চর্য সুন্দর সেতুটিকে দেখলে চমকে উঠবেন। মনে হবে রূপকথার জগতে হাজির হয়ে গিয়েছেন। ভাববেন, এমন বৃত্তাকার সেতুও কি কোথাও থাকতে পরে? তবে ভালোভাবে খেয়াল করতেই রহস্যটা ফাঁস হবে। সেতুটি আসলে ধনুকাকার। নিচের পানিতে প্রতিফলিত হওয়ার কারণেই একে বৃত্তাকার মনে হয়। সত্যি বলতে, সেতুটি তৈরি করা হয়েছে মানুষকে এমন বিভ্রান্তিতে ফেলার কথা ভেবেই।

এবার বরং সেতুটি তৈরির ইতিহাসের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। ১৮৬০ সালের দিকে ফ্রেডরিক হারম্যান রটশক নামের প্রকৃতিপ্রেমিক স্থানীয় এক নাইটের মাথায় এমন একটা কিছু করার চিন্তা আসে। সে সময়ই ভাবনাটাকে বাস্তবে রূপ দিতে নেমে পড়লেন তিনি। রেকোৎজব্রুক হ্রদের ওপর ধনুকাকার কাঠামোটি তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের পাথর দিয়ে। এসব পাথরের বেশির ভাগ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হলেও কিছু কিছু আনা হয়েছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো থেকে। 

ইউরোপের এ ধরনের ধনুকাকার আরও কিছু সেতুর মতো এটিও পরিচিত ডেভিলস ব্রিজ বা শয়তানের সেতু নামে। এমন সেতুগুলো দেখতে এত সুন্দর আর বানানো এত কঠিন যে স্থানীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের ধারণা, এগুলো তৈরিতে কোনো না কোনোভাবে শয়তানের হাত আছে! ডেভিল বা শয়তানকে ঘিরে প্রত্যেকটি সেতুর আলাদা আলাদা কল্পকথাও আছে। এই সেতু নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে আরও নানা ধরনের গল্প। এগুলোর একটি হলো, এটি আসলে অন্য এক পৃথিবীর প্রবেশদ্বার।

ধারালো পাথরগুলোর কারণে সেতুতে ওঠা মোটেই সহজ নয়তবে বাস্তবতা হলো, মানুষ হাত দিয়ে সাধারণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই এটি তৈরি করেছেন। আর সেতুটি পার হতে যে নাভিশ্বাস উঠতে পারে, সেদিকে খেয়াল ছিল না কারিগরদের। বরং তাঁদের মনোযোগ ছিল সেতুটিকে দেখতে যেন সুন্দর লাগে সেদিকেই। শেষ পর্যন্ত প্রায় দশ বছর সময় লাগিয়ে যে জিনিসটি তৈরি করলেন তাঁরা, নির্মাণের ১৬০ বছর পরও মানুষকে বিস্মিত করে এটি। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যান তাঁরা একে এক নজর দেখতে।

রেকোৎজব্রুক সেতুর দুই প্রান্ত পাথরের সরু মোচাকৃতি চূড়া দিয়ে সজ্জিত, যেন একে দেখে ব্যাসাল্টের প্রাকৃতিক কলামের মতো মনে হয়। পাশাপাশি সেতুটাকে এভাবে বাঁকানো হয়েছে যেন এটি বৃত্তের ঠিক অর্ধেকটা হয়। ফলে যখন পানি থাকে এবং আলো ঠিকভাবে পড়ে, এটি পাথরের একটি বৃত্তাকার সেতু বলেই ভ্রম তৈরি করে।

রেকোৎজব্রুক সেতুতে ওঠার সিঁড়িনির্মাণের পর ১৬০ বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও সেতুটি বহাল তবিয়তে টিকে আছে এখনো। ২০১৯ সালের আগস্টের দিকে সেতুটির কিছু সংস্কার শুরু হয়। এ সময় নিচের পানিও সরিয়ে নেওয়া হয়। সংস্কার শেষ হয়ে যায় ২০২১ সালের মে মাসে।

বছরের যেকোনো সময় সেতু এলাকা ভ্রমণে যেতে পারেন। তবে শরৎ আদর্শ। এ সময় চারপাশের সবুজ প্রকৃতি সাজে অপরূপ সাজে। এর মাঝে সেতুটি আরও বেশি সুন্দর লাগে।

চারপাশের প্রকৃতিতে যখন রং লাগে আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে সেতুসেতুটির অবস্থান পূর্ব জার্মানির ক্রোমলাউ পার্কে। গাড়িতে যাতায়াতই সহজ সেখানে। বার্লিন থেকে ট্রেনে যাবেন কটবাসে। এখান থেকে আরেক ট্রেনে ওয়েবওয়াসার। তারপর বাসে চেপে ক্রোমলাউ। বাসস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন পার্কটিতে। বার্লিন থেকে ক্রোমলাউ পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা।

জার্মানির ক্রোমলাউয়ের ক্রোমলাউ জাতীয় উদ্যানে অবস্থান রেকোৎজব্রুক সেতুররেকোৎজব্রুক সেতুর স্থায়িত্বের কথা ভেবে এর ওপর দিয়ে সাধারণের চলাচল বারণ। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কখনো কখনো সেতুর ওপর ওঠা কোনো পর্যটকের ছবি দেখে চমকে উঠতে পারেন! সে ক্ষেত্রে পার্কের গার্ডদের ফাঁকি দিয়ে নিয়ম অমান্য করে কেউ এতে চড়ে বসেছিলেন, কিংবা গোটা বিষয়টি ফটোশপের কারসাজি। অবশ্য সেতুতে চড়ায় যদি কোনো বাধা নাও থাকত, এতে চড়া মোটেই সহজ হতো না। বরং এই চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে আহত হওয়ার আশঙ্কা কম নয়! তাই এই লেখা পড়ে কেউ সেতুটি দেখতে গেলে এর সৌন্দর্য উপভোগ আর কেবল সেতুর ছবি তোলায় সীমাবদ্ধ থাকবেন আশা করি!

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, দ্য ট্রাভেল. কম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত