অনলাইন ডেস্ক
গুপ্তধন কথাটি শুনলে মনে হয় কেবল রূপকথার গল্পের মাঝেই এর অস্তিত্ব রয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, গল্পের মতো কিছু গুপ্তধন আধুনিক যুগে খুঁজে পাওয়া গেছে, যা বহন করে ইতিহাসের সাক্ষী। এগুলোর মূল্যও নেহাত কম নয়।
ইংল্যান্ডের পূর্বে সংরক্ষিত এলাকা দ্য ওয়াশের একটি মোহনার কোথাও কিং জনের মধ্যযুগীয় রাজকীয় রত্নভান্ডার রয়েছে। ১২১৬ সালে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ধনসম্পদ সংবলিত ট্রেনে করে উপসাগর পার হওয়ার সময় জোয়ারের কবলে পড়েন এবং অমূল্য রত্ন সংবলিত মালবাহী ট্রেনটি ভেসে যায়। এরপর গুপ্তধন শিকারিদের স্বপ্ন থেকে যায় সেসব রত্ন খুঁজে বের করার। কেউ কেউ দাবি করেন, তাঁরা উদ্ধার করেছেন এসব গুপ্তধন। যদিও সপক্ষে প্রমাণ খুব কম। তবে কয়েকটি গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার সত্যিকারের ঘটনা রয়েছে, যা আশা জাগানিয়া।
সাটন হু
স্টাফোর্ডশায়ার হোর্ড নামেও পরিচিত সাটন হু ভান্ডার কখনো হারিয়েই যায়নি। বরং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে একজন অ্যাংলো-স্যাক্সনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনেক জায়গা জুড়ে সমাহিত করা হয়েছিল। মনে করা হয়, তিনি ছিলেন রেডওয়াল্ড (যিনি ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মারা যান)। জমির মালিক এডিথ প্রিটি, ১৯৩৯ সালের গ্রীষ্মে অপেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাসিল ব্রাউনকে জায়গাটি দেখতে বলেছিলেন। সেখানকার ঢিবির নিচে সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকের একটি জাহাজের ছাপ পাওয়া যায়, যার কেন্দ্রে একটি বিশেষ সমাধিকক্ষ ছিল। ক্ষয়িষ্ণু ধরনের মাটির কারণে জাহাজ ও দেহ উভয়ই অদৃশ্য হয়ে গেলেও সমাহিত করা রেডওয়াল্ডের ২৬৩টি নিদর্শনে অবশিষ্টাংশ থেকে যায়। এর মধ্যে ছিল রৌপ্য বাইজেন্টিয়ামের বাটি, গ্রিক লিপি খোদাই করা চামচ, একটি বড় রুপার থালা, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান একটি ঢাল, ফ্রান্সের মুদ্রার একটি পার্স এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি তলোয়ার ও গৃহস্থালির জিনিসপত্র। এ ছাড়া রাজার পায়ের কাছে একটি বর্ম রাখা হয়েছিল। সব থেকে আইকনিক ছিল রাজার শিরস্ত্রাণ, যা অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের মুখের প্রতীক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে এই সম্পদের সন্ধান মেলে। ফলে ঝুঁকি বিবেচনায় এসব গুপ্তধন লন্ডনের একটি অব্যবহৃত আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের গভীরে লুকিয়ে রাখা হয়। ১৯৫১ সাল পর্যন্ত সেগুলো সর্বজনীন প্রদর্শনে যায়নি। তবে বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে নিদর্শনগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।
দ্য আলফ্রেড জুয়েল
১৬৯৩ সালে একটি খেত চাষ করার সময়, সমারসেটের একজন বাসিন্দা অ্যাংলো-স্যাক্সন জুয়েলারির একটি অসাধারণ টুকরো খুঁজে পান, যা এখন ‘আলফ্রেড জুয়েল’ নামে পরিচিত। আড়াই ইঞ্চি পরিমাপের টুকরাটির গোড়ায় একটি প্রাণীর মাথা রয়েছে। প্রাণীর মুখের ভেতরে একটি ছোট গর্ত যেখানে একটি কাঠের বা হাতির দাঁতের রড সুরক্ষিত করা হতো। এর ওপরে খোদাই করা সমতল পিঠের সঙ্গে একটি সোনার ফ্রেম। এটি কোনো পাঠ নির্দেশনায় ব্যবহৃত হতো বলে মনে করা হয়। আলফ্রেড জুয়েলটি ইংরেজ ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য রাজার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণে অনন্য রয়ে গেছে। এর প্রান্তের চারপাশে সোনার ফ্রেমে লেখা শিলালিপি রয়েছে। যেখানে লেখা, ‘আলফ্রেড আমাকে এটি তৈরি করার আদেশ দিয়েছেন।’
আলফ্রেড হলেন ওয়েসেক্সের রাজা আলফ্রেড দ্য গ্রেট (৮৪৮-৮৯৯), যিনি একজন যোদ্ধা, পণ্ডিত এবং শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক হিসাবে স্মরণীয়। রত্নটি অ্যাথেলনি গ্রাম থেকে মাত্র আট মাইল দূরে পাওয়া গিয়েছিল, যা আলফ্রেড ভাইকিংদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধে একটি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। ১৭১৮ সাল পর্যন্ত এটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল, পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করা হয়। এটি এখন অক্সফোর্ডের অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়ামে রয়েছে।
দ্য লুইস চেজম্যান
মনে করেন আপনি একদিন সমুদ্র সৈকতে হাঁটছেন এবং একটি পুরোনো বোতলের ছিপি কিংবা সামুদ্রিক শৈবাল খুঁজে পাওয়ার পরিবর্তে, সুন্দরভাবে খোদাই করা মধ্যযুগীয় দাবার সেটের একটি বাক্স খুঁজে পেলেন। শুনতে অদ্ভুত হলেও এটি ঘটেছিল। ১৮৩১ সালে আবিষ্কৃত হওয়ার আগে এই দাবার অংশ স্কটল্যান্ডের আইল অব লুইসের একটি সৈকতে প্রায় ৬০০ বছর লুকানো অবস্থায় ছিল। প্রচলিত আছে, ম্যালকম ম্যাকলিওড নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা এটি খুঁজে পান। আইল অব লুইস স্কটল্যান্ডের আউটার হেব্রাইডের অংশ। ভাইকিংরা ৮ম শতাব্দীতে আউটার হেব্রাইডে এসেছিল। এলাকাটি ১২৬৬ সাল পর্যন্ত নরওয়েজীয় শাসনের অধীনে ছিল। ধারণা করা হয়, লুইস চেজম্যান ১১ শতকে নরওয়েতে তৈরি হয়েছিল, যা স্থানীয় সংস্কৃতি এবং শিল্পকে প্রতিফলিত করে। দাবাগুলো হাতির এবং তিমির দাঁত দিয়ে তৈরি। দাবার টুকরোগুলো নতুন ছিল, গুরুত্বপূর্ণ কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল সম্ভবত। তবে কীভাবে সেগুলো সৈকতে আসে তা রহস্য রয়ে গেছে।
রডারিক রিরি নামের এক ব্যক্তি এগুলো অধিগ্রহণ করেন এবং সেটগুলো ভেঙে টুকরো হিসেবে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ মিউজিয়াম ৮২টি কিনেছিল আর স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল মিউজিয়াম দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয় আরও ১১টি। ছয়টি লুইস-এ প্রদর্শন করা হয়েছে। আর বেশ কয়েকটি টুকরো নিখোঁজ রয়েছে।
দ্য ইংলিশ করনেশন স্পুন
ইংলিশ করনেশন স্পুন মধ্যযুগীয় ধাতব কাজের সেরা উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি। চামচটি ১২ শতকের কোনো এক সময় তৈরি করা হয়েছিল এবং সম্ভবত একটি আনুষ্ঠানিক বস্তু হিসাবে ব্যবহারের জন্য হেনরি দ্বিতীয় বা তাঁর পুত্র রিচার্ড প্রথম এর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ১৬০৩ সাল নাগাদ, এটি সার্বভৌমকে অভিষিক্ত করতে পবিত্র তেলে অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যখন রাজারা ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত বলে বিবেচিত হতো। ১৬৪৯ সালে বিপ্লবের সময় চামচটি নতুন সরকারের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য এটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ক্লেমেন্ট কিনার্সলি নামে এক ব্যক্তি মাত্র ১৬ শিলিং দিয়ে এটি কিনেছিলেন। কিনার্সলি জাতির জন্য চামচটি সংরক্ষণ করেছিলেন। তিনি প্রথম চার্লসের পোশাক, আসবাবপত্র এবং গৃহসজ্জার সামগ্রী নিয়ে কাজ করত যারা তাঁদের একজন ছিলেন। চার্লস দ্বিতীয়র কাছে ফেরত দিয়েছিলেন এটি। ইংলিশ করনেশন স্পুন এখন টাওয়ার অব লন্ডনে ‘আধুনিক’ রাজকীয় রত্নগুলোর সঙ্গে রাখা হয়েছে।
দ্য মেরি রোজ
মেরি রোজ ১৫১০ সালে নির্মিত হয়েছিল, ভার্জিন মেরি এবং টিউডর রাজবংশের প্রতীকের জন্য নামকরণ করা হয়েছিল। গুঞ্জন আছে, হেনরি অষ্টম প্রকৃতপক্ষে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ডিজাইন করতে সাহায্য করেছিলেন, যেটি আটটি ভারী কামান বহন করতে পারে। বিপর্যয়ের আগে জাহাজটি ৩৪ বছর ধরে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৫৪৫ সালের ১৯ জুলাই, ফরাসি নৌবহর ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে সোলেন্টে প্রবেশ করে। মেরি রোজ, অন্যান্য ৮০টি ইংরেজ জাহাজের সঙ্গে যাত্রা করেছিল। যুদ্ধজাহাজটি বাঁক নেওয়ার সময় স্টারবোর্ডের দিক থেকে গুলি চালানো শুরু করলে একটি দমকা বাতাস আসে এবং মুহূর্তেই পানি প্রবেশ করে। কয়েক মিনিটের মধ্যে তলিয়ে যায় মেরি রোজ। জাহাজে থাকা ৫০০ জনের মধ্যে মাত্র ৩৫ জন বেঁচে ছিলেন। এর ৪০০ বছর পর ১৯৬৫ সালে, আলেকজান্ডার ম্যাককি এটিকে খুঁজে বের করার লক্ষ্যে প্রজেক্ট সোলেন্ট শিপস উদ্যোগ শুরু করেন। ম্যাককি এবং তাঁর ডুবুরি দল ছয় বছর ধ্বংসস্তূপের সন্ধানে কাটিয়েছে। তাঁদের প্রথম সাফল্য আসে ১৯৬৮ সালে, যখন তাঁরা সমুদ্রতটে একটি অদ্ভুত আকৃতির সন্ধান পায়। তবে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তাঁরা আত্মবিশ্বাসী হতে পারেননি যে, মেরি রোজকেই খুঁজে পেয়েছেন। জাহাজটি পুনরুদ্ধার করার আগে ১১ বছর কেটে যায় সতর্কতার সঙ্গে খনন ও উদ্ধার পরিকল্পনায়।
১৯৮২ সালের ১১ অক্টোবর, মেরি রোজের কাঠাম ধীরে ধীরে জল থেকে বেরিয়ে আসার দৃশ্য যুক্তরাজ্যের লাখ লাখ মানুষ টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার দেখেছিল। বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণের কাজ করার পর, এটি এখন পোর্টসমাউথের একটি জাদুঘরে রাখা হয়েছে, যেখানে জাহাজ এবং এর সঙ্গে পাওয়া অনেক নিদর্শন উভয়ই দেখা যায়। জাহাজের কিছু অংশ সমুদ্রতটে রয়ে গেছে এবং প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এর হারিয়ে যাওয়া সম্পদ খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
গুপ্তধন কথাটি শুনলে মনে হয় কেবল রূপকথার গল্পের মাঝেই এর অস্তিত্ব রয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, গল্পের মতো কিছু গুপ্তধন আধুনিক যুগে খুঁজে পাওয়া গেছে, যা বহন করে ইতিহাসের সাক্ষী। এগুলোর মূল্যও নেহাত কম নয়।
ইংল্যান্ডের পূর্বে সংরক্ষিত এলাকা দ্য ওয়াশের একটি মোহনার কোথাও কিং জনের মধ্যযুগীয় রাজকীয় রত্নভান্ডার রয়েছে। ১২১৬ সালে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ধনসম্পদ সংবলিত ট্রেনে করে উপসাগর পার হওয়ার সময় জোয়ারের কবলে পড়েন এবং অমূল্য রত্ন সংবলিত মালবাহী ট্রেনটি ভেসে যায়। এরপর গুপ্তধন শিকারিদের স্বপ্ন থেকে যায় সেসব রত্ন খুঁজে বের করার। কেউ কেউ দাবি করেন, তাঁরা উদ্ধার করেছেন এসব গুপ্তধন। যদিও সপক্ষে প্রমাণ খুব কম। তবে কয়েকটি গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার সত্যিকারের ঘটনা রয়েছে, যা আশা জাগানিয়া।
সাটন হু
স্টাফোর্ডশায়ার হোর্ড নামেও পরিচিত সাটন হু ভান্ডার কখনো হারিয়েই যায়নি। বরং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে একজন অ্যাংলো-স্যাক্সনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনেক জায়গা জুড়ে সমাহিত করা হয়েছিল। মনে করা হয়, তিনি ছিলেন রেডওয়াল্ড (যিনি ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মারা যান)। জমির মালিক এডিথ প্রিটি, ১৯৩৯ সালের গ্রীষ্মে অপেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাসিল ব্রাউনকে জায়গাটি দেখতে বলেছিলেন। সেখানকার ঢিবির নিচে সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকের একটি জাহাজের ছাপ পাওয়া যায়, যার কেন্দ্রে একটি বিশেষ সমাধিকক্ষ ছিল। ক্ষয়িষ্ণু ধরনের মাটির কারণে জাহাজ ও দেহ উভয়ই অদৃশ্য হয়ে গেলেও সমাহিত করা রেডওয়াল্ডের ২৬৩টি নিদর্শনে অবশিষ্টাংশ থেকে যায়। এর মধ্যে ছিল রৌপ্য বাইজেন্টিয়ামের বাটি, গ্রিক লিপি খোদাই করা চামচ, একটি বড় রুপার থালা, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান একটি ঢাল, ফ্রান্সের মুদ্রার একটি পার্স এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি তলোয়ার ও গৃহস্থালির জিনিসপত্র। এ ছাড়া রাজার পায়ের কাছে একটি বর্ম রাখা হয়েছিল। সব থেকে আইকনিক ছিল রাজার শিরস্ত্রাণ, যা অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের মুখের প্রতীক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে এই সম্পদের সন্ধান মেলে। ফলে ঝুঁকি বিবেচনায় এসব গুপ্তধন লন্ডনের একটি অব্যবহৃত আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের গভীরে লুকিয়ে রাখা হয়। ১৯৫১ সাল পর্যন্ত সেগুলো সর্বজনীন প্রদর্শনে যায়নি। তবে বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে নিদর্শনগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।
দ্য আলফ্রেড জুয়েল
১৬৯৩ সালে একটি খেত চাষ করার সময়, সমারসেটের একজন বাসিন্দা অ্যাংলো-স্যাক্সন জুয়েলারির একটি অসাধারণ টুকরো খুঁজে পান, যা এখন ‘আলফ্রেড জুয়েল’ নামে পরিচিত। আড়াই ইঞ্চি পরিমাপের টুকরাটির গোড়ায় একটি প্রাণীর মাথা রয়েছে। প্রাণীর মুখের ভেতরে একটি ছোট গর্ত যেখানে একটি কাঠের বা হাতির দাঁতের রড সুরক্ষিত করা হতো। এর ওপরে খোদাই করা সমতল পিঠের সঙ্গে একটি সোনার ফ্রেম। এটি কোনো পাঠ নির্দেশনায় ব্যবহৃত হতো বলে মনে করা হয়। আলফ্রেড জুয়েলটি ইংরেজ ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য রাজার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণে অনন্য রয়ে গেছে। এর প্রান্তের চারপাশে সোনার ফ্রেমে লেখা শিলালিপি রয়েছে। যেখানে লেখা, ‘আলফ্রেড আমাকে এটি তৈরি করার আদেশ দিয়েছেন।’
আলফ্রেড হলেন ওয়েসেক্সের রাজা আলফ্রেড দ্য গ্রেট (৮৪৮-৮৯৯), যিনি একজন যোদ্ধা, পণ্ডিত এবং শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক হিসাবে স্মরণীয়। রত্নটি অ্যাথেলনি গ্রাম থেকে মাত্র আট মাইল দূরে পাওয়া গিয়েছিল, যা আলফ্রেড ভাইকিংদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধে একটি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। ১৭১৮ সাল পর্যন্ত এটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল, পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করা হয়। এটি এখন অক্সফোর্ডের অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়ামে রয়েছে।
দ্য লুইস চেজম্যান
মনে করেন আপনি একদিন সমুদ্র সৈকতে হাঁটছেন এবং একটি পুরোনো বোতলের ছিপি কিংবা সামুদ্রিক শৈবাল খুঁজে পাওয়ার পরিবর্তে, সুন্দরভাবে খোদাই করা মধ্যযুগীয় দাবার সেটের একটি বাক্স খুঁজে পেলেন। শুনতে অদ্ভুত হলেও এটি ঘটেছিল। ১৮৩১ সালে আবিষ্কৃত হওয়ার আগে এই দাবার অংশ স্কটল্যান্ডের আইল অব লুইসের একটি সৈকতে প্রায় ৬০০ বছর লুকানো অবস্থায় ছিল। প্রচলিত আছে, ম্যালকম ম্যাকলিওড নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা এটি খুঁজে পান। আইল অব লুইস স্কটল্যান্ডের আউটার হেব্রাইডের অংশ। ভাইকিংরা ৮ম শতাব্দীতে আউটার হেব্রাইডে এসেছিল। এলাকাটি ১২৬৬ সাল পর্যন্ত নরওয়েজীয় শাসনের অধীনে ছিল। ধারণা করা হয়, লুইস চেজম্যান ১১ শতকে নরওয়েতে তৈরি হয়েছিল, যা স্থানীয় সংস্কৃতি এবং শিল্পকে প্রতিফলিত করে। দাবাগুলো হাতির এবং তিমির দাঁত দিয়ে তৈরি। দাবার টুকরোগুলো নতুন ছিল, গুরুত্বপূর্ণ কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল সম্ভবত। তবে কীভাবে সেগুলো সৈকতে আসে তা রহস্য রয়ে গেছে।
রডারিক রিরি নামের এক ব্যক্তি এগুলো অধিগ্রহণ করেন এবং সেটগুলো ভেঙে টুকরো হিসেবে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ মিউজিয়াম ৮২টি কিনেছিল আর স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল মিউজিয়াম দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয় আরও ১১টি। ছয়টি লুইস-এ প্রদর্শন করা হয়েছে। আর বেশ কয়েকটি টুকরো নিখোঁজ রয়েছে।
দ্য ইংলিশ করনেশন স্পুন
ইংলিশ করনেশন স্পুন মধ্যযুগীয় ধাতব কাজের সেরা উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি। চামচটি ১২ শতকের কোনো এক সময় তৈরি করা হয়েছিল এবং সম্ভবত একটি আনুষ্ঠানিক বস্তু হিসাবে ব্যবহারের জন্য হেনরি দ্বিতীয় বা তাঁর পুত্র রিচার্ড প্রথম এর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ১৬০৩ সাল নাগাদ, এটি সার্বভৌমকে অভিষিক্ত করতে পবিত্র তেলে অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যখন রাজারা ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত বলে বিবেচিত হতো। ১৬৪৯ সালে বিপ্লবের সময় চামচটি নতুন সরকারের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য এটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ক্লেমেন্ট কিনার্সলি নামে এক ব্যক্তি মাত্র ১৬ শিলিং দিয়ে এটি কিনেছিলেন। কিনার্সলি জাতির জন্য চামচটি সংরক্ষণ করেছিলেন। তিনি প্রথম চার্লসের পোশাক, আসবাবপত্র এবং গৃহসজ্জার সামগ্রী নিয়ে কাজ করত যারা তাঁদের একজন ছিলেন। চার্লস দ্বিতীয়র কাছে ফেরত দিয়েছিলেন এটি। ইংলিশ করনেশন স্পুন এখন টাওয়ার অব লন্ডনে ‘আধুনিক’ রাজকীয় রত্নগুলোর সঙ্গে রাখা হয়েছে।
দ্য মেরি রোজ
মেরি রোজ ১৫১০ সালে নির্মিত হয়েছিল, ভার্জিন মেরি এবং টিউডর রাজবংশের প্রতীকের জন্য নামকরণ করা হয়েছিল। গুঞ্জন আছে, হেনরি অষ্টম প্রকৃতপক্ষে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ডিজাইন করতে সাহায্য করেছিলেন, যেটি আটটি ভারী কামান বহন করতে পারে। বিপর্যয়ের আগে জাহাজটি ৩৪ বছর ধরে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৫৪৫ সালের ১৯ জুলাই, ফরাসি নৌবহর ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে সোলেন্টে প্রবেশ করে। মেরি রোজ, অন্যান্য ৮০টি ইংরেজ জাহাজের সঙ্গে যাত্রা করেছিল। যুদ্ধজাহাজটি বাঁক নেওয়ার সময় স্টারবোর্ডের দিক থেকে গুলি চালানো শুরু করলে একটি দমকা বাতাস আসে এবং মুহূর্তেই পানি প্রবেশ করে। কয়েক মিনিটের মধ্যে তলিয়ে যায় মেরি রোজ। জাহাজে থাকা ৫০০ জনের মধ্যে মাত্র ৩৫ জন বেঁচে ছিলেন। এর ৪০০ বছর পর ১৯৬৫ সালে, আলেকজান্ডার ম্যাককি এটিকে খুঁজে বের করার লক্ষ্যে প্রজেক্ট সোলেন্ট শিপস উদ্যোগ শুরু করেন। ম্যাককি এবং তাঁর ডুবুরি দল ছয় বছর ধ্বংসস্তূপের সন্ধানে কাটিয়েছে। তাঁদের প্রথম সাফল্য আসে ১৯৬৮ সালে, যখন তাঁরা সমুদ্রতটে একটি অদ্ভুত আকৃতির সন্ধান পায়। তবে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তাঁরা আত্মবিশ্বাসী হতে পারেননি যে, মেরি রোজকেই খুঁজে পেয়েছেন। জাহাজটি পুনরুদ্ধার করার আগে ১১ বছর কেটে যায় সতর্কতার সঙ্গে খনন ও উদ্ধার পরিকল্পনায়।
১৯৮২ সালের ১১ অক্টোবর, মেরি রোজের কাঠাম ধীরে ধীরে জল থেকে বেরিয়ে আসার দৃশ্য যুক্তরাজ্যের লাখ লাখ মানুষ টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার দেখেছিল। বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণের কাজ করার পর, এটি এখন পোর্টসমাউথের একটি জাদুঘরে রাখা হয়েছে, যেখানে জাহাজ এবং এর সঙ্গে পাওয়া অনেক নিদর্শন উভয়ই দেখা যায়। জাহাজের কিছু অংশ সমুদ্রতটে রয়ে গেছে এবং প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এর হারিয়ে যাওয়া সম্পদ খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
বিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
১ দিন আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
১ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই আলোচনায় এখন ট্রাম্প। তবে তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইতালির সার্দানিয়া দ্বীপের একটি গ্রামে একেবারেই ভিন্ন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হিসেবে।
২ দিন আগেটাইটানিকের ৭০০-র বেশি যাত্রী এবং ক্রুকে উদ্ধার করেছিল একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপহার দেওয়া একটি সোনার ঘড়ি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
৩ দিন আগে