বিশাল দুটি হাত ধরে রেখেছে যে সেতুকে

ইশতিয়াক হাসান
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ১০: ৫১
আপডেট : ২২ জুন ২০২৩, ১১: ২০

দূর থেকে দেখলে চমকে উঠবেন। বিশালাকায় দুটি হাত ধরে রেখেছে একটি সেতুকে। পর্যটকেরা খুশি মনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন সেতুটি দিয়ে। বুঝতেই পারছেন এত বড় হাত মানুষ কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর হওয়া সম্ভব নয়। তবে কী দিয়ে তৈরি এই হাত? কারাই বা বানাল? এমন আরও নানা প্রশ্ন নিশ্চয় ঘুরপাক খাচ্ছে মনে। তাহলে বরং দেরি না করে লেখাটি পড়তে শুরু করুন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত ভিয়েতনাম। অদ্ভুত সুন্দর সব পর্বত, গহিন অরণ্য, সাগরসৈকত, স্বচ্ছ জলের উপসাগর—কী নেই এখানে! স্থাপত্য কীর্তির কথা যদি বলেন, সে ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্যের অভাব নেই। পুরোনো মন্দির থেকে শুরু করে আধুনিক সব আকাশচুম্বী দালানকোঠা সবকিছুই আছে দেশটিতে। বছর পাঁচেক আগে যোগ হয়েছে এমন আরেক স্থাপত্য আকর্ষণ। সেটা সোনালি এক সেতু আর একে ধরে রাখা বিশালাকায় দুটি কৃত্রিম হাত।

মধ্য ভিয়েতনামে অবস্থিত বিশাল এই হাত দুটি দেখে মনে হতে পারে পাথুরে কোনো পুরোনো স্থাপত্যকর্ম। গায়ে শেওলা আর ফাটলের মতো কিছুরও আভাস পেতে পারেন। তবে এই সবকিছুই আপনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য! আসলে এটি ইস্পাতের তৈরি একটি কাঠামো। ইচ্ছা করেই একে পুরোনো, পাথুরে চেহারা দেওয়া হয়েছে। এটি ২০১৮ সালের বসন্তে উদ্বোধন হওয়া সোনালি একটি সেতুর পিলার হিসেবে কাজ করছে।

প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক আসেন আশ্চর্য এই সেতু দেখতেদ্য কাউ ভাং বা গোল্ডেন ব্রিজ নামে পরিচিত সেতুটির অবস্থান হোয়াও ভাংয়ের বা না হিলস এলাকায়। সেতুটি কেব্‌ল কারের মাধ্যমে যুক্ত আশপাশের বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন বাগানের সঙ্গে। ডা নাং নামের একটি পর্বতের চূড়ায় সাগর সমতল থেকে ৪ হাজার ৬৩৯ ফুট উচ্চতায় সেতুটি। হেঁটেই শুধু পেরোতে পারবেন। এর দৈর্ঘ্য ৪৯২ ফুট, চওড়া অবশ্য মোটে ১০ ফুট।

হাতদুটি পাথরের তৈরি মনে হলেও এগুলো ইস্পাত দিয়ে বানানোতবে সেতুটিকে মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে নিঃসন্দেহে বিশাল দুই হাতের মতো দেখতে স্তম্ভ বা থামগুলো। প্রতি মাসে অন্তত হাজার দশেক পর্যটক আসেন হাত জোড়া আর সেতুটি দেখতে। বলা চলে, ভিয়েতনামের ডা নাং এলাকার এটি সবচেয়ে বড় পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে নির্মাণের পর থেকেই। সেতুটি এবং একে ধরে রাখা আজব হাত দুটি বানিয়েছেন হো চি মিন সিটির প্রতিষ্ঠান টিএ ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার।

টিএ ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার অসাধারণ এই স্থাপত্যকীর্তি তৈরি করেপর্বতের চূড়ায় অবস্থিত একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও রিসোর্ট বা না হিলস। গোটা পার্কটির একটি অংশ কেবল বিশালাকার দুই হাত ও সেতুটি। এখানে আরও আছে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়ানো কেব্‌ল কার লাইন, ইনডোর অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, মন্দির, বাগান, গ্রাম।

সেতুটির ওপর থেকে আশপাশর পাহাড়রাজ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেনজায়গাটিতে পৌঁছা অবশ্য মোটেই কঠিন কিছু নয়। ডা নাং থেকে ট্যাক্সিতে চেপে সহজেই পৌঁছে যাবেন বা না হিলসে। কেব্‌ল কারের পার্কিং লটে গাড়িটি আপনাকে নামিয়ে দেবে। এখানে বেশ কয়েকটি কেব্‌ল কার লাইন দেখতে পাবেন। একেকটি একেক জায়গায় নামাবে। আপনাকে বেছে নিতে হবে মারশেইলে স্টেশনের কেব্‌ল কারটি। এটি গোল্ডের ব্রিজের সবচেয়ে কাছে। মোটামুটি মিনিট বিশেক ভ্রমণ করতে হবে আপনাকে কারে। এই ভ্রমণটাও উপভোগ করার মতো এক ব্যাপার।

দেখেন কীভাবে শত শত পর্যটকের ভার বহন করছে বিশাল দুই হাতএকবার সেতুতে পৌঁছে গেলে মুগ্ধ হবেন আপনি। বিশাল দুই হাতের পাশাপাশি সেতু থেকে চারপাশের সবুজ প্রকৃতিও আপনার চোখ জুড়িয়ে দেবে। চারদিকে বর্ণিল সব বাগান আপনার মনোযোগ কেড়ে নেবে। পর্বতের ওপরে অবস্থিত হওয়ায় আবহাওয়াও এখানে শীতল।

সেতুটি ধরে হাঁটার সময়ও একেবারে ভিন্নরকম অনুভূতি হবে আপনার। এত উঁচুতে সোনালি একটি সেতু, যাকে আবার ধরে আছে বিশাল দুটি কৃত্রিম হাত, এর মধ্য দিয়ে হাঁটার অভিজ্ঞতার সঙ্গে আর কিসের তুলনা চলে বলুন? যখন চারপাশটা মেঘে ঢেকে যায়, তখন আবার মনে হবে মেঘের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছেন আপনি।

সূত্র: আনইউজুয়াল প্লেসেস, ট্র্যাভেল ট্রায়াঙ্গল ডট কম, টাইম ডট কম, সেরেনাস লেন্সেস ডট কম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত