নাজমুল ইসলাম, ঢাকা
কয়েক বছর ধরে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে খুব আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। নিন্দুকেরা বলে বেড়াচ্ছেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থানে থাকতে পারছে না, তলানিতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা কী?
কোনো কোনো বিজ্ঞজন অবশ্য বলছেন, এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ভালো অবস্থানে আসে না, তার দোষ তো বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। দোষ হলো যারা র্যাংকিং তৈরি করে, তাদের। তারা যেসব মানদণ্ড দিয়ে র্যাংকিং করে, দোষ সেই মানদণ্ডের। ওই সব মানের দণ্ডগুলো পরিবর্তন করলেই বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় এক লাফে প্রথমে চলে আসবে। এতে নাকি কোনো সন্দেহ নেই। অক্সফোর্ড কিংবা হার্ভার্ডের স্থান বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনায়াসেই দখল করতে পারবে। র্যাংকিংয়ে ‘২ নম্বর’ অক্সফোর্ড, ‘১ নম্বর’ অক্সফোর্ডের আগে চলে আসতে পারে। তার জন্য দরকার শুধু মানদণ্ডের পরিবর্তন।
তাই বাংলাদেশ থেকে মানদণ্ডগুলো পরিবর্তনের জোর দাবি জানানো দরকার। এসব নিয়ে রাজপথেও নামা উচিত। আশা করি এ নিয়ে আন্দোলন একদিন না একদিন হবে এবং গড়া হবে বিশ্বরেকর্ড। নতুন মানদণ্ড কী হতে পারে, তার কিছু নমুনা নিচে দেওয়া হলো—
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের মানদণ্ড হিসেবে রাতের মিছিলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি রাতে যেই অসাধারণ মিছিল হয়, তা কি হার্ভার্ড কিংবা অক্সফোর্ডে হয়? মনে হয় সেখানে হয় না। রাত যখন গভীর হয়, হার্ভার্ড কিংবা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হয়তো পড়াশোনা করে। কিন্তু এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো এত বোকা নয় যে, তারা রাতে বসে বই পড়বে বা পড়তে পারবে! অনেকে তখন নেমে যায় শারীরিক কসরত দেখাতে। রাতে যেভাবে গলা উচিয়ে মিছিল হয়, পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। মিছিলের শব্দে যেকোনো পথ কাঁপতে থাকে। মিছিল করতে করতে তাদের গলা পর্যন্ত বসে যায়, কিন্তু তারা বসে না। হাঁটার ধরন তামিল সিনেমার অ্যাকশনকেও হার মানায়। তারা হাঁটার সময় পুরো রাস্তা নিয়ে হাঁটে, বিপরীত দিক থেকে আসা মানুষ নামক অন্য প্রাণীগুলো তাদের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অভিব্যক্তি দেখলে মনে হবে, তাদের প্রত্যেকে একেকজন ড্যানিয়েল ক্রেইগ কিংবা টম ক্রজ অথবা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। এই বুঝি পুরো পৃথিবী তাদের দখলে চলে এল! বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল আছে বলেই তো এত শত শত ড্যানিয়েল ক্রেইগ, টম ক্রজ বা আলেকজান্ডারদের একদম ফাও ফাও (বিনা টাকায়) দেখতে পাওয়া যায়। এটা জাতির জন্য কত বড় গর্বের, ঐতিহ্যের—একবার ভাবুন তো! তাহলে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের মানদণ্ড কেন হবে না?
২. ফাও খাওয়া: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরেকটি ব্যর্থতা হলো ফাও খাওয়াকে তারা র্যাংকিংয়ের মানদণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবহেলার কারণেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ অবস্থা। যা হোক, ফাও খাওয়াকে মানদণ্ড নির্ধারণের উপাদান করতে হবে। এদিক থেকেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে টেক্কা দিতে পারবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। টপাটপ ১০টা মিষ্টি গিলে খাতায় একটি মিষ্টি লিখে রাখার দক্ষতা কি অন্যদের আছে? অন্যদিকে খাওয়ার কলাকৌশল এতটা নিঁখুত যে, তা সিসিটিভি ক্যামেরাও ধরতে পারে না। অবশ্য সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে তাদের নিখুঁত কলাকৌশল দেখতেও যান না দোকানদার। কারণ, জলে বসে কুমিরের খাবারের ওপর খবরদারি চলে নাকি।
ক্যান্টিনেও তাদের একই অসাধারণ রূপ দেখা যায়। একটু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলা যাক। আমি মাঝেমধ্যে খেতে গিয়ে অবাক হতাম। ছোট সময় থেকে জমিদারদের সম্পর্কে শুনেছি। তাদের রাজকীয় খাবারের কথা শুনেছি। তখন থেকেই জমিদার দেখার ইচ্ছা ছিল। সেই সাধ পূরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যান্টিনে আমি প্রায় সময়ই দু-চারজনকে দেখতাম, যারা আমার চোখে ‘জমিদার’ ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না। তারা ঢুকলেই ক্যান্টিন বয় দৌড়ে এসে বলত, ‘আসসালামু আলাইকুম, ভাই কী খাইবেন বলেন।’ এতটা সম্মান মার্কিন কোনো প্রেসিডেন্টও পান কিনা সন্দেহ। ক্যান্টিন বয়ের কথা শুনে ‘জমিদার’ বলে, ‘কী কী রান্না হয়েছে?’ বয় খুব বিনয়ের সাথে সবগুলো আইটেমের নাম বলে। জমিদার সাহেব পছন্দমতো কয়েকটি আইটেমের খাবার আনতে বলে। আবার বলে দেয়, ‘ভাজি ভর্তাও নিয়ে আসিস।’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এদের বিল আসত আমার থেকেও কম। অথচ আমি ৫ বছরে কখনো দুটি তরকারি দিয়ে ভাত খেয়েছি বলে মনে পড়ে না।
যাই হোক ফাও খাওয়াও যে একটা আন্তর্জাতিক ধরনের দক্ষতা, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝতে হবে।
৩. ফেসবুকে অভিনন্দন জানানো। ফেসবুক বানিয়েছে এক আমেরিকান, কিন্তু ফেসবুকে আমাদের থেকে বেশি অভিনন্দন তারা জানাতে পারেনি। এটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড নির্ধারণের পন্থা হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রেও আমরা বেশ অগ্রসর। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা সারা জীবনে যতগুলো বাক্য পড়েছে, তার থেকে বেশি লিখেছে ‘অভিনন্দন’। তবে তারা আবার সবাইকে অভিনন্দন জানায় না। তারা অভিনন্দন জানায় কিছু নেতাকে ও একই গোয়ালের গরু টাইপের কিছু বন্ধু-বান্ধবকে। সেই তালিকায় নেতার যত আত্মীয়স্বজন আছে, তাদেরও নাম থাকে। নেতাকে ট্যাগ করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়, ‘আপনার এই কৃতিত্ব দেখে আমরা অভিভূত। সামনে এগিয়ে যান ভাই।’ কিন্তু কত আগে? তা অবশ্য কেউ বলে না!
৪. অলরাউন্ডার শিক্ষক। সবাই যেন সাকিব আল হাসান। অলরাউন্ডাররা কী না পারে? বল করতে পারে, ব্যাট করতে পারে, ফিল্ডিং করতে পারে। সব কাজের কাজি তারা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা অলরাউন্ডার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬১ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন ৮৪ জন (সূত্র: https://www.bestmastersprograms.org/most-nobel-prize-winners/) । দেখা যাবে স্টানফোর্ড বা হার্ভার্ডের শিক্ষকেরা তেমন অলরাউন্ডার নন। তাঁরা শুধু পড়ালেখা বা গবেষণা নিয়েই আছেন। রাজনীতি করার মতো সময় তাঁদের হাতে নেই, কিংবা ইচ্ছাটাও নেই। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা কেবল পড়াশোনা বা গবেষণাই করেন না, তাঁরা আরও অনেক কিছু করেন। টেলিভিশনে টক শো, রাজনীতিতে নিয়মিত উপস্থিতি, এই সংগঠনের মিটিং, সেই সংগঠনের মিটিং—কী না করেন তাঁরা। কিন্তু প্রথাগত র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে এই গুণ বিবেচনা করা হয় না। অলরাউন্ডারের দিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অবস্থান হার্ভার্ড, স্টানফোর্ড, অক্সফোর্ড কিংবা এমআইটির শিক্ষকদের ওপরেই থাকবে।
৫. বাসের প্রেসিডেন্ট। বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেনের নাম শোনেননি–রাজনীতি সচেতন এমন ব্যক্তি হয়তো পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এরা তিনজনই আমেরিকা নামক একটি রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বা আছেন। প্রথম দুজন সাবেক, শেষের জন্য বর্তমান। অথচ এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই অনেক প্রেসিডেন্ট। এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য যেসব বাস আছে, সেগুলোতেও প্রেসিডেন্ট আছে। আপনি সেসব বাসে উঠলেই বুঝতে পারবেন বাসের প্রেসিডেন্ট কে। তাঁর দাঁড়ানো ও চালচলনের ভঙ্গি দেখলে স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পও ভড়কে যেতে পারেন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে গোণায় ধরা হয় না? ভাবা যায়!
৬. আনুগত্য। অসংখ্য অনুগত প্রাণীর সন্ধান এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যাবে। বড় ভাইদের সব কথাতেই এরা ‘জি ভাই, ঠিক বলছেন ভাই’ বলে ওঠে। শুনেছিলাম, এমন শ্রেণিভুক্ত একজন নাকি বলেছিল, ‘অমুক যদি বলে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে, তাহলে সূর্য পশ্চিম দিকেই ওঠে।’ এতটা অনুগত প্রাণীর কি তুলনা হয়? অথচ বিশ্বসম্প্রদায় এ বিষয় নিয়ে এখনো জানতে পারেনি। জানতে পারলে গিনেস বুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠতে কি বেশি সময় লাগত? তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়েরও কি উন্নতি ঘটত না? কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার হীন প্রচেষ্টায় তা দেখেও দেখছে না। তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রদর্শন করা কি উচিত? বলুন একবার বুকে হাত দিয়ে।
৭. ফেসবুক গবেষক। ১০ বছর আগে কোনো নেতার ছবিতে আপনি ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়েছেন, তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে খুঁজে বের করার মতো অসংখ্য গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সেই রিঅ্যাক্ট দেখেই আপনার সম্পর্কে তাঁরা অনুমান করে ফেলতে পারবেন, আপনি কোন দল করেন। আপনি চেতনাবাদী নাকি বিরোধী, তা তাঁদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাডার ধরে ফেলতে পারবে নিমেষে। এমনকি আপনার চৌদ্দ গুষ্টির চেতনাও রেহাই পাবে না। এরা শুধু কাগজ-কলমে গবেষক নয়, এদের হাতে ডান্ডাও আছে। শুধু গবেষণা করেই এরা ক্ষান্ত থাকে না, বরং তার প্রয়োগ ঘটাতে ডান্ডা নিয়ে সব ঠান্ডা করে দিতে মাঠেও নেমে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে এই গবেষকদের মানদণ্ডের হিসাবে আনতে হবে। সেই সঙ্গে ফেসবুক গবেষণায় নোবেল পুরস্কারের মতো কিছু একটা চালু করলেও মন্দ হয় না।
উফ, হাঁপিয়ে গেছি। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। দ্বিতীয় পর্বে আরও কিছু মান ও তার দণ্ড নিয়ে আলোচনা করা যাবে। সে পর্যন্ত, বিদায়!
কয়েক বছর ধরে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে খুব আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। নিন্দুকেরা বলে বেড়াচ্ছেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থানে থাকতে পারছে না, তলানিতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা কী?
কোনো কোনো বিজ্ঞজন অবশ্য বলছেন, এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ভালো অবস্থানে আসে না, তার দোষ তো বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। দোষ হলো যারা র্যাংকিং তৈরি করে, তাদের। তারা যেসব মানদণ্ড দিয়ে র্যাংকিং করে, দোষ সেই মানদণ্ডের। ওই সব মানের দণ্ডগুলো পরিবর্তন করলেই বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় এক লাফে প্রথমে চলে আসবে। এতে নাকি কোনো সন্দেহ নেই। অক্সফোর্ড কিংবা হার্ভার্ডের স্থান বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনায়াসেই দখল করতে পারবে। র্যাংকিংয়ে ‘২ নম্বর’ অক্সফোর্ড, ‘১ নম্বর’ অক্সফোর্ডের আগে চলে আসতে পারে। তার জন্য দরকার শুধু মানদণ্ডের পরিবর্তন।
তাই বাংলাদেশ থেকে মানদণ্ডগুলো পরিবর্তনের জোর দাবি জানানো দরকার। এসব নিয়ে রাজপথেও নামা উচিত। আশা করি এ নিয়ে আন্দোলন একদিন না একদিন হবে এবং গড়া হবে বিশ্বরেকর্ড। নতুন মানদণ্ড কী হতে পারে, তার কিছু নমুনা নিচে দেওয়া হলো—
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের মানদণ্ড হিসেবে রাতের মিছিলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি রাতে যেই অসাধারণ মিছিল হয়, তা কি হার্ভার্ড কিংবা অক্সফোর্ডে হয়? মনে হয় সেখানে হয় না। রাত যখন গভীর হয়, হার্ভার্ড কিংবা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হয়তো পড়াশোনা করে। কিন্তু এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো এত বোকা নয় যে, তারা রাতে বসে বই পড়বে বা পড়তে পারবে! অনেকে তখন নেমে যায় শারীরিক কসরত দেখাতে। রাতে যেভাবে গলা উচিয়ে মিছিল হয়, পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলে মনে হয় না। মিছিলের শব্দে যেকোনো পথ কাঁপতে থাকে। মিছিল করতে করতে তাদের গলা পর্যন্ত বসে যায়, কিন্তু তারা বসে না। হাঁটার ধরন তামিল সিনেমার অ্যাকশনকেও হার মানায়। তারা হাঁটার সময় পুরো রাস্তা নিয়ে হাঁটে, বিপরীত দিক থেকে আসা মানুষ নামক অন্য প্রাণীগুলো তাদের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অভিব্যক্তি দেখলে মনে হবে, তাদের প্রত্যেকে একেকজন ড্যানিয়েল ক্রেইগ কিংবা টম ক্রজ অথবা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। এই বুঝি পুরো পৃথিবী তাদের দখলে চলে এল! বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল আছে বলেই তো এত শত শত ড্যানিয়েল ক্রেইগ, টম ক্রজ বা আলেকজান্ডারদের একদম ফাও ফাও (বিনা টাকায়) দেখতে পাওয়া যায়। এটা জাতির জন্য কত বড় গর্বের, ঐতিহ্যের—একবার ভাবুন তো! তাহলে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের মানদণ্ড কেন হবে না?
২. ফাও খাওয়া: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরেকটি ব্যর্থতা হলো ফাও খাওয়াকে তারা র্যাংকিংয়ের মানদণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবহেলার কারণেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ অবস্থা। যা হোক, ফাও খাওয়াকে মানদণ্ড নির্ধারণের উপাদান করতে হবে। এদিক থেকেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে টেক্কা দিতে পারবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। টপাটপ ১০টা মিষ্টি গিলে খাতায় একটি মিষ্টি লিখে রাখার দক্ষতা কি অন্যদের আছে? অন্যদিকে খাওয়ার কলাকৌশল এতটা নিঁখুত যে, তা সিসিটিভি ক্যামেরাও ধরতে পারে না। অবশ্য সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে তাদের নিখুঁত কলাকৌশল দেখতেও যান না দোকানদার। কারণ, জলে বসে কুমিরের খাবারের ওপর খবরদারি চলে নাকি।
ক্যান্টিনেও তাদের একই অসাধারণ রূপ দেখা যায়। একটু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলা যাক। আমি মাঝেমধ্যে খেতে গিয়ে অবাক হতাম। ছোট সময় থেকে জমিদারদের সম্পর্কে শুনেছি। তাদের রাজকীয় খাবারের কথা শুনেছি। তখন থেকেই জমিদার দেখার ইচ্ছা ছিল। সেই সাধ পূরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যান্টিনে আমি প্রায় সময়ই দু-চারজনকে দেখতাম, যারা আমার চোখে ‘জমিদার’ ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না। তারা ঢুকলেই ক্যান্টিন বয় দৌড়ে এসে বলত, ‘আসসালামু আলাইকুম, ভাই কী খাইবেন বলেন।’ এতটা সম্মান মার্কিন কোনো প্রেসিডেন্টও পান কিনা সন্দেহ। ক্যান্টিন বয়ের কথা শুনে ‘জমিদার’ বলে, ‘কী কী রান্না হয়েছে?’ বয় খুব বিনয়ের সাথে সবগুলো আইটেমের নাম বলে। জমিদার সাহেব পছন্দমতো কয়েকটি আইটেমের খাবার আনতে বলে। আবার বলে দেয়, ‘ভাজি ভর্তাও নিয়ে আসিস।’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এদের বিল আসত আমার থেকেও কম। অথচ আমি ৫ বছরে কখনো দুটি তরকারি দিয়ে ভাত খেয়েছি বলে মনে পড়ে না।
যাই হোক ফাও খাওয়াও যে একটা আন্তর্জাতিক ধরনের দক্ষতা, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝতে হবে।
৩. ফেসবুকে অভিনন্দন জানানো। ফেসবুক বানিয়েছে এক আমেরিকান, কিন্তু ফেসবুকে আমাদের থেকে বেশি অভিনন্দন তারা জানাতে পারেনি। এটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড নির্ধারণের পন্থা হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রেও আমরা বেশ অগ্রসর। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা সারা জীবনে যতগুলো বাক্য পড়েছে, তার থেকে বেশি লিখেছে ‘অভিনন্দন’। তবে তারা আবার সবাইকে অভিনন্দন জানায় না। তারা অভিনন্দন জানায় কিছু নেতাকে ও একই গোয়ালের গরু টাইপের কিছু বন্ধু-বান্ধবকে। সেই তালিকায় নেতার যত আত্মীয়স্বজন আছে, তাদেরও নাম থাকে। নেতাকে ট্যাগ করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়, ‘আপনার এই কৃতিত্ব দেখে আমরা অভিভূত। সামনে এগিয়ে যান ভাই।’ কিন্তু কত আগে? তা অবশ্য কেউ বলে না!
৪. অলরাউন্ডার শিক্ষক। সবাই যেন সাকিব আল হাসান। অলরাউন্ডাররা কী না পারে? বল করতে পারে, ব্যাট করতে পারে, ফিল্ডিং করতে পারে। সব কাজের কাজি তারা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা অলরাউন্ডার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬১ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন ৮৪ জন (সূত্র: https://www.bestmastersprograms.org/most-nobel-prize-winners/) । দেখা যাবে স্টানফোর্ড বা হার্ভার্ডের শিক্ষকেরা তেমন অলরাউন্ডার নন। তাঁরা শুধু পড়ালেখা বা গবেষণা নিয়েই আছেন। রাজনীতি করার মতো সময় তাঁদের হাতে নেই, কিংবা ইচ্ছাটাও নেই। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা কেবল পড়াশোনা বা গবেষণাই করেন না, তাঁরা আরও অনেক কিছু করেন। টেলিভিশনে টক শো, রাজনীতিতে নিয়মিত উপস্থিতি, এই সংগঠনের মিটিং, সেই সংগঠনের মিটিং—কী না করেন তাঁরা। কিন্তু প্রথাগত র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে এই গুণ বিবেচনা করা হয় না। অলরাউন্ডারের দিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অবস্থান হার্ভার্ড, স্টানফোর্ড, অক্সফোর্ড কিংবা এমআইটির শিক্ষকদের ওপরেই থাকবে।
৫. বাসের প্রেসিডেন্ট। বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেনের নাম শোনেননি–রাজনীতি সচেতন এমন ব্যক্তি হয়তো পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এরা তিনজনই আমেরিকা নামক একটি রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বা আছেন। প্রথম দুজন সাবেক, শেষের জন্য বর্তমান। অথচ এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই অনেক প্রেসিডেন্ট। এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য যেসব বাস আছে, সেগুলোতেও প্রেসিডেন্ট আছে। আপনি সেসব বাসে উঠলেই বুঝতে পারবেন বাসের প্রেসিডেন্ট কে। তাঁর দাঁড়ানো ও চালচলনের ভঙ্গি দেখলে স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পও ভড়কে যেতে পারেন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে গোণায় ধরা হয় না? ভাবা যায়!
৬. আনুগত্য। অসংখ্য অনুগত প্রাণীর সন্ধান এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যাবে। বড় ভাইদের সব কথাতেই এরা ‘জি ভাই, ঠিক বলছেন ভাই’ বলে ওঠে। শুনেছিলাম, এমন শ্রেণিভুক্ত একজন নাকি বলেছিল, ‘অমুক যদি বলে সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে, তাহলে সূর্য পশ্চিম দিকেই ওঠে।’ এতটা অনুগত প্রাণীর কি তুলনা হয়? অথচ বিশ্বসম্প্রদায় এ বিষয় নিয়ে এখনো জানতে পারেনি। জানতে পারলে গিনেস বুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠতে কি বেশি সময় লাগত? তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়েরও কি উন্নতি ঘটত না? কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার হীন প্রচেষ্টায় তা দেখেও দেখছে না। তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রদর্শন করা কি উচিত? বলুন একবার বুকে হাত দিয়ে।
৭. ফেসবুক গবেষক। ১০ বছর আগে কোনো নেতার ছবিতে আপনি ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়েছেন, তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে খুঁজে বের করার মতো অসংখ্য গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সেই রিঅ্যাক্ট দেখেই আপনার সম্পর্কে তাঁরা অনুমান করে ফেলতে পারবেন, আপনি কোন দল করেন। আপনি চেতনাবাদী নাকি বিরোধী, তা তাঁদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাডার ধরে ফেলতে পারবে নিমেষে। এমনকি আপনার চৌদ্দ গুষ্টির চেতনাও রেহাই পাবে না। এরা শুধু কাগজ-কলমে গবেষক নয়, এদের হাতে ডান্ডাও আছে। শুধু গবেষণা করেই এরা ক্ষান্ত থাকে না, বরং তার প্রয়োগ ঘটাতে ডান্ডা নিয়ে সব ঠান্ডা করে দিতে মাঠেও নেমে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে এই গবেষকদের মানদণ্ডের হিসাবে আনতে হবে। সেই সঙ্গে ফেসবুক গবেষণায় নোবেল পুরস্কারের মতো কিছু একটা চালু করলেও মন্দ হয় না।
উফ, হাঁপিয়ে গেছি। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। দ্বিতীয় পর্বে আরও কিছু মান ও তার দণ্ড নিয়ে আলোচনা করা যাবে। সে পর্যন্ত, বিদায়!
বিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
২ দিন আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
২ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই আলোচনায় এখন ট্রাম্প। তবে তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইতালির সার্দানিয়া দ্বীপের একটি গ্রামে একেবারেই ভিন্ন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হিসেবে।
৩ দিন আগেটাইটানিকের ৭০০-র বেশি যাত্রী এবং ক্রুকে উদ্ধার করেছিল একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপহার দেওয়া একটি সোনার ঘড়ি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
৪ দিন আগে