Ajker Patrika

স্কটল্যান্ডের হ্রদে সত্যি কি দানোর বাস

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ৫৬
স্কটল্যান্ডের হ্রদে সত্যি কি দানোর বাস

স্কটল্যান্ডের লখ্ নেসকে ঘিরে আছে এক জলদানবের কিংবদন্তি, যার নাম নেসি। শত শত বছর ধরে রহস্যময় এই প্রাণীকে ডালপালা মেলেছে অনেক গল্প। সত্যি কি লখ্নেসে কোনো দানোর আবাস? ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে আর নানা যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সেটাই জানার চেষ্টা করছি।

আইরিশ ও স্কটিশরা লেক এমনকি সাগর থেকে বেরিয়ে আসা খাঁড়িকে লখ্ বলে। স্কটিশ হাইল্যান্ড এলাকায় প্রায় ২৩ মাইল লম্বা লখ্নেস নামের হ্রদের অবস্থান। বলা হয়, এতেই আবাস বিশালাকায় এক প্রাণীর। লখ্নেসের নাম থেকেই দানোটার নাম নেসি।

 ১৯৩৩ সাল। লেক পর্যন্ত একটা রাস্তা তৈরির কাজ সবে শেষ হয়েছে। ফলে জলাধারটাকে আরও ভালোভাবে দেখার সুযোগ মিলে গেল। এপ্রিলে জর্জ স্পিচার নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী বিশাল একটা জন্তুকে দেখার কথা বলেন, ড্রাগন কিংবা প্রাগৈতিহাসিক কোনো প্রাণীর সঙ্গে যার তুলনা করেন। তাঁদের বর্ণনা মেনে নিলে ওটা দৈর্ঘ্যে ২৫ ফুট, উচ্চতা ৪ ফুট, ঢেউ খেলানো একটা লম্বা গলাও আছে। তাঁদের গাড়ির সামনে দিয়ে চলে গিয়ে জংলা জায়গা পেরিয়ে লেকে নেমে পড়ে ওটা। কারও কারও ধারণা, রাস্তা বানাতে গিয়ে যে বিকট শব্দ হয়, তা-ই দানবটাকে হ্রদের তলদেশ থেকে ওপরে টেনে আনে। স্কটিশ এক সংবাদপত্রে খবরটা ছাপা হয়, এরপর অনেকেই দেখার দাবি তুলতে থাকেন।

এ ঘটনার জেরে পুরোনো কয়েকটা ঘটনার বিবরণও সামনে আসে। যেমন ১৮৭১-৭২ সালের দিকে ড. ম্যাকেঞ্জি হ্রদের জলে আশ্চর্য এক বস্তু দেখেছিলেন, অনেকটা কাঠের একটা গুঁড়ি কিংবা উল্টানো নৌকার মতো মনে হয়েছিল তাঁর একে। শুরুতে জিনিসটা ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল, তারপর গতি বাড়িয়ে পানির তলে অদৃশ্য হয়।

লখ্নেসের দৈর্ঘ্য ২৩ মাইল১৮৮৮ সালে রাজমিস্ত্রি আলেকজান্ডার ম্যাকডোনাল্ড খাটো পায়ের বড় একটা প্রাণীকে উঠে আসতে দেখেন লেকের তল থেকে তীরে। যেখানে ম্যাকডোনাল্ড দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে গজ পঞ্চাশেক দূরে জল কেটে কেটে এগোচ্ছিল জন্তুটা।

 ১৯৩৩ সালের ডিসেম্বরে ঘটনায় নতুন মোড় এল, যখন যুক্তরাজ্যের নামী পত্রিকা ডেইলি মেইল মারমাডিউক ওয়েদারেল নামের এক শিকারিকে দায়িত্ব দিল এই জলদানোকে খুঁজে বের করার! তদন্তের শুরুতেই হ্রদের তীরে বিশাল কিছু পায়ের ছাপ আবিষ্কার করে বসলেন ওয়েদারেল। তাঁর ধারণা, ওগুলো বিশ ফুট লম্বা কোনো নরম পায়ের জন্তুর। তবে ভালোভাবে পরীক্ষা করে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষকেরা রায় দিলেন, কোনো ধরনের কারসাজি ফলিয়ে ছাপগুলো বানানো হয়েছে।

১৯৩৪ সালের গোড়ার দিকেই দানো কাণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ হলো। জানুয়ারির ৫ তারিখ। রাত ১টা। চাঁদের আলোয় বাইক চালিয়ে লেকের কিনারা ধরে যাচ্ছিলেন আর্থার গ্র্যান্ট নামের এক ব্যক্তি। ওই সময়ই জন্তুটাকে দেখেন। আরেকটু হলে ওটার গায়ে বাইক তুলেই দিয়েছিলেন। গ্র্যান্টের বর্ণনা অনুযায়ী ওটার লম্বা ঘাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত একটা ছোট মাথা ছিল। সিল আর প্লেসিওসরাসের শংকর বলে মনে হয় তাঁর ওটাকে। জুরাসিক যুগের প্রথম দিককার বিশালদেহী সরীসৃপ এই প্লেসিওসরাস। তবে তাঁকে দেখে সতর্ক হয়ে যায় জন্তুটা, রাস্তা অতিক্রম করে লেকে নেমে যায়।

তবে সবচেয়ে চমক জাগানো ঘটনা ঘটল ১৯৩৪ সালেরই এপ্রিলে। এ সময় প্রখ্যাত ইংরেজ চিকিৎসক রবার্ট কেনেথ উইলসন রহস্যময় জন্তুটার ছবি তুলে ফেললেন। গোটা দুনিয়া নাড়িয়ে দেওয়া ছবিটিতে, যেটা পরে পরিচিত পায় সার্জন’স ফটোগ্রাফ নামে, দানবটির ছোট্ট মাথা ও গলা দেখা যাচ্ছিল।

ডেইলি মেইলে ছবিটি ছাপার সঙ্গে পৃথিবীময় হুলুস্থুল পড়ে যায়। এবার অনেকে অনুমান করেন, এটা একটা প্লেসিওসরাস। সমস্যা হলো, সাড়ে ছয় থেকে সাত কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এরা। যদি ধরে নেওয়া হয় এটি উষ্ণ রক্তের প্রাণী, তবেও হয় লখ্নেসে বিশাল প্রাণীটার জন্য পর্যাপ্ত খাবার থাকার কথা নয়! তা ছাড়া একে শ্বাস নেওয়ার জন্য জলের ওপর কয়েকবার মাথা তুলতে হতো দিনে, সে ক্ষেত্রে আরও বেশি মানুষ দেখত। অবশ্য বিশ্বাসীদের দাবি, প্লেসিওসরাস থেকে বিবর্তনে জন্ম নেওয়া এক জন্তু এই নেসি, যে কিনা স্কটিশ পরিবেশে মানিয়ে নিতে জলের ওপর না উঠেই শ্বাস নেওয়ার কৌশল রপ্ত করেছে।

মিউজিয়াম অব নেসিতে নেসির প্রতিক্রিয়াএরপর থেকে লখ্নেস দানব শিকারি বা সন্ধানীদের রীতিমতো হট স্পটে পরিণত হয়। ১৯৫৪ সালে এক মাছধরা নৌকার সোনার রিডিংয়ে সাগর সমতলের ৫০০ ফুট লম্বা একটা কিছুর উপস্থিতির আলামত মেলে।

১৯৬০ সালে লখ্নেস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো দশ বছরব্যাপী এক জরিপ চালায়, এতে প্রতিবছর অন্তত ২০ বার করে একে দেখা যাওয়ার ঘটনার উল্লেখ করা হয়। পরের বছরগুলোতে চালানো হয় অনেকগুলোর সোনার (শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে জলের নিচে কিছুর অবস্থান নির্ণয়) অভিযান। এর মধ্যে ১৯৮৭-২০০৩ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা চালানো হয়। ওই সময় এমনকি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সোনার যন্ত্রপাতিসহ ছোট ছোট সাবমেরিনও শামিল হয় অভিযানে। উদ্দেশ্য একটাই, নেসিকে খুঁজে বের করা। তবে সফল হয়নি কেউই। এর মধ্যে নেসির ছবি তোলার অসংখ্য দাবি আসে। বেশির ভাগই বানানো ছবি নতুবা অন্য কোনো প্রাণীকে নেসির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়।

একটা দলের যেমন দাবি, গ্রিনল্যান্ড হাঙরকেই নেসির সঙ্গে গুলানো হচ্ছে। এরা স্বাদু পানিতেও থাকতে সক্ষম। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে পরিস্থিতি জটিল করে দিল নতুন খবর, উইলসনের তোলা ছবিটি আসলে একটা ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়, খলনায়ক প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত ওয়েদারেল। খেলনা সাবমেরিনের সঙ্গে কাঠ-প্লাস্টিকের মাথা জুড়ে দিয়ে এটা তৈরি করেন তিনি। ওটারই ছবি তোলেন চিকিৎসক।

গবেষকেরা বসে থাকলেন না। নেসির ভিডিও ধারণের চেষ্টাও শুরু হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ভিডিওটা করেন এক লেব টেকনিশিয়ান, ২০০৭ সালে। লখ্নেস সেন্টারের মেরিন বায়োলজিস্টরাও একমত হন—এটা সবচেয়ে ভালো আলামতগুলোর একটি, তবে ভিডিওতে আসা বস্তুটি সিল বা বড় ধরনের ভোদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ২০১১ সালে আবার বড়সড় একটা প্রাণীর এক নৌকাকে অনুসরণের সোনার ছবি তোলা সম্ভব হয়। ২০১৪ সালে অ্যাপল ম্যাপে নেসের জলের সমতলের ঠিক নিচে নব্বই ফুটি একটা কিছুর আভাস মেলে। 

২০১৮ সালে হ্রদে কী ধরনের জীবনের উপস্থিতি আছে জানতে ডিএনএ জরিপ চালান গবেষকেরা। সেখানে কোনো ধরনের প্রাগৈতিহাসিক জন্তুর নমুনা মিলল না। তবে প্রচুর ইলের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেল। বিজ্ঞানীরা এবার ঘোষণা দিলেন, বিশাল আকারের কোনো ইলকেই নেসের দানব বলে ভুল করছে লোকেরা।

তবে এতে কৌতূহলী মানুষের বয়েই গেছে! লখ্নেসে তাদের আসা আর নেসিকে খোঁজাখুঁজি থেমে থাকল না। একে নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজ।

লখ্নেসে দানব বাসের কাহিনি কিন্তু আধুনিক কালের নয়, সেই প্রাচীন আমল থেকেই এই গুজব আছেতবে কথা হলো লখ্নেসে দানব বাসের কাহিনি কিন্তু আধুনিক কালের নয়, সেই প্রাচীন আমল থেকেই এই গুজব আছে। এমনকি স্থানীয় পিচট লোকদের আঁকা বহু পুরোনো দেয়ালচিত্রেও পাখাসহ রহস্যময় এক জন্তুকে দেখা যায়।

প্রথম লিখিত প্রমাণটি সেইন্ট কলাম্বার ৫৬৫ সালের এক আত্মজীবনীতে। সেখানে লেখা ছিল—জন্তুটা সাঁতরাচ্ছিল লেকে এবং এক লোককে আক্রমণ করতে উদ্যত হচ্ছিল, তবে সাধক কলাম্বা ওটাকে ফিরে যাওয়ার আদেশ দিলে তা পালন করে সে। তার পরের শতকগুলোতে হঠাৎ হঠাৎ একে দেখার কথা দাবি করেছে কেউ কেউ। স্কটিশ উপকথায়ও এ ধরনের জলচর দানবের ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে।

তবে সবকিছু মিলিয়ে লখ্নেসের পক্ষে কিন্তু বড় কোনো প্রাণীকে আশ্রয় দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এর সর্বোচ্চ গভীরতা ২৩০ মিটার। গড় গভীরতা ১৩২ মিটার। লখ্‌নেসের পর স্কটল্যান্ডের দ্বিতীয় গভীর লখ্ এটি। তবে যদি বিস্তৃতি আর গভীরতা দুটোকে বিবেচনায় নেন, একে শুধু স্কটল্যান্ড নয়, গোটা গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে বেশি পানি ধরে এমনকি সবচেয়ে বড় হ্রদও বলতে পারেন।

অনেকে আবার বলেন, রাতে আলোর কারসাজিতে এসব ঘটনা ঘটেছে। কারও আবার দাবি, ত্রিশের দশকে ওই এলাকায় উপস্থিত সার্কাসের হাতি জলকেলি করতে গিয়েই প্রথম গুজবের জন্ম দেয়। তবে কথা হলো, যাঁরা নেসিকে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেক উচ্চশিক্ষিত, সম্মানিত ও স্থির মস্তিষ্কের ব্যক্তিও আছেন।

সাম্প্রতিক কালে এক ঝড়ের সময় স্কটিশ এক সৈকতে বিশাল একটা কঙ্কাল আবিষ্কারের ঘটনাও তোলপাড় তুলেছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তোলা এক ছবি নতুন করে হাওয়া লাগিয়েছে নেসিবিশ্বাসীদের নৌকার পালে, ওই ছবিতে লখ্নেসের জলে বড়সড় একটা কিছু সাঁতরে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। নেসি ছাড়া এত্তো বিশাল কী হতে পারে!

আমার মতো রহস্যপ্রেমী মানুষের জন্য দুঃসংবাদ হলো, নেসি আছে এমন কোনো নিশ্চিত প্রমাণ এখন পর্যন্ত মেলেনি। আর আশার কথা, সে মারা গেছে কিংবা নেই এমন কোনো প্রমাণও কোনো অবিশ্বাসী হাজির করতে পারেননি।

সূত্র: হাইল্যান্ড টাইটলস ডট কম, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ: বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালতে মারধর

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

পরীক্ষায় অটো পাসের মতো কোনো বিষয় তো সংবিধানে থাকতে পারে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

চিপসের প্যাকেটকে বন্দুক ভেবে কিশোরকে পুলিশে দিল এআই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৯
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি

চিপস খেতে খেতে রাস্তায় হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের স্কুলপড়ুয়া কিশোর টাকি অ্যালেন। হঠাৎ আটটি পুলিশের গাড়ি এসে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাকে। গাড়ি থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা তার দিকে বন্দুক তাক করে হাঁটু গেড়ে বসতে বললেন। এমন আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর বুঝে উঠতে পারছে না, কী তার ভুল। পুলিশের নির্দেশ মানার পর হাতে পড়ল হাতকড়া।

টাকি অ্যালেনকে কিশোর বয়সে এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। অ্যালেনের হাতে থাকা চিপসকে বন্দুক হিসেবে শনাক্ত করেছে এক এআই সিস্টেম!

স্থানীয় গণমাধ্যম ডব্লিউএমএআর-২ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাকি অ্যালেন বলে, ‘হঠাৎ দেখি প্রায় আটটা পুলিশ কার এসে গেল। তারপর সবাই বন্দুক তাক করে আমাকে মাটিতে শুতে বলছে।’

অ্যালেন বলতে থাকে, ‘ফুটবল অনুশীলনের পর এক প্যাকেট ডোরিটোস চিপস খেয়ে খালি প্যাকেটটি পকেটে রেখে দিই। এর ২০ মিনিট পরই এই ঘটনা। একজন অফিসার আমাকে হাঁটু গেড়ে বসতে বলেন, তারপর আমাকে আটক করে হাতকড়া পরান।

তবে বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ বিবিসি নিউজের কাছে দাবি করে, অ্যালেনকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল, গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এক বিবৃতিতে তারা জানায়, কোনো হুমকি নেই নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি নিরাপদে সমাধান করা হয়।

এই ঘটনার পর থেকে ফুটবল অনুশীলন শেষে স্কুলের ভেতরে চলে যায় অ্যালেন। সে জানায়, বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়, বিশেষ করে চিপস খাওয়া বা কিছু পান করা।

বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ জানায়, সেই মুহূর্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত ও আনুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাদের কর্মকর্তারা।

বিভাগটি আরও জানায়, এআই সতর্কবার্তাটি মানব পর্যালোচকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা এতে কোনো হুমকি পাননি। এই বার্তা স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে পাঠানো হলেও তিনি এ তথ্যটি দেখেননি এবং স্কুলের নিরাপত্তা টিমকে জানান। তারা পুলিশকে ডাকে।

অভিভাবকদের উদ্দেশে এক চিঠিতে স্কুলের প্রিন্সিপাল কেট স্মিথ বলেন, স্কুলের নিরাপত্তা দল দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং কোনো অস্ত্র না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রাথমিক সতর্কতা বাতিল করে।

তিনি আরও জানান, ‘আমাদের স্কুল রিসোর্স অফিসারকে (এসআরও) বিষয়টি জানানো হলে তিনি অতিরিক্ত সহায়তার জন্য স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা স্কুলে এসে ওই শিক্ষার্থীকে তল্লাশি করেন এবং দ্রুত নিশ্চিত হন যে তার কাছে কোনো অস্ত্র নেই।’

এআই টুল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওমনিলার্ট এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বিবিসি নিউজকে জানায়, ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের উদ্বেগ জানাতে চাই।’

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের সিস্টেম প্রথমে এমন কিছু শনাক্ত করে যা দেখতে আগ্নেয়াস্ত্রের মতো লাগছিল। ছবিটি পরে তাদের পর্যালোচনা দল যাচাই করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেই তথ্য ও ছবি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুলের নিরাপত্তা দলের কাছে মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়।

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তাদের সিস্টেমে ‘সমাধান হয়েছে’ বলে চিহ্নিত হওয়ার পরই এ বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততা শেষ হয়। তাদের সিস্টেম ‘যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, সেভাবেই কাজ করেছে।’

অ্যালেন মন্তব্য করেছে, ‘আমার মনে হয় না কোনো চিপসের প্যাকেটকে কখনো বন্দুক হিসেবে ভুল ধরা উচিত।’

এই ঘটনায় স্কুলগুলোতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছে অনেকে। স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা ঘটনাটি নিয়ে আরও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বাল্টিমোর কাউন্টির স্থানীয় কাউন্সিলর ইজি পাকোটা ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি তাদের এআই-চালিত অস্ত্র শনাক্তকরণ ব্যবস্থার প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ: বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালতে মারধর

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

পরীক্ষায় অটো পাসের মতো কোনো বিষয় তো সংবিধানে থাকতে পারে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

বিচিত্র /ল্যুভরের লুট এখন ভাইরাল বিজ্ঞাপন, চোরদের মইটি ছিল জার্মান কোম্পানির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ১২
ল্যুভর মিউজিয়ামে ঢুকতে ব্যবহৃতটি মইটি ছিল এক জার্মান কোম্পানির। ছবি: এএফপি
ল্যুভর মিউজিয়ামে ঢুকতে ব্যবহৃতটি মইটি ছিল এক জার্মান কোম্পানির। ছবি: এএফপি

প্যারিসের বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মহামূল্যবান অলংকার চুরির ঘটনায় ব্যবহৃত বিশেষ একটি ফার্নিচারের প্রস্তুতকারক জার্মান কোম্পানি বোকার। এই চুরির ঘটনাকে এখন নিজেদের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে কোম্পানিটি। তারা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের পণ্যের গুণগান গেয়ে হাস্যরসাত্মক বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।

গত সপ্তাহের রোববার সকালে ল্যুভর মিউজিয়াম খোলার পরই চোরেরা একটি ট্রাক মিউজিয়ামের অ্যাপোলো গ্যালারির নিচে থামায়। এই ট্রাকে লাগানো ছিল বোকার কোম্পানির তৈরি একটি ভাঁজযোগ্য মই। দিনের আলোয় তারা সেই মই বেয়ে ওপরে উঠে যায়, জানালা কেটে ভেতরে ঢোকে এবং ডিসপ্লে কেস ভেঙে গয়না চুরি করে।

পুরো অপারেশনটি শেষ করতে চোরদের সময় লেগেছিল মাত্র সাত মিনিট। চুরি হওয়া অলংকারগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দেওয়া একটি পান্না ও হীরার নেকলেস এবং সম্রাজ্ঞী ইউজিনির মুকুট। এই মুকুটে প্রায় ২ হাজার হীরা খচিত।

জার্মানির ডর্টমুন্ডের কাছে অবস্থিত লিফটিং সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি বোকারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলেক্সান্ডার বোক এবং তাঁর স্ত্রী রোববার খবরটি দেখার সময়ই ব্যবহৃত মইটি চিনতে পারেন।

সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলেক্সান্ডার বোক জানান, তাঁর স্ত্রী, যিনি কোম্পানির বিপণন প্রধানও, তিনিই প্রথম বিষয়টি খেয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘যখন পরিষ্কার হলো যে চুরির ঘটনায় কেউ আহত হয়নি, তখন আমরা বিষয়টিকে একটু হালকা চালে নিই।’

আলেক্সান্ডার স্বীকার করেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ! সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সর্বাধিক পরিদর্শন করা জাদুঘরটির খ্যাতি কাজে লাগিয়ে আমাদের কোম্পানির জন্য কিছুটা দৃষ্টি আকর্ষণ করার এ-ই সুযোগ।’ তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করেন, ‘এই অপরাধ অবশ্যই নিন্দনীয়, এটা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’

এই সুযোগে বোকার দ্রুতই একটি প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ল্যুভরের বাইরে লাগানো সেই মইয়ের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছে: ‘যখন আপনার দ্রুত ফেরার তাড়া থাকে!’

বিজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তাদের তৈরি ‘Agilo’ নামের ডিভাইসটি ২৩০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক মোটর এবং ‘ফিসফিসানির মতো শান্ত’ শব্দের ইঞ্জিনের সাহায্যে ৪০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত মালপত্র বহন করতে পারে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চোরেরা মইটির ডেমোনস্ট্রেশন নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল এবং প্রদর্শনের সময়ই এটি তারা চুরি করে নিয়ে যায়। তারা গাড়ির লাইসেন্স প্লেট ও গ্রাহকের লেবেলিং পর্যন্ত সরিয়ে ফেলেছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোকারের পোস্টগুলো সাধারণত ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার বার দেখা হয়। তবে এই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে ৪৩ লাখের বেশি ভিউ পেয়েছে। যদিও প্রচারণার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকে এটিকে ‘স্মার্ট’ ও মজার বলে অভিহিত করেছেন, আবার অনেকে নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আলেক্সান্ডার বোক বলেন, তিনি জানেন এটি ‘খুবই সূক্ষ্ম ভেদরেখা’, কিন্তু কেউ আহত না হওয়ায় তাঁরা এই পথে এগিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, এই প্রচারণার অর্থ অপরাধকে সমর্থন করা নয়।

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সম্পূর্ণ বিরোধী। আমরা নিঃসন্দেহে সিরিয়াস কোম্পানি। জার্মানিতে আমাদের ৬২০ জন কর্মচারী আছে। সবকিছু জার্মানিতেই তৈরি হয়। আমরা নিরাপত্তার পক্ষে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ: বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালতে মারধর

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

পরীক্ষায় অটো পাসের মতো কোনো বিষয় তো সংবিধানে থাকতে পারে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

কিশোরের পেট থেকে বের হলো ১০০টি শক্তিশালী চুম্বক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউজিল্যান্ডে এক কিশোরের পেট থেকে বের করা হলো ১০০টি চুম্বক। ছবি: নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নাল
নিউজিল্যান্ডে এক কিশোরের পেট থেকে বের করা হলো ১০০টি চুম্বক। ছবি: নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নাল

নিউজিল্যান্ডে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরের পেট থেকে প্রায় ১০০টি শক্তিশালী চুম্বক অপসারণ করেছেন চিকিৎসকেরা। জরুরি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার অন্ত্রের কিছু টিস্যুও অপসারণ করতে হয়েছে। চিকিৎসকেরা গতকাল শুক্রবার এই অস্ত্রোপচারের কথা প্রকাশ করেন। চুম্বকগুলো কেনা হয়েছিল জনপ্রিয় অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম টেমু থেকে।

এই ঘটনা অনলাইন শপ থেকে কেনা শিশুদের পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দিন ধরে পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে কিশোরটিকে নর্থ আইল্যান্ডের টরাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিশোরটি ভর্তির প্রায় এক সপ্তাহ আগে প্রায় ৮০ থেকে ১০০টি (৫ x ২ মিলিমিটার আকারের) শক্তিশালী নিওডিমিয়াম চুম্বক গিলে ফেলেছিল। এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, এই চুম্বকগুলো তার অন্ত্রের ভেতরে চারটি সরলরেখায় জড়ো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, চুম্বকীয় শক্তির কারণে অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে আটকে যাওয়ায় তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে টিস্যু মারা যায়।

সার্জনরা দ্রুত অপারেশন করে মৃত টিস্যু অপসারণ করেন এবং আটকে থাকা চুম্বকগুলো বের করে আনেন। চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেন, কিশোরটির ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্রের অংশ ক্যাসেম-এর চারটি জায়গায় টিস্যু মারা গিয়েছিল। আট দিন হাসপাতালে থাকার পর শিশুটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনের লেখক ড. বিনুরা লেখামালেজ, লুসিন্ডা ডানক্যান-ওয়ার এবং নিকোলা ডেভিস সতর্ক করেছেন, এই ঘটনা কেবল চুম্বক গিলে ফেলার বিপদই নয়, বরং শিশুদের জন্য অনলাইন শপের বিপদকেও তুলে ধরে।

উল্লেখ্য, এই শক্তিশালী চুম্বকগুলো নিউজিল্যান্ডে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে নিষিদ্ধ।

চিকিৎসকেরা আরও জানিয়েছেন, চুম্বক গিলে ফেলার জন্য অস্ত্রোপচার ভবিষ্যতে অন্ত্রে বাধা, পেটে হার্নিয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে।

এদিকে, চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট টেমু এই ঘটনা জানার পর দুঃখ প্রকাশ করেছে। একজন মুখপাত্র বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা একটি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শুরু করেছি এবং নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নালের লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’

টেমু আরও জানায়, তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি যে চুম্বকগুলো টেমু থেকেই কেনা হয়েছিল কি না। তবে তারা প্রাসঙ্গিক পণ্য তালিকা খতিয়ে দেখছে। অবৈধ পণ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বাজারেও টেমু ইতিমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ: বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালতে মারধর

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

পরীক্ষায় অটো পাসের মতো কোনো বিষয় তো সংবিধানে থাকতে পারে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

ফোন নম্বর ‘মোটু’ নামে সেভ করায় ডিভোর্স দিলেন স্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৫৯
তুরস্কে ফোন নম্বর মোটু নামে সেভ করায় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন এক নারী। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
তুরস্কে ফোন নম্বর মোটু নামে সেভ করায় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন এক নারী। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

আপনি কি আপনার স্ত্রীকে ‘মোটু বা গুলুমুলু’ ডাকেন? তাহলে এখনই সাবধান হয়ে যান। কারণ, তুরস্কের এক ব্যক্তি তাঁর ফোনে স্ত্রীর ফোন নম্বর সেভ করেছিলেন, ‘Chubby-চাবি’ দিয়ে। যার অর্থ প্রচলিত বাংলায় দাঁড়ায় ‘মোটু বা গুলুমুলু।’ অনেক সময় এই ডাকনাম আদুরে শোনালেও বিষয়টি মোটেও ভালো লাগেনি তুর্কি ওই ব্যক্তির স্ত্রীর। তিনি সোজা আদালতে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। এমনকি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়েও যায়।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহের খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কের ওই ব্যক্তি তাঁর মোবাইল ফোনের কনট্যাক্টে স্ত্রীর নাম সেভ করেছিলেন ‘চাবি’ নাম দিয়ে। এই ঘটনাকে আদালত ‘অসম্মানজনক’ ও ‘বিবাহের জন্য ক্ষতিকর’ বলে রায় দিয়েছেন।

পশ্চিম তুরস্কের উশাক প্রদেশের ওই নারী এই ঘটনার পর স্বামীর বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন। অন্যদিকে স্বামী পাল্টা মামলা করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন। তাঁদের সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে, তবে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

আদালতের শুনানিতে ওই নারী জানান, তাঁর স্বামী বারবার তাঁকে হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠাতেন। এক বার্তায় তিনি লিখেছিলেন, ‘দূর হও, তোমাকে আর দেখতে চাই না।’ আরেকটিতে বলেছিলেন, ‘তোমার মুখ শয়তানকে দেখাও গে।’ এ ছাড়া তিনি নিজের বাবার অস্ত্রোপচারের খরচ বাবদ স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা দাবি করেন।

শুনানির সময় আদালতে সবচেয়ে আলোচিত হয় স্বামীর ফোনে স্ত্রীর নাম ‘তোম্বিক—তুর্কি ভাষার এই শব্দের অর্থ মোটা) নামে সংরক্ষিত থাকার বিষয়টি। ওই নারীর দাবি, এই ডাকনাম তাঁকে অপমান করেছে এবং তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে। আদালত তাঁর দাবিকে সমর্থন করে জানায়, ওই নাম ও বার্তাগুলো ‘মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতা’র শামিল।

অন্যদিকে স্বামী দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বাড়িতে এনেছিলেন। কিন্তু তদন্তে জানা যায়, ওই ব্যক্তি কেবল একটি বই পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে কোনো অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ মেলেনি। আদালত রায়ে বলে, স্বামীর অপমানজনক ভাষা ও অর্থনৈতিক চাপ ছিল আরও গুরুতর। তাই মূল দায় তাঁরই।

তুর্কি আইনে কারও মর্যাদা বা ব্যক্তিগত সম্মান আঘাত করে এমন ভাষা বা আচরণের জন্য, সেটা বার্তা মারফত হোক বা সরাসরি, দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। শেষ পর্যন্ত দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা পরকীয়ার অভিযোগ খারিজ করা হয়। স্বামীকে তাঁর সাবেক স্ত্রীকে মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক প্রকাশ করা হয়নি।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একজন লিখেছেন, ‘মোটু বা গুলুমুলু ডাক আসলে বেশ মিষ্টি শোনায়। মোটা হওয়া কোনো অপরাধ না, আর মোটা বলে ডাকা সব সময় অপমানও নয়।’ আরেকজন বলেছেন, ‘এটা ন্যায্য রায়। স্বামী তাঁর স্ত্রীকে একের পর এক অপমানজনক বার্তা পাঠিয়েছে—সেখানেই সীমা অতিক্রম করেছে।’ তৃতীয় এক ব্যক্তি মজা করে লিখেছেন, ‘আমার বন্ধুদের নম্বরগুলো এখনই যাচাই করব, যেন কোনো আপত্তিকর কিছু না থাকে।’

এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গত মে মাসে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক ব্যক্তি প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেন। কারণ, প্রেমিকার ফোনটি তাঁদের প্রথমবার একসঙ্গে যাওয়া এক হোটেলের কামরায় ওয়াইফাইয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হয়ে যায়।

এর ফলে ওই পুরুষি মনে করেন, এর মানে ওই নারী আগে অন্য কারও সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে প্রতারণা করেছেন। অপমানিত হয়ে ওউ নারী স্থানীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলেন আসিফ নজরুল: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ: বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালতে মারধর

বামপন্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দিতে চান ডাকসু নেতা সর্বমিত্র, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর

পরীক্ষায় অটো পাসের মতো কোনো বিষয় তো সংবিধানে থাকতে পারে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত