ফরাসি নাগরিক হীরা খুঁজে পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্কে, তারপর...

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ৫২
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ৩৭

ফরাসি এক নাগরিক আমেরিকার এক পার্কে খুঁজে পেলেন বড় একটি হীরা। সেটা আবার নিজের দেশে নিয়ে যেতেও বাধা নেই। কেমন একটু অবাক লাগছে বিষয়টি, তাই না? 

ফ্রান্স থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে এসেছিলেন জুলিয়েন নাভাস। মূল উদ্দেশ্য কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম কোনো মার্কিন মহাকাশযান চাঁদের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণের দৃশ্য দেখা। ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে পেরেগ্রিন নামের চন্দ্রযানটি উৎক্ষিপ্ত হয়। যদিও চন্দ্রাভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর এটি ব্যর্থ হওয়ার কথা জানানো হয়। 

ঘটনা হলো, এ সময় নিউ অরলিন্সেও যান নাভাস। পথেই শোনেন আরকানসাসের ক্রেটার অব ডায়মন্ডস স্টেট পার্কের কথা। 

এর আগে স্বর্ণ ও  ফসিলের খোঁজে অনুসন্ধান চালানো নাভাসের মধ্যে আগ্রহ জাগিয়ে তোলে এই পার্ক। যেখানে টিকিট কেটে হিরার খোঁজ করা যায় এবং সেই হিরা নিজের সঙ্গে নিয়েও যাওয়া যায়।

পার্কে টিকিট কেটে রত্নের সন্ধানে এসেছেন অনেকেইআর ওই পার্কেই নাভাস খুঁজে পান ৭ দশমিক ৪৬ ক্যারেটের বিশাল এক হীরা। আরকানসাস স্টেট পার্কসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, ১১ জানুয়ারি নাভাস পার্কে পৌঁছে টিকিট কিনে হীরা খোঁজার জন্য সাধারণ যন্ত্রপাতি ভাড়া করেন। 

‘৯টার দিকে পার্কে ঢুকি এবং খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করি।’ বলেন নাভাস, ‘এটি বেশ কষ্টকর এক কাজ। কাজেই বিকেলের দিকে দেখা গেল আমি মূলত মাটির ওপরের অংশের দিকে মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য রাখছি কিছু পাওয়া যায় কি না।’

নাভাসের ভাগ্য ভালো, দিন কয়েক আগেই এক ইঞ্চির বেশি বৃষ্টি হয়েছে পার্কে। কাজেই এটি ছিল ভেজা ও কর্দমাক্ত।

‘বৃষ্টি পড়ায় এটি ধুলাবালি ধুয়ে নিয়ে যায় এবং ওপরের দিকে থাকা ভারী পাথর, খনিজ এবং হীরা উন্মুক্ত করে দেয়।’ ব্যাখ্যা করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট পার্ক সুপারিনটেনডেন্ট ওয়েইমন কক্স।

তাঁর পাওয়া রত্ন দেখাচ্ছেন জুলিয়েন নাভাসকক্স বলেন, পার্কের অনেক বড় হীরা ওপরের দিকে পাওয়া গেছে এবং পার্কটির পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সুবিধার জন্য ৩৭.৫ একর জায়গার মাটিতে কিছু কাজ করা হয়েছে। মাটি আলগা করতে এবং প্রাকৃতিক ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করতেই এটা করা হয়।

একসময় পার্কের ডায়মন্ড ডিসকভারি সেন্টারে হাজির হন নাভাস খোঁড়াখুঁড়িতে পাওয়া রত্নটি নিয়। সেখানে তাঁকে জানানো হয়, ৭ দশমিক ৪৬ ক্যারেটের একটি বাদামি হীরা পেয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাভাস বলেছিলেন যে তিনি স্তব্ধ হয়ে যান হীরাটি আবিষ্কার করে। আর কী খুঁজে পেয়েছেন তা তাঁর বাগ্‌দত্তাকে জানাতে উন্মুখ হয় ওঠেন। পাথরটি গাঢ় চকলেট বাদামি রঙের এবং মার্বেলের মতো গোলাকার।

নাভাস তাঁর বাগ্‌দত্তার নামানুসারে হীরাটির নাম রাখেন ক্যারিন ডায়মন্ড। 

১৯৭২ সালে ক্রেটার অব ডায়মন্ডসকে স্টেট পার্কে রূপান্তরিত করার পর দ্য ক্যারিন ডায়মন্ড হলো অষ্টম বৃহত্তম হীরা।

রত্নের সন্ধানে ব্যস্ত তারা। ছবি: আরকানসাস স্টেট পার্কসআরকানসাস রাজ্যের মারফ্রিজবোরো এলাকায় ক্রেটার অব ডায়মন্ডস স্টেট পার্কের অবস্থান। জন ওয়েসলি হাডলস্টন নামের এক ব্যক্তি কীভাবে আগ্নেয়গিরির রত্নসমৃদ্ধ মৃত জ্বালামুখে প্রথম হীরা খুঁজে পান এবং ‘ডায়মন্ড কিং’ বা ‘হীরক রাজা’ নামে পরিচিতি পেয়ে যান, তা নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণটি বলছে, ঘটনার সূচনা ১৯০৬ সালে। মধ্যবয়সী, অশিক্ষিত কৃষক হাডলস্টন তাঁর ২৪৩ একরের খামারের শালগমের খেতে কাজ করছিলেন। এ সময় দুটি অদ্ভুত ধরনের চকচকে হলুদ কিন্তু স্বচ্ছ পাথর খুঁজে পেলেন। 

জিনিসগুলো আসলে কী, সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়ায় গ্রাইন্ডিং হুইল দিয়ে পরীক্ষা করেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, এটি হীরা ছাড়া যেকোনো কিছুকে নির্দিষ্ট আকার দিতে পারে। তখনই খেয়াল করলেন, পাথর দুটোর কিছু হয়নি, উল্টো এই চূর্ণ করার চাকার মধ্যে ক্ষত তৈরি করেছে। আর এ থেকে অনুমান করলেন, হীরা পেয়ে গেছেন তিনি। এর দাম কেমন হতে পারে জানার জন্য কাছের শহর লিটল রকের এক স্বর্ণকারের কাছ পাঠালেন। 

এখন তাঁর আবিষ্কারের জায়গাটি পৃথিবীর একমাত্র হীরার খনি, যেটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত। আর এখানে যে রত্নই খুঁজে পান না কেন, সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন। পার্কের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রতিদিনই পার্কে আসা এক কী দুজন দর্শনার্থী হীরা আবিষ্কার করেন। 

রত্নের খোঁজে চলছে খোঁড়াখুঁড়িপরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক অনেক হীরারই সন্ধান মেলে খনিটিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া সবচেয়ে বড় হীরা আংকেল স্যাম ডায়মন্ডটিও উত্তোলন করা হয় এই খনি থেকে। এটার ওজন ৪০.২৩ ক্যারেট। 

কয়েকবার মালিকানা বদলের পর ১৯৭২ সালে আরকানসাস রাজ্যের পক্ষ থেকে হীরার খনিটি কিনে নেওয়া হয়। ৯১১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠে ক্রেটার অব ডায়মন্ডস স্টেট পার্ক। এর মধ্যে দর্শনার্থীদের রত্ন অনুসন্ধানের জন্য উন্মুক্ত আছে ৩৭.৫ একর এলাকা। আর ১৯৭২ সালের পর থেকে এই পার্কে মিলেছে ৩৫ হাজারের বেশি হীরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত