অনলাইন ডেস্ক
ঘুম হলো প্রাণীদের চেতনার পরিবর্তন। প্রাণীদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই সময়টাতে দেহের সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্থগিত থাকে।
অনেক প্রাণী আত্মরক্ষার জন্য অল্প সময়ের জন্য ঘুমায়। সাধারণত প্রাণীরা ঘুমন্ত এবং জাগ্রত অবস্থায় বাইরের উদ্দীপনা প্রয়োগ করলে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু বুলফ্রগের মতো কিছু প্রাণী উভয় পরিস্থিতিতে একই প্রতিক্রিয়া দেখায়। এ কারণে বিজ্ঞানীরা বলেন, বুলফ্রগ ঘুমায় না।
তবে প্রাণী জগতে যেমন বিচিত্র আকার, আকৃতি, রং, আচরণ, ডাক, খাদ্যাভ্যাস রয়েছে, তেমনি রয়েছে ঘুমের বৈচিত্র্য। কিছু প্রাণী দাঁড়িয়ে, বসে, গাছে ঝুলে, একে অপরের গায়ে পড়ে, শব্দ করে—কত বিচিত্রভাবে যে ঘুমায় তার ইয়ত্তা নেই! এমন কয়েকটি প্রাণীর ঘুমের ঢং নিয়ে এই আয়োজন—
মিরকাট
মিরকাট আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুভূমিতে বাস করে। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটির দেহের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চিরও কম এবং ওজন প্রায় এক পাউন্ড। শিকারিদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এরা একেকটা গ্যাং তৈরি করে। এরা শুধু দলবদ্ধ ভাবেই থাকে না, ঘুমালে দূর থেকে মনে হয় একটা স্তূপ।
এই ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে একে অপরের ওপরে চড়ে। এতে বড় স্তূপের আকার পায়। কোনো শিকারি যেমন—সাপ বা ঈগল আক্রমণ করতে এলে একটি মিরকাটই দ্রুত বাকিদের জাগিয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া মরুভূমিতে রাতে তাপমাত্রা অনেক নেমে যায়। রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে উষ্ণতা পেতেও মিরকাটেরা স্তূপাকারে ঘুমায়।
ডলফিন
ডলফিনদের ঘুমানোর পদ্ধতিটি চমৎকার। পানিতে শরীর এলিয়ে দিয়ে এরা আরামে ঘুমায়। এদের ঘুমানোর দুটি পদ্ধতি আছে। ডলফিনের এই ঘুমানোর একটি পদ্ধতিকে বলে লগিং। মানে পানিতে গাছের গুঁড়ি যেভাবে ভেসে থাকে এরাও ঠিক সেভাবে ঘুমায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীটি পানিতে অনুভূমিকভাবে ভেসে থাকে। মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি এরা ঘুমায়। ঘুমন্ত ডলফিনকে দেখলে একেবারে গাছের গুঁড়ির মতো মনে হয়।
কিছু ডলফিন উল্লম্বভাবে (খাড়া) ঘুমায়। সমুদ্রপৃষ্ঠে ভেসে উঠে নাক বাতাসে বের করে রাখে, আর লেজের দিকটি নিচের দিকে ঝুলে রাখে।
ডলফিন সামাজিক প্রাণী। এরা দল বেঁধে ঘুমায়। একসঙ্গে থাকার উদ্দেশ্য সুরক্ষা। শিকারি যেন চোখ না এড়ায় এবং দেখলেই একে অপরকে সতর্ক করতে পারে এই জন্য এ দলবদ্ধ ঘুম।
একটি ডলফিন জোড়া জোড়ায় সাঁতার কাটে। এই সময় ঘুমানোর জন্য তারা সাঁতারের গতি কমিয়ে দেয়। এই পদ্ধতিটি অবশ্য দীর্ঘ ও গভীর ঘুমের জন্য তারা ব্যবহার করে না, বরং এভাবে এরা ঝিমায়। কৌশলটি হলো—ডলফিনের মস্তিষ্কের একটি অংশ এ সময় নিষ্ক্রিয় থাকে, অন্য অংশ সজাগ থাকে।
ডলফিন অবশ্য সব সময়ই কিছু মাত্রায় সতর্ক থাকে। শরীর বিশ্রাম নেয়।
হাঁস
হাঁসেরা পুকুর, হ্রদ বা অন্য জলাধারের তীরে এক সারিতে ঘুমায়। নিরাপত্তার জন্যই তারা কাছাকাছি থাকে। প্রতিটি হাঁস মাথা ঘুরিয়ে পিঠের পালকের মধ্যে ঠোঁট গুঁজে দেয়। একটু নিবিড়ভাবে দেখলে ঘুমন্ত হাঁসের এই সারিতে মজার কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যায়।
সারির শেষ প্রান্তের হাঁসগুলো এক চোখ চোখ খোলা রেখে ঝিমায়। বিড়াল বা শেয়ালের মতো শিকারিদের পর্যবেক্ষণ করার জন্যই এটি করে তারা। ফলে ঘুম হয় খুব হালকা। সারির মাঝখানে হাঁসগুলো দুটি চোখ বন্ধ করে গভীর ঘুমে যায়। কিছুক্ষণ পর তারা জায়গা বদল করে। মাঝের হাঁসগুলো প্রান্তে চলে যায়, আর প্রান্তেরগুলো মাঝে চলে এসে গভীর ঘুম দেয়। এভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ঘুমায় হাঁসেরা।
ফ্ল্যামিঙ্গো
উজ্জ্বল রঙের পালকের এই পাখিটি জেগে থাকা অবস্থায় এক পায়ে দাঁড়াতে পারে। ফ্ল্যামিঙ্গো কিন্তু ঘুমায়ও এক পায়ে দাঁড়িয়ে! এই পাখিগুলো তাদের লম্বা ঘাড় বাঁকিয়ে পিঠের পালকের মধ্যে ঠোঁট গুঁজিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দেখলে মনে হবে, গভীর ঘুমে। কিন্তু আসলে তা নয়। এই পাখির মস্তিষ্কের অর্ধেক সব সময় জাগ্রত থাকে। অজগর বা শকুনের মতো শিকারি প্রাণী থেকে নিজেদের রক্ষা করতেই এই কৌশল।
তবে কেন পাখিরা এক পায়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়—এর সর্বসম্মত ব্যাখ্যা এখনো বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি।
স্লথ
অলস মানুষের ঘুমাতে পছন্দ করে—এটা সবারই জানা। স্লথ এই প্রাণীরা দিনে কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা ঘুমায়! এই প্রাণীদের ঘুমানোর কয়েকটি উপায় রয়েছে—
ঘুমানোর জন্য স্লথেরা একটি গাছের ওপরে শাখাযুক্ত ডাল খুঁজে নেয়। দুটি ছোট শাখায় বিভক্ত এমন ডাল তাদের পছন্দ। দুই শাখার মাঝখানে স্লথেরা পেছনের দিকটা ঠেস দিয়ে ঘুমায়। স্লথ যখন ঘুমায় তখন মনে হয় যেন এরা দোলনায় দুলছে।
কিছু স্লথ আবার গাছের ডাল থেকে উল্টো ঝুলে ঘুমায়। তাদের দীর্ঘ নখর গাছের শাখায় আটকে থাকে, ফলে ঘুমালেও পড়ে যায় না।
বাদুড়
বাদুড় ঘুমায় উল্টো ঝুলে। তারা গাছের ডাল, গুহার ওপরের দেয়াল বা বাড়ির ছাদের নিচে ঝুলে ঘুমাতে পারে। কিন্তু এরা ঘুমিয়ে পড়লেও কেন মাটিতে পড়ে যায় না?
এর উত্তর হলো—পায়ের বিশেষ টেন্ডন (শক্ত পেশি) বাদুড়কে ঘুমন্ত অবস্থায় পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। বাদুড় যখন একটি শাখায় ঝুলে থাকে, তখন এর পায়ের টেন্ডনগুলো শক্ত হয়ে এক স্থানে আটকে থাকে। ফলে এরা শরীর শিথিল করে আরামে ঘুমাতে পারে। অনেকটা বাতাসে শরীর ভাসিয়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি হয় এদের। আবার ঘুম থেকে জেগে টেন্ডনগুলো ছেড়ে দিয়ে বা শিথিল করে উড়ে যায়।
শিকারিদের হাত থেকে বাঁচতে বাদুড়েরা দল বা কলোনিতে বাস করে এবং ঘুমায়। বাসস্থানে কখনো একা থাকে না তারা। আবার উষ্ণতা ধরে রাখতে এরা বড় কলোনিতে ঘুমায়।
ঘোড়া
ঘোড়া সাধারণত শুয়ে ঘুমায় না। এরা পা লক (সোজা ও শক্ত) করতে পারে। ফলে অল্প সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে ঘুমাতে সক্ষম। তবে কয়েক ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হলে এরা মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং সামনে পা দুটো ভাঁজ করে ঘুমিয়ে নেয়। তবে বন্য ঘোড়াদের ক্ষেত্রে এভাবে ঘুমানোর দৃশ্য অতি বিরল। কারণ এতে তারা শিকারিদের কাছে অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
গৃহপালিত ঘোড়ারাও দাঁড়িয়ে ঘুমায়। তবে তারা বন্য ঘোড়ার চেয়ে নিরাপদ বোধ করে। ফলে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে রৌদ্রোজ্জ্বল মাঠে শুয়ে আরামে বেঘোরে ঘুমাতেও দেখা যায়।
প্যারটফিশ
এই রঙিন মাছটি সারা বিশ্বে প্রবাল প্রাচীরের খাঁজে বাস করে। এ মাছের প্রধান শিকারির মধ্যে রয়েছে হাঙর এবং ভয়ংকর মোরে ইল। ঘুমের মধ্যে শিকারির কবলে পড়া থেকে বাঁচতে এরা বিশেষ কায়দা করে।
প্যারটফিশের যখন ঘুম পায় তখন শরীরের চারপাশে শ্লেষ্মার একটি স্বচ্ছ কোকুন তৈরি করে। কোকুনের ভেতরে অনায়াসেই শ্বাস নিতে পারে এরা। কোনো শিকারি যদি কোকুনে কামড় দেয় তাহলে ঘুম ভেঙে কোকুন ছেড়ে পালিয়ে যায় এরা। এমনকি এই কোকুন প্যারটফিশের গায়ের ঘ্রাণও গোপন করতে পারে।
হাঙর
হাঙর সাগরের সবচেয়ে ক্ষিপ্র ও হিংস্র শিকারি। এদের ঘুম পেলে চলাফেরার গতি কমে যায়। স্রোতের বিপরীতে থেমে যায়। এই উল্টো স্রোত যখন এদের ফুলকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত হয়। তবে হাঙরেরা কখনো গভীর ঘুমে যায় না। মূলত এরা শরীরকে বিশ্রাম দেয়।
প্যারটফিশ, ডলফিন এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর তুলনায় হাঙরদের বিশ্রাম নেওয়ার সময়টা নিরাপদ। কারণ সাগরে হাঙর শিকার করার মতো প্রাণী খুব কমই আছে!
কোয়ালা বিয়ারস
কোয়ালারা অবশ্য গড় মানুষের মতো ঘুমায় না। কোয়ালা ভাল্লুক প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘণ্টা ঘুমায়! সুতরাং ঘুমানোর জন্য তাদের একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য স্থান ও পদ্ধতি প্রয়োজন। তারা গাছে থাকলে ডিঙ্গোদের (শিয়াল জাতীয় প্রাণী) মতো শিকারিদের থেকে নিরাপদ থাকে। কোয়ালা ভাল্লুক সাধারণ একা থাকে। এরা স্তন্যপায়ী প্রাণী। ফলে বিপদ সংকেত দেওয়ার মতো কাছাকাছি অন্য কোয়ালা থাকে না।
এ কারণে এরা উঁচু গাছে বা দুই শাখার ফাঁকে বসে ঘুমায়। দীর্ঘ নখরগুলো এতে সাহায্যে করে। গভীর ঘুমে গেলেও পড়ে যায় না।
কোয়ালারা শুধু ঘুমকাতুরে নয়, এরা খুব দ্রুত খায়, শরীর থেকে ইউক্যালিপটাসের মতো গন্ধ বের হয়। এরা অদ্ভুত শব্দ করে। বাচ্চারা হয় লোমহীন, অন্ধ এবং কোনো কান থাকে না। কোয়ালার সংখ্যা নিরূপণের জন্য ব্যবহার করা হয় ইনফ্রারেড ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন।
ঘুম হলো প্রাণীদের চেতনার পরিবর্তন। প্রাণীদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই সময়টাতে দেহের সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্থগিত থাকে।
অনেক প্রাণী আত্মরক্ষার জন্য অল্প সময়ের জন্য ঘুমায়। সাধারণত প্রাণীরা ঘুমন্ত এবং জাগ্রত অবস্থায় বাইরের উদ্দীপনা প্রয়োগ করলে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু বুলফ্রগের মতো কিছু প্রাণী উভয় পরিস্থিতিতে একই প্রতিক্রিয়া দেখায়। এ কারণে বিজ্ঞানীরা বলেন, বুলফ্রগ ঘুমায় না।
তবে প্রাণী জগতে যেমন বিচিত্র আকার, আকৃতি, রং, আচরণ, ডাক, খাদ্যাভ্যাস রয়েছে, তেমনি রয়েছে ঘুমের বৈচিত্র্য। কিছু প্রাণী দাঁড়িয়ে, বসে, গাছে ঝুলে, একে অপরের গায়ে পড়ে, শব্দ করে—কত বিচিত্রভাবে যে ঘুমায় তার ইয়ত্তা নেই! এমন কয়েকটি প্রাণীর ঘুমের ঢং নিয়ে এই আয়োজন—
মিরকাট
মিরকাট আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুভূমিতে বাস করে। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটির দেহের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চিরও কম এবং ওজন প্রায় এক পাউন্ড। শিকারিদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এরা একেকটা গ্যাং তৈরি করে। এরা শুধু দলবদ্ধ ভাবেই থাকে না, ঘুমালে দূর থেকে মনে হয় একটা স্তূপ।
এই ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে একে অপরের ওপরে চড়ে। এতে বড় স্তূপের আকার পায়। কোনো শিকারি যেমন—সাপ বা ঈগল আক্রমণ করতে এলে একটি মিরকাটই দ্রুত বাকিদের জাগিয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া মরুভূমিতে রাতে তাপমাত্রা অনেক নেমে যায়। রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে উষ্ণতা পেতেও মিরকাটেরা স্তূপাকারে ঘুমায়।
ডলফিন
ডলফিনদের ঘুমানোর পদ্ধতিটি চমৎকার। পানিতে শরীর এলিয়ে দিয়ে এরা আরামে ঘুমায়। এদের ঘুমানোর দুটি পদ্ধতি আছে। ডলফিনের এই ঘুমানোর একটি পদ্ধতিকে বলে লগিং। মানে পানিতে গাছের গুঁড়ি যেভাবে ভেসে থাকে এরাও ঠিক সেভাবে ঘুমায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীটি পানিতে অনুভূমিকভাবে ভেসে থাকে। মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি এরা ঘুমায়। ঘুমন্ত ডলফিনকে দেখলে একেবারে গাছের গুঁড়ির মতো মনে হয়।
কিছু ডলফিন উল্লম্বভাবে (খাড়া) ঘুমায়। সমুদ্রপৃষ্ঠে ভেসে উঠে নাক বাতাসে বের করে রাখে, আর লেজের দিকটি নিচের দিকে ঝুলে রাখে।
ডলফিন সামাজিক প্রাণী। এরা দল বেঁধে ঘুমায়। একসঙ্গে থাকার উদ্দেশ্য সুরক্ষা। শিকারি যেন চোখ না এড়ায় এবং দেখলেই একে অপরকে সতর্ক করতে পারে এই জন্য এ দলবদ্ধ ঘুম।
একটি ডলফিন জোড়া জোড়ায় সাঁতার কাটে। এই সময় ঘুমানোর জন্য তারা সাঁতারের গতি কমিয়ে দেয়। এই পদ্ধতিটি অবশ্য দীর্ঘ ও গভীর ঘুমের জন্য তারা ব্যবহার করে না, বরং এভাবে এরা ঝিমায়। কৌশলটি হলো—ডলফিনের মস্তিষ্কের একটি অংশ এ সময় নিষ্ক্রিয় থাকে, অন্য অংশ সজাগ থাকে।
ডলফিন অবশ্য সব সময়ই কিছু মাত্রায় সতর্ক থাকে। শরীর বিশ্রাম নেয়।
হাঁস
হাঁসেরা পুকুর, হ্রদ বা অন্য জলাধারের তীরে এক সারিতে ঘুমায়। নিরাপত্তার জন্যই তারা কাছাকাছি থাকে। প্রতিটি হাঁস মাথা ঘুরিয়ে পিঠের পালকের মধ্যে ঠোঁট গুঁজে দেয়। একটু নিবিড়ভাবে দেখলে ঘুমন্ত হাঁসের এই সারিতে মজার কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যায়।
সারির শেষ প্রান্তের হাঁসগুলো এক চোখ চোখ খোলা রেখে ঝিমায়। বিড়াল বা শেয়ালের মতো শিকারিদের পর্যবেক্ষণ করার জন্যই এটি করে তারা। ফলে ঘুম হয় খুব হালকা। সারির মাঝখানে হাঁসগুলো দুটি চোখ বন্ধ করে গভীর ঘুমে যায়। কিছুক্ষণ পর তারা জায়গা বদল করে। মাঝের হাঁসগুলো প্রান্তে চলে যায়, আর প্রান্তেরগুলো মাঝে চলে এসে গভীর ঘুম দেয়। এভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ঘুমায় হাঁসেরা।
ফ্ল্যামিঙ্গো
উজ্জ্বল রঙের পালকের এই পাখিটি জেগে থাকা অবস্থায় এক পায়ে দাঁড়াতে পারে। ফ্ল্যামিঙ্গো কিন্তু ঘুমায়ও এক পায়ে দাঁড়িয়ে! এই পাখিগুলো তাদের লম্বা ঘাড় বাঁকিয়ে পিঠের পালকের মধ্যে ঠোঁট গুঁজিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দেখলে মনে হবে, গভীর ঘুমে। কিন্তু আসলে তা নয়। এই পাখির মস্তিষ্কের অর্ধেক সব সময় জাগ্রত থাকে। অজগর বা শকুনের মতো শিকারি প্রাণী থেকে নিজেদের রক্ষা করতেই এই কৌশল।
তবে কেন পাখিরা এক পায়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়—এর সর্বসম্মত ব্যাখ্যা এখনো বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি।
স্লথ
অলস মানুষের ঘুমাতে পছন্দ করে—এটা সবারই জানা। স্লথ এই প্রাণীরা দিনে কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা ঘুমায়! এই প্রাণীদের ঘুমানোর কয়েকটি উপায় রয়েছে—
ঘুমানোর জন্য স্লথেরা একটি গাছের ওপরে শাখাযুক্ত ডাল খুঁজে নেয়। দুটি ছোট শাখায় বিভক্ত এমন ডাল তাদের পছন্দ। দুই শাখার মাঝখানে স্লথেরা পেছনের দিকটা ঠেস দিয়ে ঘুমায়। স্লথ যখন ঘুমায় তখন মনে হয় যেন এরা দোলনায় দুলছে।
কিছু স্লথ আবার গাছের ডাল থেকে উল্টো ঝুলে ঘুমায়। তাদের দীর্ঘ নখর গাছের শাখায় আটকে থাকে, ফলে ঘুমালেও পড়ে যায় না।
বাদুড়
বাদুড় ঘুমায় উল্টো ঝুলে। তারা গাছের ডাল, গুহার ওপরের দেয়াল বা বাড়ির ছাদের নিচে ঝুলে ঘুমাতে পারে। কিন্তু এরা ঘুমিয়ে পড়লেও কেন মাটিতে পড়ে যায় না?
এর উত্তর হলো—পায়ের বিশেষ টেন্ডন (শক্ত পেশি) বাদুড়কে ঘুমন্ত অবস্থায় পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। বাদুড় যখন একটি শাখায় ঝুলে থাকে, তখন এর পায়ের টেন্ডনগুলো শক্ত হয়ে এক স্থানে আটকে থাকে। ফলে এরা শরীর শিথিল করে আরামে ঘুমাতে পারে। অনেকটা বাতাসে শরীর ভাসিয়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি হয় এদের। আবার ঘুম থেকে জেগে টেন্ডনগুলো ছেড়ে দিয়ে বা শিথিল করে উড়ে যায়।
শিকারিদের হাত থেকে বাঁচতে বাদুড়েরা দল বা কলোনিতে বাস করে এবং ঘুমায়। বাসস্থানে কখনো একা থাকে না তারা। আবার উষ্ণতা ধরে রাখতে এরা বড় কলোনিতে ঘুমায়।
ঘোড়া
ঘোড়া সাধারণত শুয়ে ঘুমায় না। এরা পা লক (সোজা ও শক্ত) করতে পারে। ফলে অল্প সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে ঘুমাতে সক্ষম। তবে কয়েক ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হলে এরা মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং সামনে পা দুটো ভাঁজ করে ঘুমিয়ে নেয়। তবে বন্য ঘোড়াদের ক্ষেত্রে এভাবে ঘুমানোর দৃশ্য অতি বিরল। কারণ এতে তারা শিকারিদের কাছে অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
গৃহপালিত ঘোড়ারাও দাঁড়িয়ে ঘুমায়। তবে তারা বন্য ঘোড়ার চেয়ে নিরাপদ বোধ করে। ফলে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে রৌদ্রোজ্জ্বল মাঠে শুয়ে আরামে বেঘোরে ঘুমাতেও দেখা যায়।
প্যারটফিশ
এই রঙিন মাছটি সারা বিশ্বে প্রবাল প্রাচীরের খাঁজে বাস করে। এ মাছের প্রধান শিকারির মধ্যে রয়েছে হাঙর এবং ভয়ংকর মোরে ইল। ঘুমের মধ্যে শিকারির কবলে পড়া থেকে বাঁচতে এরা বিশেষ কায়দা করে।
প্যারটফিশের যখন ঘুম পায় তখন শরীরের চারপাশে শ্লেষ্মার একটি স্বচ্ছ কোকুন তৈরি করে। কোকুনের ভেতরে অনায়াসেই শ্বাস নিতে পারে এরা। কোনো শিকারি যদি কোকুনে কামড় দেয় তাহলে ঘুম ভেঙে কোকুন ছেড়ে পালিয়ে যায় এরা। এমনকি এই কোকুন প্যারটফিশের গায়ের ঘ্রাণও গোপন করতে পারে।
হাঙর
হাঙর সাগরের সবচেয়ে ক্ষিপ্র ও হিংস্র শিকারি। এদের ঘুম পেলে চলাফেরার গতি কমে যায়। স্রোতের বিপরীতে থেমে যায়। এই উল্টো স্রোত যখন এদের ফুলকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত হয়। তবে হাঙরেরা কখনো গভীর ঘুমে যায় না। মূলত এরা শরীরকে বিশ্রাম দেয়।
প্যারটফিশ, ডলফিন এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর তুলনায় হাঙরদের বিশ্রাম নেওয়ার সময়টা নিরাপদ। কারণ সাগরে হাঙর শিকার করার মতো প্রাণী খুব কমই আছে!
কোয়ালা বিয়ারস
কোয়ালারা অবশ্য গড় মানুষের মতো ঘুমায় না। কোয়ালা ভাল্লুক প্রতিদিন প্রায় ২০ ঘণ্টা ঘুমায়! সুতরাং ঘুমানোর জন্য তাদের একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য স্থান ও পদ্ধতি প্রয়োজন। তারা গাছে থাকলে ডিঙ্গোদের (শিয়াল জাতীয় প্রাণী) মতো শিকারিদের থেকে নিরাপদ থাকে। কোয়ালা ভাল্লুক সাধারণ একা থাকে। এরা স্তন্যপায়ী প্রাণী। ফলে বিপদ সংকেত দেওয়ার মতো কাছাকাছি অন্য কোয়ালা থাকে না।
এ কারণে এরা উঁচু গাছে বা দুই শাখার ফাঁকে বসে ঘুমায়। দীর্ঘ নখরগুলো এতে সাহায্যে করে। গভীর ঘুমে গেলেও পড়ে যায় না।
কোয়ালারা শুধু ঘুমকাতুরে নয়, এরা খুব দ্রুত খায়, শরীর থেকে ইউক্যালিপটাসের মতো গন্ধ বের হয়। এরা অদ্ভুত শব্দ করে। বাচ্চারা হয় লোমহীন, অন্ধ এবং কোনো কান থাকে না। কোয়ালার সংখ্যা নিরূপণের জন্য ব্যবহার করা হয় ইনফ্রারেড ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন।
বিষধর মাকড়সা হিসেবে আলাদা পরিচিতি আছে ট্যারানটুলার। কাজেই একে এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। ট্যারানটুলা একই সঙ্গে বেশ দুষ্প্রাপ্য এক প্রাণীও। তবে সম্প্রতি পেরুতে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে ৩২০টি ট্যারানটুলা মাকড়সাসহ আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য প্রাণী শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা...
২ দিন আগেপাঠকেরা পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইব্রেরিতে বই ফেরত দিয়ে দেবেন এটাই নিয়ম। কারও কারও সময়মতো বই ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসও আছে। তবে তাই বলে আপনি নিশ্চয় আশা করবেন না অর্ধ শতাব্দী পর কেউ বই ফেরত দেবেন। কিন্তু সত্যি মার্কিন মুলুকে এমন একটি কাণ্ড হয়েছে।
২ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বজুড়েই আলোচনায় এখন ট্রাম্প। তবে তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইতালির সার্দানিয়া দ্বীপের একটি গ্রামে একেবারেই ভিন্ন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হিসেবে।
৩ দিন আগেটাইটানিকের ৭০০-র বেশি যাত্রী এবং ক্রুকে উদ্ধার করেছিল একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপহার দেওয়া একটি সোনার ঘড়ি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
৪ দিন আগে