রজত কান্তি রায়
‘হেই ডুড…’
শুনেই আমি চমকে উঠি। আমাকে ডুড ডাকার মানুষ আছে বলে মনে হয় না। এক সময় আমার তিন বছরের কন্যা আমাকে ‘ব্রো’ ডাকত বটে। কলিং বেলের শব্দ শুনেই সে দরজা খুলে দিয়ে বলত, ‘ব্রো, খবর কী?’ একদম স্পষ্ট। প্রথম দিন শুনে কিছুটা শক খেয়েছিলাম। পরে অভ্যস্ত হয়ে যাই। কিন্তু আমি নিশ্চিত, সে আমাকে ‘ডুড’ ডাকেনি কখনো। আমি চিন্তিত হলাম।
ঠিক মধ্যরাতে মোহাম্মদপুরের রাস্তায় যখন নিয়ন আলোর বাতিগুলোই শুধু জেগে থাকে, আর কোনো কোনো উঁচু দালান থেকে ভেসে আসে ‘জীবন যদি বদল করা যেত’, তখন কোথা থেকে যেন নস্টালজিয়া চেপে ধরে। ক্লান্ত করে ফেলে। পায়ের নিচে মরা নদীর সোঁতা খলবলিয়ে কথা বলে ওঠে। আমাদের এলাকার এই যে উত্তর দক্ষিণ বরাবর পড়ে থাকা রাস্তা, এটা একসময় নদী ছিল। এখন কংক্রিটের আবরণে মসৃণ রাজপথ। এই রাস্তাটাও কি ‘জীবন যদি বদল করা যেত’ শুনে জেগে ওঠে? মনে হয়। রাস্তার নিয়ন বাতিগুলো এখন বৃষ্টিতে ভিজছে। এমন ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিময় নির্জন রাতে বাসার মোড়ে কেউ অচেনা কণ্ঠে ‘ডুড’ ডাকলে চিন্তিত না হয়ে পারা যায় না। আমি ফিরে তাকালাম।
কেউ নেই। বাসার মোড়ের ঠিক উল্টো দিকে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের একটি অফিস আছে। সেখানে সন্ধ্যাটা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। আমার অনেক ইচ্ছে ছিল একদিন সেখানে গিয়ে চা খাওয়ার। কেউ ডাকেনি বলে আর যাওয়া হয়নি। সে চত্বরটা এখন ফাঁকা। বাইরের লাইটটা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে বলে বেশ খানিক অন্ধকার সে জায়গাটা। একবার মনে হলো, সেই অন্ধকারে বসেই কেউ আমাকে ‘ডুড’ বলে ডেকেছে। আমি মোড়ের ওপর দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকাই। একজনকে বসে থাকতে দেখি। লোকটি হাতের ইশারায় আবার ডাকে। আমি দ্বিধায় পড়ি। যাব! নাকি উল্টো দিকে ঘুরে দৌড় লাগাব ভাবতে ভাবতে লোকটি উঠে আসতে থাকে আমার দিকে। আমি সত্যিই দ্বিধায় পড়ে যাই। কী করব?
গলিটা আমার দশ বছরের চেনা। প্রতিটি বাসার দারোয়ান আমাকে চেনে। ডাক দিলে সবাই উঠে আসবে। কিন্তু এই মধ্যরাতে কেউ জেগে আছে তো? লোকটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। এখানে আলো কিছুটা উজ্জ্বল। ‘ডুড, আমি সোহান হাফিজ।’
‘সোহান হাফিজ…!’
‘সিরাজুল হুদা প্রাইমারি স্কুল… মনে আছে? তোরা আমাকে হাপিয়াজু বলে ডাকতি।’
‘সিরাজুল হুদা প্রাইমারি স্কুল! সে তো অনেক আগের কথা। হাপিয়াজু!’
নাহ। মস্তিষ্কের ধূসর অংশে কোথাও কোনো সাড়া পেলাম না হাপিয়াজু নামের। তবে নিউরনে ঝংকার দিয়ে উঠল সিরাজুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সামনে একটা বাগান। পাশে কিছুটা লাল মাটির রাস্তা, কাঁঠাল গাছ। লাইন ধরে জমির আল দিয়ে আমরা যখন হেঁটে আসতাম, আমাদের মূল আনন্দ ছিল ধানের শিষে লেগে থাকা শিশির ঝরিয়ে দেওয়া। একটু বড় ক্লাসে যখন উঠি, দূর থেকে শুনতাম স্কুলের মাঠে নামতা পড়া হচ্ছে, এক এক্কে এক, দুই এক্কে দুই…।
সেই সিরাজুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে আমি প্রথম বাগান করতে শিখি। প্রথম প্রেম! না হলেও প্রথম ভালো লাগা এক অসম বয়সীর সঙ্গে। প্রথম ব্ল্যাক ম্যাজিক। সাধারণ জ্ঞানে প্রথম ‘টেন অন টেন’ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়াও সেখানে। ভালোবাসার পাত্র ছিলাম শিক্ষকদের। আমার ভালোবাসার সিরাজুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এত কিছুর পরও সেখানে হাপিয়াজুর দেখা তো পেলাম না!
একটা তীব্র হর্নে সংবিৎ ফিরল। চকিতে চারদিকে চোখ বোলালাম। নেই। হাপিয়াজু নেই। এবার কিছুটা ভয় পেলাম নিজের ভেতরে। মোবাইলটা বেজেই চলেছে, খেয়াল করলাম। পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে রিসিভ করলাম। হ্যালো…
‘আমি মানিক।’
‘বল।’
‘কেমন আছিস?’
‘খারাপ থেকে লাভ কী? তোর খবর বল।’
‘চলছে আরকি। হাফিজুরের খবর জানিস? ফারুক? সুমন। আলমগীর… আবিজউদ্দিন?’
সন্দেহ দানা বাঁধে মনে। কোন মানিক? মানিক বহুদিন আগে আত্মহত্যা করেছে। সে কোথা থেকে ফোন দেবে! মানিক!
নাহ, কোথাও একটা ঝামেলা হচ্ছে। বৃষ্টিটা বেড়েছে। আমি ভিজছি মোহাম্মদপুরের এক কানাগলিতে। এই গলির শ খানিক গজ দূরেই আমার বাসা। এখন মধ্যরাত। হলুদ আলো আর বৃষ্টিতে ভেজা গাছগুলো আমাকে টানছে এক অদ্ভুত আকর্ষণে। টুং করে উঠল ফোনটা।
‘বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।’
আরও পড়ুন
‘হেই ডুড…’
শুনেই আমি চমকে উঠি। আমাকে ডুড ডাকার মানুষ আছে বলে মনে হয় না। এক সময় আমার তিন বছরের কন্যা আমাকে ‘ব্রো’ ডাকত বটে। কলিং বেলের শব্দ শুনেই সে দরজা খুলে দিয়ে বলত, ‘ব্রো, খবর কী?’ একদম স্পষ্ট। প্রথম দিন শুনে কিছুটা শক খেয়েছিলাম। পরে অভ্যস্ত হয়ে যাই। কিন্তু আমি নিশ্চিত, সে আমাকে ‘ডুড’ ডাকেনি কখনো। আমি চিন্তিত হলাম।
ঠিক মধ্যরাতে মোহাম্মদপুরের রাস্তায় যখন নিয়ন আলোর বাতিগুলোই শুধু জেগে থাকে, আর কোনো কোনো উঁচু দালান থেকে ভেসে আসে ‘জীবন যদি বদল করা যেত’, তখন কোথা থেকে যেন নস্টালজিয়া চেপে ধরে। ক্লান্ত করে ফেলে। পায়ের নিচে মরা নদীর সোঁতা খলবলিয়ে কথা বলে ওঠে। আমাদের এলাকার এই যে উত্তর দক্ষিণ বরাবর পড়ে থাকা রাস্তা, এটা একসময় নদী ছিল। এখন কংক্রিটের আবরণে মসৃণ রাজপথ। এই রাস্তাটাও কি ‘জীবন যদি বদল করা যেত’ শুনে জেগে ওঠে? মনে হয়। রাস্তার নিয়ন বাতিগুলো এখন বৃষ্টিতে ভিজছে। এমন ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিময় নির্জন রাতে বাসার মোড়ে কেউ অচেনা কণ্ঠে ‘ডুড’ ডাকলে চিন্তিত না হয়ে পারা যায় না। আমি ফিরে তাকালাম।
কেউ নেই। বাসার মোড়ের ঠিক উল্টো দিকে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের একটি অফিস আছে। সেখানে সন্ধ্যাটা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। আমার অনেক ইচ্ছে ছিল একদিন সেখানে গিয়ে চা খাওয়ার। কেউ ডাকেনি বলে আর যাওয়া হয়নি। সে চত্বরটা এখন ফাঁকা। বাইরের লাইটটা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে বলে বেশ খানিক অন্ধকার সে জায়গাটা। একবার মনে হলো, সেই অন্ধকারে বসেই কেউ আমাকে ‘ডুড’ বলে ডেকেছে। আমি মোড়ের ওপর দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকাই। একজনকে বসে থাকতে দেখি। লোকটি হাতের ইশারায় আবার ডাকে। আমি দ্বিধায় পড়ি। যাব! নাকি উল্টো দিকে ঘুরে দৌড় লাগাব ভাবতে ভাবতে লোকটি উঠে আসতে থাকে আমার দিকে। আমি সত্যিই দ্বিধায় পড়ে যাই। কী করব?
গলিটা আমার দশ বছরের চেনা। প্রতিটি বাসার দারোয়ান আমাকে চেনে। ডাক দিলে সবাই উঠে আসবে। কিন্তু এই মধ্যরাতে কেউ জেগে আছে তো? লোকটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। এখানে আলো কিছুটা উজ্জ্বল। ‘ডুড, আমি সোহান হাফিজ।’
‘সোহান হাফিজ…!’
‘সিরাজুল হুদা প্রাইমারি স্কুল… মনে আছে? তোরা আমাকে হাপিয়াজু বলে ডাকতি।’
‘সিরাজুল হুদা প্রাইমারি স্কুল! সে তো অনেক আগের কথা। হাপিয়াজু!’
নাহ। মস্তিষ্কের ধূসর অংশে কোথাও কোনো সাড়া পেলাম না হাপিয়াজু নামের। তবে নিউরনে ঝংকার দিয়ে উঠল সিরাজুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সামনে একটা বাগান। পাশে কিছুটা লাল মাটির রাস্তা, কাঁঠাল গাছ। লাইন ধরে জমির আল দিয়ে আমরা যখন হেঁটে আসতাম, আমাদের মূল আনন্দ ছিল ধানের শিষে লেগে থাকা শিশির ঝরিয়ে দেওয়া। একটু বড় ক্লাসে যখন উঠি, দূর থেকে শুনতাম স্কুলের মাঠে নামতা পড়া হচ্ছে, এক এক্কে এক, দুই এক্কে দুই…।
সেই সিরাজুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে আমি প্রথম বাগান করতে শিখি। প্রথম প্রেম! না হলেও প্রথম ভালো লাগা এক অসম বয়সীর সঙ্গে। প্রথম ব্ল্যাক ম্যাজিক। সাধারণ জ্ঞানে প্রথম ‘টেন অন টেন’ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়াও সেখানে। ভালোবাসার পাত্র ছিলাম শিক্ষকদের। আমার ভালোবাসার সিরাজুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এত কিছুর পরও সেখানে হাপিয়াজুর দেখা তো পেলাম না!
একটা তীব্র হর্নে সংবিৎ ফিরল। চকিতে চারদিকে চোখ বোলালাম। নেই। হাপিয়াজু নেই। এবার কিছুটা ভয় পেলাম নিজের ভেতরে। মোবাইলটা বেজেই চলেছে, খেয়াল করলাম। পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে রিসিভ করলাম। হ্যালো…
‘আমি মানিক।’
‘বল।’
‘কেমন আছিস?’
‘খারাপ থেকে লাভ কী? তোর খবর বল।’
‘চলছে আরকি। হাফিজুরের খবর জানিস? ফারুক? সুমন। আলমগীর… আবিজউদ্দিন?’
সন্দেহ দানা বাঁধে মনে। কোন মানিক? মানিক বহুদিন আগে আত্মহত্যা করেছে। সে কোথা থেকে ফোন দেবে! মানিক!
নাহ, কোথাও একটা ঝামেলা হচ্ছে। বৃষ্টিটা বেড়েছে। আমি ভিজছি মোহাম্মদপুরের এক কানাগলিতে। এই গলির শ খানিক গজ দূরেই আমার বাসা। এখন মধ্যরাত। হলুদ আলো আর বৃষ্টিতে ভেজা গাছগুলো আমাকে টানছে এক অদ্ভুত আকর্ষণে। টুং করে উঠল ফোনটা।
‘বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।’
আরও পড়ুন
জার্মানির একজন অ্যারোস্পেস প্রকৌশলী টানা ১২০ দিন পানির নিচে কাটিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। পানামার উপকূলে একটি ডুবো ক্যাপসুলের ভেতরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ মিটার নিচে ছিলেন তিনি। এই সময় কৃত্রিমভাবে চাপ কমানোর কোনো কৌশলও ব্যবহার করেননি তিনি।
৬ দিন আগেঅস্ট্রেলিয়ার সিডনির একটি গ্রিনহাউস। বাইরে দাঁড়িয়ে শতাধিক মানুষ। এই মানুষগুলো দাঁড়িয়ে আছেন মূলত এমন একটি বিরল ও বিপন্ন উদ্ভিদের ফুলের ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য। এই গন্ধ অনেকটাই পচা মাংসের মতো বা ঘামে স্যাঁতসেঁতে মোজা কিংবা পচা আবর্জনার মতোও মনে হয়...
৬ দিন আগেওনলিফ্যানস মডেল বনি ব্লু’র চাঞ্চল্যকর দাবি ইন্টারনেটে আলোচনার ঝড় তুলেছে। ২৫ বছর বয়সী এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর জানিয়েছেন, তিনি ১২ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৭ জন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।
১৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাসকারী এক নারী সম্প্রতি ৫০ হাজার ডলারের একটি লটারি জিতেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থ ৬০ লাখ টাকার বেশি। মজার বিষয় হলো, যে সংখ্যা ব্যবহার করে এই লটারি বিজয়, সেই সংখ্যা স্বপ্নে পেয়েছিলেন ওই নারী!
২১ দিন আগে