Ajker Patrika

ইলন মাস্কের বিভীষিকাময় শৈশব

আব্দুর রহমান
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২২, ১৭: ৩৩
ইলন মাস্কের বিভীষিকাময় শৈশব

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্ক। সম্প্রতি জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটার কিনে হইচই ফেলে দিয়েছেন। ৪৪ বিলিয়ন ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা প্রায়) তিনি টুইটার কিনেছেন। যা বাংলাদেশের সর্বশেষ বাজেটের প্রায় ৭ গুণ। তবে ২২১ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক ইলন মাস্কের শৈশব মোটেও সুখের ছিল না। এমন সময় ছিল যখন মাত্র ১ ডলার দিয়ে তাঁকে দিনাতিপাত করতে হয়েছে।

ইলন মাস্ক শৈশবে অ্যাসপারগার সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় জন্ম নেওয়া মাস্ক খুব সহজে কারও সঙ্গে মিশতে পারতেন না। সমবয়সী অনেকেই খেলতে নিত না।

বিষয়টি কেবল খেলতে না নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। স্কুলজীবনে একাধিকবার বিদ্রূপ, অপমান ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস্ক তাঁর সহপাঠীদের হাতে বেশ কয়েকবার মারধরের শিকার হয়েছেন। একবার তো তাঁকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

তাই মাস্ক সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজের জগৎ তৈরি করে নিয়েছিলেন। ছিলেন বইয়ের পোকা। এ ছাড়া শৈশব থেকেই তিনি সায়েন্স ফিকশন এবং কম্পিউটারের প্রতি ব্যাপক আগ্রহী ছিলেন। ইলন মাস্ক নিজেই বলেছেন, শৈশবে মোটেও সুখী ছিলেন না। নিউইয়র্কভিত্তিক বাণিজ্যিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রিটের প্রতিবেদন অনুসারে, ‘ইলন মাস্ক বলেন, সত্যি কথা বলতে—আমার শৈশব মোটেও সুখের ছিল না।’

পরিবারেও মাস্ককে বেশ তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা হতো। মাস্কের বাবা–মা মনে করেছিলেন, ছেলে কানে শুনতে পায় না। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে পরীক্ষা করে তারপরেই নিশ্চিন্ত হন তাঁরা।

 তরুণ মাস্কের কোনো এক জন্মদিনেইলন মাস্কের জীবনের আরেক ট্র্যাজেডি তাঁর বাবা এরল মাস্ক। তিনি ছিলেন খুব রূঢ় ও কঠোর স্বভাবের মানুষ। শিশু ইলন ও তাঁর ভাইদের বাধ্য করতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপ থেকে তাঁর বক্তব্য শুনতে। অন্যথা হলেই চলতো ধমক। এরল এখনো বদলাননি। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, পুত্র ইলন মাস্কের অর্জনে তিনি গর্বিত নন।

যাই হোক, মাস্ক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে নিতে থাকেন। অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে ডুবে থাকতেন বই আর কম্পিউটারে। ফলাফল— মাত্র ১২ বছর বয়সেই মাস্ক সায়েন্স ফিকশনভিত্তিক মহাকাশ গেম ‘ব্লাস্টারের’ কোডিং করেন! মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই গেম বিক্রি করে সেই সময়ে ৫০০ ডলার আয়ও করেছিলেন।

সেখানেই থেমে থাকেননি মাস্ক। উদ্যোক্তা হওয়ার প্রমাণ তিনি রেখেছেন ১৬ বছর বয়সেই। তাঁর মা মায়ে মাস্ক বলেন, ‘সে তাঁর কল্পনায়ই অনেক কিছু তৈরি করে ফেলতে পারত এবং পরে সে অনুসারে কিছু করার চেষ্টাও করত।’ মাস্কের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে আইডিয়া আসে একটি ‘ভিডিও আর্কেড’ তৈরি করার।

মাস্ককে নিয়ে লেখা একটি বইয়ে লেখক অ্যাশলি ভ্যান্স উল্লেখ করেছেন, ১৬ বছর বয়সেই মাস্ক তাঁর চাচাতো ভাইবোন এবং সহোদর ভাই কিমবালের সঙ্গে মিলে একটি ‘ভিডিও আর্কেড’ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা পরিকল্পনা নিয়ে বেশ অগ্রসরও হয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বয়স বিবেচনায় তাঁদের উদ্যোগে অর্থায়ন করতে চায়নি।

এ নিয়ে ইলন মাস্কের বাবা এবং চাচা তাঁদের বেশ তিরস্কার করেছিলেন। সেই ঘটনার বছরখানেকের মধ্যেই ইলন মাস্ক ১৭ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কানাডায় চলে আসেন। মাস্ক পরে স্টারটক রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কানাডায় চলে আসাই তাঁর জীবনকে বদলে দিয়েছিল। এই সময়টাতে তাঁকে সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়েছে। সেসময় সারা দিনে মাত্র ১ ডলার পেতেন। সেই ১ ডলারের বিনিময়ে ইলন মাস্ক কেবল খাবারই কিনতে পারতেন, আর কিছু নয়। সেটিও বিভিন্ন সুপার মার্কেটের প্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া খাবার—যেগুলো ফেলে দেওয়ার জন্য স্তূপ করে রাখা হতো।

 মাস্কের সঙ্গে তাঁর ভাই কিমবাল এবং বোন টোসকাএকপর্যায়ে ইলন মাস্ক বাধ্য হয়ে নিজের আয় বাড়াতে বড়লোকদের দুয়ারে হানা দিতে শুরু করেন নিজেদের তৈরি চকলেট ইস্টার এগস বিক্রির জন্য। সঙ্গে বিক্রি করতেন ক্যান্ডিও। ইস্টার এগগুলো ইলন মাস্ক ও তাঁর ভাই কিমবাল মিলে বানাতেন। তাঁরা যে দামে বানাতেন তার চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বিক্রি করতেন। এ বিষয়ে ২০১৭ সালে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিমবাল বলেন, ‘আমি সেগুলো মাত্র ৫০ সেন্টে তৈরি করতাম এবং একটি ইস্টার এগের জন্য ১০ ডলার করে দাম চাইতাম।’

এমন অনেক ঘটনা রয়েছে ইলন মাস্কের জীবনে। এসব ঘটনাই তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। যেমন, মাস্ক এবং তাঁর ভাইয়েরা যদি ভিডিও আর্কেডের অনুমতি পেয়ে যেতেন তবে কী বিশ্ব আজ টেসলা এবং স্পেসএক্স দেখতে পেত? হয়তো পেত কিংবা পেত না। তবে মাস্কের শৈশব যে এক বিভীষিকাময় কাল ছিল তা স্পষ্ট। বলা হয়, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই হেটারদের দেখিয়ে দেওয়ার জিদ চেপে বসেছিল তাঁর হৃদয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত