পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৮: ০০
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৯: ৪৮

২০০৯ সালে প্রথম পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষ হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠে তুরস্কের সুলতান কোসেনের। তাঁর এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ২০ বছরের বেশি সময় পরে আবার ৮ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের কাউকে দীর্ঘতম মানুষ হিসেবে পেল গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। 

প্রকৃতপক্ষে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ইতিহাসে ৮ ফুট কিংবা এর বেশি দৈর্ঘ্যের ১০ জন মানুষের তথ্য আছে। ২০০৯ সালে যখন দৈর্ঘ্য মাপা হয় তখন সুলতান কোসেনের দৈর্ঘ্য ছিল ৮ ফুট ১ ইঞ্চি। দুই বছর পর যখন মাপা হয়, তখন তাঁর উচ্চতা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ ফুট ২.৮ ইঞ্চিতে (২৫১ সেন্টিমিটার)। সুলতান কোসেনের বর্তমান দৈর্ঘ্য এটিই। 

বেড়ে ওঠা
১৯৮২ সালের ১০ ডিসেম্বর সুলতানের জন্ম। বয়স ১০ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর উচ্চতার এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শুরু হয়নি। পরিবারের বাকি সদস্যরা, অর্থাৎ মা-বাবা ও চার ভাইবোনের আকার কিন্তু স্বাভাবিক। 

সুলতানের এই অসাধারণ উচ্চতা ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা শরীরের বৃদ্ধির জন্য যে হরমোন দায়ী এর অতিরিক্ত উৎপাদন। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে এই হরমোন নিঃসৃত হয়। উদাহরণ হিসেবে কোনো টিউমারের কারণে যদি গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম হরমোন ছাড়বে। সুলতান কোসেনের ক্ষেত্রেও একটি টিউমারই এ ঘটনার জন্য দায়ী। 

পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষ সুলতান কোসেনঅস্বাভাবিক উচ্চতার কারণে স্কুলের পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি সুলতান। বরং কৃষিকাজ শুরু করেন পরিবারকে সহায়তা করতে। এ সময় তাঁর মাপের পোশাক ও জুতা খুঁজে পাওয়া ছিল মুশকিল। এমনকি সাধারণ আকারের গাড়িতেও শরীর ঢোকাতে কষ্ট হতো। কিশোর বয়সে গালাতসরাই বাস্কেটবল টিমে যোগ দেন। তবে অতিরিক্ত উচ্চতার কারণে এখানেও মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। এখনো খেলাটির ভক্ত তিনি। 

আরও রেকর্ড
জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হাতের রেকর্ডও সুলতানের। প্রতিটির দৈর্ঘ্য কবজি থেকে মধ্যমার ডগা পর্যন্ত ১১.২২ ইঞ্চি বা ২৮.৫ সেন্টিমিটার। জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে দীর্ঘতম পা-ও ছিল একসময় তাঁর। এখন অবশ্য ওই রেকর্ড ভেঙে গেছে। ২০০৯ সালে লন্ডনে প্রথম ভ্রমণের সময় সুলতান আশা করেন নতুন এ জনপ্রিয়তা তাঁর জীবন বদলে দেবে, আর একজন স্ত্রী খুঁজে পেতেও সাহায্য করবে। তিনি জানান, মেয়েরা তাঁকে দেখলে ভয় পান। আশা করা যায়, এবার অবস্থা বদলাবে।

অস্ত্রোপচার
পরের বছরগুলোতে তাঁর জীবনের অনেক কিছুই বদলায়। অতিরিক্ত বৃদ্ধি আটকাতে ও টিউমার অপসারণে অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর। এটি করাতে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া ২০১০ সালের আগস্টে তাঁর এই অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেয়। তেমনি বিশেষ ব্যবস্থায় দোকানগুলো তাঁর পোশাক তৈরি করে দিতে শুরু করে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ভ্রমণেরও সুযোগ মেলে। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের অক্টোবরে বিয়ে করার স্বপ্ন পূরণ হয় সুলতানের। 

স্ত্রীর সঙ্গে সুলতানসুলতান ও মার্ভে
সুলতানের স্ত্রীর নাম মার্ভে দিবো। সুলতানের থেকে ৯ বছরের ছোট দিবোর উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। দুজনেরই বন্ধু এমন একজনের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। সিরিয়ার হাসাকির বাড়ি থেকে তুরস্কের দেদে কয়ে সুলতানের বাড়িতে হাজির হন তিনি। দুই মাস পর বিয়ে হয় দুজনের। বিয়ের পর আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রতিনিধিসহ দেড় হাজার অতিথি। 

এখন কী করছেন
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমার অপসারণের পর হলিউডি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আমন্ত্রণ পান সুলতান কোসেন। ২০১৬ সালে প্রথম ‘অ্যাচিভিং দ্য ইম্পসিবল’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। বলা চলে ,২০০৯ সালে গিনেস রেকর্ডসে নাম ওঠার পর ধীরে ধীরে অনেক স্বপ্নই পূরণ হয়েছে তাঁর। এর মধ্যে আছে জীবন বাঁচানো সেই অস্ত্রোপচার, বিয়ে ইত্যাদি। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নিজের ৪০তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন তিনি। ইতিমধ্যে ১২৫টির বেশি দেশে ভ্রমণ করেছেন সুলতান কোসেন। বাকি দেশগুলোও ভ্রমণ করতে চান তিনি। তাঁর গল্প পৃথিবীর অনেক মানুষের কাছেই এখন অনুপ্রেরণার উৎস। 

সূত্র: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত