আসাদের যুগে নিভে যাওয়া কণ্ঠস্বরগুলো

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা 
Thumbnail image
মে স্কাফ, রাজান জেইতুনেহ, ফাদওয়া সুলাইমান ও লামা আলবাশা। ছবি: সংগৃহীত

গণ-অভ্যুত্থানের কাছে কোনো না কোনো দিন স্বৈরশাসককে মাথা নোয়াতে হয়। ৮ ডিসেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসে আরও এক স্বৈরশাসক পরাজিত হয় জনতার কাছে। এ জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে নাম না জানা হাজারো মানুষকে। আর নিখোঁজ মানুষেরা বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে, সে খবর জানে না কেউ। বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে যে-ই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল, তাকেই দিতে হয়েছে চরম মূল্য। কেউ বুলেটের সামনে নিজের শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছে, কেউ বন্দিশালায়, আবার কেউ সীমান্ত পেরিয়ে গেছে নীরবে চোখের জল ফেলে। কাউকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে রাতের অন্ধকারে, তাদের ঠিকানা আজও জানে না কেউ।

বাশারের নির্মমতার কাছে মাথানত করেনি সিরিয়ার জনগণ। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল দেশটির সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র, শ্রমিক, এমনকি গ্লামার জগতের মানুষও। তেমনই একজন ফাদওয়া সুলাইমান। যিনি একাধারে থিয়েটার, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন সিরিয়ালের একজন সফল অভিনেত্রী। ফাদওয়া বাশার আল-আসাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া লড়াইয়ের প্রথম দিকের অন্যতম মানুষ।

২০১১ সালে যখন হোমস শহরে প্রতিবাদ শুরু হয়, তখন আলেপ্পো শহরের অভিনেত্রী ফাদওয়া সুলেমান বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠেন। তিনি লৈঙ্গিক ও সাম্প্রদায়িক সীমাবদ্ধতা ভেঙে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ পুরো একটি প্রজন্মের সিরিয়ানদের মুগ্ধ করেছিল। তাঁর বজ্র গর্জনও তারা শুনেছিল হামাসের বিরুদ্ধে। ফাদওয়া ২০১২ সালে ফ্রান্সে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কারণ, বাশার তাঁকে জীবিত বা মৃত গ্রেপ্তার করার পরোয়ানা জারি করেছিলেন। তবে ২০১৭ সালে তাঁর প্রাণ নিয়েছিল মরণব্যাধি ক্যানসার।

মে স্কাফ নামের একজন অভিনেত্রীও হয়ে উঠেছিলেন বাশারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক। মে বলেছিলেন, ‘আমি আশা হারাব না, কখনো আশা হারাব না। এটি গ্রেট সিরিয়া, আসাদের সিরিয়া নয়।’

বাশার সিরিয়ার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন মে স্কাফ। ২০১৩ সালে তাঁকে নির্বাসিত হতে হয়। অবশ্য তার আগে বেশ কয়েকবার তাঁকে আটক করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই প্যারিসে হঠাৎ মারা যান স্কাফ।

রাজান জেইতুনেহ ছিলেন সিরিয়ান মানবাধিকার আইনজীবী। তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের পক্ষে আইনি লড়াই করেন। তাঁর হাতেই সিরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় মানবাধিকার অ্যাসোসিয়েশন। তাঁর কর্মকাণ্ড তাঁকে আসাদ সরকারের এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। ২০১৩ সালে নিখোঁজ হন রাজান। ধারণা করা হয়, ইসলামপন্থী সালাফি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জয়শ আল-ইসলাম এই অপহরণের জন্য দায়ী।

সবশেষে বলি ২৩ বছর বয়সী লামা আলবাশার কথা। আইনজীবী কিংবা অভিনেত্রীদের মতো জনপ্রিয় কেউ ছিলেন না তিনি। দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন লামা। নিজ শহরে ২০১১ সালে বিদ্রোহের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত একটি স্থানীয় পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন তিনি। এটিই ছিল তাঁর অপরাধ। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে একটি রহস্যজনক ফোনকলের ফাঁদে পড়েন তিনি। এর ফলে তাল শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় লামাকে। এরপরই তাঁকে সরকারের নিরাপত্তাসেবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তারপর থেকে কোনো খোঁজ নেই তাঁর।

বাশার আল-আসাদ নেই সিরিয়ার শাসনে। কিন্তু তাঁর শাসনকালের চিহ্ন রয়েছে। থেকে গেছে হারিয়ে যাওয়া হাজারো প্রতিবাদী মানুষের কিংবদন্তিসম গল্প।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত