সঙ্গীতা ইমাম
আজকের বাংলাদেশে অনেক নারী উদ্যোক্তাকে আমরা দেখি, যাঁরা দোর্দণ্ড প্রতাপে ব্যবসা করছেন। আবার ছোট ছোট, নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার জন্য বহু সংস্থাও পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। কিন্তু আমি যে সময়টার কথা বলছি, তখন নারী উদ্যোক্তা হবেন, সেভাবে তিনি নিজেও সম্ভবত খুব জোর দিয়ে ভাবতেন না। হাতে গোনা দুচারজনের কথা আলাদা। আমি সার্বিকভাবে সে সময়ের চিত্রটি তুলে ধরলাম। তখন নারী উদ্যোক্তা বলতে গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, রোকিয়া আফজাল রহমানের মতো দু-একটি নামই শোনা যেত, যাঁরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।
বলছি গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের কথা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতেও তখন নানা পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ব পটভূমিও বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। হঠাৎ এক ব্যবসায়ী বন্ধু আমাকে বললেন, মাইডাস কিছু মিনি মার্ট করবে এবং সেখানে শুধু নারী উদ্যোক্তারাই দোকান করতে পারবেন। তিনি জানতে চাইলেন, আমি উৎসাহী কি না।
স্কুলে তখন খণ্ডকালীন চাকরি করি। জীবন চালাতে, ছেলেদের লেখাপড়া চালাতে তখন কিছু একটা করা খুব দরকার আমার। তাই খুব বেশি চিন্তাভাবনা না করেই জানালাম, করব। কিন্তু ব্যবসার কিছুই আমি বুঝি না। পারিবারিকভাবেও ব্যবসার সঙ্গে তেমন কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ফলে কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেব, সে সুযোগও আমার নেই।
প্রথম দিন ধানমন্ডি মাইডাস অফিসে গেলাম। কাগজপত্র জমা নিলেন। বলা হলো, আমাদের সঙ্গে এই প্রজেক্টের স্বপ্নদ্রষ্টা কথা বলবেন। আমরা অপেক্ষা করছি। অপেক্ষার প্রহর খুব একটা দীর্ঘ না করে, হিলের শব্দ তুলে বয়কাট চুলের অসামান্য সুন্দরী একজন প্রবেশ করলেন। চোখমুখে হাসি ঝরছিল তাঁর। ঘরে ঢুকেই তাঁর হাসি আর সম্ভাষণে সবাইকে আপন করে নিলেন। নিজের নাম জানালেন–রোকিয়া আফজাল রহমান। তিনি মাইডাস ফিন্যান্সের চেয়ারপারসন। কেউ কেউ তাঁকে আগে থেকেই জানতেন। তাঁরা গিয়ে কথা বললেন। আমাকে দূরে বসে থাকতে দেখে নিজেই ডেকে জানতে চাইলেন, কী করি। তারপর সবার উদ্দেশে তিনি কথা বললেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার ভালো দিক, মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা করলেন। সফল হওয়ার মন্ত্রটিও বাতলে দিলেন সহাস্যে। আমাদের দেখে তিনি যে কতটা উৎসাহিত হয়েছিলেন, তা-ও জানালেন। তিন দিনের একটি প্রশিক্ষণ নিতে হবে, সেটাও জানিয়ে দিলেন।
প্রশিক্ষণের কথা শুনেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ, আমি তো স্কুলে চাকরি করি। স্কুল কামাই করে তো প্রশিক্ষণ নিতে পারব না। তখন রোকিয়া আপাই অভয় দিয়ে বললেন, শুক্রবারে হবে প্রশিক্ষণ। আশ্বস্ত হলাম। আমাদের সঙ্গে করে রোকিয়া আপা দোকানের স্থানটি দেখাতেও নিয়ে গেলেন। যাওয়ার পথে গাড়িতে গল্প হলো খুব। আমার পরিবারের কথা শুনে বললেন, এখন থেকে তাহলে আর ‘আপা’ ডাকা চলবে না, ‘আন্টি’ ডাকতে হবে। কিন্তু তাঁকে ‘আন্টি’ বলা হয়ে ওঠেনি কখনোই। সারা জীবন আপাই ডেকেছি। সে সময় তিনি কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের প্রধান।
রোকিয়া আফজাল রহমানের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬২ সালে ব্যাংকে চাকরির মাধ্যমে। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম নারী ব্যাংক ম্যানেজার হয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে ঋণ নিয়ে তিনি মুন্সিগঞ্জে একটি কোল্ডস্টোরেজ কেনেন। এই কোল্ডস্টোরেজের ফলে দেড় শতাধিক আলুচাষী উপকৃত হন। তিনি একজন সফল অ্যাগ্রো ব্যবসায়ীও ছিলেন।
আজ বহু নারী তাঁর দেখানো পথে হেঁটে, তাঁর দেওয়া নিঃশর্ত ঋণে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যে স্বপ্ন রোকিয়া আপা দেখেছিলেন। আজ উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নারীদের দেখলে মনে হয়, তাঁর সে স্বপ্ন যেন সফলতার পথে হাঁটছে। রোকিয়া আপার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
আজকের বাংলাদেশে অনেক নারী উদ্যোক্তাকে আমরা দেখি, যাঁরা দোর্দণ্ড প্রতাপে ব্যবসা করছেন। আবার ছোট ছোট, নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার জন্য বহু সংস্থাও পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। কিন্তু আমি যে সময়টার কথা বলছি, তখন নারী উদ্যোক্তা হবেন, সেভাবে তিনি নিজেও সম্ভবত খুব জোর দিয়ে ভাবতেন না। হাতে গোনা দুচারজনের কথা আলাদা। আমি সার্বিকভাবে সে সময়ের চিত্রটি তুলে ধরলাম। তখন নারী উদ্যোক্তা বলতে গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, রোকিয়া আফজাল রহমানের মতো দু-একটি নামই শোনা যেত, যাঁরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।
বলছি গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের কথা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতেও তখন নানা পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ব পটভূমিও বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। হঠাৎ এক ব্যবসায়ী বন্ধু আমাকে বললেন, মাইডাস কিছু মিনি মার্ট করবে এবং সেখানে শুধু নারী উদ্যোক্তারাই দোকান করতে পারবেন। তিনি জানতে চাইলেন, আমি উৎসাহী কি না।
স্কুলে তখন খণ্ডকালীন চাকরি করি। জীবন চালাতে, ছেলেদের লেখাপড়া চালাতে তখন কিছু একটা করা খুব দরকার আমার। তাই খুব বেশি চিন্তাভাবনা না করেই জানালাম, করব। কিন্তু ব্যবসার কিছুই আমি বুঝি না। পারিবারিকভাবেও ব্যবসার সঙ্গে তেমন কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ফলে কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেব, সে সুযোগও আমার নেই।
প্রথম দিন ধানমন্ডি মাইডাস অফিসে গেলাম। কাগজপত্র জমা নিলেন। বলা হলো, আমাদের সঙ্গে এই প্রজেক্টের স্বপ্নদ্রষ্টা কথা বলবেন। আমরা অপেক্ষা করছি। অপেক্ষার প্রহর খুব একটা দীর্ঘ না করে, হিলের শব্দ তুলে বয়কাট চুলের অসামান্য সুন্দরী একজন প্রবেশ করলেন। চোখমুখে হাসি ঝরছিল তাঁর। ঘরে ঢুকেই তাঁর হাসি আর সম্ভাষণে সবাইকে আপন করে নিলেন। নিজের নাম জানালেন–রোকিয়া আফজাল রহমান। তিনি মাইডাস ফিন্যান্সের চেয়ারপারসন। কেউ কেউ তাঁকে আগে থেকেই জানতেন। তাঁরা গিয়ে কথা বললেন। আমাকে দূরে বসে থাকতে দেখে নিজেই ডেকে জানতে চাইলেন, কী করি। তারপর সবার উদ্দেশে তিনি কথা বললেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার ভালো দিক, মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা করলেন। সফল হওয়ার মন্ত্রটিও বাতলে দিলেন সহাস্যে। আমাদের দেখে তিনি যে কতটা উৎসাহিত হয়েছিলেন, তা-ও জানালেন। তিন দিনের একটি প্রশিক্ষণ নিতে হবে, সেটাও জানিয়ে দিলেন।
প্রশিক্ষণের কথা শুনেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ, আমি তো স্কুলে চাকরি করি। স্কুল কামাই করে তো প্রশিক্ষণ নিতে পারব না। তখন রোকিয়া আপাই অভয় দিয়ে বললেন, শুক্রবারে হবে প্রশিক্ষণ। আশ্বস্ত হলাম। আমাদের সঙ্গে করে রোকিয়া আপা দোকানের স্থানটি দেখাতেও নিয়ে গেলেন। যাওয়ার পথে গাড়িতে গল্প হলো খুব। আমার পরিবারের কথা শুনে বললেন, এখন থেকে তাহলে আর ‘আপা’ ডাকা চলবে না, ‘আন্টি’ ডাকতে হবে। কিন্তু তাঁকে ‘আন্টি’ বলা হয়ে ওঠেনি কখনোই। সারা জীবন আপাই ডেকেছি। সে সময় তিনি কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের প্রধান।
রোকিয়া আফজাল রহমানের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬২ সালে ব্যাংকে চাকরির মাধ্যমে। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম নারী ব্যাংক ম্যানেজার হয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে ঋণ নিয়ে তিনি মুন্সিগঞ্জে একটি কোল্ডস্টোরেজ কেনেন। এই কোল্ডস্টোরেজের ফলে দেড় শতাধিক আলুচাষী উপকৃত হন। তিনি একজন সফল অ্যাগ্রো ব্যবসায়ীও ছিলেন।
আজ বহু নারী তাঁর দেখানো পথে হেঁটে, তাঁর দেওয়া নিঃশর্ত ঋণে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যে স্বপ্ন রোকিয়া আপা দেখেছিলেন। আজ উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নারীদের দেখলে মনে হয়, তাঁর সে স্বপ্ন যেন সফলতার পথে হাঁটছে। রোকিয়া আপার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
ডেস্কে বসে কপের খবর নেওয়া আর আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মধ্যে যেন তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল আনিকা তাবাসসুমের কথা। এই মুহূর্তে তিনি আছেন আজারবাইজানের বাকুতে। এত এত অ্যাপের দুনিয়ায় তাঁকে ধরা কি খুব কঠিন? চেষ্টা করতেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল উত্তর। আমরাও চটপট কথা বলে ফেললাম আনিকার সঙ্গে।
৪ দিন আগেবাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন এখন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের মধ্যে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন বা ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী...
৪ দিন আগেআরব অঞ্চলের দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী খেলা উটের দৌড়। একসময় আমাদের দেশে যেমন ঘোড়দৌড় হতো, বিষয়টি তেমনই। সেখানে শুধু ঘোড়ার বদলে থাকে উট। সে উট যাঁরা চালনা করেন, তাঁরা হলেন জকি। এত দিন জকি হিসেবে সৌদি আরবে ছিল পুরুষদের দাপট। দেশটিতে সেই প্রচলিত প্রথা অবশ্য ভেঙেছে ২০২২ সালে...
৪ দিন আগেঅ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিনের আবিষ্কার মানবজাতিকে স্বস্তি দিয়েছিল। তারপর আবিষ্কৃত হয় ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নাইস্ট্যাটিন। এটির সঙ্গে যুক্ত আছে রাচেল ফুলার ব্রাউন এবং তাঁর সহযোগী এলিজাবেথ হ্যাজেনের নাম। এই দুজনের আবিষ্কারটি ছিল ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর
৪ দিন আগে