Ajker Patrika

‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব বীরাঙ্গনাদের কাছে যাওয়া’

শাকেরা তাসনীম ইরা
‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব বীরাঙ্গনাদের কাছে যাওয়া’

মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইডবিষয়ক গবেষক হাসান মোরশেদ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নারীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিনি লিখেছেন ‘নারী সাক্ষ্যে জেনোসাইড’ নামে এক প্রামাণ্য বই। বীরাঙ্গনাদের সংখ্যা, তালিকাভুক্তি এবং এসব প্রশ্নে নারী অধিকারকর্মীদের করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে শাকেরা তাসনীম ইরা কথা বলেছেন তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন: ইতিহাস থেকে আমরা জানি, ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই হিসাবে বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৫৬। এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

উত্তর: আমাদের এই ধারণা ভুল। নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সঙ্গে তাঁর সম্ভ্রম বা ইজ্জত চলে যাওয়ার কোনোভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। যৌন সহিংসতা একটি অপরাধ। অপরাধকে অপরাধের মতো করেই দেখা উচিত।

তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের ভাষ্যমতে সংখ্যাটা কিন্তু প্রায় ৪ লাখ। ৪৫৬ জন বীরাঙ্গনাকে বাংলাদেশ সরকার গেজেটের অন্তর্ভুক্ত করেছে, এ বিষয়টা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ২ লাখ হোক বা ৪ লাখ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করে গেজেটভুক্ত ৪৫৬ জনের সংখ্যাটা আসলেই খুব কম। আমি বিষয়টাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুভাবেই দেখছি। ইতিবাচক জায়গাটা হলো, দেরিতে হলেও বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তালিকাভুক্তির সংখ্যাটা খুবই কম। তালিকাভুক্তির কাজ আরও ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন: তালিকা তৈরির ধীরগতির কারণ কী হতে পারে বা কী কী প্রতিবন্ধকতা বা সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন?

উত্তর: আমলাতান্ত্রিক জায়গা থেকে হয়তো এ কাজকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা বাস্তবিকভাবেও সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুরো প্রেক্ষাপটই বদলে গিয়েছিল। আমি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী যে দুঃসময় গিয়েছিল, সে সময়ে তাঁরা অনেকেই রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের পরিচয় গোপন করেছিলেন। একই ঘটনা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।

প্রশ্ন: এই সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে দূর করতে পারি?

উত্তর: সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকা তৈরির কাজটিকে গতানুগতিক কাজ হিসেবে না দেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে সরকারকে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে গিয়ে গবেষকসহ অন্য যাঁরা এ কাজে সাহায্য করতে পারবেন, তাঁদের নিয়ে এগোতে হবে।

হাসান মোরশেদ।প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সংবেদনশীলতা রক্ষার স্বার্থে বীরাঙ্গনাদের তালিকা রাষ্ট্র নিজ থেকে করছে না। এর পরিবর্তে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন বীরাঙ্গনারা নিজ থেকে এসে নাম তালিকাভুক্ত করেন। এই প্রক্রিয়া ঠিক কতটুকু ফলপ্রসূ বলে মনে করেন?

উত্তর: বাহাত্তরের সামাজিক বাস্তবতা আর বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা এক নয়। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, বীরাঙ্গনারা বিচারের দাবি থেকে সরে আসেননি। তাঁদের নির্যাতনের বর্ণনায় কিংবা নির্যাতকের নাম বলায় তাঁরা কখনোই পিছপা হননি। সেই জায়গা থেকে বীরাঙ্গনাদের তালিকাকরণে যে সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে, সেটাকে আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না। আমার মনে হয় বীরাঙ্গনারা এখন নিজেদের কথা বলতে আগ্রহী। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁদের কাছে যাওয়া, তাঁদের খুঁজে বের করা।

প্রশ্ন: ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যুদ্ধাপরাধের আওতাধীন ১১ হাজার অপরাধীর বিচার থেমে যায়। এমনকি দালাল আইনও বাতিল করে দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনাদের অধিকার রক্ষায় মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা উচিত বলে মনে করেন কি না?

উত্তর: দালাল আইন বাতিল হয় ১৯৭৬ সালে। তখনো ১১ হাজার অপরাধী বিচারাধীন অবস্থায় জেলে বন্দী ছিলেন। সামরিক সরকার সেই ১১ হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। কেবল যে মুক্তি দেয় তা-ই না, তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, সামরিক সরকার অবৈধ এবং সামরিক সরকার যেসব অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার সবগুলোই বাতিলযোগ্য। সেই জায়গা থেকে আমরা একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পারি, যেহেতু দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল সামরিক অধ্যাদেশে, সেহেতু দালাল আইন পুনর্বহালের আইনগত একটা যৌক্তিক জায়গা আছে।

এ ছাড়া ২০১০ থেকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আমরা বহাল রেখেছি। সেখানে এখন পর্যন্ত ৭০টির ওপর রায় হয়েছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয় আমলে নিয়ে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের রাজাকার কমান্ডার রিয়াজুদ্দীন ফকির এবং হবিগঞ্জের সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিষয় আমলে নেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও কবি মেহেরুন্নিসা হত্যার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়েছে। তার মানে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে আলাদাভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন: এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণের মতো অপরাধকে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নারী অধিকারকর্মীরা কী ভূমিকা রেখেছেন বা রাখতে পারেন?

উত্তর: ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ জেনোসাইড কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেনোসাইড একটি সমন্বিত অপরাধ, যা কোনো জাতিকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের মধ্যে অন্যতম হলো নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং একই সঙ্গে জেনোসাইডের যে মূল উদ্দেশ্য তা হলো, একটি জাতি-গোষ্ঠীর পরিচয় বদলে ফেলা। এর অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সুতরাং জেনোসাইডের স্বীকৃতি পেলে আলাদা করে আর ধর্ষণকে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতাকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনাল। কাছাকাছি সময়ে বসনিয়া ট্রাইব্যুনাল এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের নারী অধিকারকর্মীদের কাছে একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল বসনিয়া ও রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ সামনে রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। ট্রাইব্যুনাল যাতে বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়, সে জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন তাঁরা। তবে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের এখানে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আমি যদি ভুল না করি, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া ট্রাইব্যুনালে সেখানকার নারী অধিকারকর্মীরা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার ব্যাপারে যতটা সরব ছিলেন, আমাদের এখানে তেমনটা এখন পর্যন্ত নেই।

প্রশ্ন: এই মুহূর্তে নারী অধিকারকর্মীদের আসলে কী করা উচিত?

উত্তর: তাঁদের উচিত জীবিত বীরাঙ্গনারা, যাঁরা এখনো বিচারের আশায় লড়ছেন, তাঁদের সাহস দেওয়া। তাঁদের সাক্ষী হিসেবে যেসব প্রান্তিক নারী আছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করা এবং রাষ্ট্র যাতে তাঁদের ভুলে না যায়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখা। 

প্রশ্ন: বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্ম কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন?

উত্তর: আমার মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধকে যে আমরা নাটক, সিনেমা বা সাহিত্যে শুধু বীরত্বের মাপকাঠিতে দেখি, সেই চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই বীরত্বগাথা। কিন্তু এর পাশাপাশি সে সময়ে জেনোসাইডের আওতাভুক্ত যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে, সেসব বিষয়েও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। আমি মনে করি, প্রতিটি এলাকার এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো পাঠ্যপুস্তকে আসা উচিত। জাতীয় দিবসগুলোতে স্কুল-কলেজে যেসব অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বীরত্বগাথার পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনাগুলোও বিশদভাবে আলোচনা করা উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন এসব জানবে, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আলাদাভাবে সম্মান করবে। তারা বুঝতে শিখবে, এই সব নারী একটি স্বাধীন দেশ দেওয়ার জন্য কী অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রোকেয়াকে ‘মুরতাদ’ বলা রাবি শিক্ষকের অপসারণ চায় মহিলা পরিষদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) আলাদা বিবৃতিতে এই নিন্দা জানায় সংগঠনগুলো। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হয়ে বেগম রোকেয়াকে নিয়ে ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য রাষ্ট্রীয় আইন এবং পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করে সংগঠনগুলো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমাজ সংস্কারক মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ-কাফির’ আখ্যায়িত করে পোস্ট দেন। এর নিন্দা জানিয়ে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলা ও বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, যাঁর অবদান আমাদের শিক্ষা, সমাজচিন্তা ও মনন গঠনের ভিত্তি। তাঁকে নিয়ে এমন বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য কেবল নিন্দনীয়ই নয়, এটি নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আক্রমণ। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, যিনি নিজেদের পেশার নৈতিকতা, শালীনতা এবং প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক হওয়ার কথা, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন।’

আসক মনে করে, ‘এ ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার সীমা ছাড়িয়ে সমাজে বিভাজন, নারীবিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্যকে উসকে দেয়। যা মানবাধিকার মানদণ্ড, রাষ্ট্রীয় আইন এবং একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন। বেগম রোকেয়া শুধুই একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি বাঙালি নারীর মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি। তাঁকে অবমাননা করা মানে বাঙালির সামষ্টিক অগ্রযাত্রাকে আঘাত করা।’

নারী অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তাদের বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যারা ধর্মের অপব্যাখ্যার ওপর ভর করে নারীদের সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক তাদেরই একজন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৫০ বছর আগে নারী মুক্তির যে স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, তাঁর আদর্শ এখনো প্রাসঙ্গিক হওয়ায় নারী প্রগতিবিরোধী একটি গোষ্ঠী তাঁকে ভয় পায়। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে যখন দেশের মেয়েরা সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন শিক্ষক নামধারী একজন ব্যক্তির এই অপপ্রচার, তার শিক্ষকতার যোগ্যতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।’

মহিলা পরিষদ মনে করে, ‘যখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রোকেয়া দিবস পালন করা হচ্ছে, রোকেয়া পদকের প্রবর্তন করা হয়েছে, তখন এ ধরনের অপপ্রচার রাষ্ট্রীয় নীতিবিরোধী কাজ। এ ধরনের অপচেষ্টা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার একটি ষড়যন্ত্র এবং দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অপতৎপরতা। এই অপপ্রচার সুস্থ সমাজ গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। সমাজের মধ্যে বসবাসকারী নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর এ ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড সম্মিলিতভাবে এখনই প্রতিহত করা দরকার।’

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন নারীপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বেগম রোকেয়া কখনোই ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না। বরং তিনি আজীবন অন্ধ কুসংস্কার, বৈষম্য ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ধর্মের ব্যবহার করে নারীকে অসম্মান-অপদস্থ করা, নারীর অধিকার খর্ব করা এবং নারীকে চার দেয়ালের অন্ধকারে আবদ্ধ করে রাখার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।’

নারীপক্ষের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘কাউকে অসম্মান ও হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় শব্দ-বাক্য ব্যবহার করা অন্যায় এবং সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয়। রোকেয়াসহ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোনো মানুষের প্রতিই এমন বক্তব্য ও আচরণের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানায় নারীপক্ষ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৪
ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার
প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে এক শ কোটির বেশি মানুষ যাদের বয়স ১৫ বছর কিংবা এর বেশি; তারা শৈশবে কোনো না কোনোভাবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ৬০ কোটির বেশি নারী তাঁর সঙ্গীর দ্বারা সহিসংতার শিকার হয়েছেন ২০২৩ সালে। দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে এমন নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি। বিখ্যাত চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

গত মঙ্গলবার গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এমন সহিংসতার কারণে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে এইডস এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগের সংক্রমণের হারও বেশি।

এই গবেষণার জন্য ২০২৩ সালের ‘গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজের’ (জিবিডি) তথ্য নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় যুক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনসহ ৬০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। ল্যানসেটের ওই গবেষণায় বলা হচ্ছে, জীবনসঙ্গীর ওপর চালানো নির্যাতন ও শিশুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম একটি উপায়। এটি সমাজে এবং ভুক্তভোগীদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলছে। এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব ভয়ংকর।

তবে এটি জানার পরও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিকারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

এই নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, এমন সহিসংতার কারণে ভুক্তভোগীরা যে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ও প্রতিবন্ধিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এর চিত্র উঠে এসেছে গবেষণায়। নারীরা যে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন এর অন্যতম আটটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ বিষণ্নতা ও উদ্বেগজনিত রোগ। সহিংসতার শিকার নারীরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে তাদের অনেকে প্রতিবন্ধিতা বরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া শিশুরা যারা এমন যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে, তারা মানসিক এবং এইডস, ডায়াবেটিসসহ ক্রনিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে জীবনসঙ্গীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বিশ্বজুড়ে ২০২৩ সালে মারা গেছে ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে অনেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছে। আবার নির্যাতনের কারণে এইডসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে কেউ কেউ। ল্যানসেট বলছে, ২০২৩ সালে ৩০ হাজার নারীকে হত্যা করেছেন তাঁর সঙ্গী। ২০২৩ সালে যৌন সহিংসতার কারণে মারা গেছে ২ লাখ ৯০ হাজার শিশু। এর একটি বড় অংশ আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া এইডস, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অনেকে। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণও ছিল যৌন সহিংসতা।

দক্ষিণ এশিয়ায় এখন যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, যারা শৈশবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদের অনেকের মধ্যে আত্মঘাতী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অনেকে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর নারীরা যাঁরা কিনা শৈশবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দুশ্চিন্তাজনিত রোগ বেড়েছে।

ল্যানসেটের এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের সহকারী অধ্যাপক লুইসা সোরিও ফ্লোর। তিনি বলেন, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে দীর্ঘ সময় ধরে যেভাবে সমাজ দেখে আসছে, নতুন এই গবেষণা সেটাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এমন ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কী, সেটাও সামনে এনেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জীবনের গল্প

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাহমুদা পারভীন। নামটি এখনো খুব পরিচিত নয়। সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। তবে তাঁর আরেকটি পরিচয় আরও উজ্জ্বল; তিনি একজন মুহূর্ত-শিকারি, ফটোগ্রাফার। কোনো প্রশিক্ষণ নেই, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে গ্রুমিংও নয়; নিজের ভালোবাসা আর অনুভূতির টানে তিনি ধরে রাখতে শুরু করেছিলেন প্রিয় মুহূর্তগুলো।

মা, বাবা, ভাই, ভাবি এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে মাহমুদার পরিবার। সেখানে আর কেউ ছবি তোলে না; তাই ফটোগ্রাফি নিয়ে তাঁর যে জগৎ, সেটি পুরোপুরি নিজের হাতে গড়া। একাকী এই পথচলাই যেন তাঁকে আরও বিশেষ মনোযোগী করে তুলেছে, আরও অনুপ্রাণিত করেছে।

শুরুটা খুব সাধারণ, তারপরও বিশেষ

‘সুন্দর মুহূর্ত ধরে রাখতে ভালো লাগে’—এমনই এক সাধারণ অনুভূতি থেকে মাহমুদা ছবি তুলতে শুরু করেন। সময়কে কেউ থামাতে পারে না। কিন্তু ছবি সেই সময়ের ছাপকে ধরে রাখতে পারে। এই টান থেকে তাঁর ফটোগ্রাফির যাত্রা।

প্রথম ক্যামেরা? ক্যামেরা বলা যাবে না। কারণ, এখন পর্যন্ত তিনি মোবাইল ফোন দিয়েই ছবি তোলেন। এই মোবাইল যেন তাঁর হাতে এক জাদুর বাক্স।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

স্বীকৃতির প্রথম ধাপ

মোবাইল ফোন দিয়ে তোলা তাঁর ছবি প্রথমবার জায়গা করে নেয় ‘তরুণেরাই পরিবর্তনের প্রভাবক’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে। জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল প্রদর্শনী। সেখান থেকে তিনি পেয়েছেন একটি সার্টিফিকেট। এটি তাঁর কাছে শুধু একটি কাগজ নয়, নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার সাহস।

অনলাইন প্রতিযোগিতায় তাঁর সাফল্য রয়েছে। ‘প্রাণোচ্ছ্বাস আত্মসেবা নয়, মানবসেবা’-এর ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ফটোগ্রাফি কনটেস্টে তিনি দ্বিতীয় হয়েছেন।

মাহমুদা পারভীন।
মাহমুদা পারভীন।

যেসব ছবি ছুঁয়ে যায়

প্রিয় ছবির কথা উঠলে তিনি স্মরণ করেন এই নভেম্বরের এক ভোরের স্মৃতি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়াশাঘেরা পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখেছিলেন, একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে কুয়াশা, ভোরের ঠান্ডা, নিস্তব্ধতা আর দুই বন্ধুর পথচলার মিষ্টি স্মৃতি। তিনি মোবাইল ফোনে মুহূর্তটাকে বন্দী করেছিলেন।

ভয়ের দিক

যে কাজ মানুষকে আনন্দ দেয়, সেটির পেছনেও ভয় থাকে। মাহমুদার ভয় খুব সাধারণ, কিন্তু বাস্তব। তা হলো, সব সময় অনুমতি নিয়ে ছবি তোলা যায় না। কেউ যদি বিরক্ত হয়! কেউ রাগ করলে? এসব মাঝে মাঝে তাঁকে থামিয়ে দেয়।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নারী ফটোগ্রাফার হওয়ার বাড়তি চ্যালেঞ্জ

বাইরের মানুষ বাজে কথা না বললেও অনেক জায়গায় শুনতে হয়, মেয়ে হয়ে ছবি তুলছেন? বিষয়টি সবাই ভালো চোখে দেখে না। তার ওপর বিশেষ চ্যালেঞ্জ হলো, বাড়ির লোকজন এখনো জানেই না, তিনি ছবি তোলেন! তাই নিজের ভালোবাসার কাজটুকু তাঁকে চুপিচুপি, নিজের মতো করে করতে হয়।

পাখির ছবি, প্রকৃতির ছবি

মাহমুদার ভালো লাগে ল্যান্ডস্কেপ, স্ট্রিট ফটোগ্রাফি ও পোর্ট্রেট। বারান্দায় এসে ডেকে ওঠা শালিক পাখিগুলো তাঁর ছবি তোলার নিয়মিত বিষয়। খেলা করতে করতে শালিকদের যে স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি, সেগুলো তিনি ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অভাববোধ করেন একজন গাইডের

মাহমুদার বড় আফসোস, কেউ নেই যিনি বলে দেবেন, কোন ছবি ভালো, কোনটা নয়, কোথায় ভুল, কীভাবে আরও ভালো হওয়া যায়। একজন অভিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে পথনির্দেশনা পেলে তিনি বিশ্বাস করেন, গল্প আরও গভীরভাবে বলতে পারবেন।

স্বপ্ন এখনো চলমান

একদিন চাকরি হবে, ব্যস্ততা তখন নিশ্চয় বাড়বে। কিন্তু ছবি তোলার নেশা কখনো হারিয়ে যাবে না। সুযোগ পেলে নিজের একটি ক্যামেরা কিনবেন; তখন আরও দক্ষভাবে, আরও গল্পময় ছবি তুলবেন। নতুন নতুন গল্পের সন্ধানে পথচলা অব্যাহত থাকবে— মাহমুদার স্বপ্ন আপাতত এতটুকুই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করা এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বিয়ের পর থেকে আমি নানা জুলুমের শিকার। বলতে গেলে, সব ধরনের জুলুম হয়েছে ১৪ বছর ধরে। আমাদের ৮ বছরের একটি সন্তান আছে। ইশারা-ইঙ্গিতে সাহায্য চায়। অর্থাৎ যৌতুক। সেটা পায় না বলে নানা কারণে রাগ প্রকাশ করে এবং চাপ দেয়। এর থেকে রক্ষা পেতে আমি কী করতে পারি?

নুসরাত জিনিয়া, মুন্সিগঞ্জ

উত্তর: দীর্ঘ ১৪ বছরের মানসিক-শারীরিক নির্যাতন, অর্থনৈতিক চাপ এবং ইঙ্গিতে যৌতুক দাবি করা—এ সবই আইনের চোখে অপরাধ।

যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী

  • যৌতুক দাবি করা, গ্রহণ করা কিংবা সে জন্য চাপ দেওয়া—সবই দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • এর শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
  • ইঙ্গিতে বা আচরণে চাপ দেওয়া—এটিও অপরাধের মধ্যে গণ্য হয়।

এ ক্ষেত্রে যা করতে পারেন, তা হলো:

  • নথি বা প্রমাণ সংগ্রহ করুন
  • আপনার নিরাপত্তা সবার আগে। প্রমাণ বলতে—হুমকি বা দাবি-সম্পর্কিত অডিও বা ভিডিও
  • মেসেজ, কল রেকর্ড
  • প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের সাক্ষ্য
  • চিকিৎসার রিপোর্ট (যদি শারীরিক নির্যাতন থাকে)
  • ১৪ বছরের নির্যাতনের যেকোনো প্রমাণ
  • কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করবেন না।
  • স্থানীয় থানায় জিডি করুন। জিডি করলে—
  • আপনার নিরাপত্তার রেকর্ড তৈরি হবে
  • ভবিষ্যতে মামলা করলে আপনার বক্তব্য শক্তিশালী হবে

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার সুযোগ যদি শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন থাকে—

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ শাস্তির বিধান আছে।

যৌতুক মামলা করতে চাইলে কী হয়

যৌতুক মামলায় অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করবে এবং প্রমাণ পেলে মামলাটি আদালতে যাবে।

সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য সুবিধা

  • স্বামীর পক্ষ থেকে যৌতুকের চাপ বা নির্যাতন আইনি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
  • তিনি দোষী প্রমাণিত হলে জরিমানা ও কারাদণ্ড হতে পারে।
  • এটি আপনাকে ভবিষ্যতের নির্যাতন থেকে আইনগত সুরক্ষা দেবে।
  • পরবর্তী সময়ে ভরণপোষণ বা হেফাজত বা ডিভোর্সের মামলা করলে আপনার আইনি অবস্থান শক্তিশালী হতে পারে।
  • আপনার সন্তানের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

ভরণপোষণ ও সন্তানের হেফাজতের অধিকার

আপনি পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণ মামলা এবং সন্তানের হেফাজত মামলা করতে পারবেন। ৮ বছর বয়সী সন্তানের হেফাজত সাধারণত মায়ের পক্ষেই যায়, যদিও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচারক সিদ্ধান্ত নেন।

মামলা করা একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনার ভাববার বিষয়, নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা, স্বামীর সঙ্গে থাকা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে? আপনার কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কি না? তবে সম্পূর্ণ প্রমাণ না থাকলেও প্রাথমিক তথ্য দিয়ে মামলা করা যায়।

নিরাপদ আশ্রয় বা জরুরি সহায়তা যদি আপনি বিপদের মুখে থাকেন—

  • ৯৯৯-এ কল করুন
  • জাতীয় মহিলা সহায়তা কেন্দ্রের ১০৯ নম্বরে কল করতে পারেন।
  • স্থানীয় নারী সহায়তা কেন্দ্র বা আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করতে পারেন।

তবে মামলা করা একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনার ভাববার বিষয় নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা, স্বামীর সঙ্গে থাকা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে? আপনার কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আছে কি না?

তবে সম্পূর্ণ প্রমাণ না থাকলেও প্রাথমিক তথ্য দিয়ে মামলা করা যায়।

পরিস্থিতি অনুযায়ী মামলা করা আপনার প্রতি চলমান নির্যাতন এবং যৌতুকের চাপ থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে। তবে এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত