শৈশবের বন্ধু মা

ত্রপা মজুমদার
আপডেট : ১০ মে ২০২৩, ১৬: ০৫
Thumbnail image

মাকে নিয়ে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘বিশ্ব মা দিবস’ পালন করা হয়। মায়ের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি পালন করা হয়। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস ঘোষণা করে। সেদিন থেকে শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় দিবসটি এখন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। মা দিবসকে কেন্দ্র করে মায়ের গল্প বলেছেন ত্রপা মজুমদার।

আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। আমার প্রথম এবং প্রধান বন্ধু হলেন আমার মা ফেরদৌসী মজুমদার। শৈশব থেকে আজ অবধি পুরোটাজুড়েই মায়ের অবস্থান। সেটা হোক আমার লেখাপড়া, পোশাক, চারিত্রিক গঠন, আচার-আচরণ। সবকিছু মায়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে হয়েছে। মা শুরুর দিকে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কারণ, তিনি এমন কোনো পেশায় যুক্ত থাকতে চেয়েছিলেন, যেখানে সন্তানকে সময় দিতে পারেন। আমার আর মায়ের জন্মদিন ১৮ জুন। এ বছর মায়ের ৮০ বছর পূর্ণ হবে। আর আমার ৫০ বছর।

আমার মায়ের কোনো সামাজিক জীবন ছিল না। মা থিয়েটার করতেন। বাংলাদেশে আজকের থিয়েটার যে জায়গায় পৌঁছেছে, সেখানেও মায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সেদিক থেকে বলতে হয়, তিনি একজন সার্থক মা, যিনি সবটুকু দিয়ে নিজের মাতৃত্ব উদ্‌যাপন করেছেন। শিক্ষকতা আর অভিনয়ের বাইরে তিনি পুরো সময় আমাকে উজাড় করে দিতেন। কলেজ পর্যন্ত মা আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন বলে তাঁকে আমি অনেক বেশি সময় কাছে পেয়েছি।

মাকে সব সময় আমার দশভুজা মনে হয়। তিনি একদিকে মহড়া করেন, অন্যদিকে সংসার সামলান। বাবার শরীর খারাপ হলে রাত ১০টায় ওষুধ নিয়ে আসেন। মা আমাদের জন্য সবকিছুই করেন। এর ইতিবাচক দিক হলো, আমরা এর সুফল ভোগ করেছি। আবার অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রমের ফলে মা পরবর্তী সময়ে আর্থ্রাইটিস রোগে ভুগেছেন। তাঁর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সারা জীবন অনেক বেশি কাজ ঘাড়ে নিয়েছেন বলে রোগ তাঁর পিছু ছাড়েনি।
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা শুধু শুধু জন্মায় না। মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব ও যোগাযোগ কম থাকলে টানও কম অনুভূত হবে। ফলে উভয়ের নিয়মিত যোগাযোগ প্রয়োজন, যাতে সম্পর্ক সচল থাকে। সন্তান মায়ের কাছে এবং মা সন্তানের কাছে যতই নিজের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করবে, ততই তাদের বন্ধন অটুট হবে।

আমি একজন মা। আমার ১৭ বছরের একটা মেয়েও আছে। নাম আত্রেয়ী। মায়ের সঙ্গে আমার সময়ের ব্যবধান ছিল অনেক, যেটা তিনি আমাকে বুঝতে দেননি। কারণ, মা সব সময় নিজেকে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন করেছেন। একইভাবে আমাকেও এখন মেয়ের জন্য অনেক কিছু মানিয়ে নিতে হচ্ছে। এই ভিন্ন সময়ের সঙ্গে আমি যদি নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারি, তাহলে মেয়ের সঙ্গে আমার দূরত্ব বাড়বে। এটাই হলো মা ও মেয়ের সম্পর্কের সমীকরণ। 

অনুলিখন: মন্টি বৈষ্ণব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত