ঘর-সংসার সামলানো শুধু নারীর কাজ নয়: কাজল

শাকেরা তাসনীম ইরা, ঢাকা
Thumbnail image

‘ঘর-সংসার সামলানো শুধু নারীদের দায়িত্ব নয়। আবার নারীরাই শুধু বাড়িতে রোজগার করে আনবে তেমনটাও নয়।’ এমনটাই মনে করেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল।

বলিউডের অসংখ্য ব্লকবাস্টার সিনেমার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী ব্যক্তিজীবনে দুই সন্তানের জননী। ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে কাজল বরাবরই আধুনিক এবং উন্নত চিন্তার অধিকারী হিসেবে পরিচিত।

কাজল বিশ্বাস করেন, নারী উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। তবে ভারতীয় মিডিয়া ‘স্পট বয় ই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাজল বলেছিলেন, ‘‘‘ক্ষমতায়ন’’ বিষয়টি নিজের মধ্য থেকে না এলে কোনোভাবেই নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। আপনি কোনো পুরুষের কাছে নিজের ক্ষমতায়নের আরজি করতে পারেন না।

আপনার নিজেরই এটা অর্জন করতে হবে। নারী-পুরুষ প্রত্যেকেরই আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত করতে হবে; বিশেষ করে নারীদের। পরিবার কিংবা সমাজে তাদের কোনো ভূমিকা নেই, এ ভাবনাটা ভাবা নারীদের নিজেদেরই আগে বন্ধ করতে হবে। আমরা এই সমাজে একেবারেই পরজীবী সদস্য নই। নারীদের দায়িত্ব শুধু ঘর-সংসার সামলানো নয়। আবার নারীরাই শুধু রোজগার করবেন, তেমনটাও নয়।’

সমাজে নারী-পুরুষের সমতার ব্যাপারে সরব কণ্ঠেই কাজল কথা বলেছেন সব সময়। তিনি মনে করেন, সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যকার সমতা তৈরি করার প্রথম ধাপ হলো নিজের সন্তানের মধ্যে সমতার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা। বাবা-মায়ের উচিত, সন্তানদের সামনে সমতার আদর্শ উদাহরণ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরা। একই সঙ্গে শিশুদের চিন্তার জগৎকে সীমাবদ্ধ না করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। এতে শিশুরা স্বতন্ত্র চিন্তার মানুষ হিসেবে বড় হয়ে ওঠে, যা একজন মানুষের জন্য খুবই জরুরি। কাজল বলেন, ‘যদি আপনি আপনার পুত্রসন্তানকে এটা শেখান যে তোমাকে বাইরে যেতে হবে এবং টাকা রোজগার করতে হবে, তাহলে সেই একই বিষয় আপনি আপনার কন্যাসন্তানকে কেন শেখান না? আবার আপনি যদি কন্যাসন্তানকে রান্না করা শেখান, তবে পুত্রসন্তানকে কেন রান্না করা শেখান না? রান্না তো মৌলিক জীবন দক্ষতার একটা অংশ এবং সবারই অন্তত নিজের খাবার রান্না করতে পারা উচিত।’

কাজল সব সময় চেষ্টা করেন তাঁর ছেলেকে এই ধারণা দেওয়ার যে তার মা কাজের জন্য বাইরে যান এবং কাজের জন্য নারীদের বাইরে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। কাজল মনে করেন, এতে তাঁর সন্তান যখন বড় হবে, তার প্রেমিকা বা স্ত্রী কাজের জন্য বাইরে যাবে, তখন সে অবাক হবে না এবং কোনো পুরুষতান্ত্রিক আচরণ করবে না। আবার তিনি নিজের কন্যাসন্তানকে কখনোই এটা শেখাতে চান না বা শেখাননি যে সমাজে নারী ও পুরুষের কাজ নির্দিষ্ট। নারী হিসেবে সে কোনো পুরুষালি কাজ করতে পারবে না। তিনি কখনোই চান যে তাঁর পুত্রসন্তান ভাবুক, সমাজে এমন কিছু কাজ আছে যা করার দায় শুধু নারীদের। কাজল বিশ্বাস ও চর্চা করেন যে তাঁর পুত্র-কন্যা গুরুত্বের দিক থেকে তাঁর কাছে কেউ কারও চেয়ে ছোট বা বড় নয়; বরং দুজনই সমান। প্রতিটি ঘরেই এমনটা হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। কাজল জানান, প্রতিটি সন্তানের এটা ভেবেই বড় হওয়া উচিত যে নারী-পুরুষ কেউ কারও চেয়ে ছোট কিংবা বড় নয়। ঘর-সংসার সামলানোর কাজটাও দুজনের ওপরেই সমানভাবে বর্তায়, ঘর সামলানো শুধু নারীর কাজ নয়।

ভারতীয় গুণী অভিনেত্রী কাজল তাঁর ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে হওয়া নারী নির্যাতনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দেবী’তে অভিনয় করে তিনি ভূয়সী প্রশংসা কুড়ান। মূলত তারই পরিপ্রেক্ষিতে কাজল ভারতীয় মিডিয়ায়, সমাজে বিরাজমান লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে সমতার ধারণা প্রতিষ্ঠা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে নিজের ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরেন।

সূত্র: স্পট বয় ই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত