Ajker Patrika

আফগানিস্তানের নারীদের ব্যথাটা বুঝুন

ফিচার ডেস্ক
ফরিদা দারবিস। ছবি: সাবলাইড
ফরিদা দারবিস। ছবি: সাবলাইড

ফরিদা দারবিস। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের সিভিল সার্ভিস কমিশনের নারী ক্ষমতায়ন বিভাগের পরিচালক। তাঁর প্রচেষ্টায় সিভিল সার্ভিসে ২৭ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব করেন। তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর সবকিছু থেকে নারীদের একপ্রকার বাদ দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার উন্নত করার ক্ষেত্রে ফরিদা দারবিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সম্প্রতি তাঁর একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন গণমাধ্যম রুখসানা মিডিয়ায়। তাঁর সেই বক্তব্যের অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরা হলো।

গত সপ্তাহে আমার নবজাতক কন্যাকে কোলে নিয়ে মাতৃত্বের আনন্দে আমি অভিভূত হই। তবু আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত। কারণ, আমি জানি, দুঃখজনকভাবে আমার দেশে জন্ম নেওয়া অসংখ্য মেয়ের ভবিষ্যৎ হতাশাজনক। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান সঠিকভাবে তাদের অস্তিত্বকে ‘স্টেট স্পনসর্ড জেন্ডার আপারথ্রেড’ বা রাষ্ট্রের তৈরি জেন্ডার আপারথ্রেড বলে উল্লেখ করেছেন।

ধরা যাক, প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়গামী। তাদের মধ্যে ১৪ লাখ মেয়ের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ।এক লাখ তরুণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়ে উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। নারীরা কর্মক্ষেত্র থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছেন। এতে আফগানিস্তানের অর্থনীতি প্রতিবছর প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যখন আমি আফগান সিভিল সার্ভিস কমিশনে নারীদের ক্ষমতায়ন বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম, সিভিল সার্ভিসে ২৭ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব ছিল। সেই অগ্রগতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে তলানিতে ঠেকা ছাড়াও আফগান নারীরা দৈনন্দিন দমন-পীড়নের শিকার। তাঁরা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া দীর্ঘ পথযাত্রা করতে পারেন না। তাঁরা পার্ক, জিম এমনকি বিউটি সেলুনেও প্রবেশ করতে পারেন না। ২৮ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগে ও ১০ শতাংশ শিশুর ১৫ বছরের আগে বিয়ে হচ্ছে। জাতিসংঘের রেকর্ড বলছে, তালেবানের ফিরে আসার পর বাল্যবিবাহের কারণে ১৫০টির বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানাচ্ছে, যৌন সহিংসতার ঘটনা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।

একজন আফগান নারী হিসেবে আমার প্রতিবাদ করার সুযোগ ও দায়িত্ব রয়েছে। গণহত্যা, জাতিগত বৈষম্য, কাঠামোগত বৈষম্য ও নারীবিদ্বেষের এত বড় পরিসংখ্যান বিশ্বের কাছে এখানকার মানুষের বেদনাকে অস্বীকারযোগ্য করে তোলে। আমরা এমন এক তরুণ প্রজন্মের কথা বলি, যারা একসময় স্বাধীনতার ঝলক দেখেছিল এবং এর শক্তি কেমন, তা বুঝেছিল।

আমার সহপাঠী হানিফার সঙ্গে নাগরিক সমাজে কাজ করেছি। এমন এক ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করেছি, যেখানে নারীরা বিকশিত হতে পারতেন। আজ তিনি বেকার, তাঁর স্বপ্ন ভেঙে গেছে, তিনি আশাহত। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি নারীর সব অগ্রগতিকে চিহ্নিত করতে পালন করা হয়। কিন্তু আফগান মেয়ে ও নারীদের জন্য এটি কোনো উদ্‌যাপনের দিন নয়; যা তাঁদের কাছে

বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনের লড়াই। আমাদের সহানুভূতি নয়, কিছু করা প্রয়োজন। সেই শিক্ষকদের সমর্থন করুন, যাঁরা মেয়েদের জন্য গোপন স্কুল পরিচালনা করছেন। যাঁরা এখনো লেখেন, কথা বলেন এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন; সেই আফগান নারীদের পাশে থাকুন। আফগান নারীদের যন্ত্রণা আরও বাড়ানো হয়েছে তাঁদের সমস্যায় নীরব থেকে, তাঁদের পরিত্যাগ করে। আমাদের ব্যথা বুঝুন। জেন্ডার আপারথ্রেড চিনুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিয়াবাড়ীতে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জিএমের রক্তাক্ত মরদেহ

ইসিতে ‘আওয়ামী লিগ’ নামে নিবন্ধন চেয়ে নতুন দলের আবেদন

ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়: জারাকে সারজিসের জবাব

কিছুদিন আগে মানিব্যাগও ছিল না, এখন বিশাল শোডাউন কীভাবে—সারজিসকে ডা. তাসনিম

‘সারজিস নাগরিক পার্টি করতে পারলে আমরা কেন ছাত্রদল করতে পারব না’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত