পূর্ণার স্বপ্নপূরণ

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৭: ৩৬

রাজশাহীর মেয়ে সুমাইয়া আনোয়ার পূর্ণা। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি কেক তৈরি করেন, কবিতা আবৃত্তি করেন, করেন ইভেন্ট উপস্থাপনা। সৃজনশীলতার জন্য জাতীয় পর্যায়ে হয়েছেন দেশসেরা। পুরস্কার নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। শখের কাজে মাসে তাঁর আয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

রাজশাহীতে পূর্ণার বেড়ে ওঠা। মা-বাবার সঙ্গে সেখানেই থাকেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কলেজে গণিত বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প
তখন করোনাকাল, অখণ্ড অবসর। বাসায় বিভিন্ন জনের জন্মদিন লেগেই থাকে। কিন্তু বাইরে থেকে কেক আনানো যাচ্ছিল না। সে সময় ইউটিউব দেখে বাসায় কেক বানানোর কথা ভাবেন এবং বানিয়ে ফেলেন দু-একটি কেক। এর মধ্যে বাড়ির তিনতলার এক শিশুর জন্মদিন এল। কেক বানাতে ডাক পড়ল পূর্ণার। সে কেক খেয়ে পাড়া, পড়শি তো মুগ্ধ হলোই, শিশুটির মা-বাবা তাঁকে কেক তৈরির সম্মানীও ধরিয়ে দিলেন। এ ঘটনাই পূর্ণাকে অনলাইনে কেক বিক্রির ব্যবসা শুরু করতে উদ্বুদ্ধ করে। মা-বাবাও তাতে সম্মতি দেন। এরপর আর পূর্ণাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কলেজের শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, পরিচিতজনদের অনেকেই তাঁর কাছ থেকে কেক বানিয়ে নেন।

শিখেছেন ইউটিউব থেকে
কেক তৈরি শেখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কোর্স করেননি পূর্ণা। শিখেছেন দেশি-বিদেশি ইউটিউব চ্যানেল দেখে। প্রথম দিকে কেকের বেসটা খুব ভালো হলেও ফ্রস্টিং ক্রিম ঠিকঠাক হতো না। পরিচিত যাঁরা কেক বানান, তাঁদের অনেকের কাছেই জানতে চেয়েছেন সমাধান। কিন্তু কেউ তাঁকে সঠিক তথ্য দেননি। তবে পূর্ণা দমে যাননি। ভিডিও দেখে, আন্দাজ করে করে একদিন বানিয়ে ফেলেন ঠিকঠাক ফ্রস্টিং ক্রিম। 

মায়ের নামে পেজ
পূর্ণার মায়ের নাম শিরি। সে নাম থেকেই তিনি নিজের পেজের নাম রেখেছেন শিরি’স সিক্রেট। জাতীয় আচার প্রতিযোগিতায় পূর্ণার মা পুরস্কৃত হয়েছিলেন। মায়ের এই অর্জনকে সম্মান জানিয়েই পেজের নামকরণ করেন তিনি।
 
ট্রিপল সেঞ্চুরির কাছাকাছি
২৫০টিরও বেশি কেক তৈরি করেছেন পূর্ণা। শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১৬ পাউন্ড ওজনের একটি কেক তৈরি করিয়ে নেয় তাঁর কাছ থেকে। এটিই এখন পর্যন্ত পূর্ণার হাতে তৈরি সবচেয়ে বড় কেক। 

এখন পর্যন্ত ২৫০টিরও বেশি কেক তৈরি করেছেন পূর্ণা।আয়ের গল্প
নিজের একটা আলাদা পরিচয় গড়ে উঠুক, অর্জন হোক নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে দক্ষতা। এগুলোই পূর্ণার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। তারপরও আয়ের দিকটা তাঁর মোটেই মন্দ নয়। কেক বিক্রিতে তাঁর মাসিক আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এক মাসে সর্বোচ্চ ৫৮ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। অবশ্য বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রের উপস্থাপক, আবৃত্তিশিল্পী, একটি যুববিষয়ক অনুষ্ঠানের ফ্যাসিলিটেটর সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ওয়েলকাম টিউন ও ডকুমেন্টারিতে ভয়েস আর্টিস্ট, বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ইত্যাদি থেকেও কিছু টাকাপয়সা তাঁর ঝুলিতে জমা হয় নিয়মিত।

লোকের কথায় দেননি কান
চাকরি জোটাতে না পেরে কেক তৈরি করে কিংবা মেয়ে বলেই এত দূর আসতে পেরেছেন—এমন তীব্র কটাক্ষ পূর্ণার কানে 
এসেছে। এসব কথাকে পাত্তা না দিয়ে তিনি নিজের কাজ করে গেছেন। 

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড
পড়াশোনা এবং অনলাইন ব্যবসার পাশাপাশি পূর্ণা যুক্ত আছেন বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজকর্মে। রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদ সংগঠনের সদস্য তিনি। এ ছাড়া বর্তমানে রাজশাহী কলেজ মিরর ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, মডেল ইউনাইটেড ন্যাশনসের সাধারণ সম্পাদক, সেই কলেজের আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি এবং ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং প্রোগ্রাম রাজশাহী কলেজ শাখার ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পূর্ণা।

কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসে পূর্ণার জুড়ি নেই। আবৃত্তি করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন উপস্থাপনার সঙ্গে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রের উপস্থাপক ও আবৃত্তিশিল্পী। আবৃত্তিতে এ পর্যন্ত তিনবার বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা হয়েছেন পূর্ণা।

এবং পুরস্কার 
পূর্ণা স্নাতক পর্যায়ে ভালো ফল এবং জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকবার পুরস্কৃত হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সৃজনশীল মেধাবী হিসেবে বৃত্তি পেয়েছেন। সেই পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা 
নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখতে চান পূর্ণা। দেশের ঐতিহ্য রক্ষায় কাজের পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত