Ajker Patrika

শত নারীর অনুপ্রেরণা পাপিয়া

কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর)
শত নারীর অনুপ্রেরণা পাপিয়া

পাপিয়া খাতুনের বয়স এখন ৪০। এ বয়সেই তিনি হারিয়েছেন স্বামী। ফলে দুই মেয়েকে নিয়ে নামতে হয়েছিল বেঁচে থাকার সংগ্রামে। সেই যুদ্ধে তিনি সফল তো হয়েছেনই, পাশাপাশি এলাকার প্রায় ৫০ জন নারীকে অর্থনৈতিকভাবে করেছেন সচ্ছল। পাপিয়া খাতুনের এই 
সফলতা এসেছে হস্তশিল্পের কাজ করে। তাঁর মাধ্যমে হস্তশিল্পের হরেক পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। গত বছর বেগম রোকেয়া দিবসে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী বিভাগে তিনি কেশবপুর উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মানে ভূষিত হন।

পাপিয়া খাতুনের মা নকশিকাঁথার কাজ জানতেন। বিয়ের আগে মায়ের কাছে সেই কাজ শেখেন পাপিয়া। তাঁর বিয়ে হয় যশোরের কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের দলিল লেখক শফিউর রহমানের সঙ্গে। কিন্তু বিধি বাম। বছর তিনেক আগে ২০২০ সালের ২৫ জুন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শফিউর রহমান। তখন করোনাকাল। স্বামীর মৃত্যুতে সংসার চালাতে গিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন পাপিয়া। সিদ্ধান্ত নেন, মায়ের কাছে শেখা হস্তশিল্পের কাজ করে সংসার চালানোর। কিন্তু ঘরে জমানো ছিল না কোনো অর্থ। পাপিয়ার বড় মেয়ে জামিলা ইয়াসমিন দোলা যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল টেকনোলজিতে পড়তেন। তাঁর পাওয়া উপবৃত্তি থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে চারটি ওয়ান পিসে নকশিকাঁথার নকশা করার কাজ শুরু করেন। নিজের কাজের পাশাপাশি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। সেই সুবাদে ১০ হাজার টাকা পান পাপিয়া। এই টাকা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০২২ সালে কেশবপুর শহরের দেবালয় মোড় এলাকায় ‘পাপিয়া হস্তশিল্প অ্যান্ড ফ্যাশন হাউস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন পাপিয়া খাতুন। সেখানে নিয়মিত কয়েকজন নারী এখন কাজ করছেন। পাপিয়ার প্রতিষ্ঠান শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ ৭টি পণ্য তৈরি করে। শুরুতে স্থানীয় বাজার এবং গ্রামের নারীদের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করতে থাকেন। আর এখন উপজেলা প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন মেলায় তাঁর পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি হয়। এ ছাড়া বিক্রি হয় ঢাকার বিআরডিবি চারুপল্লি, বিভিন্ন মেলাসহ, যশোর ও খুলনায় এবং অনলাইনে সারা দেশে।

কেশবপুরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পাপিয়া খাতুনসহ অন্য নারীরা হস্তশিল্পের কাজ করছেন।পাপিয়া এখন প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করছেন। মাসের পর মাস কষ্ট করে জমানো টাকা দিয়ে বড় মেয়ে জামিলা ইয়াসমিন দোলার বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে তামান্না জাহান তিথি কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। 
তিন বছরে পাওয়া সাফল্যে আটকে থাকতে চান না পাপিয়া খাতুন। নারীদের কাজ শিখিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি একটি কারখানা গড়ে তুলতে চান। সেখানে পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলতে চান।

কেশবপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রুপালী রানী। পাপিয়ার সাফল্য বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল। তাঁর দপ্তর থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন পাপিয়া। ফলে রুপালী রানীর খানিক পক্ষপাত আছে তাঁর প্রতি। সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাপিয়াকে ডেকে তাঁর সফলতার গল্প শুনিয়ে অন্য নারীদের উৎসাহী করতে চান রুপালী রানী।

পাপিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ২২ বছরের গৃহবধূ ঝুমুর। সাংসারিক কাজের ফাঁকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে নকশিকাঁথার কাজ করে প্রতি মাসে ৪-৫ হাজার টাকা আয় করছেন। স্বামীর পাশাপাশি এটি তাঁর বাড়তি আয়। ঝুমুরের মতো বাড়িতে কাপড়, সুতাসহ বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে গিয়ে কাজ করেন আরও প্রায় ৫০ জন নারী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত