অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব প্রবীণ দিবস ছিল ১ অক্টোবর। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় প্রবীণদের জন্য প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রজন্মের ভূমিকা’। একজন প্রবীণের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক—স্বাস্থ্যের এই সম্পূর্ণ আঙ্গিকেই যত্নের প্রয়োজন হয়।
প্রবীণদের স্বাস্থ্য এমনিতেই বৈশ্বিক চালচিত্রে অবহেলিত। তার মধ্যে যদি তিনি নারী হয়ে থাকেন, মেনোপজ দৈহিক স্বাস্থ্যকে বিপন্নতর করে। পুরুষদের মধ্যেও স্বল্পসংখ্যক মানুষ মেনোপজের মধ্য দিয়ে যান। কিন্তু সে সম্পর্কে মোটেও সচেতনতা নেই। বাংলাদেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিশু বিশেষজ্ঞ হওয়ার পড়াশোনা থাকলেও প্রবীণ বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম সম্বলিত চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগটি এখনো চালু হয়নি। এর থেকেই বোঝা যায় প্রবীণ সেবার গুরুত্ব।
এবার আসুন প্রবীণের মনের দুয়ারে উঁকি দিই। বাংলাদেশে বউ-শাশুড়ির অম্ল-মধুর সম্পর্ক যে টানাপোড়েনের জন্ম দেয়, সেটি মোকাবিলায় একজন প্রবীণ নারী মানসিকভাবে কতটুকু প্রস্তুত? একে তো মনোদৈহিক পরিবর্তন, তার সঙ্গে ক্রমাগত বার্ধক্যের অপরিচিত ভয়, মৃত্যুর গুটি গুটি এগিয়ে আসার গন্ধ প্রবীণকে সন্ত্রস্ত করে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে কখনো কথা হয় না। প্রবীণদের মধ্যে বিষণ্নতার হার বেশি। কিন্তু আমরা মনে করি, সবাইকে মমতা বিলানোই প্রবীণটির কাজ। ওনারও তো মমতার প্রয়োজন হয় কখনো কখনো, সে কথা যেন চারপাশের মানুষ ভুলে যায়। এই লেখা যাঁরা পড়ছেন, অন্তত একজন প্রবীণকে জড়িয়ে ধরে বলুন, ভালোবাসি।
বাংলাদেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিশু বিশেষজ্ঞ হওয়ার পড়াশোনা থাকলেও প্রবীণ বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম সম্বলিত কোনো বিভাগ নেই।
এবার সামাজিক স্বাস্থ্য দেখতে গেলে দেখব, বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবীণ নারীর নিজস্ব ঠিকানা নেই। শৈশবে বাপের বাড়ি, যৌবনে স্বামীর বাড়ি আর বার্ধক্যে ছেলের বাড়ি হয় ঠিকানা। নিজের একটি স্থায়ী আস্তানা না থাকার মানসিক অবসাদ কতটুকু বিপর্যস্ত করতে পারে একজন মানুষকে, সেটা যৌবনে বোঝা দুঃসাধ্য। অথচ আমরা ভুলে যাই—আজকের নবীন আগামীর প্রবীণ। জীবনচক্রের এই ধাপ সবাইকে অতিক্রম করতে হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে।
এটাই মহাকালের নিয়ম। কারণ গবেষণালব্ধ উপাত্ত বলে, মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ হঠাৎ মারা যায়। বাকিরা অল্প অথবা বেশি দিন ভুগে ভুগে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। এখন জরাকে একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
আপনার বাড়ির প্রবীণ সদস্যটির যত্ন করা প্রকৃত অর্থে আপনার নিজের জন্যই বিনিয়োগ। কারণ, আজ আপনার আচরণ দেখে আপনার সন্তান শিখবে, আগামী বার্ধক্যে আপনার প্রতি তার আচরণ কেমন হবে!
প্যালিয়েটিভ কেয়ার জরাগ্রস্ত প্রবীণের সম্পূর্ণ যত্ন ও তাঁর পারিবারিক সেবাকারীর পরিচর্যার কথাও বলে। জনস্বাস্থ্যের নতুন তত্ত্ব বলে ‘মমতাময় সমাজ’ গঠনের কথা। গুগল সার্চ করলে দেখবেন সহানুভূতিশীল কমিউনিটি বা সিটি চার্টার।
প্রবীণ সেবা একটি বিচ্ছিন্ন দিনের উদ্যাপনের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি লাভ করুক। কারণ, আজ যদি আমি প্রবীণকে সেবা না দিই, নিজে যেদিন প্রবীণ হব, সেদিন আমাকে সেবা করার কেউ থাকবে না। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের জনসংখ্যা পিরামিড খেয়াল করলে দেখবেন, বর্তমানে নবীন জনসংখ্যা অধিক। আগামী ৩০ বছর পরেই বাংলাদেশ প্রবীণ জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত হবে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নই। তাই এখন থেকে প্রবীণ সেবা হওয়া প্রয়োজন একটি সামাজিক আন্দোলন।
কারণ, কে না জানে, দিন শেষে আমরা কেউই স্বাধীন নই, পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল।
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, চিকিৎসক, কাউন্সেলর সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বাংলাদেশ এবং সদস্যসচিব, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ
জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব প্রবীণ দিবস ছিল ১ অক্টোবর। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় প্রবীণদের জন্য প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রজন্মের ভূমিকা’। একজন প্রবীণের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক—স্বাস্থ্যের এই সম্পূর্ণ আঙ্গিকেই যত্নের প্রয়োজন হয়।
প্রবীণদের স্বাস্থ্য এমনিতেই বৈশ্বিক চালচিত্রে অবহেলিত। তার মধ্যে যদি তিনি নারী হয়ে থাকেন, মেনোপজ দৈহিক স্বাস্থ্যকে বিপন্নতর করে। পুরুষদের মধ্যেও স্বল্পসংখ্যক মানুষ মেনোপজের মধ্য দিয়ে যান। কিন্তু সে সম্পর্কে মোটেও সচেতনতা নেই। বাংলাদেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিশু বিশেষজ্ঞ হওয়ার পড়াশোনা থাকলেও প্রবীণ বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম সম্বলিত চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগটি এখনো চালু হয়নি। এর থেকেই বোঝা যায় প্রবীণ সেবার গুরুত্ব।
এবার আসুন প্রবীণের মনের দুয়ারে উঁকি দিই। বাংলাদেশে বউ-শাশুড়ির অম্ল-মধুর সম্পর্ক যে টানাপোড়েনের জন্ম দেয়, সেটি মোকাবিলায় একজন প্রবীণ নারী মানসিকভাবে কতটুকু প্রস্তুত? একে তো মনোদৈহিক পরিবর্তন, তার সঙ্গে ক্রমাগত বার্ধক্যের অপরিচিত ভয়, মৃত্যুর গুটি গুটি এগিয়ে আসার গন্ধ প্রবীণকে সন্ত্রস্ত করে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে কখনো কথা হয় না। প্রবীণদের মধ্যে বিষণ্নতার হার বেশি। কিন্তু আমরা মনে করি, সবাইকে মমতা বিলানোই প্রবীণটির কাজ। ওনারও তো মমতার প্রয়োজন হয় কখনো কখনো, সে কথা যেন চারপাশের মানুষ ভুলে যায়। এই লেখা যাঁরা পড়ছেন, অন্তত একজন প্রবীণকে জড়িয়ে ধরে বলুন, ভালোবাসি।
বাংলাদেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিশু বিশেষজ্ঞ হওয়ার পড়াশোনা থাকলেও প্রবীণ বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম সম্বলিত কোনো বিভাগ নেই।
এবার সামাজিক স্বাস্থ্য দেখতে গেলে দেখব, বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবীণ নারীর নিজস্ব ঠিকানা নেই। শৈশবে বাপের বাড়ি, যৌবনে স্বামীর বাড়ি আর বার্ধক্যে ছেলের বাড়ি হয় ঠিকানা। নিজের একটি স্থায়ী আস্তানা না থাকার মানসিক অবসাদ কতটুকু বিপর্যস্ত করতে পারে একজন মানুষকে, সেটা যৌবনে বোঝা দুঃসাধ্য। অথচ আমরা ভুলে যাই—আজকের নবীন আগামীর প্রবীণ। জীবনচক্রের এই ধাপ সবাইকে অতিক্রম করতে হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে।
এটাই মহাকালের নিয়ম। কারণ গবেষণালব্ধ উপাত্ত বলে, মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ হঠাৎ মারা যায়। বাকিরা অল্প অথবা বেশি দিন ভুগে ভুগে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। এখন জরাকে একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
আপনার বাড়ির প্রবীণ সদস্যটির যত্ন করা প্রকৃত অর্থে আপনার নিজের জন্যই বিনিয়োগ। কারণ, আজ আপনার আচরণ দেখে আপনার সন্তান শিখবে, আগামী বার্ধক্যে আপনার প্রতি তার আচরণ কেমন হবে!
প্যালিয়েটিভ কেয়ার জরাগ্রস্ত প্রবীণের সম্পূর্ণ যত্ন ও তাঁর পারিবারিক সেবাকারীর পরিচর্যার কথাও বলে। জনস্বাস্থ্যের নতুন তত্ত্ব বলে ‘মমতাময় সমাজ’ গঠনের কথা। গুগল সার্চ করলে দেখবেন সহানুভূতিশীল কমিউনিটি বা সিটি চার্টার।
প্রবীণ সেবা একটি বিচ্ছিন্ন দিনের উদ্যাপনের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি লাভ করুক। কারণ, আজ যদি আমি প্রবীণকে সেবা না দিই, নিজে যেদিন প্রবীণ হব, সেদিন আমাকে সেবা করার কেউ থাকবে না। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের জনসংখ্যা পিরামিড খেয়াল করলে দেখবেন, বর্তমানে নবীন জনসংখ্যা অধিক। আগামী ৩০ বছর পরেই বাংলাদেশ প্রবীণ জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত হবে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নই। তাই এখন থেকে প্রবীণ সেবা হওয়া প্রয়োজন একটি সামাজিক আন্দোলন।
কারণ, কে না জানে, দিন শেষে আমরা কেউই স্বাধীন নই, পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীল।
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, চিকিৎসক, কাউন্সেলর সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বাংলাদেশ এবং সদস্যসচিব, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ
ডেস্কে বসে কপের খবর নেওয়া আর আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মধ্যে যেন তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল আনিকা তাবাসসুমের কথা। এই মুহূর্তে তিনি আছেন আজারবাইজানের বাকুতে। এত এত অ্যাপের দুনিয়ায় তাঁকে ধরা কি খুব কঠিন? চেষ্টা করতেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল উত্তর। আমরাও চটপট কথা বলে ফেললাম আনিকার সঙ্গে।
৩ দিন আগেবাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন এখন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এই বিশালসংখ্যক শ্রমিকের মধ্যে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন বা ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী...
৩ দিন আগেআরব অঞ্চলের দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী খেলা উটের দৌড়। একসময় আমাদের দেশে যেমন ঘোড়দৌড় হতো, বিষয়টি তেমনই। সেখানে শুধু ঘোড়ার বদলে থাকে উট। সে উট যাঁরা চালনা করেন, তাঁরা হলেন জকি। এত দিন জকি হিসেবে সৌদি আরবে ছিল পুরুষদের দাপট। দেশটিতে সেই প্রচলিত প্রথা অবশ্য ভেঙেছে ২০২২ সালে...
৩ দিন আগেঅ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিনের আবিষ্কার মানবজাতিকে স্বস্তি দিয়েছিল। তারপর আবিষ্কৃত হয় ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে কর্মক্ষম অ্যান্টিবায়োটিক নাইস্ট্যাটিন। এটির সঙ্গে যুক্ত আছে রাচেল ফুলার ব্রাউন এবং তাঁর সহযোগী এলিজাবেথ হ্যাজেনের নাম। এই দুজনের আবিষ্কারটি ছিল ছত্রাকজনিত রোগের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর
৩ দিন আগে