Ajker Patrika

বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ...

ফিচার ডেস্ক
বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ...

সালটা ১৯৭১। যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে বাংলাদেশে। বিশ্ব ধীরে ধীরে দেখছে গণহত্যার ভয়াবহতা। শিল্পীরা গাইছেন, কবি-সাহিত্যিকেরা লিখছেন। নিজেদের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করছেন সেই বর্বরতার। ঠিক সেই সময়, মার্চের ভয়াবহ রাতের কথা স্মরণ করে এক শিল্পী লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ,/ সূর্য যখন পশ্চিমে ডুবে যায়,/ মরে যায় বাংলাদেশের কোটি মানুষ।’

সেই শিল্পীর নাম জোয়ান বায়েজ। মনে পড়ে এই নাম? তাঁর লেখা ও গাওয়া গানটি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে গাওয়া গানগুলোর অন্যতম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি লিখেছিলেন ‘স্টোরি অব বাংলাদেশ’। পরে গানটি তাঁর ‘কাম ফ্রম দ্য শ্যাডো’ (১৯৭২) অ্যালবামে ‘সং অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। গানটিতে তিনি ২২ বার বাংলাদেশ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন।

১৯৪১ সালের ৪ জানুয়ারি জন্ম জোয়ান চান্দোস বায়েজের। ৫৭ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি গান গেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত ইতিহাসে শীর্ষস্থানীয় গায়কদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এ ছাড়া জোয়ান একাধারে গীতিকার ও মানবাধিকারকর্মী। শান্তি ও পরিবেশবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রেও বিশিষ্ট কর্মী হিসেবে পরিচিত তিনি। জোয়ান বায়েজ ১৯৫৯ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬০ সালে তাঁর প্রথম গানের অ্যালবাম ‘জোয়ান বায়েজ’ প্রকাশিত হয়। প্রায় ছয় দশকের সংগীতজীবনে তিনি ৩০টির বেশি অ্যালবাম তৈরি করেন। একসময় মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘লোকগীতির রানি’ হিসেবে। বিখ্যাত ‘টাইম’ ম্যাগাজিন তাঁকে উল্লেখ করে ‘ম্যাডোনা অব ফোক’ বলে।

মূলত জোয়ান গানকেই তাঁর প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সে সময় তাঁর বৈচিত্র্যময় কণ্ঠ ও রাজনৈতিক সক্রিয়তার ব্যাপক প্রভাব ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে। বলা হয়ে থাকে, শিল্পীদের মাঝে জোয়ানই প্রথম নিজের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে মানুষের মুক্তি ও শান্তির কথা বলতে গানকে ব্যবহার করেছিলেন।

১৯৫৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টো উচ্চবিদ্যালয়ে অসামরিক প্রতিরোধব্যবস্থার জন্য স্কুলত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রতিবাদ করেন জোয়ান। সংগীতজীবনের প্রথম থেকে তিনি মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। একসময় সরকারকে কর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে রেভিনিউ সার্ভিসকে চিঠি দেন তিনি। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি যুদ্ধে বিশ্বাসী নই, আমি যুদ্ধের অস্ত্রে বিশ্বাসী নই, আমি আমার এক বছরের আয়করের ৬০ শতাংশ অস্ত্রের জন্য খরচ হতে দেব না।’

জোয়ান বায়েজ ষাটের দশকের নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে লাইভ পারফর্ম করা থেকে অবসর নেন তিনি।

জোয়ান বায়েজ বাংলাদেশের সেই সব শুভাকাঙ্ক্ষীর মধ্যে একজন, যিনি হাজার মাইল দূরে থেকেও এ দেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। জোয়ানের মতো শিল্পীদের প্রতিবাদী আওয়াজ আজও বাংলাদেশের মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীর বুকে তারা অবাঞ্ছিত নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত