কল্যাণ বিবেচনায় মাও সন্তানের অভিভাবকত্ব পেতে পারেন

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ০৮: ২৭
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ৩২

প্রশ্ন: আমার স্বামীর সঙ্গে কয়েক মাসের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যাবে। আমরা এক বছর ধরে আলাদা থাকি এবং আমাদের মধ্যে যোগাযোগ নেই। আমার একটি ৯ বছরের ছেলেসন্তান আছে। ডিভোর্স হয়ে গেলে আমার ছেলেকে সে পাবে আইন অনুসারে। কিন্তু সে বিদেশে থাকে বলে সন্তানের দেখাশোনা করতে পারবে না। হয়তো তার পরিবারের মানুষেরা দেখবে কিংবা হোস্টেলে রাখবে। আমি জানতে চাই, সন্তানকে আমার কাছে রাখার কোনো উপায় কি আছে, যেহেতু সে বিদেশে থাকে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা 

উত্তর: আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও কাস্টডি–দুটিই বাবা পান। কিন্তু না। সন্তানের কল্যাণ বিবেচনা করে আদালত মায়ের কাছে সন্তানের অভিভাবকত্ব ও কাস্টডি–দুটিই দিতে পারেন। এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমাদের দেশে ‘অভিভাবক ও প্রতিপালন আইন’-১৮৯০ এবং পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫’ রয়েছে। 

কাজেই আপনার ছেলের বয়স ৯ বছর হলেও আদালত যদি মনে করেন, সন্তানের কল্যাণের জন্য তার বাবার চেয়ে উত্তম, তাহলে আপনি কাস্টডি পাবেন । 

দেশে প্রচলিত আইন এবং মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী অভিভাবকত্ব মূলত তিন ধরনের, ক) নাবালকের জীবনের, খ) সম্পত্তির এবং গ) জীবন ও সম্পত্তি উভয়ের। অভিভাবকত্ব ও প্রতিপাল্য আইনে অভিভাবকত্ব ও কাস্টডিকে আলাদা দেখানো হয়নি। যদিও মুসলিম শরিয়া আইনে বিষয় দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে বাবাই সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক। তবে কাস্টডিয়ানের ক্ষেত্রে ছেলেসন্তানের বেলায় সন্তানের বয়স ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়েসন্তানের বেলায় সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত সন্তানের কাস্টডি মায়ের কাছে থাকবে। 

মা-বাবার বিচ্ছেদের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও সে তার বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণের খরচ পাবে। এ জন্য মা যদি আদালতের দ্বারস্থ হন, তখন আদালত পিতার প্রতি সন্তানের ভরণপোষণের আদেশ দিতে পারেন। 

এখানে পারিবারিক মুসলিম আইনও বাদ দেওয়া যাবে না। সন্তানের বয়স ৭ বছরের অধিক হলে সন্তানের মতামত নিয়ে আদালতও সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। আবার  বাবা যদি অসিয়ত করেন বা আদালত যদি ঘোষণা করেন, সে ক্ষেত্রেও মা অভিভাবক হতে পারেন। 

অভিভাবকত্ব ও প্রতিপাল্য আইন, ১৯৮০ অনুযায়ী একমাত্র আদালতই পারেন  নাবালকের অভিভাবকত্ব ঘোষণা এবং নিয়োগ করতে। মুসলিম শরিয়া আইন অনুসারে বাবার অনুপস্থিতিতে দাদা বা পরিবারের অন্য পুরুষ অভিভাবকত্ব লাভ করবেন। তবে সন্তানের কাস্টডি রাখার ক্ষেত্রে মা সব সময় প্রাধান্য পাবেন।

মা-বাবার বিচ্ছেদের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও সে তার বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণের খরচ পাবে। এ জন্য মা যদি আদালতের দ্বারস্থ হন, তখন আদালত পিতার প্রতি সন্তানের ভরণপোষণের আদেশ দিতে পারেন। লেখাপড়া ও চিকিৎসাসহ সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচ বাবার উপার্জন অনুযায়ী আদালত নির্ধারণ করে দিতে পারেন। অথবা বাবা-মা একত্রে বসে সমঝোতা করে নিতে পারেন। আইনগতভাবে মা এই সুযোগ পেতে পারেন।

আর কোনোভাবেই ছেলের বাবাকে না জানিয়ে ছেলেকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে না। কারণ, ছেলেকে দেখার অধিকার  তার বাবারও আছে। এ ছাড়া ছেলের ভিসাসংক্রান্ত বিষয়ে বাবা-মায়ের সম্মতিপত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দেওয়ার আইনগত বিধান রয়েছে।

পরামর্শ দিয়েছেন, ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন, অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত