কামরুল হাসান

গভীর রাতের আদুরে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজধানীর মানুষ। শুধু অভিজাত পাড়ার একটি ক্লাবে জেগে আছে শ-দুয়েক তরুণ-তরুণী। ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোরে রঙিন আলোর নিচে কানফাটা মিউজিকের তালে চলছে উদ্দাম নাচ। সবাই মত্ত সেই ভিনদেশি নাচের তালে। মিউজিক থামিয়ে হঠাৎ ঘোষণা: ‘দ্রুত হল ত্যাগ করুন।’ বিপদ বুঝে যে যার মতো বেরিয়ে এলেন। নিচে নেমে দেখেন, লিফটের পাশে কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ এক যুবক। একটু পরে কাতরানিও থেমে গেল। নিভে গেল যুবকের জীবনপ্রদীপ। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুটোর ঘর পেরিয়ে গেছে। তারিখ: ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৮।
কী হলো, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেশের ইতিহাসে একটি আলোচিত খুন হয়ে গেল চোখের নিমেষে। মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা নিহত যুবককে পাশ ফেরাতেই পরিচয় বেরিয়ে এল। তিনি আর কেউ নন, শিল্পপতির পুত্র, ব্যবসায়ী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। খবরের কাগজগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আলোচনায় উঠে এল উচ্চবিত্তদের বিনোদনকেন্দ্রের নাম ‘ক্লাব ট্রাম্পস’।
ঢাকায় তখন ‘নাইট ক্লাব’ কালচার সীমাবদ্ধ ছিল শুধু পাঁচতারকা হোটেলে। দুটি পাঁচতারকা হোটেলে সপ্তাহের এক দিন ডিসকো হতো। এর বাইরে মতিঝিল এলাকার একটি তিনতারকা হোটেলেও শুরু হয় ডিসকো নাচ। মদপানের সঙ্গে চড়া মিউজিকের তালে নাচানাচি। বিত্তশালী পরিবারের কমবয়সী তরুণেরা সেখানে ভিড় করতে শুরু করেন। তাই দেখে অভিজাত পাড়া বনানীর আবেদিন টাওয়ারের সাততলার বিশাল ফ্লোরজুড়ে শুরু হয় ক্লাব ট্রাম্পসের যাত্রা।
ক্লাবটির নাম কেন ট্রাম্পস, সে রহস্য ভেদ হয়নি। তবে এটা জানা যায়, আবেদিন টাওয়ারের মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল যোগ ও শরীরচর্চাকেন্দ্র তৈরির কথা বলে। সেই মতো ফ্লোর সাজানো এবং মিউজিক সিস্টেম বসানো হয়। এরপর শুরু হয় অবৈধ পন্থায় মদ কেনাবেচা। উঠতি তরুণেরা ভিড় করতে শুরু করেন সেখানে। চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই সেখানে নিয়মিত আসতেন। প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহও ছিলেন এই তালিকায়। তবে সবচেয়ে বেশি শোনা যেত অভিনেতা নাদের চৌধুরীর নাম।
ক্লাব ট্রাম্পসের মূল আয়োজক ছিলেন অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক মর্নিং সানের মালিক ববি ইসলামের ছোট ভাই আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম। তিনি ছিলেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু। তাঁর বড় ভাই ববি ইসলামের মেয়ে নওরিনকে বিয়ে করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সেই সুবাদে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চাচাশ্বশুর বান্টি ইসলাম। বান্টি তখন ডিশ ব্যবসাও চালাতেন।
ক্লাব ট্রাম্পস জমে ওঠার পরপরই নানা ধরনের উটকো ঝামেলা শুরু হয়। বিশেষ করে বনানীর বাসিন্দারা ক্লাব নিয়ে আপত্তি তোলেন। সংবাদপত্রে লেখালেখি হতে থাকে। একপর্যায়ে বান্টিকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তিনি তাঁর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক কাজে লাগান। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কয়েকজন ক্লাবে নিয়মিত আসতে শুরু করেন। সেই তালিকায় ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও লেদার লিটন।
ক্লাব ট্রাম্পসে যেদিন গুলি হয়, সেই রাতে রাজধানীর আর সব আমজনতার মতো আমিও ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোর হতে না হতেই সাংবাদিক-বন্ধুদের ফোন। বড় খুন হয়েছে—ছুটতে হবে। গেলাম বনানীর আবেদিন টাওয়ারে। থানা আর গোয়েন্দা পুলিশের কড়া পাহারা। পুরো ভবনে চলছে চিরুনি তল্লাশি।
ক্লাবের সামনের রাস্তায় রক্তের দাগ। সেই দাগ দেখে মনে হচ্ছিল, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সোহেল চৌধুরী বনানীর কাঁচাবাজারের সামনের মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। এই মসজিদের সামনের বাড়িটিই তাঁদের। এ বাড়িতেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পুরোনো বাড়িটি এখনো সে রকমই আছে।
সোহেলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা। তিনি বললেন, ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের সমর্থন আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। সেই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন দুজন। যাঁদের একজনের নাম তারেক আহমেদ চৌধুরী। ত্রিপুরার সাংবাদিক অনিল ভট্টাচার্যের লেখা ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা’ বইয়ে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে মফিদুল হকের প্রতিষ্ঠান সাহিত্য প্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর সেই সফরসঙ্গী তারেক আহমেদ চৌধুরীই হলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর বাবা।
সোহেলের ছোটবেলার গল্প বললেন তিনি। সোহেলের ডাক নাম ছিল সুলু। আসল নাম সোলাইমান চৌধুরী। ছোটবেলায় বেশি খেতেন বলে এই নাম দিয়েছিলেন মা। তাঁর চলচ্চিত্রের নাম সোহেল চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহেলই ছোট।
সোহেলদের দাদার বাড়ি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে। পরে ঢাকার বনানীতে থিতু হন। দাদা ছিলেন এফডিসির তৎকালীন পরিচালক। তিনি ছেলেকে বিদেশে লেখাপড়া করান। দেশে ফিরে তারেক আহমেদ চৌধুরী ব্যবসায় মনোযোগ দেন।
সোহেল ও তাঁর ভাই পড়তেন শাহিন স্কুলে। এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন তিতুমীর কলেজে। কলেজে ওঠার আগে থেকেই সোহেল ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনকে অনুসরণ করতেন। তাঁর মতো চুলও কাটতেন। কলেজের মেয়েরা তাঁকে ডাকতেন অমিতাভ বলে।
কলেজে পড়ার সময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে টেকনোভিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ডিশ ব্যবসা শুরু করেন সোহেল। এরপর শুরু করেন দেশি বাংলা সিনেমা কিনে ভিডিও ক্যাসেটে রূপান্তরের কাজ। এই ব্যবসায় শত শত বাংলা সিনেমা সস্তায় কিনে বিদেশ থেকে ভিডিও ক্যাসেট করেন। ব্যবসাটা অল্প দিনে বড় হয়ে যায়। লন্ডনে কোম্পানির অফিস খোলেন।
১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধান’ নামে অভিনেতা-অভিনেত্রীর খোঁজ করে চলচ্চিত্র মহল। সোহেল চৌধুরী মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রথম ছবি মুক্তি পায়। ছবির পরিচালক এফ কবির চৌধুরী। সিনেমায় এসেই নায়িকা দিতির প্রেমে পড়েন সোহেল। সে বছরই তাঁকে বিয়ে করেন। পরের বছর জন্ম হয় তাঁদের প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরীর। কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় ফিরে এসে ব্যবসা করছেন লামিয়া। ১৯৮৯ সালে তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান সাফায়েত আহমেদ চৌধুরীর জন্ম। সাফায়েত এখন নেদারল্যান্ডসে মিউজিক নিয়ে ব্যবসা করেন। তবে সোহেল-দিতির সুখের সংসার খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। দিতি এরপর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করেন। সে সংসারও টেকেনি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ মারা যান দিতি। তবে দিতির সঙ্গে বিচ্ছেদের পরই একা হয়ে যান সোহেল। মূলত বিচ্ছেদের পর দিতির ক্যারিয়ার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হলেও সোহেল আর এগোতে পারেননি। এতে বিষণ্ন সোহেলের গোছানো জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
ক্লাব ট্রাম্পস ওঠানো নিয়ে বনানীর বাসিন্দারা তখন এককাট্টা। সোহেলও তাঁদের সঙ্গে। এ নিয়ে বান্টির সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। সোহেলের পরিবারের কাছে অভিযোগও করেন বান্টি। ক্লাব ট্রাম্পসের ভেতর একদিন মদ্যপ অবস্থায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইের গায়ে হাত তোলেন সোহেল। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এর পর থেকেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যায় ক্লাব ট্রাম্পসে।
ঘটনার দিন রাত দুটোর দিকে চার বন্ধুকে নিয়ে ক্লাব ট্রাম্পসে আসেন সোহেল। ক্লাবের নিচেই কলাপসিবল গেটের কাছে দুই যুবক তাঁদের গতি রোধ করেন। এক যুবক বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। এক যুবক কোমরে বাঁধা হোলস্টার থেকে রিভলবার তুলে গুলি চালান। মাত্র একটি গুলি লাগে সোহেলের বুকে। লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসক জানিয়ে দেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। পুলিশ এরপর ক্লাবের ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। সোহেলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা আসে ডিবিতে। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। এর তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেপ্তার করে এসবি। আসামিদের একজন আদনান সিদ্দিকি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাতে উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের আগে এক শিল্পপতির ফোন পেয়ে ঢাকা ক্লাব থেকে ঘটনাস্থলে যান তিনি।
১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়াও তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে অভিযুক্ত করা হয়।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর মামলাটির অভিযোগ গঠিত হয়। বিচারের জন্য পাঠানো হয় দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে তারিক সাঈদ মামুন হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর হাইকোর্টের বেঞ্চ ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি আদেশ দেন। এতে বলা হয়, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এরপর থেকে সেভাবেই পড়ে আছে মামলাটি। রাষ্ট্রপক্ষ আর খোঁজ করেনি একসময়ের জনপ্রিয় এই নায়ক খুনের কী হলো। সোহেলের বড় ভাই সেই আক্ষেপই করলেন।
আরও পড়ুন:

গভীর রাতের আদুরে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজধানীর মানুষ। শুধু অভিজাত পাড়ার একটি ক্লাবে জেগে আছে শ-দুয়েক তরুণ-তরুণী। ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোরে রঙিন আলোর নিচে কানফাটা মিউজিকের তালে চলছে উদ্দাম নাচ। সবাই মত্ত সেই ভিনদেশি নাচের তালে। মিউজিক থামিয়ে হঠাৎ ঘোষণা: ‘দ্রুত হল ত্যাগ করুন।’ বিপদ বুঝে যে যার মতো বেরিয়ে এলেন। নিচে নেমে দেখেন, লিফটের পাশে কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ এক যুবক। একটু পরে কাতরানিও থেমে গেল। নিভে গেল যুবকের জীবনপ্রদীপ। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুটোর ঘর পেরিয়ে গেছে। তারিখ: ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৮।
কী হলো, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেশের ইতিহাসে একটি আলোচিত খুন হয়ে গেল চোখের নিমেষে। মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা নিহত যুবককে পাশ ফেরাতেই পরিচয় বেরিয়ে এল। তিনি আর কেউ নন, শিল্পপতির পুত্র, ব্যবসায়ী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। খবরের কাগজগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আলোচনায় উঠে এল উচ্চবিত্তদের বিনোদনকেন্দ্রের নাম ‘ক্লাব ট্রাম্পস’।
ঢাকায় তখন ‘নাইট ক্লাব’ কালচার সীমাবদ্ধ ছিল শুধু পাঁচতারকা হোটেলে। দুটি পাঁচতারকা হোটেলে সপ্তাহের এক দিন ডিসকো হতো। এর বাইরে মতিঝিল এলাকার একটি তিনতারকা হোটেলেও শুরু হয় ডিসকো নাচ। মদপানের সঙ্গে চড়া মিউজিকের তালে নাচানাচি। বিত্তশালী পরিবারের কমবয়সী তরুণেরা সেখানে ভিড় করতে শুরু করেন। তাই দেখে অভিজাত পাড়া বনানীর আবেদিন টাওয়ারের সাততলার বিশাল ফ্লোরজুড়ে শুরু হয় ক্লাব ট্রাম্পসের যাত্রা।
ক্লাবটির নাম কেন ট্রাম্পস, সে রহস্য ভেদ হয়নি। তবে এটা জানা যায়, আবেদিন টাওয়ারের মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল যোগ ও শরীরচর্চাকেন্দ্র তৈরির কথা বলে। সেই মতো ফ্লোর সাজানো এবং মিউজিক সিস্টেম বসানো হয়। এরপর শুরু হয় অবৈধ পন্থায় মদ কেনাবেচা। উঠতি তরুণেরা ভিড় করতে শুরু করেন সেখানে। চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই সেখানে নিয়মিত আসতেন। প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহও ছিলেন এই তালিকায়। তবে সবচেয়ে বেশি শোনা যেত অভিনেতা নাদের চৌধুরীর নাম।
ক্লাব ট্রাম্পসের মূল আয়োজক ছিলেন অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক মর্নিং সানের মালিক ববি ইসলামের ছোট ভাই আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম। তিনি ছিলেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু। তাঁর বড় ভাই ববি ইসলামের মেয়ে নওরিনকে বিয়ে করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সেই সুবাদে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চাচাশ্বশুর বান্টি ইসলাম। বান্টি তখন ডিশ ব্যবসাও চালাতেন।
ক্লাব ট্রাম্পস জমে ওঠার পরপরই নানা ধরনের উটকো ঝামেলা শুরু হয়। বিশেষ করে বনানীর বাসিন্দারা ক্লাব নিয়ে আপত্তি তোলেন। সংবাদপত্রে লেখালেখি হতে থাকে। একপর্যায়ে বান্টিকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তিনি তাঁর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক কাজে লাগান। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কয়েকজন ক্লাবে নিয়মিত আসতে শুরু করেন। সেই তালিকায় ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও লেদার লিটন।
ক্লাব ট্রাম্পসে যেদিন গুলি হয়, সেই রাতে রাজধানীর আর সব আমজনতার মতো আমিও ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোর হতে না হতেই সাংবাদিক-বন্ধুদের ফোন। বড় খুন হয়েছে—ছুটতে হবে। গেলাম বনানীর আবেদিন টাওয়ারে। থানা আর গোয়েন্দা পুলিশের কড়া পাহারা। পুরো ভবনে চলছে চিরুনি তল্লাশি।
ক্লাবের সামনের রাস্তায় রক্তের দাগ। সেই দাগ দেখে মনে হচ্ছিল, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সোহেল চৌধুরী বনানীর কাঁচাবাজারের সামনের মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। এই মসজিদের সামনের বাড়িটিই তাঁদের। এ বাড়িতেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পুরোনো বাড়িটি এখনো সে রকমই আছে।
সোহেলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা। তিনি বললেন, ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের সমর্থন আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। সেই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন দুজন। যাঁদের একজনের নাম তারেক আহমেদ চৌধুরী। ত্রিপুরার সাংবাদিক অনিল ভট্টাচার্যের লেখা ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা’ বইয়ে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে মফিদুল হকের প্রতিষ্ঠান সাহিত্য প্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর সেই সফরসঙ্গী তারেক আহমেদ চৌধুরীই হলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর বাবা।
সোহেলের ছোটবেলার গল্প বললেন তিনি। সোহেলের ডাক নাম ছিল সুলু। আসল নাম সোলাইমান চৌধুরী। ছোটবেলায় বেশি খেতেন বলে এই নাম দিয়েছিলেন মা। তাঁর চলচ্চিত্রের নাম সোহেল চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহেলই ছোট।
সোহেলদের দাদার বাড়ি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে। পরে ঢাকার বনানীতে থিতু হন। দাদা ছিলেন এফডিসির তৎকালীন পরিচালক। তিনি ছেলেকে বিদেশে লেখাপড়া করান। দেশে ফিরে তারেক আহমেদ চৌধুরী ব্যবসায় মনোযোগ দেন।
সোহেল ও তাঁর ভাই পড়তেন শাহিন স্কুলে। এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন তিতুমীর কলেজে। কলেজে ওঠার আগে থেকেই সোহেল ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনকে অনুসরণ করতেন। তাঁর মতো চুলও কাটতেন। কলেজের মেয়েরা তাঁকে ডাকতেন অমিতাভ বলে।
কলেজে পড়ার সময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে টেকনোভিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ডিশ ব্যবসা শুরু করেন সোহেল। এরপর শুরু করেন দেশি বাংলা সিনেমা কিনে ভিডিও ক্যাসেটে রূপান্তরের কাজ। এই ব্যবসায় শত শত বাংলা সিনেমা সস্তায় কিনে বিদেশ থেকে ভিডিও ক্যাসেট করেন। ব্যবসাটা অল্প দিনে বড় হয়ে যায়। লন্ডনে কোম্পানির অফিস খোলেন।
১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধান’ নামে অভিনেতা-অভিনেত্রীর খোঁজ করে চলচ্চিত্র মহল। সোহেল চৌধুরী মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রথম ছবি মুক্তি পায়। ছবির পরিচালক এফ কবির চৌধুরী। সিনেমায় এসেই নায়িকা দিতির প্রেমে পড়েন সোহেল। সে বছরই তাঁকে বিয়ে করেন। পরের বছর জন্ম হয় তাঁদের প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরীর। কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় ফিরে এসে ব্যবসা করছেন লামিয়া। ১৯৮৯ সালে তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান সাফায়েত আহমেদ চৌধুরীর জন্ম। সাফায়েত এখন নেদারল্যান্ডসে মিউজিক নিয়ে ব্যবসা করেন। তবে সোহেল-দিতির সুখের সংসার খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। দিতি এরপর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করেন। সে সংসারও টেকেনি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ মারা যান দিতি। তবে দিতির সঙ্গে বিচ্ছেদের পরই একা হয়ে যান সোহেল। মূলত বিচ্ছেদের পর দিতির ক্যারিয়ার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হলেও সোহেল আর এগোতে পারেননি। এতে বিষণ্ন সোহেলের গোছানো জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
ক্লাব ট্রাম্পস ওঠানো নিয়ে বনানীর বাসিন্দারা তখন এককাট্টা। সোহেলও তাঁদের সঙ্গে। এ নিয়ে বান্টির সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। সোহেলের পরিবারের কাছে অভিযোগও করেন বান্টি। ক্লাব ট্রাম্পসের ভেতর একদিন মদ্যপ অবস্থায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইের গায়ে হাত তোলেন সোহেল। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এর পর থেকেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যায় ক্লাব ট্রাম্পসে।
ঘটনার দিন রাত দুটোর দিকে চার বন্ধুকে নিয়ে ক্লাব ট্রাম্পসে আসেন সোহেল। ক্লাবের নিচেই কলাপসিবল গেটের কাছে দুই যুবক তাঁদের গতি রোধ করেন। এক যুবক বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। এক যুবক কোমরে বাঁধা হোলস্টার থেকে রিভলবার তুলে গুলি চালান। মাত্র একটি গুলি লাগে সোহেলের বুকে। লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসক জানিয়ে দেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। পুলিশ এরপর ক্লাবের ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। সোহেলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা আসে ডিবিতে। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। এর তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেপ্তার করে এসবি। আসামিদের একজন আদনান সিদ্দিকি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাতে উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের আগে এক শিল্পপতির ফোন পেয়ে ঢাকা ক্লাব থেকে ঘটনাস্থলে যান তিনি।
১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়াও তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে অভিযুক্ত করা হয়।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর মামলাটির অভিযোগ গঠিত হয়। বিচারের জন্য পাঠানো হয় দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে তারিক সাঈদ মামুন হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর হাইকোর্টের বেঞ্চ ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি আদেশ দেন। এতে বলা হয়, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এরপর থেকে সেভাবেই পড়ে আছে মামলাটি। রাষ্ট্রপক্ষ আর খোঁজ করেনি একসময়ের জনপ্রিয় এই নায়ক খুনের কী হলো। সোহেলের বড় ভাই সেই আক্ষেপই করলেন।
আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

গভীর রাতের আদুরে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজধানীর মানুষ। শুধু অভিজাত পাড়ার একটি ক্লাবে জেগে আছে শ-দুয়েক তরুণ-তরুণী। ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোরে রঙিন আলোর নিচে কানফাটা মিউজিকের তালে চলছে উদ্দাম নাচ। সবাই মত্ত সেই ভিনদেশি নাচের তালে। মিউজিক থামিয়ে হঠাৎ ঘোষণা: ‘দ্রুত হল ত্যাগ করুন।’ বিপদ বুঝে যে যার মতো বেরিয়ে এলেন। নিচে নেমে দেখেন, লিফটের পাশে কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ এক যুবক। একটু পরে কাতরানিও থেমে গেল। নিভে গেল যুবকের জীবনপ্রদীপ। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুটোর ঘর পেরিয়ে গেছে। তারিখ: ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৮।
কী হলো, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেশের ইতিহাসে একটি আলোচিত খুন হয়ে গেল চোখের নিমেষে। মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা নিহত যুবককে পাশ ফেরাতেই পরিচয় বেরিয়ে এল। তিনি আর কেউ নন, শিল্পপতির পুত্র, ব্যবসায়ী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। খবরের কাগজগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আলোচনায় উঠে এল উচ্চবিত্তদের বিনোদনকেন্দ্রের নাম ‘ক্লাব ট্রাম্পস’।
ঢাকায় তখন ‘নাইট ক্লাব’ কালচার সীমাবদ্ধ ছিল শুধু পাঁচতারকা হোটেলে। দুটি পাঁচতারকা হোটেলে সপ্তাহের এক দিন ডিসকো হতো। এর বাইরে মতিঝিল এলাকার একটি তিনতারকা হোটেলেও শুরু হয় ডিসকো নাচ। মদপানের সঙ্গে চড়া মিউজিকের তালে নাচানাচি। বিত্তশালী পরিবারের কমবয়সী তরুণেরা সেখানে ভিড় করতে শুরু করেন। তাই দেখে অভিজাত পাড়া বনানীর আবেদিন টাওয়ারের সাততলার বিশাল ফ্লোরজুড়ে শুরু হয় ক্লাব ট্রাম্পসের যাত্রা।
ক্লাবটির নাম কেন ট্রাম্পস, সে রহস্য ভেদ হয়নি। তবে এটা জানা যায়, আবেদিন টাওয়ারের মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল যোগ ও শরীরচর্চাকেন্দ্র তৈরির কথা বলে। সেই মতো ফ্লোর সাজানো এবং মিউজিক সিস্টেম বসানো হয়। এরপর শুরু হয় অবৈধ পন্থায় মদ কেনাবেচা। উঠতি তরুণেরা ভিড় করতে শুরু করেন সেখানে। চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই সেখানে নিয়মিত আসতেন। প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহও ছিলেন এই তালিকায়। তবে সবচেয়ে বেশি শোনা যেত অভিনেতা নাদের চৌধুরীর নাম।
ক্লাব ট্রাম্পসের মূল আয়োজক ছিলেন অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক মর্নিং সানের মালিক ববি ইসলামের ছোট ভাই আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম। তিনি ছিলেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু। তাঁর বড় ভাই ববি ইসলামের মেয়ে নওরিনকে বিয়ে করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সেই সুবাদে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চাচাশ্বশুর বান্টি ইসলাম। বান্টি তখন ডিশ ব্যবসাও চালাতেন।
ক্লাব ট্রাম্পস জমে ওঠার পরপরই নানা ধরনের উটকো ঝামেলা শুরু হয়। বিশেষ করে বনানীর বাসিন্দারা ক্লাব নিয়ে আপত্তি তোলেন। সংবাদপত্রে লেখালেখি হতে থাকে। একপর্যায়ে বান্টিকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তিনি তাঁর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক কাজে লাগান। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কয়েকজন ক্লাবে নিয়মিত আসতে শুরু করেন। সেই তালিকায় ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও লেদার লিটন।
ক্লাব ট্রাম্পসে যেদিন গুলি হয়, সেই রাতে রাজধানীর আর সব আমজনতার মতো আমিও ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোর হতে না হতেই সাংবাদিক-বন্ধুদের ফোন। বড় খুন হয়েছে—ছুটতে হবে। গেলাম বনানীর আবেদিন টাওয়ারে। থানা আর গোয়েন্দা পুলিশের কড়া পাহারা। পুরো ভবনে চলছে চিরুনি তল্লাশি।
ক্লাবের সামনের রাস্তায় রক্তের দাগ। সেই দাগ দেখে মনে হচ্ছিল, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সোহেল চৌধুরী বনানীর কাঁচাবাজারের সামনের মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। এই মসজিদের সামনের বাড়িটিই তাঁদের। এ বাড়িতেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পুরোনো বাড়িটি এখনো সে রকমই আছে।
সোহেলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা। তিনি বললেন, ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের সমর্থন আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। সেই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন দুজন। যাঁদের একজনের নাম তারেক আহমেদ চৌধুরী। ত্রিপুরার সাংবাদিক অনিল ভট্টাচার্যের লেখা ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা’ বইয়ে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে মফিদুল হকের প্রতিষ্ঠান সাহিত্য প্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর সেই সফরসঙ্গী তারেক আহমেদ চৌধুরীই হলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর বাবা।
সোহেলের ছোটবেলার গল্প বললেন তিনি। সোহেলের ডাক নাম ছিল সুলু। আসল নাম সোলাইমান চৌধুরী। ছোটবেলায় বেশি খেতেন বলে এই নাম দিয়েছিলেন মা। তাঁর চলচ্চিত্রের নাম সোহেল চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহেলই ছোট।
সোহেলদের দাদার বাড়ি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে। পরে ঢাকার বনানীতে থিতু হন। দাদা ছিলেন এফডিসির তৎকালীন পরিচালক। তিনি ছেলেকে বিদেশে লেখাপড়া করান। দেশে ফিরে তারেক আহমেদ চৌধুরী ব্যবসায় মনোযোগ দেন।
সোহেল ও তাঁর ভাই পড়তেন শাহিন স্কুলে। এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন তিতুমীর কলেজে। কলেজে ওঠার আগে থেকেই সোহেল ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনকে অনুসরণ করতেন। তাঁর মতো চুলও কাটতেন। কলেজের মেয়েরা তাঁকে ডাকতেন অমিতাভ বলে।
কলেজে পড়ার সময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে টেকনোভিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ডিশ ব্যবসা শুরু করেন সোহেল। এরপর শুরু করেন দেশি বাংলা সিনেমা কিনে ভিডিও ক্যাসেটে রূপান্তরের কাজ। এই ব্যবসায় শত শত বাংলা সিনেমা সস্তায় কিনে বিদেশ থেকে ভিডিও ক্যাসেট করেন। ব্যবসাটা অল্প দিনে বড় হয়ে যায়। লন্ডনে কোম্পানির অফিস খোলেন।
১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধান’ নামে অভিনেতা-অভিনেত্রীর খোঁজ করে চলচ্চিত্র মহল। সোহেল চৌধুরী মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রথম ছবি মুক্তি পায়। ছবির পরিচালক এফ কবির চৌধুরী। সিনেমায় এসেই নায়িকা দিতির প্রেমে পড়েন সোহেল। সে বছরই তাঁকে বিয়ে করেন। পরের বছর জন্ম হয় তাঁদের প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরীর। কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় ফিরে এসে ব্যবসা করছেন লামিয়া। ১৯৮৯ সালে তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান সাফায়েত আহমেদ চৌধুরীর জন্ম। সাফায়েত এখন নেদারল্যান্ডসে মিউজিক নিয়ে ব্যবসা করেন। তবে সোহেল-দিতির সুখের সংসার খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। দিতি এরপর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করেন। সে সংসারও টেকেনি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ মারা যান দিতি। তবে দিতির সঙ্গে বিচ্ছেদের পরই একা হয়ে যান সোহেল। মূলত বিচ্ছেদের পর দিতির ক্যারিয়ার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হলেও সোহেল আর এগোতে পারেননি। এতে বিষণ্ন সোহেলের গোছানো জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
ক্লাব ট্রাম্পস ওঠানো নিয়ে বনানীর বাসিন্দারা তখন এককাট্টা। সোহেলও তাঁদের সঙ্গে। এ নিয়ে বান্টির সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। সোহেলের পরিবারের কাছে অভিযোগও করেন বান্টি। ক্লাব ট্রাম্পসের ভেতর একদিন মদ্যপ অবস্থায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইের গায়ে হাত তোলেন সোহেল। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এর পর থেকেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যায় ক্লাব ট্রাম্পসে।
ঘটনার দিন রাত দুটোর দিকে চার বন্ধুকে নিয়ে ক্লাব ট্রাম্পসে আসেন সোহেল। ক্লাবের নিচেই কলাপসিবল গেটের কাছে দুই যুবক তাঁদের গতি রোধ করেন। এক যুবক বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। এক যুবক কোমরে বাঁধা হোলস্টার থেকে রিভলবার তুলে গুলি চালান। মাত্র একটি গুলি লাগে সোহেলের বুকে। লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসক জানিয়ে দেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। পুলিশ এরপর ক্লাবের ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। সোহেলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা আসে ডিবিতে। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। এর তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেপ্তার করে এসবি। আসামিদের একজন আদনান সিদ্দিকি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাতে উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের আগে এক শিল্পপতির ফোন পেয়ে ঢাকা ক্লাব থেকে ঘটনাস্থলে যান তিনি।
১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়াও তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে অভিযুক্ত করা হয়।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর মামলাটির অভিযোগ গঠিত হয়। বিচারের জন্য পাঠানো হয় দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে তারিক সাঈদ মামুন হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর হাইকোর্টের বেঞ্চ ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি আদেশ দেন। এতে বলা হয়, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এরপর থেকে সেভাবেই পড়ে আছে মামলাটি। রাষ্ট্রপক্ষ আর খোঁজ করেনি একসময়ের জনপ্রিয় এই নায়ক খুনের কী হলো। সোহেলের বড় ভাই সেই আক্ষেপই করলেন।
আরও পড়ুন:

গভীর রাতের আদুরে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজধানীর মানুষ। শুধু অভিজাত পাড়ার একটি ক্লাবে জেগে আছে শ-দুয়েক তরুণ-তরুণী। ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোরে রঙিন আলোর নিচে কানফাটা মিউজিকের তালে চলছে উদ্দাম নাচ। সবাই মত্ত সেই ভিনদেশি নাচের তালে। মিউজিক থামিয়ে হঠাৎ ঘোষণা: ‘দ্রুত হল ত্যাগ করুন।’ বিপদ বুঝে যে যার মতো বেরিয়ে এলেন। নিচে নেমে দেখেন, লিফটের পাশে কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ এক যুবক। একটু পরে কাতরানিও থেমে গেল। নিভে গেল যুবকের জীবনপ্রদীপ। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দুটোর ঘর পেরিয়ে গেছে। তারিখ: ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৮।
কী হলো, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেশের ইতিহাসে একটি আলোচিত খুন হয়ে গেল চোখের নিমেষে। মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা নিহত যুবককে পাশ ফেরাতেই পরিচয় বেরিয়ে এল। তিনি আর কেউ নন, শিল্পপতির পুত্র, ব্যবসায়ী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। খবরের কাগজগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আলোচনায় উঠে এল উচ্চবিত্তদের বিনোদনকেন্দ্রের নাম ‘ক্লাব ট্রাম্পস’।
ঢাকায় তখন ‘নাইট ক্লাব’ কালচার সীমাবদ্ধ ছিল শুধু পাঁচতারকা হোটেলে। দুটি পাঁচতারকা হোটেলে সপ্তাহের এক দিন ডিসকো হতো। এর বাইরে মতিঝিল এলাকার একটি তিনতারকা হোটেলেও শুরু হয় ডিসকো নাচ। মদপানের সঙ্গে চড়া মিউজিকের তালে নাচানাচি। বিত্তশালী পরিবারের কমবয়সী তরুণেরা সেখানে ভিড় করতে শুরু করেন। তাই দেখে অভিজাত পাড়া বনানীর আবেদিন টাওয়ারের সাততলার বিশাল ফ্লোরজুড়ে শুরু হয় ক্লাব ট্রাম্পসের যাত্রা।
ক্লাবটির নাম কেন ট্রাম্পস, সে রহস্য ভেদ হয়নি। তবে এটা জানা যায়, আবেদিন টাওয়ারের মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল যোগ ও শরীরচর্চাকেন্দ্র তৈরির কথা বলে। সেই মতো ফ্লোর সাজানো এবং মিউজিক সিস্টেম বসানো হয়। এরপর শুরু হয় অবৈধ পন্থায় মদ কেনাবেচা। উঠতি তরুণেরা ভিড় করতে শুরু করেন সেখানে। চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই সেখানে নিয়মিত আসতেন। প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহও ছিলেন এই তালিকায়। তবে সবচেয়ে বেশি শোনা যেত অভিনেতা নাদের চৌধুরীর নাম।
ক্লাব ট্রাম্পসের মূল আয়োজক ছিলেন অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক মর্নিং সানের মালিক ববি ইসলামের ছোট ভাই আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম। তিনি ছিলেন বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বন্ধু। তাঁর বড় ভাই ববি ইসলামের মেয়ে নওরিনকে বিয়ে করেছিলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। সেই সুবাদে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের চাচাশ্বশুর বান্টি ইসলাম। বান্টি তখন ডিশ ব্যবসাও চালাতেন।
ক্লাব ট্রাম্পস জমে ওঠার পরপরই নানা ধরনের উটকো ঝামেলা শুরু হয়। বিশেষ করে বনানীর বাসিন্দারা ক্লাব নিয়ে আপত্তি তোলেন। সংবাদপত্রে লেখালেখি হতে থাকে। একপর্যায়ে বান্টিকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তিনি তাঁর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক কাজে লাগান। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কয়েকজন ক্লাবে নিয়মিত আসতে শুরু করেন। সেই তালিকায় ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও লেদার লিটন।
ক্লাব ট্রাম্পসে যেদিন গুলি হয়, সেই রাতে রাজধানীর আর সব আমজনতার মতো আমিও ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোর হতে না হতেই সাংবাদিক-বন্ধুদের ফোন। বড় খুন হয়েছে—ছুটতে হবে। গেলাম বনানীর আবেদিন টাওয়ারে। থানা আর গোয়েন্দা পুলিশের কড়া পাহারা। পুরো ভবনে চলছে চিরুনি তল্লাশি।
ক্লাবের সামনের রাস্তায় রক্তের দাগ। সেই দাগ দেখে মনে হচ্ছিল, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সোহেল চৌধুরী বনানীর কাঁচাবাজারের সামনের মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। এই মসজিদের সামনের বাড়িটিই তাঁদের। এ বাড়িতেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পুরোনো বাড়িটি এখনো সে রকমই আছে।
সোহেলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা। তিনি বললেন, ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের সমর্থন আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। সেই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন দুজন। যাঁদের একজনের নাম তারেক আহমেদ চৌধুরী। ত্রিপুরার সাংবাদিক অনিল ভট্টাচার্যের লেখা ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা’ বইয়ে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে মফিদুল হকের প্রতিষ্ঠান সাহিত্য প্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর সেই সফরসঙ্গী তারেক আহমেদ চৌধুরীই হলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর বাবা।
সোহেলের ছোটবেলার গল্প বললেন তিনি। সোহেলের ডাক নাম ছিল সুলু। আসল নাম সোলাইমান চৌধুরী। ছোটবেলায় বেশি খেতেন বলে এই নাম দিয়েছিলেন মা। তাঁর চলচ্চিত্রের নাম সোহেল চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সোহেলই ছোট।
সোহেলদের দাদার বাড়ি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে। পরে ঢাকার বনানীতে থিতু হন। দাদা ছিলেন এফডিসির তৎকালীন পরিচালক। তিনি ছেলেকে বিদেশে লেখাপড়া করান। দেশে ফিরে তারেক আহমেদ চৌধুরী ব্যবসায় মনোযোগ দেন।
সোহেল ও তাঁর ভাই পড়তেন শাহিন স্কুলে। এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন তিতুমীর কলেজে। কলেজে ওঠার আগে থেকেই সোহেল ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনকে অনুসরণ করতেন। তাঁর মতো চুলও কাটতেন। কলেজের মেয়েরা তাঁকে ডাকতেন অমিতাভ বলে।
কলেজে পড়ার সময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে টেকনোভিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ডিশ ব্যবসা শুরু করেন সোহেল। এরপর শুরু করেন দেশি বাংলা সিনেমা কিনে ভিডিও ক্যাসেটে রূপান্তরের কাজ। এই ব্যবসায় শত শত বাংলা সিনেমা সস্তায় কিনে বিদেশ থেকে ভিডিও ক্যাসেট করেন। ব্যবসাটা অল্প দিনে বড় হয়ে যায়। লন্ডনে কোম্পানির অফিস খোলেন।
১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধান’ নামে অভিনেতা-অভিনেত্রীর খোঁজ করে চলচ্চিত্র মহল। সোহেল চৌধুরী মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রথম ছবি মুক্তি পায়। ছবির পরিচালক এফ কবির চৌধুরী। সিনেমায় এসেই নায়িকা দিতির প্রেমে পড়েন সোহেল। সে বছরই তাঁকে বিয়ে করেন। পরের বছর জন্ম হয় তাঁদের প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরীর। কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় ফিরে এসে ব্যবসা করছেন লামিয়া। ১৯৮৯ সালে তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান সাফায়েত আহমেদ চৌধুরীর জন্ম। সাফায়েত এখন নেদারল্যান্ডসে মিউজিক নিয়ে ব্যবসা করেন। তবে সোহেল-দিতির সুখের সংসার খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। দিতি এরপর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করেন। সে সংসারও টেকেনি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ মারা যান দিতি। তবে দিতির সঙ্গে বিচ্ছেদের পরই একা হয়ে যান সোহেল। মূলত বিচ্ছেদের পর দিতির ক্যারিয়ার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হলেও সোহেল আর এগোতে পারেননি। এতে বিষণ্ন সোহেলের গোছানো জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
ক্লাব ট্রাম্পস ওঠানো নিয়ে বনানীর বাসিন্দারা তখন এককাট্টা। সোহেলও তাঁদের সঙ্গে। এ নিয়ে বান্টির সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। সোহেলের পরিবারের কাছে অভিযোগও করেন বান্টি। ক্লাব ট্রাম্পসের ভেতর একদিন মদ্যপ অবস্থায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইের গায়ে হাত তোলেন সোহেল। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। এর পর থেকেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যায় ক্লাব ট্রাম্পসে।
ঘটনার দিন রাত দুটোর দিকে চার বন্ধুকে নিয়ে ক্লাব ট্রাম্পসে আসেন সোহেল। ক্লাবের নিচেই কলাপসিবল গেটের কাছে দুই যুবক তাঁদের গতি রোধ করেন। এক যুবক বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। এক যুবক কোমরে বাঁধা হোলস্টার থেকে রিভলবার তুলে গুলি চালান। মাত্র একটি গুলি লাগে সোহেলের বুকে। লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসক জানিয়ে দেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। পুলিশ এরপর ক্লাবের ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। সোহেলের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা আসে ডিবিতে। সেই মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশান থেকে বান্টি ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। এর তিন দিন পর ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেপ্তার করে এসবি। আসামিদের একজন আদনান সিদ্দিকি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাতে উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের আগে এক শিল্পপতির ফোন পেয়ে ঢাকা ক্লাব থেকে ঘটনাস্থলে যান তিনি।
১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়াও তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে অভিযুক্ত করা হয়।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর মামলাটির অভিযোগ গঠিত হয়। বিচারের জন্য পাঠানো হয় দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে তারিক সাঈদ মামুন হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর হাইকোর্টের বেঞ্চ ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি আদেশ দেন। এতে বলা হয়, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এরপর থেকে সেভাবেই পড়ে আছে মামলাটি। রাষ্ট্রপক্ষ আর খোঁজ করেনি একসময়ের জনপ্রিয় এই নায়ক খুনের কী হলো। সোহেলের বড় ভাই সেই আক্ষেপই করলেন।
আরও পড়ুন:

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

গভীর রাতের আদুরে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজধানীর মানুষ। শুধু অভিজাত পাড়ার একটি ক্লাবে জেগে আছে শ-দুয়েক তরুণ-তরুণী। ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোরে রঙিন আলোর নিচে কানফাটা মিউজিকের তালে চলছে উদ্দাম নাচ। সবাই মত্ত সেই ভিনদেশি নাচের তালে। মিউজিক থামিয়ে হঠাৎ ঘোষণা: ‘দ্রুত হল ত্যাগ করুন।’ বিপদ বুঝে যে যার মতো বেরিয়ে এলেন। ন
১৫ জানুয়ারি ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

গভীর রাতের আদুরে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজধানীর মানুষ। শুধু অভিজাত পাড়ার একটি ক্লাবে জেগে আছে শ-দুয়েক তরুণ-তরুণী। ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোরে রঙিন আলোর নিচে কানফাটা মিউজিকের তালে চলছে উদ্দাম নাচ। সবাই মত্ত সেই ভিনদেশি নাচের তালে। মিউজিক থামিয়ে হঠাৎ ঘোষণা: ‘দ্রুত হল ত্যাগ করুন।’ বিপদ বুঝে যে যার মতো বেরিয়ে এলেন। ন
১৫ জানুয়ারি ২০২২
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪ ঘণ্টা আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

গভীর রাতের আদুরে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজধানীর মানুষ। শুধু অভিজাত পাড়ার একটি ক্লাবে জেগে আছে শ-দুয়েক তরুণ-তরুণী। ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোরে রঙিন আলোর নিচে কানফাটা মিউজিকের তালে চলছে উদ্দাম নাচ। সবাই মত্ত সেই ভিনদেশি নাচের তালে। মিউজিক থামিয়ে হঠাৎ ঘোষণা: ‘দ্রুত হল ত্যাগ করুন।’ বিপদ বুঝে যে যার মতো বেরিয়ে এলেন। ন
১৫ জানুয়ারি ২০২২
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

গভীর রাতের আদুরে ঘুমে আচ্ছন্ন রাজধানীর মানুষ। শুধু অভিজাত পাড়ার একটি ক্লাবে জেগে আছে শ-দুয়েক তরুণ-তরুণী। ক্লাবের ড্যান্স ফ্লোরে রঙিন আলোর নিচে কানফাটা মিউজিকের তালে চলছে উদ্দাম নাচ। সবাই মত্ত সেই ভিনদেশি নাচের তালে। মিউজিক থামিয়ে হঠাৎ ঘোষণা: ‘দ্রুত হল ত্যাগ করুন।’ বিপদ বুঝে যে যার মতো বেরিয়ে এলেন। ন
১৫ জানুয়ারি ২০২২
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৪ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে