
২০১৫ সালের শুরুর দিকে একদিন অ্যালেক্সি খারিস নামের ক্যালিফোর্নিয়ার এক ব্যবসায়ীর মুখ সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। দুই সন্তানের জনক খারিসকে গ্রেপ্তারের জন্য রাশিয়া ইন্টারপোলকে অনুরোধ করবে বলে জানানো হয়।
এই সংবাদে ৪৬ বছর বয়সী খারিস বেশ হতবাক হয়েছিলেন বটে। প্রথমে এটি রুশ কর্তৃপক্ষের ভয় দেখানোর কৌশল ভেবে নিশ্চিত থেকেছেন।
এর পরের মাসগুলোতে খারিস ইন্টারপোলের গ্যালারিতে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক পলাতক আসামির তালিকায় নিজেকে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে একদিন নিজের মুখ দেখতে পান। ছবিটি এমনভাবে তোলা যে খারিসকে দাগী অপরাধী মনে হচ্ছিল।
ইন্টারপোলের গ্যালারিতে অপরাধীদের তালিকা খোঁজার সময় খারিস ভাবছিলেন, ‘এই লোকটি একজন সন্ত্রাসী; পরেরজন খুনি; তার পরের জন শিশু অপহরণকারী। আর এরপর আমি নিজেই!’
রাশিয়াতে ঠিকাদারি কোম্পানি চালাতেন খারিস। সরকারি প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আমলাদের দুর্নীতির খোঁজ পান। এর জেরেই কর্তৃপক্ষের অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি ব্যুরোর এজেন্টরা ২০১৩ সালে তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়।
খারিসের আশা ছিল রাশিয়ায় তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। কিন্তু ইন্টারপোলের নোটিশ সেই ভুল ভেঙে দেয়। ওই নোটিশে তিনি জানতে পারেন, রাশিয়ায় তাঁকে ‘অপরাধী সংগঠনের’ সদস্য সাব্যস্ত ও নিজ কোম্পানির কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড চুরির দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপন্থী চিন্তকদের সংগঠন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টেড ব্রমন্ড ওই রুশ ঠিকাদারের নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছেন। তিনি জানান, রাশিয়া বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা নিজের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রথমে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ভুয়া অনুরোধ জানায়। এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ শিকার খারিস। মার্কিন অধিকার সংস্থা ফ্রিডম হাউসের মতে, ইন্টারপোলের সমস্ত পাবলিক রেড নোটিশের ৩৮ শতাংশই রাশিয়ার।
ব্রমন্ড পরে আরও লিখেছেন, খারিসের কোনো অপরাধ প্রমাণ দূরে থাক নোটিশটি শুধু প্রমাণ করে যে, ‘রাশিয়ান ফেডারেশন সঠিকভাবে ইন্টারপোলের ফরমটি পূরণ করেছে।’ ইন্টারপোল কিছু যাচাই করেনি। খারিসের বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ইন্টারপোলের কাছে জানতে চাইলে, সংস্থাটি রেড নোটিশ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।
ইন্টারপোলের যাত্রা
১৯১৪ সালে আলোচনা শুরু হলেও ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারপোল। এক দেশে অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া বন্ধ করতেই এর সৃষ্টি। সংগঠনটির নিপীড়ক শাসকদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার নজির রয়েছে অহরহ।
১৯৩৮ সালে নাৎসিরা ইন্টারপোলের প্রেসিডেন্টকে বরখাস্ত করে এবং পরে সংস্থাটিকে বার্লিনে স্থানান্তরিত করে। তখন অনেক দেশ সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোলের অস্তিত্ব ঝিমিয়ে পড়েছিল।
দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধাপরাধী, মাদক পাচারকারী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ধরতে ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্র ইন্টারপোলকে সমর্থন করে আসছে। সংস্থাটির রেড নোটিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাছাকাছি ধরা হয়। প্রতি বছর হাজার হাজার পলাতক আসামির অবস্থানে এই নোটিশ জারি করা হয়।
রেড নোটিশ বেড়ে দশগুন
ইন্টারপোলের রেড-নোটিসের বিষয়গুলোর মধ্যে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন এবং লিবিয়ার প্রয়াত স্বৈরশাসকের ছেলে সাদি গাদ্দাফিও ছিলেন। এই বিশ্বায়নের যুগে অপরাধীদের সংখ্যা ও সন্ত্রাসী ঘটনা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইন্টারপোলকে ব্যবহারও বেড়েছে। গত দুই দশকে রেড নোটিশ বেড়ে হয়েছে দশগুণ। ২০০০ সালে প্রায় ১ হাজার ২০০টি থেকে ২০২০ সালে হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। এ ছাড়া ইন্টারপোলের নোটিশের অন্যান্য রূপও রয়েছে, যেমন নিখোঁজ শিশুদের জন্য হলুদ নোটিশ এবং অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহের জন্য কালো নোটিশ।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ফায়দা বা প্রতিশোধের জন্য অনেক দেশ ইন্টারপোল ব্যবহার করছে, এটি উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, সমালোচক, অধিকার কর্মী এবং শরণার্থীরা এ শিকার হচ্ছে। এটা বলা কঠিন যে, প্রায় ৬৬ হাজার সক্রিয় রেড নোটিশের মধ্যে কতগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইন্টারপোল কতগুলো রেড নোটিশ প্রত্যাখ্যান করেছে তার তথ্য প্রকাশ করে না। তবে মার্কিন কংগ্রেস, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং বিশেষজ্ঞরাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারপোলের অপব্যবহারের বিষয়টি নথিভুক্ত হয়েছে।
ইন্টারপোলকে অপব্যবহারের চেষ্টা আর্ন্তজাতিক দমন-পীড়নের একটি বৈশিষ্ট্য। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ বিদেশের মাটিতেও প্রতিপক্ষের কণ্ঠরোধ করে থাকে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে—গুপ্তহত্যা, বিষ প্রয়োগ, বিচ্ছিন্নকরণ, ব্ল্যাকমেল, মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং পরিবারকে হুমকি দেওয়া। পদ্ধতিগুলো ভিন্ন হতে পারে, তবে তারা বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের যুগে যেই ভয়ঙ্কর বার্তা পাঠাচ্ছে তা হলো, ‘আপনি আপনার দেশ ছাড়লেও শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।’
ইন্টারপোল ও সিরিয়া
২০২১ সালের অক্টোবরের শুরুতে ইন্টারপোলের ডাটাবেসে পুনরায় সিরিয়াকে প্রবেশাধিকার ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি দেশটির বিরোধী দল কঠোরভাবে সমালোচনা করে। সিরিয়ার বিরোধী দলের মধ্যস্থতাকারী সংস্থার প্রধান আনাস আল-আবদাহ বলেন, ইন্টারপোলের সিদ্ধান্ত বাশার আল-আসাদের সরকারকে সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ চালানোর তথ্য-ভিত্তিক উপায় দিয়েছে।
সিরিয়া-সম্পর্কিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে কাজ করা এক ব্রিটিশ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘ইন্টারপোলের নিয়মগুলো অস্বচ্ছ। কোনো বাস্তব তদারকি বা জবাবদিহিতা নেই। সিরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলো নিয়মিত এর অপব্যবহার করে। এসব রেড নোটিশ জারি করা খুবই সহজ। আপনাকে এতে তথ্য সরবরাহ করতে হবে না। অপরদিকে যুক্তরাজ্য বা নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় দেশেও রেড নোটিশ প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া জটিল ও মন্থর। এ ছাড়া সংস্থাটির অর্থ ও কর্মীর সংকটও রয়েছে।’
বাহরাইনের ফুটবলার হাকিম আল-আরাইবি
কেউ কেউ দেশত্যাগ করার সময়ই ইন্টারপোলের পরোয়ানার অবস্থা জানার অভিজ্ঞতা পান। উদাহরণসরূপ, বাহরাইনি ফুটবলার হাকিম আল-আরাইবির কথা বলা যেতে পারে। তিনি রাজনৈতিক উদ্বাস্তু হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছিলেন। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ডে হানিমুনে গেলে ইন্টারপোল তাঁর ওপর সহিংসতার অভিযোগে রেড নোটিশ জারি করে। তখন থাইল্যান্ডের প্রশাসন স্ত্রীসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তবে অস্ট্রেলিয়া আল-আরাইবিকে শরণার্থীর মর্যাদা দিলে ইন্টারপোল রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে নেয়। নোটিশ প্রত্যাহার করলেও আরাইবিকে ঠিকই ৭৬ দিন কারাভোগ করতে হয়েছিল।
রাশিয়ার রাজনৈতিক কর্মী ও পরিবেশবাদী পেত্র সিলায়েভ
ইন্টারপোলের রেড নোটিশের হয়রানির স্বীকার আরেক রাজনৈতিক কর্মী পেত্র সিলায়েভ। তিনি রাশিয়ার পরিবেশবাদী এবং ফ্যাসিবাদ-বিরোধী একজন কর্মী। যিনি ২০১০ সালে মস্কোর বাইরে খিমকি বনের মধ্য দিয়ে একটি মোটরওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার পরে ‘গুণ্ডাতন্ত্র’ উসকে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর সহযোদ্ধাদের আটক করলে তিনি ফিনল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তবে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কারণে ২০১২ সালে তাঁকে স্পেনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একটি কড়া নিরাপত্তার কারাগারে আটক রাখা হয়।
পশ্চিম পাপুয়া নিউ গিনির বেনি ওয়েন্ডা
পশ্চিম পাপুয়ার একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বেনি ওয়েন্ডার বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়া একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেড নোটিশ জারি করেছিল। তিনি দেশটির কারাগার থেকে পালিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক উদ্বাস্তু হিসেবে স্থান পেয়েছেন। তবে পরে তাঁর বিরুদ্ধে জারিকৃত রেড নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২০১৭ সালে স্পেনে ছুটিতে থাকাকালে তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান লেখক দোগান আখানলিকে গ্রেপ্তার করার পরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ইন্টারপোলের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অপব্যবহার করা উচিত নয়।’
চীনের ইদিরেসি আইশান ও বেলারুশের মাকারি মালাচোস্কি
২০২১ সালে চীন ইন্টারপোলের কাছে প্রত্যর্পণ দাবি করলে মরক্কোর কর্তৃপক্ষ উইঘুর কর্মী ইদিরেসি আইশানকে গ্রেপ্তার করে। তবে ইন্টারপোল পরে পর্যালোচনা করে আইশানের রেড নোটিশ বাতিল করে। ইদিরেসি এখনো চীনে প্রত্যার্পণের হুমকিতে রয়েছেন।
এদিকে বেলারুশের আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকার রেড নোটিশ জারি করার পর বিরোধী দলের কর্মী মাকারি মালাচোস্কি দেশ ছেড়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁকেও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়ারশ থেকে আটক করা হয়।
ইন্টারপোল ও আইনজীবী মিশেল ইস্টলুন্ডের অভিজ্ঞতা
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যর আইনজীবী ও ইন্টারপোলের দ্বারা হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বকারী মিশেল ইস্টলুন্ড বলেন, ‘হয়রানির শিকার এসব ব্যক্তিদের কথা যে কেউ বিশ্বাস করবে না এমনটাই তাঁরা ভাবে। কারণ তাঁদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অবর্ণনীয়।’
ইস্টলুন্ড ১৪ বছর আগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিদের সাহায্য করছিলেন। যখন ভেনেজুয়েলার এক নারী প্রতারণার অভিযোগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের মুখে পড়ে এই ফৌজদারি আইনজীবীর সাহায্য চেয়েছিলেন। ইস্টলুন্ড প্রথমে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু পরে রাশিয়া থেকে ইকুয়েডর পর্যন্ত রেড-নোটিস জারির বিভিন্ন মামলায় কাজ করে এবং কীভাবে আইনের অপব্যবহার করা যেতে পারে তা দেখে তিনি হতবাক হন।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সরকারের সমালোচনাকারী ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধের আকাঙ্ক্ষা দিনদিন বাড়ছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘যেকোনো বিচার ব্যবস্থায়, এমনকি নিকৃষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা যেটা আশা করি তার বিপরীতটাই হচ্ছে। আমার কাছে পৌঁছানোর আগে মক্কেলরা যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় তা মনকে আলোড়িত করে।’
শরণার্থী বিষয়ে ইন্টারপোলের নীতিমালা
২০১৫ সালে ইন্টারপোলের গঠনতন্ত্র রাজনৈতিক বিষয়ে এ সংগঠন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জানায়, কোনো ব্যক্তির শরণার্থী স্বীকৃতি থাকলে তাঁর নোটিশ প্রত্যাহার করা হবে।
ওই নোটিশে আরও জানানো হয়, ইন্টারপোল অবশ্যই মানবাধিকারের সার্বজনীন নীতি মেনে কাজ করবে। সংগঠনটি ন্যয়বিচার ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ করবে। সংগঠনটি গ্রেপ্তারের দাবিতে থাকা প্রতিটি ব্যক্তির খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে। আপাতদৃষ্টিতে এমন স্পষ্ট সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা থাকার পরেও সংস্থাটিতে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে, সেটি প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে।
ইন্টারপোল ও তুরস্ক
আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারের জন্য সন্দেহজনক অনুরোধগুলো ২০১৬ সালে ইন্টারপোলের লিওন সদর দপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ স্কোয়াডের কাছে পড়ে।
তুরস্ক বলছে, ইন্টারপোল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তুর্কি ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে জনপ্রিয় আন্দোলন ‘হিজমেত’–এর সঙ্গে জড়িত ৭৭৩ জনকে আটকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফেতুল্লাহ গুলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সাবেক মিত্র। এই সংখ্যা ৭০০–এর বেশি বলে নিশ্চিত করেছে ইন্টারপোল।
২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের জন্য গুলেন সমর্থকদের দায়ী করে এরদোয়ান সরকার। আন্দোলনকারীদের বিচার প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য ইন্টারপোলের সমালোচনাও করেছে তুরস্ক। এমন খবর পাওয়া গেছে, চুরি যাওয়া পাসপোর্ট ডেটাবেসের মাধ্যমে আঙ্কারা ইন্টারপোলে ৬০ হাজার ব্যক্তির গ্রেপ্তার দাবি করেছিল। কিন্তু সংস্থাটি এই সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেড নোটিশ বন্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তার দাবিকে নাকচ করে দেওয়া ইন্টারপোলের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। তবুও কেউ কেউ ভয় পায়, কেননা ইন্টারপোল এখনো বিশ্বাস করে—সদস্য দেশগুলো সরল বিশ্বাসে কাজ করছে এবং সঠিক তথ্য দিচ্ছে!
ইন্টারপোলের প্রাক্তন ডাচ আইন প্রধান এবং সংস্থাটির গবেষণাপত্রের লেখক রুটসেল মার্থা বলেন, ‘পুলিশ সততার সঙ্গে কাজ করে এমন ধারণা নিয়ে ইন্টারপোল পুলিশকে সাহায্য করে। এটিই সংস্থাটির নীতি। তাই প্রথমে অবস্থা বুঝে কাজ করতে হয়, পরে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়।’
ইন্টারপোলের কাছে ভুয়া গ্রেপ্তার দাবির সবচেয়ে সহজ উপায়গুলো হলো—অর্থ পাচার, খুন ও ইন্টারপোলের নিয়ম ভঙ্গ করে এমন রাজনৈতিক অভিযোগ। রেড নোটিশগুলো পর্যালোচনা করে এস্টলুন্ড বলেন, ‘অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায্য মুনাফা অর্জনের অভিযোগ গঠনে তথ্য তৈরি করা বা হেরফের করা খুব সহজ।’
তুর্কেমেনিস্তান ও ইন্টারপোল
দুর্বল তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোলের যতো দুর্নাম হয়েছে তাঁর মধ্য অন্যতম হলো তুর্কমেনিস্তানের মানবাধিকারকর্মী আনাদুর্দি খাদঝিয়েভের মামলা। তুর্কমেনিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার (৩০ মিলিয়ন পাউন্ড) আত্মসাতের অভিযোগে ইন্টারপোলের নোটিশে ২০০২ সালে বুলগেরিয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও খাদঝিয়েভ ব্যাংকের চাকরি ছাড়ার চার বছর পর কথিত চুরির ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের রায়ে উদ্ধৃত একজন বুলগেরিয়ান প্রসিকিউটরের বলেন, ‘খাদঝিয়েভের পক্ষে এই অর্থ আত্মসাৎ করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।’
পলাতকদের ধরতে ‘ডিফিউশনস’ (ব্যাপক বিস্তার) নামের ইন্টারপোলের অনানুষ্ঠানিক একটি পদ্ধতি রয়েছে যা সহজেই অপব্যবহার করা যায়। সতর্কতা জারির মাধ্যমে ইন্টারপোলের সদস্যরা একে অপরের কাছে সরাসরি গ্রেপ্তারের অনুরোধ পাঠাতে পারে। এই পদ্ধতির শিকার হওয়াদের মধ্য একজন হলেন রুশ বংশোদ্ভূত লিথুয়ানিয়ার শরণার্থী নিকিতা কুলাচেনকভ। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে ২০১৬ সালে তাঁকে সাইপ্রাস বিমানবন্দরে আটক করা হয়। পরে সাইপ্রাসে তিনি কয়েক সপ্তাহ বন্দী ছিলেন। কুলাচেঙ্কভ রাশিয়ায় একজন পথশিল্পীর আঁকা ৬০ ইউরো মূল্যর ছবি চুরির অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান। রাশিয়ায় দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনে তদন্তের
কাজ শুরু করার পর তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল সতর্কতা জারি করে। এই দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বিরোধী দলীয় রাজনীতিক আলেক্সি নাভালনি। ২০২০ সালে নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার কারাগারে।
কুলাচেনকভের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ গঠনের জন্যই ওই পোস্টারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। রাশিয়ার শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলিরা তাঁর মস্কোর ফ্ল্যাটেও অভিযান চালিয়েছিল। সাইপ্রাসে আটকের এক বছর আগে কুলাচেনকভ ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, দুর্নীতিবিরোধী কাজের জন্য তিনি রুশ সরকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ইন্টারপোল তাঁর উদ্বেগ স্বীকার করেছিল এবং সংস্থাটির এক মুখপাত্র পরে বিষয়টি বিস্তারিত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন।
ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল
আট বছর ধরে ইন্টারপোলের মহাসচিব আছেন জার্গেন স্টক। তিনি সমস্যাযুক্ত নোটিশগুলোর ব্যাপারে ইন্টারপোলের বিশ্বাসযোগ্যতার হুমকি সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি মনে করেন, এটি হতাশাজনক। অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার অনুরোধের বিষয়গুলো (যেমন: শরণার্থী) সংস্থা থেকে জানার পরিবর্তে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে হয়। সদস্য দেশগুলো গ্রেপ্তার দাবি করা ব্যক্তির ‘শরণার্থী অবস্থা’ ইন্টারপোলকে অবহিত করে না।
অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের অপব্যবহার সম্পর্কে স্টক কোনো তথ্য দেন না। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই (সমস্যাযুক্ত) নোটিশগুলো প্রকৃত অপরাধীদের তুলনায় নগণ্য। স্টকের ধারণা, ভুল নোটিশের সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি নয়। তাঁর হিসাব মেনে নিলেও, প্রতিবছর শত শত নির্দোষ ব্যক্তি গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সেলাহউদ্দিন গুলেন ও ইন্টারপোল
আইনজীবীরা বলছেন, ভুল নোটিশগুলো প্রত্যাহারের সময় এবং এর মধ্যে যে ক্ষতি হতে পারে তা নির্ধারণ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। এর উদাহরণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও ফেতুল্লাহ গুলেনের ভাগনে সেলাহাদ্দীন গুলেনের গ্রেপ্তার। নাবালকের সঙ্গে যৌনতার অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে কেনিয়ায় তাঁকে আটক করা হয়। যদিও সেলাহাদ্দীন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাত মাস পরে ২০২১ সালের মে মাসে তিনি জামিন আবেদন করেন। কিন্তু তাঁকে আবার আটক করা হয় এবং তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ফ্রিডম হাউসের রিসার্চ ডিরেক্টর নেট শেনকান বলেন, ‘কেনিয়ার আদালতে বিচার ছাড়াই তাঁকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। এটি ইন্টারপোলের অপব্যবহারের একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।’
গুলেনের আইনজীবীরা অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জানিয়ে ইন্টারপোলকে রেড নোটিশটি প্রত্যাহার করতে বলেন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ইন্টারপোল গুলেনের রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। কিন্তু এর আগেই কেনিয়া তাঁকে তুরস্কে ফেরত পাঠায়।
ইন্টারপোলের সিসিএফ কমিটি
ইন্টারপোলের সিসিএফ ৮ বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত। তাঁরা সাধারণত প্রতি কয়েক মাস পরপর সভা করেন। ২০১৮ সালে দেওয়া তাঁদের তথ্যমতে, ৩৪৬টি অভিযোগের মধ্য ৪৮ শতাংশই সংস্থাটির নিয়ম ভঙ্গ করেছে। সদস্য দেশ নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তির মধ্যে রয়েছে দেশটির ইন্টারপোলের ডেটাবেসে প্রবেশাধিকার তিন মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখা। যদিও সংস্থাটি এটিকে শাস্তি নয় বরং ‘সংশোধনমূলক ব্যবস্থা’ বলে থাকে। ২০১১ সাল থেকে এটি কার্যকর রয়েছে।
কিছু দেশ ইন্টারপোলের অপব্যবহার নিরসনে বিষয়গুলো নিজেদের হাতে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে হেলসিঙ্কি কমিশনের আশেপাশে অবস্থিত কংগ্রেসের একটি দ্বিদলীয় গোষ্ঠী ট্রান্সন্যাশনাল রিপ্রেশন অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড প্রিভেনশন (ট্র্যাপ) আইন পাস করতে চাইছে। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার সীমিত করতে ২০১৯ সালে এ আইন প্রস্তাব করা হয়।
খারিসের গল্পে ফিরে আসা
২০১৮ সালের শেষের দিকে খারিস কারাগার থেকে মুক্তি পান। যখন এক মার্কিন ফেডারেল বিচারক রাশিয়ার ইন্টারপোল পদ্ধতির অপব্যবহার এবং সংস্থাটির গ্রেপ্তার তালিকায় ‘গুরুতর ত্রুটির’ প্রমাণ পায়।
ইন্টারপোলের কাছে খারিসের আবেদনের নয় মাস পরে ২০২০ সালের গ্রীষ্মে সংস্থাটি রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। খারিস বলেন, ‘আমি এখনো মনে করি যে ইন্টারপোল ভালোর জন্যই। কিন্তু সংস্থাটির নিয়মের অপব্যবহার করা খুব সহজ। কিন্তু মানুষের জীবনটাই তো সর্বাগ্রে থাকার কথা!’

২০১৫ সালের শুরুর দিকে একদিন অ্যালেক্সি খারিস নামের ক্যালিফোর্নিয়ার এক ব্যবসায়ীর মুখ সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। দুই সন্তানের জনক খারিসকে গ্রেপ্তারের জন্য রাশিয়া ইন্টারপোলকে অনুরোধ করবে বলে জানানো হয়।
এই সংবাদে ৪৬ বছর বয়সী খারিস বেশ হতবাক হয়েছিলেন বটে। প্রথমে এটি রুশ কর্তৃপক্ষের ভয় দেখানোর কৌশল ভেবে নিশ্চিত থেকেছেন।
এর পরের মাসগুলোতে খারিস ইন্টারপোলের গ্যালারিতে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক পলাতক আসামির তালিকায় নিজেকে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে একদিন নিজের মুখ দেখতে পান। ছবিটি এমনভাবে তোলা যে খারিসকে দাগী অপরাধী মনে হচ্ছিল।
ইন্টারপোলের গ্যালারিতে অপরাধীদের তালিকা খোঁজার সময় খারিস ভাবছিলেন, ‘এই লোকটি একজন সন্ত্রাসী; পরেরজন খুনি; তার পরের জন শিশু অপহরণকারী। আর এরপর আমি নিজেই!’
রাশিয়াতে ঠিকাদারি কোম্পানি চালাতেন খারিস। সরকারি প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আমলাদের দুর্নীতির খোঁজ পান। এর জেরেই কর্তৃপক্ষের অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি ব্যুরোর এজেন্টরা ২০১৩ সালে তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়।
খারিসের আশা ছিল রাশিয়ায় তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। কিন্তু ইন্টারপোলের নোটিশ সেই ভুল ভেঙে দেয়। ওই নোটিশে তিনি জানতে পারেন, রাশিয়ায় তাঁকে ‘অপরাধী সংগঠনের’ সদস্য সাব্যস্ত ও নিজ কোম্পানির কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড চুরির দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপন্থী চিন্তকদের সংগঠন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টেড ব্রমন্ড ওই রুশ ঠিকাদারের নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছেন। তিনি জানান, রাশিয়া বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা নিজের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রথমে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ভুয়া অনুরোধ জানায়। এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ শিকার খারিস। মার্কিন অধিকার সংস্থা ফ্রিডম হাউসের মতে, ইন্টারপোলের সমস্ত পাবলিক রেড নোটিশের ৩৮ শতাংশই রাশিয়ার।
ব্রমন্ড পরে আরও লিখেছেন, খারিসের কোনো অপরাধ প্রমাণ দূরে থাক নোটিশটি শুধু প্রমাণ করে যে, ‘রাশিয়ান ফেডারেশন সঠিকভাবে ইন্টারপোলের ফরমটি পূরণ করেছে।’ ইন্টারপোল কিছু যাচাই করেনি। খারিসের বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ইন্টারপোলের কাছে জানতে চাইলে, সংস্থাটি রেড নোটিশ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।
ইন্টারপোলের যাত্রা
১৯১৪ সালে আলোচনা শুরু হলেও ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারপোল। এক দেশে অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া বন্ধ করতেই এর সৃষ্টি। সংগঠনটির নিপীড়ক শাসকদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার নজির রয়েছে অহরহ।
১৯৩৮ সালে নাৎসিরা ইন্টারপোলের প্রেসিডেন্টকে বরখাস্ত করে এবং পরে সংস্থাটিকে বার্লিনে স্থানান্তরিত করে। তখন অনেক দেশ সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোলের অস্তিত্ব ঝিমিয়ে পড়েছিল।
দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধাপরাধী, মাদক পাচারকারী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ধরতে ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্র ইন্টারপোলকে সমর্থন করে আসছে। সংস্থাটির রেড নোটিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাছাকাছি ধরা হয়। প্রতি বছর হাজার হাজার পলাতক আসামির অবস্থানে এই নোটিশ জারি করা হয়।
রেড নোটিশ বেড়ে দশগুন
ইন্টারপোলের রেড-নোটিসের বিষয়গুলোর মধ্যে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন এবং লিবিয়ার প্রয়াত স্বৈরশাসকের ছেলে সাদি গাদ্দাফিও ছিলেন। এই বিশ্বায়নের যুগে অপরাধীদের সংখ্যা ও সন্ত্রাসী ঘটনা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইন্টারপোলকে ব্যবহারও বেড়েছে। গত দুই দশকে রেড নোটিশ বেড়ে হয়েছে দশগুণ। ২০০০ সালে প্রায় ১ হাজার ২০০টি থেকে ২০২০ সালে হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। এ ছাড়া ইন্টারপোলের নোটিশের অন্যান্য রূপও রয়েছে, যেমন নিখোঁজ শিশুদের জন্য হলুদ নোটিশ এবং অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহের জন্য কালো নোটিশ।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ফায়দা বা প্রতিশোধের জন্য অনেক দেশ ইন্টারপোল ব্যবহার করছে, এটি উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, সমালোচক, অধিকার কর্মী এবং শরণার্থীরা এ শিকার হচ্ছে। এটা বলা কঠিন যে, প্রায় ৬৬ হাজার সক্রিয় রেড নোটিশের মধ্যে কতগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইন্টারপোল কতগুলো রেড নোটিশ প্রত্যাখ্যান করেছে তার তথ্য প্রকাশ করে না। তবে মার্কিন কংগ্রেস, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং বিশেষজ্ঞরাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারপোলের অপব্যবহারের বিষয়টি নথিভুক্ত হয়েছে।
ইন্টারপোলকে অপব্যবহারের চেষ্টা আর্ন্তজাতিক দমন-পীড়নের একটি বৈশিষ্ট্য। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ বিদেশের মাটিতেও প্রতিপক্ষের কণ্ঠরোধ করে থাকে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে—গুপ্তহত্যা, বিষ প্রয়োগ, বিচ্ছিন্নকরণ, ব্ল্যাকমেল, মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং পরিবারকে হুমকি দেওয়া। পদ্ধতিগুলো ভিন্ন হতে পারে, তবে তারা বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের যুগে যেই ভয়ঙ্কর বার্তা পাঠাচ্ছে তা হলো, ‘আপনি আপনার দেশ ছাড়লেও শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।’
ইন্টারপোল ও সিরিয়া
২০২১ সালের অক্টোবরের শুরুতে ইন্টারপোলের ডাটাবেসে পুনরায় সিরিয়াকে প্রবেশাধিকার ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি দেশটির বিরোধী দল কঠোরভাবে সমালোচনা করে। সিরিয়ার বিরোধী দলের মধ্যস্থতাকারী সংস্থার প্রধান আনাস আল-আবদাহ বলেন, ইন্টারপোলের সিদ্ধান্ত বাশার আল-আসাদের সরকারকে সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ চালানোর তথ্য-ভিত্তিক উপায় দিয়েছে।
সিরিয়া-সম্পর্কিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে কাজ করা এক ব্রিটিশ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘ইন্টারপোলের নিয়মগুলো অস্বচ্ছ। কোনো বাস্তব তদারকি বা জবাবদিহিতা নেই। সিরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলো নিয়মিত এর অপব্যবহার করে। এসব রেড নোটিশ জারি করা খুবই সহজ। আপনাকে এতে তথ্য সরবরাহ করতে হবে না। অপরদিকে যুক্তরাজ্য বা নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় দেশেও রেড নোটিশ প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া জটিল ও মন্থর। এ ছাড়া সংস্থাটির অর্থ ও কর্মীর সংকটও রয়েছে।’
বাহরাইনের ফুটবলার হাকিম আল-আরাইবি
কেউ কেউ দেশত্যাগ করার সময়ই ইন্টারপোলের পরোয়ানার অবস্থা জানার অভিজ্ঞতা পান। উদাহরণসরূপ, বাহরাইনি ফুটবলার হাকিম আল-আরাইবির কথা বলা যেতে পারে। তিনি রাজনৈতিক উদ্বাস্তু হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছিলেন। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ডে হানিমুনে গেলে ইন্টারপোল তাঁর ওপর সহিংসতার অভিযোগে রেড নোটিশ জারি করে। তখন থাইল্যান্ডের প্রশাসন স্ত্রীসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তবে অস্ট্রেলিয়া আল-আরাইবিকে শরণার্থীর মর্যাদা দিলে ইন্টারপোল রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে নেয়। নোটিশ প্রত্যাহার করলেও আরাইবিকে ঠিকই ৭৬ দিন কারাভোগ করতে হয়েছিল।
রাশিয়ার রাজনৈতিক কর্মী ও পরিবেশবাদী পেত্র সিলায়েভ
ইন্টারপোলের রেড নোটিশের হয়রানির স্বীকার আরেক রাজনৈতিক কর্মী পেত্র সিলায়েভ। তিনি রাশিয়ার পরিবেশবাদী এবং ফ্যাসিবাদ-বিরোধী একজন কর্মী। যিনি ২০১০ সালে মস্কোর বাইরে খিমকি বনের মধ্য দিয়ে একটি মোটরওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার পরে ‘গুণ্ডাতন্ত্র’ উসকে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর সহযোদ্ধাদের আটক করলে তিনি ফিনল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তবে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কারণে ২০১২ সালে তাঁকে স্পেনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একটি কড়া নিরাপত্তার কারাগারে আটক রাখা হয়।
পশ্চিম পাপুয়া নিউ গিনির বেনি ওয়েন্ডা
পশ্চিম পাপুয়ার একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বেনি ওয়েন্ডার বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়া একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেড নোটিশ জারি করেছিল। তিনি দেশটির কারাগার থেকে পালিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক উদ্বাস্তু হিসেবে স্থান পেয়েছেন। তবে পরে তাঁর বিরুদ্ধে জারিকৃত রেড নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২০১৭ সালে স্পেনে ছুটিতে থাকাকালে তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান লেখক দোগান আখানলিকে গ্রেপ্তার করার পরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ইন্টারপোলের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অপব্যবহার করা উচিত নয়।’
চীনের ইদিরেসি আইশান ও বেলারুশের মাকারি মালাচোস্কি
২০২১ সালে চীন ইন্টারপোলের কাছে প্রত্যর্পণ দাবি করলে মরক্কোর কর্তৃপক্ষ উইঘুর কর্মী ইদিরেসি আইশানকে গ্রেপ্তার করে। তবে ইন্টারপোল পরে পর্যালোচনা করে আইশানের রেড নোটিশ বাতিল করে। ইদিরেসি এখনো চীনে প্রত্যার্পণের হুমকিতে রয়েছেন।
এদিকে বেলারুশের আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকার রেড নোটিশ জারি করার পর বিরোধী দলের কর্মী মাকারি মালাচোস্কি দেশ ছেড়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁকেও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়ারশ থেকে আটক করা হয়।
ইন্টারপোল ও আইনজীবী মিশেল ইস্টলুন্ডের অভিজ্ঞতা
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যর আইনজীবী ও ইন্টারপোলের দ্বারা হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বকারী মিশেল ইস্টলুন্ড বলেন, ‘হয়রানির শিকার এসব ব্যক্তিদের কথা যে কেউ বিশ্বাস করবে না এমনটাই তাঁরা ভাবে। কারণ তাঁদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অবর্ণনীয়।’
ইস্টলুন্ড ১৪ বছর আগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিদের সাহায্য করছিলেন। যখন ভেনেজুয়েলার এক নারী প্রতারণার অভিযোগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের মুখে পড়ে এই ফৌজদারি আইনজীবীর সাহায্য চেয়েছিলেন। ইস্টলুন্ড প্রথমে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু পরে রাশিয়া থেকে ইকুয়েডর পর্যন্ত রেড-নোটিস জারির বিভিন্ন মামলায় কাজ করে এবং কীভাবে আইনের অপব্যবহার করা যেতে পারে তা দেখে তিনি হতবাক হন।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সরকারের সমালোচনাকারী ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধের আকাঙ্ক্ষা দিনদিন বাড়ছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘যেকোনো বিচার ব্যবস্থায়, এমনকি নিকৃষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা যেটা আশা করি তার বিপরীতটাই হচ্ছে। আমার কাছে পৌঁছানোর আগে মক্কেলরা যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় তা মনকে আলোড়িত করে।’
শরণার্থী বিষয়ে ইন্টারপোলের নীতিমালা
২০১৫ সালে ইন্টারপোলের গঠনতন্ত্র রাজনৈতিক বিষয়ে এ সংগঠন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জানায়, কোনো ব্যক্তির শরণার্থী স্বীকৃতি থাকলে তাঁর নোটিশ প্রত্যাহার করা হবে।
ওই নোটিশে আরও জানানো হয়, ইন্টারপোল অবশ্যই মানবাধিকারের সার্বজনীন নীতি মেনে কাজ করবে। সংগঠনটি ন্যয়বিচার ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ করবে। সংগঠনটি গ্রেপ্তারের দাবিতে থাকা প্রতিটি ব্যক্তির খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে। আপাতদৃষ্টিতে এমন স্পষ্ট সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা থাকার পরেও সংস্থাটিতে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে, সেটি প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে।
ইন্টারপোল ও তুরস্ক
আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারের জন্য সন্দেহজনক অনুরোধগুলো ২০১৬ সালে ইন্টারপোলের লিওন সদর দপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ স্কোয়াডের কাছে পড়ে।
তুরস্ক বলছে, ইন্টারপোল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তুর্কি ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে জনপ্রিয় আন্দোলন ‘হিজমেত’–এর সঙ্গে জড়িত ৭৭৩ জনকে আটকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফেতুল্লাহ গুলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সাবেক মিত্র। এই সংখ্যা ৭০০–এর বেশি বলে নিশ্চিত করেছে ইন্টারপোল।
২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের জন্য গুলেন সমর্থকদের দায়ী করে এরদোয়ান সরকার। আন্দোলনকারীদের বিচার প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য ইন্টারপোলের সমালোচনাও করেছে তুরস্ক। এমন খবর পাওয়া গেছে, চুরি যাওয়া পাসপোর্ট ডেটাবেসের মাধ্যমে আঙ্কারা ইন্টারপোলে ৬০ হাজার ব্যক্তির গ্রেপ্তার দাবি করেছিল। কিন্তু সংস্থাটি এই সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেড নোটিশ বন্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তার দাবিকে নাকচ করে দেওয়া ইন্টারপোলের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। তবুও কেউ কেউ ভয় পায়, কেননা ইন্টারপোল এখনো বিশ্বাস করে—সদস্য দেশগুলো সরল বিশ্বাসে কাজ করছে এবং সঠিক তথ্য দিচ্ছে!
ইন্টারপোলের প্রাক্তন ডাচ আইন প্রধান এবং সংস্থাটির গবেষণাপত্রের লেখক রুটসেল মার্থা বলেন, ‘পুলিশ সততার সঙ্গে কাজ করে এমন ধারণা নিয়ে ইন্টারপোল পুলিশকে সাহায্য করে। এটিই সংস্থাটির নীতি। তাই প্রথমে অবস্থা বুঝে কাজ করতে হয়, পরে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়।’
ইন্টারপোলের কাছে ভুয়া গ্রেপ্তার দাবির সবচেয়ে সহজ উপায়গুলো হলো—অর্থ পাচার, খুন ও ইন্টারপোলের নিয়ম ভঙ্গ করে এমন রাজনৈতিক অভিযোগ। রেড নোটিশগুলো পর্যালোচনা করে এস্টলুন্ড বলেন, ‘অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায্য মুনাফা অর্জনের অভিযোগ গঠনে তথ্য তৈরি করা বা হেরফের করা খুব সহজ।’
তুর্কেমেনিস্তান ও ইন্টারপোল
দুর্বল তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোলের যতো দুর্নাম হয়েছে তাঁর মধ্য অন্যতম হলো তুর্কমেনিস্তানের মানবাধিকারকর্মী আনাদুর্দি খাদঝিয়েভের মামলা। তুর্কমেনিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার (৩০ মিলিয়ন পাউন্ড) আত্মসাতের অভিযোগে ইন্টারপোলের নোটিশে ২০০২ সালে বুলগেরিয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও খাদঝিয়েভ ব্যাংকের চাকরি ছাড়ার চার বছর পর কথিত চুরির ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের রায়ে উদ্ধৃত একজন বুলগেরিয়ান প্রসিকিউটরের বলেন, ‘খাদঝিয়েভের পক্ষে এই অর্থ আত্মসাৎ করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।’
পলাতকদের ধরতে ‘ডিফিউশনস’ (ব্যাপক বিস্তার) নামের ইন্টারপোলের অনানুষ্ঠানিক একটি পদ্ধতি রয়েছে যা সহজেই অপব্যবহার করা যায়। সতর্কতা জারির মাধ্যমে ইন্টারপোলের সদস্যরা একে অপরের কাছে সরাসরি গ্রেপ্তারের অনুরোধ পাঠাতে পারে। এই পদ্ধতির শিকার হওয়াদের মধ্য একজন হলেন রুশ বংশোদ্ভূত লিথুয়ানিয়ার শরণার্থী নিকিতা কুলাচেনকভ। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে ২০১৬ সালে তাঁকে সাইপ্রাস বিমানবন্দরে আটক করা হয়। পরে সাইপ্রাসে তিনি কয়েক সপ্তাহ বন্দী ছিলেন। কুলাচেঙ্কভ রাশিয়ায় একজন পথশিল্পীর আঁকা ৬০ ইউরো মূল্যর ছবি চুরির অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান। রাশিয়ায় দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনে তদন্তের
কাজ শুরু করার পর তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল সতর্কতা জারি করে। এই দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বিরোধী দলীয় রাজনীতিক আলেক্সি নাভালনি। ২০২০ সালে নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার কারাগারে।
কুলাচেনকভের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ গঠনের জন্যই ওই পোস্টারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। রাশিয়ার শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলিরা তাঁর মস্কোর ফ্ল্যাটেও অভিযান চালিয়েছিল। সাইপ্রাসে আটকের এক বছর আগে কুলাচেনকভ ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, দুর্নীতিবিরোধী কাজের জন্য তিনি রুশ সরকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ইন্টারপোল তাঁর উদ্বেগ স্বীকার করেছিল এবং সংস্থাটির এক মুখপাত্র পরে বিষয়টি বিস্তারিত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন।
ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল
আট বছর ধরে ইন্টারপোলের মহাসচিব আছেন জার্গেন স্টক। তিনি সমস্যাযুক্ত নোটিশগুলোর ব্যাপারে ইন্টারপোলের বিশ্বাসযোগ্যতার হুমকি সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি মনে করেন, এটি হতাশাজনক। অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার অনুরোধের বিষয়গুলো (যেমন: শরণার্থী) সংস্থা থেকে জানার পরিবর্তে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে হয়। সদস্য দেশগুলো গ্রেপ্তার দাবি করা ব্যক্তির ‘শরণার্থী অবস্থা’ ইন্টারপোলকে অবহিত করে না।
অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের অপব্যবহার সম্পর্কে স্টক কোনো তথ্য দেন না। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই (সমস্যাযুক্ত) নোটিশগুলো প্রকৃত অপরাধীদের তুলনায় নগণ্য। স্টকের ধারণা, ভুল নোটিশের সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি নয়। তাঁর হিসাব মেনে নিলেও, প্রতিবছর শত শত নির্দোষ ব্যক্তি গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সেলাহউদ্দিন গুলেন ও ইন্টারপোল
আইনজীবীরা বলছেন, ভুল নোটিশগুলো প্রত্যাহারের সময় এবং এর মধ্যে যে ক্ষতি হতে পারে তা নির্ধারণ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। এর উদাহরণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও ফেতুল্লাহ গুলেনের ভাগনে সেলাহাদ্দীন গুলেনের গ্রেপ্তার। নাবালকের সঙ্গে যৌনতার অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে কেনিয়ায় তাঁকে আটক করা হয়। যদিও সেলাহাদ্দীন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাত মাস পরে ২০২১ সালের মে মাসে তিনি জামিন আবেদন করেন। কিন্তু তাঁকে আবার আটক করা হয় এবং তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ফ্রিডম হাউসের রিসার্চ ডিরেক্টর নেট শেনকান বলেন, ‘কেনিয়ার আদালতে বিচার ছাড়াই তাঁকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। এটি ইন্টারপোলের অপব্যবহারের একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।’
গুলেনের আইনজীবীরা অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জানিয়ে ইন্টারপোলকে রেড নোটিশটি প্রত্যাহার করতে বলেন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ইন্টারপোল গুলেনের রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। কিন্তু এর আগেই কেনিয়া তাঁকে তুরস্কে ফেরত পাঠায়।
ইন্টারপোলের সিসিএফ কমিটি
ইন্টারপোলের সিসিএফ ৮ বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত। তাঁরা সাধারণত প্রতি কয়েক মাস পরপর সভা করেন। ২০১৮ সালে দেওয়া তাঁদের তথ্যমতে, ৩৪৬টি অভিযোগের মধ্য ৪৮ শতাংশই সংস্থাটির নিয়ম ভঙ্গ করেছে। সদস্য দেশ নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তির মধ্যে রয়েছে দেশটির ইন্টারপোলের ডেটাবেসে প্রবেশাধিকার তিন মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখা। যদিও সংস্থাটি এটিকে শাস্তি নয় বরং ‘সংশোধনমূলক ব্যবস্থা’ বলে থাকে। ২০১১ সাল থেকে এটি কার্যকর রয়েছে।
কিছু দেশ ইন্টারপোলের অপব্যবহার নিরসনে বিষয়গুলো নিজেদের হাতে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে হেলসিঙ্কি কমিশনের আশেপাশে অবস্থিত কংগ্রেসের একটি দ্বিদলীয় গোষ্ঠী ট্রান্সন্যাশনাল রিপ্রেশন অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড প্রিভেনশন (ট্র্যাপ) আইন পাস করতে চাইছে। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার সীমিত করতে ২০১৯ সালে এ আইন প্রস্তাব করা হয়।
খারিসের গল্পে ফিরে আসা
২০১৮ সালের শেষের দিকে খারিস কারাগার থেকে মুক্তি পান। যখন এক মার্কিন ফেডারেল বিচারক রাশিয়ার ইন্টারপোল পদ্ধতির অপব্যবহার এবং সংস্থাটির গ্রেপ্তার তালিকায় ‘গুরুতর ত্রুটির’ প্রমাণ পায়।
ইন্টারপোলের কাছে খারিসের আবেদনের নয় মাস পরে ২০২০ সালের গ্রীষ্মে সংস্থাটি রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। খারিস বলেন, ‘আমি এখনো মনে করি যে ইন্টারপোল ভালোর জন্যই। কিন্তু সংস্থাটির নিয়মের অপব্যবহার করা খুব সহজ। কিন্তু মানুষের জীবনটাই তো সর্বাগ্রে থাকার কথা!’

২০১৫ সালের শুরুর দিকে একদিন অ্যালেক্সি খারিস নামের ক্যালিফোর্নিয়ার এক ব্যবসায়ীর মুখ সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। দুই সন্তানের জনক খারিসকে গ্রেপ্তারের জন্য রাশিয়া ইন্টারপোলকে অনুরোধ করবে বলে জানানো হয়।
এই সংবাদে ৪৬ বছর বয়সী খারিস বেশ হতবাক হয়েছিলেন বটে। প্রথমে এটি রুশ কর্তৃপক্ষের ভয় দেখানোর কৌশল ভেবে নিশ্চিত থেকেছেন।
এর পরের মাসগুলোতে খারিস ইন্টারপোলের গ্যালারিতে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক পলাতক আসামির তালিকায় নিজেকে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে একদিন নিজের মুখ দেখতে পান। ছবিটি এমনভাবে তোলা যে খারিসকে দাগী অপরাধী মনে হচ্ছিল।
ইন্টারপোলের গ্যালারিতে অপরাধীদের তালিকা খোঁজার সময় খারিস ভাবছিলেন, ‘এই লোকটি একজন সন্ত্রাসী; পরেরজন খুনি; তার পরের জন শিশু অপহরণকারী। আর এরপর আমি নিজেই!’
রাশিয়াতে ঠিকাদারি কোম্পানি চালাতেন খারিস। সরকারি প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আমলাদের দুর্নীতির খোঁজ পান। এর জেরেই কর্তৃপক্ষের অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি ব্যুরোর এজেন্টরা ২০১৩ সালে তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়।
খারিসের আশা ছিল রাশিয়ায় তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। কিন্তু ইন্টারপোলের নোটিশ সেই ভুল ভেঙে দেয়। ওই নোটিশে তিনি জানতে পারেন, রাশিয়ায় তাঁকে ‘অপরাধী সংগঠনের’ সদস্য সাব্যস্ত ও নিজ কোম্পানির কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড চুরির দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপন্থী চিন্তকদের সংগঠন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টেড ব্রমন্ড ওই রুশ ঠিকাদারের নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছেন। তিনি জানান, রাশিয়া বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা নিজের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রথমে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ভুয়া অনুরোধ জানায়। এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ শিকার খারিস। মার্কিন অধিকার সংস্থা ফ্রিডম হাউসের মতে, ইন্টারপোলের সমস্ত পাবলিক রেড নোটিশের ৩৮ শতাংশই রাশিয়ার।
ব্রমন্ড পরে আরও লিখেছেন, খারিসের কোনো অপরাধ প্রমাণ দূরে থাক নোটিশটি শুধু প্রমাণ করে যে, ‘রাশিয়ান ফেডারেশন সঠিকভাবে ইন্টারপোলের ফরমটি পূরণ করেছে।’ ইন্টারপোল কিছু যাচাই করেনি। খারিসের বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ইন্টারপোলের কাছে জানতে চাইলে, সংস্থাটি রেড নোটিশ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।
ইন্টারপোলের যাত্রা
১৯১৪ সালে আলোচনা শুরু হলেও ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারপোল। এক দেশে অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া বন্ধ করতেই এর সৃষ্টি। সংগঠনটির নিপীড়ক শাসকদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার নজির রয়েছে অহরহ।
১৯৩৮ সালে নাৎসিরা ইন্টারপোলের প্রেসিডেন্টকে বরখাস্ত করে এবং পরে সংস্থাটিকে বার্লিনে স্থানান্তরিত করে। তখন অনেক দেশ সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোলের অস্তিত্ব ঝিমিয়ে পড়েছিল।
দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধাপরাধী, মাদক পাচারকারী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ধরতে ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্র ইন্টারপোলকে সমর্থন করে আসছে। সংস্থাটির রেড নোটিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাছাকাছি ধরা হয়। প্রতি বছর হাজার হাজার পলাতক আসামির অবস্থানে এই নোটিশ জারি করা হয়।
রেড নোটিশ বেড়ে দশগুন
ইন্টারপোলের রেড-নোটিসের বিষয়গুলোর মধ্যে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন এবং লিবিয়ার প্রয়াত স্বৈরশাসকের ছেলে সাদি গাদ্দাফিও ছিলেন। এই বিশ্বায়নের যুগে অপরাধীদের সংখ্যা ও সন্ত্রাসী ঘটনা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইন্টারপোলকে ব্যবহারও বেড়েছে। গত দুই দশকে রেড নোটিশ বেড়ে হয়েছে দশগুণ। ২০০০ সালে প্রায় ১ হাজার ২০০টি থেকে ২০২০ সালে হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। এ ছাড়া ইন্টারপোলের নোটিশের অন্যান্য রূপও রয়েছে, যেমন নিখোঁজ শিশুদের জন্য হলুদ নোটিশ এবং অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহের জন্য কালো নোটিশ।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ফায়দা বা প্রতিশোধের জন্য অনেক দেশ ইন্টারপোল ব্যবহার করছে, এটি উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, সমালোচক, অধিকার কর্মী এবং শরণার্থীরা এ শিকার হচ্ছে। এটা বলা কঠিন যে, প্রায় ৬৬ হাজার সক্রিয় রেড নোটিশের মধ্যে কতগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইন্টারপোল কতগুলো রেড নোটিশ প্রত্যাখ্যান করেছে তার তথ্য প্রকাশ করে না। তবে মার্কিন কংগ্রেস, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং বিশেষজ্ঞরাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারপোলের অপব্যবহারের বিষয়টি নথিভুক্ত হয়েছে।
ইন্টারপোলকে অপব্যবহারের চেষ্টা আর্ন্তজাতিক দমন-পীড়নের একটি বৈশিষ্ট্য। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ বিদেশের মাটিতেও প্রতিপক্ষের কণ্ঠরোধ করে থাকে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে—গুপ্তহত্যা, বিষ প্রয়োগ, বিচ্ছিন্নকরণ, ব্ল্যাকমেল, মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং পরিবারকে হুমকি দেওয়া। পদ্ধতিগুলো ভিন্ন হতে পারে, তবে তারা বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের যুগে যেই ভয়ঙ্কর বার্তা পাঠাচ্ছে তা হলো, ‘আপনি আপনার দেশ ছাড়লেও শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।’
ইন্টারপোল ও সিরিয়া
২০২১ সালের অক্টোবরের শুরুতে ইন্টারপোলের ডাটাবেসে পুনরায় সিরিয়াকে প্রবেশাধিকার ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি দেশটির বিরোধী দল কঠোরভাবে সমালোচনা করে। সিরিয়ার বিরোধী দলের মধ্যস্থতাকারী সংস্থার প্রধান আনাস আল-আবদাহ বলেন, ইন্টারপোলের সিদ্ধান্ত বাশার আল-আসাদের সরকারকে সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ চালানোর তথ্য-ভিত্তিক উপায় দিয়েছে।
সিরিয়া-সম্পর্কিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে কাজ করা এক ব্রিটিশ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘ইন্টারপোলের নিয়মগুলো অস্বচ্ছ। কোনো বাস্তব তদারকি বা জবাবদিহিতা নেই। সিরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলো নিয়মিত এর অপব্যবহার করে। এসব রেড নোটিশ জারি করা খুবই সহজ। আপনাকে এতে তথ্য সরবরাহ করতে হবে না। অপরদিকে যুক্তরাজ্য বা নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় দেশেও রেড নোটিশ প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া জটিল ও মন্থর। এ ছাড়া সংস্থাটির অর্থ ও কর্মীর সংকটও রয়েছে।’
বাহরাইনের ফুটবলার হাকিম আল-আরাইবি
কেউ কেউ দেশত্যাগ করার সময়ই ইন্টারপোলের পরোয়ানার অবস্থা জানার অভিজ্ঞতা পান। উদাহরণসরূপ, বাহরাইনি ফুটবলার হাকিম আল-আরাইবির কথা বলা যেতে পারে। তিনি রাজনৈতিক উদ্বাস্তু হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছিলেন। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ডে হানিমুনে গেলে ইন্টারপোল তাঁর ওপর সহিংসতার অভিযোগে রেড নোটিশ জারি করে। তখন থাইল্যান্ডের প্রশাসন স্ত্রীসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তবে অস্ট্রেলিয়া আল-আরাইবিকে শরণার্থীর মর্যাদা দিলে ইন্টারপোল রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে নেয়। নোটিশ প্রত্যাহার করলেও আরাইবিকে ঠিকই ৭৬ দিন কারাভোগ করতে হয়েছিল।
রাশিয়ার রাজনৈতিক কর্মী ও পরিবেশবাদী পেত্র সিলায়েভ
ইন্টারপোলের রেড নোটিশের হয়রানির স্বীকার আরেক রাজনৈতিক কর্মী পেত্র সিলায়েভ। তিনি রাশিয়ার পরিবেশবাদী এবং ফ্যাসিবাদ-বিরোধী একজন কর্মী। যিনি ২০১০ সালে মস্কোর বাইরে খিমকি বনের মধ্য দিয়ে একটি মোটরওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার পরে ‘গুণ্ডাতন্ত্র’ উসকে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর সহযোদ্ধাদের আটক করলে তিনি ফিনল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তবে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কারণে ২০১২ সালে তাঁকে স্পেনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একটি কড়া নিরাপত্তার কারাগারে আটক রাখা হয়।
পশ্চিম পাপুয়া নিউ গিনির বেনি ওয়েন্ডা
পশ্চিম পাপুয়ার একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বেনি ওয়েন্ডার বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়া একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেড নোটিশ জারি করেছিল। তিনি দেশটির কারাগার থেকে পালিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক উদ্বাস্তু হিসেবে স্থান পেয়েছেন। তবে পরে তাঁর বিরুদ্ধে জারিকৃত রেড নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২০১৭ সালে স্পেনে ছুটিতে থাকাকালে তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান লেখক দোগান আখানলিকে গ্রেপ্তার করার পরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ইন্টারপোলের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অপব্যবহার করা উচিত নয়।’
চীনের ইদিরেসি আইশান ও বেলারুশের মাকারি মালাচোস্কি
২০২১ সালে চীন ইন্টারপোলের কাছে প্রত্যর্পণ দাবি করলে মরক্কোর কর্তৃপক্ষ উইঘুর কর্মী ইদিরেসি আইশানকে গ্রেপ্তার করে। তবে ইন্টারপোল পরে পর্যালোচনা করে আইশানের রেড নোটিশ বাতিল করে। ইদিরেসি এখনো চীনে প্রত্যার্পণের হুমকিতে রয়েছেন।
এদিকে বেলারুশের আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকার রেড নোটিশ জারি করার পর বিরোধী দলের কর্মী মাকারি মালাচোস্কি দেশ ছেড়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁকেও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়ারশ থেকে আটক করা হয়।
ইন্টারপোল ও আইনজীবী মিশেল ইস্টলুন্ডের অভিজ্ঞতা
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যর আইনজীবী ও ইন্টারপোলের দ্বারা হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বকারী মিশেল ইস্টলুন্ড বলেন, ‘হয়রানির শিকার এসব ব্যক্তিদের কথা যে কেউ বিশ্বাস করবে না এমনটাই তাঁরা ভাবে। কারণ তাঁদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অবর্ণনীয়।’
ইস্টলুন্ড ১৪ বছর আগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিদের সাহায্য করছিলেন। যখন ভেনেজুয়েলার এক নারী প্রতারণার অভিযোগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের মুখে পড়ে এই ফৌজদারি আইনজীবীর সাহায্য চেয়েছিলেন। ইস্টলুন্ড প্রথমে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু পরে রাশিয়া থেকে ইকুয়েডর পর্যন্ত রেড-নোটিস জারির বিভিন্ন মামলায় কাজ করে এবং কীভাবে আইনের অপব্যবহার করা যেতে পারে তা দেখে তিনি হতবাক হন।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সরকারের সমালোচনাকারী ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধের আকাঙ্ক্ষা দিনদিন বাড়ছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘যেকোনো বিচার ব্যবস্থায়, এমনকি নিকৃষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা যেটা আশা করি তার বিপরীতটাই হচ্ছে। আমার কাছে পৌঁছানোর আগে মক্কেলরা যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় তা মনকে আলোড়িত করে।’
শরণার্থী বিষয়ে ইন্টারপোলের নীতিমালা
২০১৫ সালে ইন্টারপোলের গঠনতন্ত্র রাজনৈতিক বিষয়ে এ সংগঠন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জানায়, কোনো ব্যক্তির শরণার্থী স্বীকৃতি থাকলে তাঁর নোটিশ প্রত্যাহার করা হবে।
ওই নোটিশে আরও জানানো হয়, ইন্টারপোল অবশ্যই মানবাধিকারের সার্বজনীন নীতি মেনে কাজ করবে। সংগঠনটি ন্যয়বিচার ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ করবে। সংগঠনটি গ্রেপ্তারের দাবিতে থাকা প্রতিটি ব্যক্তির খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে। আপাতদৃষ্টিতে এমন স্পষ্ট সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা থাকার পরেও সংস্থাটিতে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে, সেটি প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে।
ইন্টারপোল ও তুরস্ক
আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারের জন্য সন্দেহজনক অনুরোধগুলো ২০১৬ সালে ইন্টারপোলের লিওন সদর দপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ স্কোয়াডের কাছে পড়ে।
তুরস্ক বলছে, ইন্টারপোল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তুর্কি ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে জনপ্রিয় আন্দোলন ‘হিজমেত’–এর সঙ্গে জড়িত ৭৭৩ জনকে আটকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফেতুল্লাহ গুলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সাবেক মিত্র। এই সংখ্যা ৭০০–এর বেশি বলে নিশ্চিত করেছে ইন্টারপোল।
২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের জন্য গুলেন সমর্থকদের দায়ী করে এরদোয়ান সরকার। আন্দোলনকারীদের বিচার প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য ইন্টারপোলের সমালোচনাও করেছে তুরস্ক। এমন খবর পাওয়া গেছে, চুরি যাওয়া পাসপোর্ট ডেটাবেসের মাধ্যমে আঙ্কারা ইন্টারপোলে ৬০ হাজার ব্যক্তির গ্রেপ্তার দাবি করেছিল। কিন্তু সংস্থাটি এই সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেড নোটিশ বন্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তার দাবিকে নাকচ করে দেওয়া ইন্টারপোলের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। তবুও কেউ কেউ ভয় পায়, কেননা ইন্টারপোল এখনো বিশ্বাস করে—সদস্য দেশগুলো সরল বিশ্বাসে কাজ করছে এবং সঠিক তথ্য দিচ্ছে!
ইন্টারপোলের প্রাক্তন ডাচ আইন প্রধান এবং সংস্থাটির গবেষণাপত্রের লেখক রুটসেল মার্থা বলেন, ‘পুলিশ সততার সঙ্গে কাজ করে এমন ধারণা নিয়ে ইন্টারপোল পুলিশকে সাহায্য করে। এটিই সংস্থাটির নীতি। তাই প্রথমে অবস্থা বুঝে কাজ করতে হয়, পরে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়।’
ইন্টারপোলের কাছে ভুয়া গ্রেপ্তার দাবির সবচেয়ে সহজ উপায়গুলো হলো—অর্থ পাচার, খুন ও ইন্টারপোলের নিয়ম ভঙ্গ করে এমন রাজনৈতিক অভিযোগ। রেড নোটিশগুলো পর্যালোচনা করে এস্টলুন্ড বলেন, ‘অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায্য মুনাফা অর্জনের অভিযোগ গঠনে তথ্য তৈরি করা বা হেরফের করা খুব সহজ।’
তুর্কেমেনিস্তান ও ইন্টারপোল
দুর্বল তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোলের যতো দুর্নাম হয়েছে তাঁর মধ্য অন্যতম হলো তুর্কমেনিস্তানের মানবাধিকারকর্মী আনাদুর্দি খাদঝিয়েভের মামলা। তুর্কমেনিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার (৩০ মিলিয়ন পাউন্ড) আত্মসাতের অভিযোগে ইন্টারপোলের নোটিশে ২০০২ সালে বুলগেরিয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও খাদঝিয়েভ ব্যাংকের চাকরি ছাড়ার চার বছর পর কথিত চুরির ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের রায়ে উদ্ধৃত একজন বুলগেরিয়ান প্রসিকিউটরের বলেন, ‘খাদঝিয়েভের পক্ষে এই অর্থ আত্মসাৎ করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।’
পলাতকদের ধরতে ‘ডিফিউশনস’ (ব্যাপক বিস্তার) নামের ইন্টারপোলের অনানুষ্ঠানিক একটি পদ্ধতি রয়েছে যা সহজেই অপব্যবহার করা যায়। সতর্কতা জারির মাধ্যমে ইন্টারপোলের সদস্যরা একে অপরের কাছে সরাসরি গ্রেপ্তারের অনুরোধ পাঠাতে পারে। এই পদ্ধতির শিকার হওয়াদের মধ্য একজন হলেন রুশ বংশোদ্ভূত লিথুয়ানিয়ার শরণার্থী নিকিতা কুলাচেনকভ। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে ২০১৬ সালে তাঁকে সাইপ্রাস বিমানবন্দরে আটক করা হয়। পরে সাইপ্রাসে তিনি কয়েক সপ্তাহ বন্দী ছিলেন। কুলাচেঙ্কভ রাশিয়ায় একজন পথশিল্পীর আঁকা ৬০ ইউরো মূল্যর ছবি চুরির অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান। রাশিয়ায় দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনে তদন্তের
কাজ শুরু করার পর তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল সতর্কতা জারি করে। এই দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বিরোধী দলীয় রাজনীতিক আলেক্সি নাভালনি। ২০২০ সালে নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার কারাগারে।
কুলাচেনকভের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ গঠনের জন্যই ওই পোস্টারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। রাশিয়ার শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলিরা তাঁর মস্কোর ফ্ল্যাটেও অভিযান চালিয়েছিল। সাইপ্রাসে আটকের এক বছর আগে কুলাচেনকভ ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, দুর্নীতিবিরোধী কাজের জন্য তিনি রুশ সরকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ইন্টারপোল তাঁর উদ্বেগ স্বীকার করেছিল এবং সংস্থাটির এক মুখপাত্র পরে বিষয়টি বিস্তারিত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন।
ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল
আট বছর ধরে ইন্টারপোলের মহাসচিব আছেন জার্গেন স্টক। তিনি সমস্যাযুক্ত নোটিশগুলোর ব্যাপারে ইন্টারপোলের বিশ্বাসযোগ্যতার হুমকি সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি মনে করেন, এটি হতাশাজনক। অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার অনুরোধের বিষয়গুলো (যেমন: শরণার্থী) সংস্থা থেকে জানার পরিবর্তে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে হয়। সদস্য দেশগুলো গ্রেপ্তার দাবি করা ব্যক্তির ‘শরণার্থী অবস্থা’ ইন্টারপোলকে অবহিত করে না।
অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের অপব্যবহার সম্পর্কে স্টক কোনো তথ্য দেন না। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই (সমস্যাযুক্ত) নোটিশগুলো প্রকৃত অপরাধীদের তুলনায় নগণ্য। স্টকের ধারণা, ভুল নোটিশের সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি নয়। তাঁর হিসাব মেনে নিলেও, প্রতিবছর শত শত নির্দোষ ব্যক্তি গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সেলাহউদ্দিন গুলেন ও ইন্টারপোল
আইনজীবীরা বলছেন, ভুল নোটিশগুলো প্রত্যাহারের সময় এবং এর মধ্যে যে ক্ষতি হতে পারে তা নির্ধারণ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। এর উদাহরণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও ফেতুল্লাহ গুলেনের ভাগনে সেলাহাদ্দীন গুলেনের গ্রেপ্তার। নাবালকের সঙ্গে যৌনতার অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে কেনিয়ায় তাঁকে আটক করা হয়। যদিও সেলাহাদ্দীন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাত মাস পরে ২০২১ সালের মে মাসে তিনি জামিন আবেদন করেন। কিন্তু তাঁকে আবার আটক করা হয় এবং তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ফ্রিডম হাউসের রিসার্চ ডিরেক্টর নেট শেনকান বলেন, ‘কেনিয়ার আদালতে বিচার ছাড়াই তাঁকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। এটি ইন্টারপোলের অপব্যবহারের একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।’
গুলেনের আইনজীবীরা অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জানিয়ে ইন্টারপোলকে রেড নোটিশটি প্রত্যাহার করতে বলেন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ইন্টারপোল গুলেনের রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। কিন্তু এর আগেই কেনিয়া তাঁকে তুরস্কে ফেরত পাঠায়।
ইন্টারপোলের সিসিএফ কমিটি
ইন্টারপোলের সিসিএফ ৮ বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত। তাঁরা সাধারণত প্রতি কয়েক মাস পরপর সভা করেন। ২০১৮ সালে দেওয়া তাঁদের তথ্যমতে, ৩৪৬টি অভিযোগের মধ্য ৪৮ শতাংশই সংস্থাটির নিয়ম ভঙ্গ করেছে। সদস্য দেশ নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তির মধ্যে রয়েছে দেশটির ইন্টারপোলের ডেটাবেসে প্রবেশাধিকার তিন মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখা। যদিও সংস্থাটি এটিকে শাস্তি নয় বরং ‘সংশোধনমূলক ব্যবস্থা’ বলে থাকে। ২০১১ সাল থেকে এটি কার্যকর রয়েছে।
কিছু দেশ ইন্টারপোলের অপব্যবহার নিরসনে বিষয়গুলো নিজেদের হাতে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে হেলসিঙ্কি কমিশনের আশেপাশে অবস্থিত কংগ্রেসের একটি দ্বিদলীয় গোষ্ঠী ট্রান্সন্যাশনাল রিপ্রেশন অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড প্রিভেনশন (ট্র্যাপ) আইন পাস করতে চাইছে। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার সীমিত করতে ২০১৯ সালে এ আইন প্রস্তাব করা হয়।
খারিসের গল্পে ফিরে আসা
২০১৮ সালের শেষের দিকে খারিস কারাগার থেকে মুক্তি পান। যখন এক মার্কিন ফেডারেল বিচারক রাশিয়ার ইন্টারপোল পদ্ধতির অপব্যবহার এবং সংস্থাটির গ্রেপ্তার তালিকায় ‘গুরুতর ত্রুটির’ প্রমাণ পায়।
ইন্টারপোলের কাছে খারিসের আবেদনের নয় মাস পরে ২০২০ সালের গ্রীষ্মে সংস্থাটি রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। খারিস বলেন, ‘আমি এখনো মনে করি যে ইন্টারপোল ভালোর জন্যই। কিন্তু সংস্থাটির নিয়মের অপব্যবহার করা খুব সহজ। কিন্তু মানুষের জীবনটাই তো সর্বাগ্রে থাকার কথা!’

২০১৫ সালের শুরুর দিকে একদিন অ্যালেক্সি খারিস নামের ক্যালিফোর্নিয়ার এক ব্যবসায়ীর মুখ সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। দুই সন্তানের জনক খারিসকে গ্রেপ্তারের জন্য রাশিয়া ইন্টারপোলকে অনুরোধ করবে বলে জানানো হয়।
এই সংবাদে ৪৬ বছর বয়সী খারিস বেশ হতবাক হয়েছিলেন বটে। প্রথমে এটি রুশ কর্তৃপক্ষের ভয় দেখানোর কৌশল ভেবে নিশ্চিত থেকেছেন।
এর পরের মাসগুলোতে খারিস ইন্টারপোলের গ্যালারিতে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক পলাতক আসামির তালিকায় নিজেকে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে একদিন নিজের মুখ দেখতে পান। ছবিটি এমনভাবে তোলা যে খারিসকে দাগী অপরাধী মনে হচ্ছিল।
ইন্টারপোলের গ্যালারিতে অপরাধীদের তালিকা খোঁজার সময় খারিস ভাবছিলেন, ‘এই লোকটি একজন সন্ত্রাসী; পরেরজন খুনি; তার পরের জন শিশু অপহরণকারী। আর এরপর আমি নিজেই!’
রাশিয়াতে ঠিকাদারি কোম্পানি চালাতেন খারিস। সরকারি প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আমলাদের দুর্নীতির খোঁজ পান। এর জেরেই কর্তৃপক্ষের অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি ব্যুরোর এজেন্টরা ২০১৩ সালে তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয়।
খারিসের আশা ছিল রাশিয়ায় তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। কিন্তু ইন্টারপোলের নোটিশ সেই ভুল ভেঙে দেয়। ওই নোটিশে তিনি জানতে পারেন, রাশিয়ায় তাঁকে ‘অপরাধী সংগঠনের’ সদস্য সাব্যস্ত ও নিজ কোম্পানির কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড চুরির দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপন্থী চিন্তকদের সংগঠন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টেড ব্রমন্ড ওই রুশ ঠিকাদারের নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছেন। তিনি জানান, রাশিয়া বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা নিজের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রথমে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ভুয়া অনুরোধ জানায়। এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ শিকার খারিস। মার্কিন অধিকার সংস্থা ফ্রিডম হাউসের মতে, ইন্টারপোলের সমস্ত পাবলিক রেড নোটিশের ৩৮ শতাংশই রাশিয়ার।
ব্রমন্ড পরে আরও লিখেছেন, খারিসের কোনো অপরাধ প্রমাণ দূরে থাক নোটিশটি শুধু প্রমাণ করে যে, ‘রাশিয়ান ফেডারেশন সঠিকভাবে ইন্টারপোলের ফরমটি পূরণ করেছে।’ ইন্টারপোল কিছু যাচাই করেনি। খারিসের বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ইন্টারপোলের কাছে জানতে চাইলে, সংস্থাটি রেড নোটিশ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে মন্তব্য করেনি।
ইন্টারপোলের যাত্রা
১৯১৪ সালে আলোচনা শুরু হলেও ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারপোল। এক দেশে অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া বন্ধ করতেই এর সৃষ্টি। সংগঠনটির নিপীড়ক শাসকদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার নজির রয়েছে অহরহ।
১৯৩৮ সালে নাৎসিরা ইন্টারপোলের প্রেসিডেন্টকে বরখাস্ত করে এবং পরে সংস্থাটিকে বার্লিনে স্থানান্তরিত করে। তখন অনেক দেশ সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোলের অস্তিত্ব ঝিমিয়ে পড়েছিল।
দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধাপরাধী, মাদক পাচারকারী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ধরতে ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্র ইন্টারপোলকে সমর্থন করে আসছে। সংস্থাটির রেড নোটিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাছাকাছি ধরা হয়। প্রতি বছর হাজার হাজার পলাতক আসামির অবস্থানে এই নোটিশ জারি করা হয়।
রেড নোটিশ বেড়ে দশগুন
ইন্টারপোলের রেড-নোটিসের বিষয়গুলোর মধ্যে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন এবং লিবিয়ার প্রয়াত স্বৈরশাসকের ছেলে সাদি গাদ্দাফিও ছিলেন। এই বিশ্বায়নের যুগে অপরাধীদের সংখ্যা ও সন্ত্রাসী ঘটনা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইন্টারপোলকে ব্যবহারও বেড়েছে। গত দুই দশকে রেড নোটিশ বেড়ে হয়েছে দশগুণ। ২০০০ সালে প্রায় ১ হাজার ২০০টি থেকে ২০২০ সালে হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। এ ছাড়া ইন্টারপোলের নোটিশের অন্যান্য রূপও রয়েছে, যেমন নিখোঁজ শিশুদের জন্য হলুদ নোটিশ এবং অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহের জন্য কালো নোটিশ।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ফায়দা বা প্রতিশোধের জন্য অনেক দেশ ইন্টারপোল ব্যবহার করছে, এটি উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, সমালোচক, অধিকার কর্মী এবং শরণার্থীরা এ শিকার হচ্ছে। এটা বলা কঠিন যে, প্রায় ৬৬ হাজার সক্রিয় রেড নোটিশের মধ্যে কতগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ইন্টারপোল কতগুলো রেড নোটিশ প্রত্যাখ্যান করেছে তার তথ্য প্রকাশ করে না। তবে মার্কিন কংগ্রেস, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং বিশেষজ্ঞরাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারপোলের অপব্যবহারের বিষয়টি নথিভুক্ত হয়েছে।
ইন্টারপোলকে অপব্যবহারের চেষ্টা আর্ন্তজাতিক দমন-পীড়নের একটি বৈশিষ্ট্য। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ বিদেশের মাটিতেও প্রতিপক্ষের কণ্ঠরোধ করে থাকে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে—গুপ্তহত্যা, বিষ প্রয়োগ, বিচ্ছিন্নকরণ, ব্ল্যাকমেল, মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা এবং পরিবারকে হুমকি দেওয়া। পদ্ধতিগুলো ভিন্ন হতে পারে, তবে তারা বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের যুগে যেই ভয়ঙ্কর বার্তা পাঠাচ্ছে তা হলো, ‘আপনি আপনার দেশ ছাড়লেও শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।’
ইন্টারপোল ও সিরিয়া
২০২১ সালের অক্টোবরের শুরুতে ইন্টারপোলের ডাটাবেসে পুনরায় সিরিয়াকে প্রবেশাধিকার ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি দেশটির বিরোধী দল কঠোরভাবে সমালোচনা করে। সিরিয়ার বিরোধী দলের মধ্যস্থতাকারী সংস্থার প্রধান আনাস আল-আবদাহ বলেন, ইন্টারপোলের সিদ্ধান্ত বাশার আল-আসাদের সরকারকে সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ চালানোর তথ্য-ভিত্তিক উপায় দিয়েছে।
সিরিয়া-সম্পর্কিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে কাজ করা এক ব্রিটিশ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘ইন্টারপোলের নিয়মগুলো অস্বচ্ছ। কোনো বাস্তব তদারকি বা জবাবদিহিতা নেই। সিরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলো নিয়মিত এর অপব্যবহার করে। এসব রেড নোটিশ জারি করা খুবই সহজ। আপনাকে এতে তথ্য সরবরাহ করতে হবে না। অপরদিকে যুক্তরাজ্য বা নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় দেশেও রেড নোটিশ প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া জটিল ও মন্থর। এ ছাড়া সংস্থাটির অর্থ ও কর্মীর সংকটও রয়েছে।’
বাহরাইনের ফুটবলার হাকিম আল-আরাইবি
কেউ কেউ দেশত্যাগ করার সময়ই ইন্টারপোলের পরোয়ানার অবস্থা জানার অভিজ্ঞতা পান। উদাহরণসরূপ, বাহরাইনি ফুটবলার হাকিম আল-আরাইবির কথা বলা যেতে পারে। তিনি রাজনৈতিক উদ্বাস্তু হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছিলেন। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ডে হানিমুনে গেলে ইন্টারপোল তাঁর ওপর সহিংসতার অভিযোগে রেড নোটিশ জারি করে। তখন থাইল্যান্ডের প্রশাসন স্ত্রীসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তবে অস্ট্রেলিয়া আল-আরাইবিকে শরণার্থীর মর্যাদা দিলে ইন্টারপোল রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে নেয়। নোটিশ প্রত্যাহার করলেও আরাইবিকে ঠিকই ৭৬ দিন কারাভোগ করতে হয়েছিল।
রাশিয়ার রাজনৈতিক কর্মী ও পরিবেশবাদী পেত্র সিলায়েভ
ইন্টারপোলের রেড নোটিশের হয়রানির স্বীকার আরেক রাজনৈতিক কর্মী পেত্র সিলায়েভ। তিনি রাশিয়ার পরিবেশবাদী এবং ফ্যাসিবাদ-বিরোধী একজন কর্মী। যিনি ২০১০ সালে মস্কোর বাইরে খিমকি বনের মধ্য দিয়ে একটি মোটরওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার পরে ‘গুণ্ডাতন্ত্র’ উসকে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর সহযোদ্ধাদের আটক করলে তিনি ফিনল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তবে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কারণে ২০১২ সালে তাঁকে স্পেনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একটি কড়া নিরাপত্তার কারাগারে আটক রাখা হয়।
পশ্চিম পাপুয়া নিউ গিনির বেনি ওয়েন্ডা
পশ্চিম পাপুয়ার একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বেনি ওয়েন্ডার বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়া একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেড নোটিশ জারি করেছিল। তিনি দেশটির কারাগার থেকে পালিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক উদ্বাস্তু হিসেবে স্থান পেয়েছেন। তবে পরে তাঁর বিরুদ্ধে জারিকৃত রেড নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২০১৭ সালে স্পেনে ছুটিতে থাকাকালে তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান লেখক দোগান আখানলিকে গ্রেপ্তার করার পরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ইন্টারপোলের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অপব্যবহার করা উচিত নয়।’
চীনের ইদিরেসি আইশান ও বেলারুশের মাকারি মালাচোস্কি
২০২১ সালে চীন ইন্টারপোলের কাছে প্রত্যর্পণ দাবি করলে মরক্কোর কর্তৃপক্ষ উইঘুর কর্মী ইদিরেসি আইশানকে গ্রেপ্তার করে। তবে ইন্টারপোল পরে পর্যালোচনা করে আইশানের রেড নোটিশ বাতিল করে। ইদিরেসি এখনো চীনে প্রত্যার্পণের হুমকিতে রয়েছেন।
এদিকে বেলারুশের আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকার রেড নোটিশ জারি করার পর বিরোধী দলের কর্মী মাকারি মালাচোস্কি দেশ ছেড়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁকেও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়ারশ থেকে আটক করা হয়।
ইন্টারপোল ও আইনজীবী মিশেল ইস্টলুন্ডের অভিজ্ঞতা
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যর আইনজীবী ও ইন্টারপোলের দ্বারা হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বকারী মিশেল ইস্টলুন্ড বলেন, ‘হয়রানির শিকার এসব ব্যক্তিদের কথা যে কেউ বিশ্বাস করবে না এমনটাই তাঁরা ভাবে। কারণ তাঁদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অবর্ণনীয়।’
ইস্টলুন্ড ১৪ বছর আগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিদের সাহায্য করছিলেন। যখন ভেনেজুয়েলার এক নারী প্রতারণার অভিযোগে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের মুখে পড়ে এই ফৌজদারি আইনজীবীর সাহায্য চেয়েছিলেন। ইস্টলুন্ড প্রথমে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু পরে রাশিয়া থেকে ইকুয়েডর পর্যন্ত রেড-নোটিস জারির বিভিন্ন মামলায় কাজ করে এবং কীভাবে আইনের অপব্যবহার করা যেতে পারে তা দেখে তিনি হতবাক হন।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সরকারের সমালোচনাকারী ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধের আকাঙ্ক্ষা দিনদিন বাড়ছে জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘যেকোনো বিচার ব্যবস্থায়, এমনকি নিকৃষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা যেটা আশা করি তার বিপরীতটাই হচ্ছে। আমার কাছে পৌঁছানোর আগে মক্কেলরা যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় তা মনকে আলোড়িত করে।’
শরণার্থী বিষয়ে ইন্টারপোলের নীতিমালা
২০১৫ সালে ইন্টারপোলের গঠনতন্ত্র রাজনৈতিক বিষয়ে এ সংগঠন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জানায়, কোনো ব্যক্তির শরণার্থী স্বীকৃতি থাকলে তাঁর নোটিশ প্রত্যাহার করা হবে।
ওই নোটিশে আরও জানানো হয়, ইন্টারপোল অবশ্যই মানবাধিকারের সার্বজনীন নীতি মেনে কাজ করবে। সংগঠনটি ন্যয়বিচার ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ করবে। সংগঠনটি গ্রেপ্তারের দাবিতে থাকা প্রতিটি ব্যক্তির খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে। আপাতদৃষ্টিতে এমন স্পষ্ট সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা থাকার পরেও সংস্থাটিতে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে, সেটি প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে।
ইন্টারপোল ও তুরস্ক
আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারের জন্য সন্দেহজনক অনুরোধগুলো ২০১৬ সালে ইন্টারপোলের লিওন সদর দপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ স্কোয়াডের কাছে পড়ে।
তুরস্ক বলছে, ইন্টারপোল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তুর্কি ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে জনপ্রিয় আন্দোলন ‘হিজমেত’–এর সঙ্গে জড়িত ৭৭৩ জনকে আটকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফেতুল্লাহ গুলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সাবেক মিত্র। এই সংখ্যা ৭০০–এর বেশি বলে নিশ্চিত করেছে ইন্টারপোল।
২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের জন্য গুলেন সমর্থকদের দায়ী করে এরদোয়ান সরকার। আন্দোলনকারীদের বিচার প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য ইন্টারপোলের সমালোচনাও করেছে তুরস্ক। এমন খবর পাওয়া গেছে, চুরি যাওয়া পাসপোর্ট ডেটাবেসের মাধ্যমে আঙ্কারা ইন্টারপোলে ৬০ হাজার ব্যক্তির গ্রেপ্তার দাবি করেছিল। কিন্তু সংস্থাটি এই সংখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রেড নোটিশ বন্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তার দাবিকে নাকচ করে দেওয়া ইন্টারপোলের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। তবুও কেউ কেউ ভয় পায়, কেননা ইন্টারপোল এখনো বিশ্বাস করে—সদস্য দেশগুলো সরল বিশ্বাসে কাজ করছে এবং সঠিক তথ্য দিচ্ছে!
ইন্টারপোলের প্রাক্তন ডাচ আইন প্রধান এবং সংস্থাটির গবেষণাপত্রের লেখক রুটসেল মার্থা বলেন, ‘পুলিশ সততার সঙ্গে কাজ করে এমন ধারণা নিয়ে ইন্টারপোল পুলিশকে সাহায্য করে। এটিই সংস্থাটির নীতি। তাই প্রথমে অবস্থা বুঝে কাজ করতে হয়, পরে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়।’
ইন্টারপোলের কাছে ভুয়া গ্রেপ্তার দাবির সবচেয়ে সহজ উপায়গুলো হলো—অর্থ পাচার, খুন ও ইন্টারপোলের নিয়ম ভঙ্গ করে এমন রাজনৈতিক অভিযোগ। রেড নোটিশগুলো পর্যালোচনা করে এস্টলুন্ড বলেন, ‘অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায্য মুনাফা অর্জনের অভিযোগ গঠনে তথ্য তৈরি করা বা হেরফের করা খুব সহজ।’
তুর্কেমেনিস্তান ও ইন্টারপোল
দুর্বল তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোলের যতো দুর্নাম হয়েছে তাঁর মধ্য অন্যতম হলো তুর্কমেনিস্তানের মানবাধিকারকর্মী আনাদুর্দি খাদঝিয়েভের মামলা। তুর্কমেনিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার (৩০ মিলিয়ন পাউন্ড) আত্মসাতের অভিযোগে ইন্টারপোলের নোটিশে ২০০২ সালে বুলগেরিয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও খাদঝিয়েভ ব্যাংকের চাকরি ছাড়ার চার বছর পর কথিত চুরির ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের রায়ে উদ্ধৃত একজন বুলগেরিয়ান প্রসিকিউটরের বলেন, ‘খাদঝিয়েভের পক্ষে এই অর্থ আত্মসাৎ করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।’
পলাতকদের ধরতে ‘ডিফিউশনস’ (ব্যাপক বিস্তার) নামের ইন্টারপোলের অনানুষ্ঠানিক একটি পদ্ধতি রয়েছে যা সহজেই অপব্যবহার করা যায়। সতর্কতা জারির মাধ্যমে ইন্টারপোলের সদস্যরা একে অপরের কাছে সরাসরি গ্রেপ্তারের অনুরোধ পাঠাতে পারে। এই পদ্ধতির শিকার হওয়াদের মধ্য একজন হলেন রুশ বংশোদ্ভূত লিথুয়ানিয়ার শরণার্থী নিকিতা কুলাচেনকভ। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে ২০১৬ সালে তাঁকে সাইপ্রাস বিমানবন্দরে আটক করা হয়। পরে সাইপ্রাসে তিনি কয়েক সপ্তাহ বন্দী ছিলেন। কুলাচেঙ্কভ রাশিয়ায় একজন পথশিল্পীর আঁকা ৬০ ইউরো মূল্যর ছবি চুরির অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান। রাশিয়ায় দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনে তদন্তের
কাজ শুরু করার পর তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল সতর্কতা জারি করে। এই দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন বিরোধী দলীয় রাজনীতিক আলেক্সি নাভালনি। ২০২০ সালে নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার কারাগারে।
কুলাচেনকভের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ গঠনের জন্যই ওই পোস্টারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। রাশিয়ার শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলিরা তাঁর মস্কোর ফ্ল্যাটেও অভিযান চালিয়েছিল। সাইপ্রাসে আটকের এক বছর আগে কুলাচেনকভ ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, দুর্নীতিবিরোধী কাজের জন্য তিনি রুশ সরকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ইন্টারপোল তাঁর উদ্বেগ স্বীকার করেছিল এবং সংস্থাটির এক মুখপাত্র পরে বিষয়টি বিস্তারিত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন।
ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল
আট বছর ধরে ইন্টারপোলের মহাসচিব আছেন জার্গেন স্টক। তিনি সমস্যাযুক্ত নোটিশগুলোর ব্যাপারে ইন্টারপোলের বিশ্বাসযোগ্যতার হুমকি সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি মনে করেন, এটি হতাশাজনক। অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার অনুরোধের বিষয়গুলো (যেমন: শরণার্থী) সংস্থা থেকে জানার পরিবর্তে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে হয়। সদস্য দেশগুলো গ্রেপ্তার দাবি করা ব্যক্তির ‘শরণার্থী অবস্থা’ ইন্টারপোলকে অবহিত করে না।
অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের অপব্যবহার সম্পর্কে স্টক কোনো তথ্য দেন না। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই (সমস্যাযুক্ত) নোটিশগুলো প্রকৃত অপরাধীদের তুলনায় নগণ্য। স্টকের ধারণা, ভুল নোটিশের সংখ্যা ৫ শতাংশের বেশি নয়। তাঁর হিসাব মেনে নিলেও, প্রতিবছর শত শত নির্দোষ ব্যক্তি গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সেলাহউদ্দিন গুলেন ও ইন্টারপোল
আইনজীবীরা বলছেন, ভুল নোটিশগুলো প্রত্যাহারের সময় এবং এর মধ্যে যে ক্ষতি হতে পারে তা নির্ধারণ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। এর উদাহরণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও ফেতুল্লাহ গুলেনের ভাগনে সেলাহাদ্দীন গুলেনের গ্রেপ্তার। নাবালকের সঙ্গে যৌনতার অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে কেনিয়ায় তাঁকে আটক করা হয়। যদিও সেলাহাদ্দীন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাত মাস পরে ২০২১ সালের মে মাসে তিনি জামিন আবেদন করেন। কিন্তু তাঁকে আবার আটক করা হয় এবং তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ফ্রিডম হাউসের রিসার্চ ডিরেক্টর নেট শেনকান বলেন, ‘কেনিয়ার আদালতে বিচার ছাড়াই তাঁকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। এটি ইন্টারপোলের অপব্যবহারের একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।’
গুলেনের আইনজীবীরা অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জানিয়ে ইন্টারপোলকে রেড নোটিশটি প্রত্যাহার করতে বলেন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ইন্টারপোল গুলেনের রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। কিন্তু এর আগেই কেনিয়া তাঁকে তুরস্কে ফেরত পাঠায়।
ইন্টারপোলের সিসিএফ কমিটি
ইন্টারপোলের সিসিএফ ৮ বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত। তাঁরা সাধারণত প্রতি কয়েক মাস পরপর সভা করেন। ২০১৮ সালে দেওয়া তাঁদের তথ্যমতে, ৩৪৬টি অভিযোগের মধ্য ৪৮ শতাংশই সংস্থাটির নিয়ম ভঙ্গ করেছে। সদস্য দেশ নিয়ম লঙ্ঘন করলে শাস্তির মধ্যে রয়েছে দেশটির ইন্টারপোলের ডেটাবেসে প্রবেশাধিকার তিন মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখা। যদিও সংস্থাটি এটিকে শাস্তি নয় বরং ‘সংশোধনমূলক ব্যবস্থা’ বলে থাকে। ২০১১ সাল থেকে এটি কার্যকর রয়েছে।
কিছু দেশ ইন্টারপোলের অপব্যবহার নিরসনে বিষয়গুলো নিজেদের হাতে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে হেলসিঙ্কি কমিশনের আশেপাশে অবস্থিত কংগ্রেসের একটি দ্বিদলীয় গোষ্ঠী ট্রান্সন্যাশনাল রিপ্রেশন অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড প্রিভেনশন (ট্র্যাপ) আইন পাস করতে চাইছে। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার সীমিত করতে ২০১৯ সালে এ আইন প্রস্তাব করা হয়।
খারিসের গল্পে ফিরে আসা
২০১৮ সালের শেষের দিকে খারিস কারাগার থেকে মুক্তি পান। যখন এক মার্কিন ফেডারেল বিচারক রাশিয়ার ইন্টারপোল পদ্ধতির অপব্যবহার এবং সংস্থাটির গ্রেপ্তার তালিকায় ‘গুরুতর ত্রুটির’ প্রমাণ পায়।
ইন্টারপোলের কাছে খারিসের আবেদনের নয় মাস পরে ২০২০ সালের গ্রীষ্মে সংস্থাটি রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। খারিস বলেন, ‘আমি এখনো মনে করি যে ইন্টারপোল ভালোর জন্যই। কিন্তু সংস্থাটির নিয়মের অপব্যবহার করা খুব সহজ। কিন্তু মানুষের জীবনটাই তো সর্বাগ্রে থাকার কথা!’

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

পলাতক অপরাধীদের সন্ধানে বিশ্বব্যাপী কাজ করা এই ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড বা ‘রেড নোটিশ’ তালিকায় এখন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন রাজনৈতিক শরনার্থী এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে একটি নিবন্ধ লিখেছেন জোশ জ্যাকবস। লেখাটি অনুবাদ করেছেন মুহম্মদ আবদুল বাছেদ।
২২ মার্চ ২০২৩
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

পলাতক অপরাধীদের সন্ধানে বিশ্বব্যাপী কাজ করা এই ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড বা ‘রেড নোটিশ’ তালিকায় এখন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন রাজনৈতিক শরনার্থী এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে একটি নিবন্ধ লিখেছেন জোশ জ্যাকবস। লেখাটি অনুবাদ করেছেন মুহম্মদ আবদুল বাছেদ।
২২ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

পলাতক অপরাধীদের সন্ধানে বিশ্বব্যাপী কাজ করা এই ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড বা ‘রেড নোটিশ’ তালিকায় এখন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন রাজনৈতিক শরনার্থী এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে একটি নিবন্ধ লিখেছেন জোশ জ্যাকবস। লেখাটি অনুবাদ করেছেন মুহম্মদ আবদুল বাছেদ।
২২ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

পলাতক অপরাধীদের সন্ধানে বিশ্বব্যাপী কাজ করা এই ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড বা ‘রেড নোটিশ’ তালিকায় এখন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন রাজনৈতিক শরনার্থী এবং ভিন্নমতাবলম্বীরা। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে একটি নিবন্ধ লিখেছেন জোশ জ্যাকবস। লেখাটি অনুবাদ করেছেন মুহম্মদ আবদুল বাছেদ।
২২ মার্চ ২০২৩
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে