Ajker Patrika

গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ৩৪ বছর পর জাতিসংঘের ৯৯ অনুচ্ছেদের প্রয়োগ

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ৫৯
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ৩৪ বছর পর জাতিসংঘের ৯৯ অনুচ্ছেদের প্রয়োগ

গাজার পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য জাতিসংঘ সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ আহ্বান করেছেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এর মাধ্যমে গাজায় চলমান সংকট নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বকালে এই প্রথমবারের মতো ৯৯ অনুচ্ছেদ আহ্বান করলেন আন্তোনিও গুতেরেস। আর ১৯৮৯ সালের পর এই অনুচ্ছেদ ব্যবহারের ঘটনা এটাই প্রথম।

কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এখনো ইসরায়েল এবং হামাস ও তার সহযোগীদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য কোনো প্রস্তাব পাশ করতে পারেনি। আর আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্ব অনেকাংশেই নিরাপত্তা পরিষদের ওপরেই বর্তায়।

নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে গুতেরেস এই দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিদ্যমান হুমকিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। গত ১৮ অক্টোবর থেকেই গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছেন গুতেরেস।

তিনি হুঁশিয়ারি জানিয়ে লিখেছেন যে, ফিলিস্তিনের সকল অধিবাসী এবং সমগ্র অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। যেকোনো মূল্যে এ ধরনের পরিণতি এড়াতে হবে।

জাতিসংঘ সনদ অবশ্য এই বৈশ্বিক সংস্থার মহাসচিবকে সীমিত ক্ষমতাই প্রদান করে। জাতিসংঘ সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ মহাসচিবকে কেবল তার ধারণা মতে যেসব বিষয় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে সেসব বিষয়ের দিকে নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষমতা দেয়।

নিরাপত্তা পরিষদ যদি গুতেরেসের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ করার পথ বেছে নেয় তবে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের অনুমোদনের ক্ষমতাও থাকবে পরিষদের হাতে। পাশাপাশি, প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্যও পরিষদের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা রয়েছে।

তবে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য- চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের রয়েছে ভেটো ক্ষমতা। আর গাজায় মানবিক সহায়তার অনুমতি দেওয়ার জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে গত ১৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র সেই ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল। সে সময় নিরাপত্তা পরিষদের অন্য ১২ সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত থাকে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য।

তবে আন্তোনিও গুতেরেসের এই ৯৯ অনুচ্ছেদ আহ্বান করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানাননি জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান। সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে এরদান চিঠিটিকে গুতেরেসের ‘নৈতিক বিকৃতি’ এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তার ‘পক্ষপাতের প্রমাণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য মহাসচিবের আহ্বান আসলে গাজায় হামাসের সন্ত্রাসের রাজত্ব বজায় রাখার আহ্বান। এরদান আবারও গুতেরেসকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ডিজেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করল ইরান, বাংলাদেশিসহ ১৮ ক্রু আটক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৩
ইরান ৬০ লাখ লিটার ডিজেলবাহী একটি ট্যাংকার আটক করেছে। এতে থাকা ১৮ ক্রুর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও আছে। তাদের সবাইকে আটক করেছে ইরান। ছবি: সংগৃহীত
ইরান ৬০ লাখ লিটার ডিজেলবাহী একটি ট্যাংকার আটক করেছে। এতে থাকা ১৮ ক্রুর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও আছে। তাদের সবাইকে আটক করেছে ইরান। ছবি: সংগৃহীত

ওমান উপসাগরে চোরাচালানের ডিজেল বহনকারী একটি ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। ট্যাংকারটি থেকে ১৮ জন ক্রুকেই আটক করেছে তারা। আটককৃত ক্রুদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও আছেন। তবে ঠিক কতজন বাংলাদেশি এই বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চীনা রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইরানের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আইআরআইবি শুক্রবার জানায়, ওমান উপসাগর থেকে ৬০ লাখ লিটার চোরাচালান করা ডিজেল বহনকারী একটি বিদেশি তেল ট্যাংকার জব্দ করা হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ হুরমুজগান প্রদেশের প্রধান বিচারপতি মুজতবা গাহরেমানিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, মূল জ্বালানি চোরাচালান চক্র এবং চোরাকারবারিদের মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জাসক বন্দর শহরের কাছাকাছি জলসীমায় ইরানের বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা ট্যাংকারটি বাজেয়াপ্ত করেন।

মুজতবা গাহরেমানি বলেন, জাহাজটির প্রয়োজনীয় সামুদ্রিক নথিপত্র এবং জ্বালানি চালানের ‘বিল অব ল্যাডিং’ ছিল না। তিনি আরও জানান, জাহাজটি সব নেভিগেশন ও দিকনির্দেশনা সহায়ক ব্যবস্থা বন্ধ করে রেখেছিল। তিনি উল্লেখ করেন, ট্যাংকারটিতে ১৮ জন ক্রু ছিলেন এবং তাঁরা ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের নাগরিক।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চলমান তদন্তের অধীনে আটককৃতদের মধ্যে ট্যাংকারটির ক্যাপ্টেনও আছেন। আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, ক্রুরা ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের সাবেক নাগরিক। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্যাংকারটি একাধিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘থামার নির্দেশ অগ্রাহ্য করা, পালানোর চেষ্টা করা এবং নেভিগেশন ও কার্গোর নথিপত্র না থাকা।’

ব্যাপক ভর্তুকি এবং স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়ার কারণে জ্বালানির দাম বিশ্বের সর্বনিম্নগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানে স্থলপথে প্রতিবেশী দেশগুলোতে এবং জলপথে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোতে ব্যাপক হারে জ্বালানি চোরাচালান ঠেকানোর লড়াই চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইরানে দুইবার সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন: মার্কিন দূত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন দূত টম বারাক। ছবি: এএফপি
মার্কিন দূত টম বারাক। ছবি: এএফপি

মার্কিন দূত টম বারাক বলেছেন, ওয়াশিংটন বিগত সময়ে দুই দুইবার ইরানে সরকার বদলের চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো ফল হাতে আসেনি। আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালকে দেওয়া মন্তব্যে বারাক জোর দিয়েই জানান, এমন কৌশল কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। তাই এ পথে আর হাঁটা উচিত নয়।

বারাকের অভিযোগ, ওয়াশিংটন নাকি এখন আর সরকার বদলানোর মতো নীতি অনুসরণ করছে না। তাঁর কথায়, ইরানের সঙ্গে কোনো অমীমাংসিত বিষয় থাকলে তা মিটমাট করতে হবে এই অঞ্চলের মধ্যেই। তিনি আঞ্চলিক আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘বাইরের শক্তির নাক গলানো কোনোমতেই কাম্য নয়।’ তাঁর মতে, ‘স্থানীয় সমাধানই যে বেশি স্থায়ী হবে, তা নিয়ে একরকম ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে।’

বারাক বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের প্রেসিডেন্ট তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন।’ তিনি আরও যোগ করলেন, ‘তিনি সত্যিকারের আলোচনায় রাজি।’ কিন্তু কোনো অর্থহীন ‘গড়িমসি’ বা সময় কাটানোর খেলায় তিনি নেই, আর ‘তিনি সব জানেন।’ ইরানের জনগণকে উদ্দেশ্য করে বারাক বলেন, ‘ইরানিরা যদি এই (ট্রাম্প) প্রশাসন (পরমাণু) সমৃদ্ধকরণ এবং তাদের প্রক্সিদের অর্থায়ন বন্ধ করা নিয়ে যা বলছে—তা শুনতে চায়, তবে সেটাই একমাত্র পথ।’

বারাক আরও দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সরকার বদলের কোনো পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন না। তার চেয়ে বরং তিনি চান, সরাসরি সংশ্লিষ্ট দেশগুলির নেতৃত্বে আঞ্চলিক উদ্যোগেই সব সমস্যার সমাধান হোক। তাঁর কথায়, মার্কিন প্রশাসন তেহরানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে প্রস্তুত, যদি ইরানের কর্তৃপক্ষ ‘গুরুত্ব’ এবং গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার দেখায়।

বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের নিরাপত্তার দিকে তাকিয়ে বারাক দ্য ন্যাশনালকে জানান, ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে চান, তবে তেহরানকে সিরিয়াস হতে হবে। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট এই ইস্যুর দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করেছেন। ইরানের ৫০ বছরের দৃষ্টিকোণ রয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট এতই চতুর যে তিনি জানেন, শুধু সংলাপে বসার জন্য তাঁকে উত্ত্যক্ত করা এবং এই অর্থহীন খুনে মদদ দেওয়া চলতে পারে না।’

এর আগে, গত অক্টোবরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি অভিযোগ করেছিলেন, নিউ ইয়র্কে আলোচনায় ওয়াশিংটন বাধা দিচ্ছে এবং ই-৩ ও আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার মূল কারণ মার্কিন কার্যকলাপই। ১ অক্টোবর সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরাঘচি বলেন, মার্কিন ‘বাধার’ জন্যই জাতিসংঘের সাধারণ সভার পার্শ্ব-আলোচনা কোনো বাস্তব ফল দিতে পারেনি।

তিনি নিউ ইয়র্ক সফরের আগে ও পরে ইউরোপীয় আধিকারিক এবং আমেরিকান প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের একটি রিপোর্ট পেশ করেন। সেখানে জোর দিয়ে বলেন, আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইরান প্রয়োজনীয় নমনীয়তা দেখিয়েছিল। তবে, ‘যেমনটা শুরুতেই অনুমান করা গিয়েছিল, আমেরিকানদের অনমনীয়তার জন্য এই পথ আর গড়ায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিডল ইস্ট আই এর প্রতিবেদন /ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৭
প্রতীকী ছবি। ছবি: এএফপি
প্রতীকী ছবি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্য সরকারের ‘চরম ও গোপনীয়’ নাগরিকত্ব বাতিল করার ক্ষমতার কারণে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে আছেন দেশটির প্রায় ১ কোটি মুসলিম। যাঁদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। এই ক্ষমতা তাঁদের জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে এক নতুন প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রানীমিড ট্রাস্ট এবং আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সংগঠন রিপ্রিভ প্রকাশিত গবেষণা জানাচ্ছে, যুক্তরাজ্যের প্রায় ৯০ লাখ, যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আওতাধীন এই ক্ষমতার কারণে তাদের নাগরিকত্ব খোয়াতে পারেন।

প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, এই ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার সঙ্গে যুক্ত নাগরিকদের ওপর ‘অসমভাবে প্রভাব ফেলছে ও তাদের বিপন্ন করছে।’ উভয় সংগঠনই সতর্ক করে বলছে, এই ‘নাগরিকত্ব-বাতিল ব্যবস্থা’ এখন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পদ্ধতিগত হুমকি সৃষ্টি করেছে।

বর্তমান আইনে, সরকার যদি মনে করে যে—একজন ব্রিটিশ নাগরিক অন্য কোনো নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য, তবে তিনি তার জাতীয়তা হারাতে পারেন। এমনকি তিনি সেই দেশে কখনো বাস না করলেও বা সেই পরিচিতি গ্রহণ না করলেও। প্রতিবেদনটি দেখাচ্ছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ব্যবস্থা নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে একটি জাতিগত শ্রেণিবিন্যাস তৈরি করেছে, যেখানে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের মতো মুসলিমদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব শর্তহীন নয়, বরং তা শর্তসাপেক্ষ। রিপ্রিভের কর্মকর্তা মায়া ফোয়া বলেন, ‘বিগত সরকার রাজনৈতিক ফায়দার জন্য পাচার হয়ে আসা ব্রিটিশদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে, আর বর্তমান সরকার এই চরম ও গোপনীয় ক্ষমতাগুলোকে কেবল বাড়িয়েই চলেছে।’

ফোয়া বলেন, ‘যে ৯০ লাখ মানুষের অধিকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেড়ে নিতে পারেন, তাদের পূর্ণ কর্তৃত্ববাদী সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।’

ফোয়ার উদ্বেগগুলোই যেন প্রতিধ্বনিত হলো রানীমিড ট্রাস্টের শাবানা বেগমের কথায়। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আওতাধীন ক্ষমতায় ‘নাগরিকত্ব বাতিলের একটি শীতল স্রোত’ বইছে এবং তা ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অসমভাবে প্রভাব ফেলেছে।’ তিনি বলেন, ‘যে আইন কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছিল, ঠিক তার মতোই এই ক্ষমতাগুলো ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হওয়া থেকে রক্ষার জন্য কোনো কার্যকর বাধা নেই।’

শাবানা বেগম বলেন, ‘নাগরিকত্ব একটি অধিকার, বিশেষ কোনো সুযোগ নয়। অথচ ব্রিটেনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে দুই-স্তরীয় পদ্ধতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে।’ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর কোনো মন্তব্য করেনি।

রিপ্রিভ এবং রানীমীডের বিশ্লেষণ দেখাচ্ছে—

  • প্রতি পাঁচজন অশ্বেতাঙ্গ মানুষের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
  • শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের মধ্যে প্রতি ২০ জনের মধ্যে কেবল একজন একই ঝুঁকির সম্মুখীন।
  • ভারত (৯ লাখ ৮৪ হাজার জন), পাকিস্তান (৬ লাখ ৭৯ হাজার জন) এবং বাংলাদেশি (ঝুঁকিতে থাকা ৩৩ লাখ এশীয় ব্রিটিশদের বাংলাদেশি অনেক বেশি) ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
  • কার্যতভাবে যাদের নাগরিকত্ব বাতিল হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই দক্ষিণ এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য বা উত্তর আফ্রিকা থেকে যাওয়া ‘মুসলিম।’

প্রতিবেদনটি আরও বলেছে, অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশরা তাদের শ্বেতাঙ্গ সহ–নাগরিকদের তুলনায় ১২ গুণ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেছে যে, নাগরিকত্ব বাতিল—যা একসময় কেবল ব্যতিক্রমী যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হতো—কীভাবে দুই দশকের সন্ত্রাস দমন আইনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে, ‘জনসাধারণের মঙ্গলের সহায়ক’ কারণ দেখিয়ে ২ শতাধিক মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়, যাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই মুসলিম। ২০২২ সালে, সরকার কোনো ব্যক্তিকে না জানিয়েই তার নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষমতা অর্জন করে।

এবং ২০২৫ সালের একটি আইন এখন নিশ্চিত করেছে যে, আদালত নাগরিকত্ব বাতিলকে বেআইনি ঘোষণা করলেও, সরকারের আপিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত (যা কখনো কখনো বছরখানেক ধরে চলতে পারে) মানুষ তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাবে না।

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইউক্রেনের ২ বন্দরে রুশ হামলায় ৩ তুর্কি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ওদেসা বন্দরে রুশ আঘাতে আগুন ধরে যাওয়া একটি জাহাজ। ছবি: সংগৃহীত
ওদেসা বন্দরে রুশ আঘাতে আগুন ধরে যাওয়া একটি জাহাজ। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের দুই বন্দরে রুশ হামলায় ৩টি মালবাহী জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাহাজ তিনটি তুরস্কের মালিকানাধীন। গতকাল শুক্রবার এই হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা এবং একটি জাহাজের মালিকের মতে, রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনের দুটি বন্দরে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে খাদ্য সরবরাহকারী একটি জাহাজসহ তিনটি তুর্কি মালিকানাধীন জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শুক্রবার রুশ বাহিনী কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্থিত ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিম ওদেসা অঞ্চলের চেরনোমর্স্ক এবং ওদেসা বন্দরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মোট তিনটি তুর্কি মালিকানাধীন জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তিনি বিস্তারিত কোনো বিবরণ দেননি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় চেরনোমর্স্কের একটি ‘বেসামরিক জাহাজে’ অগ্নিনির্বাপকদের আগুন নেভানোর ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করে বলেন, রাশিয়ার আক্রমণের ‘কোনো...সামরিক উদ্দেশ্যই ছিল না।’ জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি আরও একবার প্রমাণ করল যে, রাশিয়ানরা শুধু কূটনীতির বর্তমান সুযোগটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নিতে ব্যর্থই হয়নি, বরং ইউক্রেনের স্বাভাবিক জীবনকে ধ্বংস করার জন্যই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক নৈতিক মান বজায় রাখে—সেই বিবেচনায় কে এই যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং কে শান্তি দিয়ে এটি শেষ করার জন্য কাজ করছে, কে বেসামরিক জীবনের বিরুদ্ধে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে এবং কে রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে এমন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে—তা বোঝা জরুরি।’

জেলেনস্কি জাহাজটির নাম উল্লেখ করেননি, তবে এটিকে পানামার পতাকাবাহী এবং তুর্কি মালিকানাধীন সেন্ক টি হিসেবে চিহ্নিত করেছে রয়টার্স। জাহাজটির মালিক, সেন্ক শিপিং নিশ্চিত করেছে যে, স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৪টায় এটির ওপর হামলা হয়। তারা আরও জানায়, ক্রুদের মধ্যে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং জাহাজের ক্ষতি সীমিত ছিল।

ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলেক্সি কুলেবা নিশ্চিত করেছেন—ওদেসা বন্দরের ওপর পৃথক হামলায় একটি বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মচারীও আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, একটি কার্গো লোডারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, যে রাশিয়া বন্দরগুলোতে হামলায় ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। প্রসঙ্গত, ওদেসা অঞ্চলের কৃষ্ণ সাগর তীরবর্তী ৩টি বড় ইউক্রেনের অর্থনীতির লাইফলাইন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

আজকের রাশিফল: চায়ের বিল না দেওয়া বন্ধুদের সাহায্য করুন, সন্ধ্যার দিকে ভালো খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত