জাহীদ রেজা নূর

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। বলছি কসেনিয়া সাবচাকের কথা। লাস্যময়ী এই কোটিপতি রাশিয়ায় শুধু নন, সারা বিশ্বের অভিজাত মহলে ব্যাপক পরিচিত। যে ঘটনাটি ঘটেছে ৯ অক্টোবর, তাতে তিনি কোনো ধরনের অঘটন ঘটাননি। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা শোনার পর আপনারাই বলবেন, আসলে এখানে কসেনিয়ার কিছু করার ছিল কি না।
অনেকেই রাশিয়ায় পুতিনের লৌহশাসনের কথা বলেন। বলেন, সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। অথচ সেই রাশিয়ার একটি পত্রিকার সাংবাদিক যদি এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে, সংবাদপত্র এখনো তার মূল দায়িত্ব ভুলে যায়নি। তারা ন্যায় ও অন্যায়ের যুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর হিম্মত রাখে।
অনেকেই ভুলে যাননি, এই তো কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগরীর একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে একটি কমবয়সী মেয়ের আত্মহত্যাবিষয়ক খবর ছাপা হওয়ার পর আমাদের সাংবাদিক মহলের একটা বিশিষ্ট চেহারা ভেসে উঠেছিল। নগ্নভাবে মেয়েটিকে দোষারোপ করা হয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ ছাপা হয়নি অনেক বড় পত্রিকায়, যার দিকে ছিল সন্দেহের তির, তাকে পয়গম্বর বানানোর প্রতিযোগিতা হয়েছে।
সেই কথা মনে রেখেই আমরা রাশিয়ার গল্পটা বলব। বলার চেষ্টা করব, টাকা মানুষকে কতটা অমানবিক করে তোলে। এবং এখানে একবারও বলব না, করোনার ভয়াবহ বিস্তারের সময়টায় গার্মেন্টসশিল্পের কর্তাব্যক্তিরা কীভাবে শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে বাধ্য করেছিলেন। ফেরিতে, রাস্তায় ধাবমান মানুষদের ছবি দেখে আমরা অনুমান করে নিয়েছি, এ যেন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দানবের হাতে পড়েছি, যাদের হৃদয় আর মস্তিষ্ক দুই ধরনের কথা বলে। মস্তিষ্কের সঙ্গে হৃদয়ের কোনো যোগাযোগ নেই।
না, সে কথা এখানে বলা হবে না।
ঘটনাটা বলা যাক। ৯ অক্টোবর রাত ৯টার সময় রাশিয়ার দক্ষিণের শহর ক্রাসনাদারের কাছে আদলের আর ক্রাসনাইয়া পোলইয়ানায় কসেনিয়া সাবচাক যে মার্সেডিজ গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল একটি ফক্সওয়াগন গাড়ির। সেই গাড়িতে থাকা দুজন আরোহী নিহত হয়েছিলেন। আর একজন আরোহী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন হাসপাতালে।
দুর্ঘটনার পর নিজের দেহরক্ষীদের সাহায্যে কসেনিয়া সাবচাক তক্ষুণি আরেকটি গাড়ি জোগাড় করে তাতে চড়ে বসেছেন। এবং যেন কিছুই হয়নি, সে রকমভাবে দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা অ্যামবুলেন্স ডেকে আনেন। পুলিশকে খবর দেন।
সাংবাদিকদের কানে খবরটা পৌঁছায় পরদিন; ১০ অক্টোবর। তখনই জানা যায়, একটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য কসেনিয়া মস্কো থেকে এসেছিলেন সোচিতে। কনসার্ট শেষে মস্কো ফেরার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশে দলবলসহ রওনা হওয়ার পরই এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
এ কথা সত্যি, দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে মার্সেডিজ–এর চালক। দুর্ঘটনার সঙ্গে কসেনিয়া সাবচাকের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ছিলেন ভাড়া করা গাড়ির আরোহী মাত্র। ফলে এভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় আইনগত কোনো সংকটও তৈরি করেননি।
সংকট যেটা তৈরি হয়েছে, সেটা নৈতিক। এত বড় মাপের, এতটা জনপ্রিয় একজন মানুষ এত বড় একটা দুর্ঘটনার পর কীভাবে কোনো দায়িত্ব না নিয়ে জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন? শুধু কি তাই? এই দুর্ঘটনার পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে একটা পোস্ট করেন তিনি। কীভাবে সুখের নাগাল পাওয়া যায়, তা নিয়েই ছিল পোস্টটি।
দুর্ঘটনাটি নিয়ে কসেনিয়া সাবচাক প্রথম মুখ খোলেন ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টায়। তিনি লেখেন—‘আমি সেই গাড়িতে ছিলাম। গাড়িটাও আমার ছিল না, চালকও নয়। আমি গাড়িটাকে প্রতিযোগিতায় নামতে বলিনি। কেউই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়নি। যখন গাড়িটা যাচ্ছিল, তখন আমি জুম মিটিংয়ে ছিলাম, তার প্রমাণ রয়েছে। গাড়ির চালকই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এ কথা বলে তিনি নিজে মাথায় আঘাত পেয়েছেন, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন, তারপরও হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে মস্কোর প্লেনে ওঠার কথাই ভেবেছেন। তা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু সকাল সকাল ইনস্টাগ্রামে সুখ নিয়ে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিলেন কেন, তার উত্তরে কসেনিয়া বলছেন, ‘ওটা অলক্ষ্যে হাতের ছোঁয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজে দিতে চাননি।’
কথাটা বিশ্বাস করা যায় কিনা, সেটা আপনারাই বিচার করবেন।
এবার দেখুন, ডেইলি স্টর্মের সম্পাদক আনাস্তাসিয়া কাশেভারোভা বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে কী লিখেছেন: ‘আমিই পোস্টটা দিয়েছি। ঘোড়ার গাড়িটা আমার না, ঘোড়াটাও না। আমার সহকারী এইমাত্র আমাকে রান্নাঘর থেকে হল ঘরটায় নিয়ে এল। আমি খুব ভালো মেয়ে, এই দুর্ঘটনায় খুব বেশি আঘাত পেয়েছি। অন্যদের চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি। আমার খুব মাথা ব্যথা করছে। আমাকে সাহায্য করুন। আমার জন্য দোয়া করুন। অন্যদের জন্য দোয়া করে লাভ নেই। ওরা মরে গেছে। ওদের তো আর সাহায্য করতে পারবেন না। মরা মানুষের সাহায্য লাগে না। আমার সাংবাদিক বন্ধুরা অকারণেই এই দুর্ঘটনা নিয়ে বাড়িয়ে কথা বলছে!’ কসেনিয়াকে এভাবে ব্যঙ্গ করার পর তিনি লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, যারা কসেনিয়াকে স্পনসর করে, তারা যেন এখন তার দিক থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। একটা দৈত্যের জন্ম দিয়েছেন তারা। হৃদয়হীন, অহঙ্কারী, বিবেকহীন এক দৈত্য! স্পনসরেরা বহু আগে থেকেই সেটা জানে, এখন শুধু সম্পর্ক শেষ করে দেওয়াটাই তাদের দিক থেকে একমাত্র কাজ হতে পারে। সাবচাকের ক্যারিয়ারে ক্রুশ পুঁতে দেওয়ার সময় এসেছে। ওকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে কেউ কেউ বলছেন, এ মুহূর্তে কসেনিয়া সাবচাককে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বরং যারা নিহত হয়েছেন এই দুর্ঘটনায়, তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এদের মধ্যে আছেন টেলিভিশন ও রেডিও সাংবাদিক মাক্সিম কোনোনেঙ্কো।
তবে রুস্কি রেপার্তিওর–এর সহকারী সম্পাদক মারিনা আখমেদোভা ঝাঁঝের সঙ্গে লিখেছেন, ‘সামনের কয়েকটা দিন যে বিষয়টি আলোচনায় থাকবে, সেটি হলো, এয়ারপোর্টে যারা যাচ্ছিলেন ট্যাক্সিতে করে, তার যাত্রী কি এই ব্যাপারে অপরাধী? তিনি কি চালককে দ্রুত চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে চালক সীমাহীন গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে সামনের গাড়ির দুজন যাত্রীকে হত্যা করেছেন এবং তৃতীয়জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন আশঙ্কাজনক অবস্থায়? যদি সত্যিই নিরপেক্ষভাবে ভাবা যায়, তাহলে দেখা যাবে, হঠাৎ করে এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে গাড়ির চালকের খুব একটা গরজ থাকার কথা নয়। সে তো আর প্লেন মিস করছে না। যেভাবেই যাক না কেন, সে তার ভাড়া ঠিকই পেয়ে যাবে। সে তার গাড়ি জোরে চালাবে তখনই, যখন গাড়ির যাত্রী তাকে বলবে গতি বাড়াতে। সমাজবদ্ধ মানুষেরা সেই গাড়ির যাত্রীর নৈতিক অবস্থাটাও দেখবে, যে গাড়িটি দুজন মানুষকে হত্যা করেছে। তাহলে প্রশ্নটা হবে এ রকম: ট্র্যাজেডির জায়গা থেকে অন্য একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে যাত্রী কি এভাবে চলে যেতে পারেন? নৈতিকভাবে কি এভাবে চলে যাওয়া সম্ভব? এই কথা নিয়ে লেখালেখি চলতেই থাকবে এবং একসময় মানুষ তা ভুলে যাবে। এ কারণে ভুলে যাবে না যে, যাত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, এ কারণে ভুলে যাবে যে, এই যাত্রীর কাছ থেকে এই আচরণই আশা করা যায়, আর কিছুই সে শেখেনি।’
ফক্সওয়াগনের যে দুজন যাত্রী মারা গেছেন, তাঁদের একজন ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী ইকাতেরিনা তারাসোভা। তিনি মেডিটেশনের শিক্ষক। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘আমি বেঁচে থাকাকেই বেছে নিয়েছি, আমি বাঁচতে চাই, আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
৩৯ বছর বয়সী মার্সেডিজ চালক আলেগ ৎসোই এরই মধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি এখন পুলিশের জিম্মায় আছেন।
দুই.
কসেনিয়া আনাতোলিয়েভনা সাবচাক তাঁর ওভারকোটে যেন অন্যের রক্ত না লাগে, সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে এখন পুরো ওভারকোটটা মাখিয়ে ফেলেছেন মলমুত্রে। কাপুরুষতা, বিবেবহীনতাই সাবচাকের ভিত্তিমূল।
ভেবে দেখুন, সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, যা ঘটেছে তা বাস্তবজীবনে। এটা বাস্তবজীবনের দুর্ঘটনা, এটা বাস্তব জগতের মৃত্যুদৃশ্য। যে গাড়িতে কসেনিয়া ছিলেন, সেই গাড়িটাই আঘাত করেছে অন্য একটি গাড়িকে, সে গাড়ির আরোহীদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন, আর কসেনিয়া কী করেছেন? তিনি লাশগুলোকে ঘটনাস্থলে রেখেই প্লেনে করে মস্কো চলে গেছেন। সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, আশপাশে কেউ নেই, কেউ দেখবে না। সুতরাং কসেনিয়া কাউকে কিছু না বলে প্লেনে করে উড়ে যেতেই পারেন। যেহেতু কেউ চিনতে পারেনি, সুতরাং ইনস্টাগ্রামে পরবর্তী অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও পোস্ট করতে পারেন।
কিন্তু হায় কপাল! এত ঢাক ঢাক গুড়গুড়ের মধ্যেও অনেকে জেনে ফেলেছেন মার্সেডিজে ছিলেন কসেনিয়া!
কসেনিয়া লিখেছেন, তিনি মাথায় ব্যথা পেয়েছেন, এখানে ওখানে ছুলে গেছে। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট কী বলছে? ‘দুর্ঘটনায় কসেনিয়া সাবচাক আহত হননি, পুলিশ আসার আগেই তিনি দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।’ বিমানবন্দরে থাকা সিসি ক্যামেরা কী বলছে? ক্যামেরা বলছে, বেশ উৎফুল্ল মেজাজে কসেনিয়া ইমিগ্রেশন পার হয়ে প্লেনের দিকে যাচ্ছেন। এটা সেই দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট পরের ঘটনা।
কসেনিয়া অবশ্য লিখেছেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সাহায্য করব।’
বলেছেন তিনি। এ রকম অনেকেই বলেন। তারপর সে প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় ভেসে যায়। শুনুন, যিনি মারা গেছেন, তাঁর বান্ধবী কী বলছেন, তিনি এই দুর্ঘটনার পর কসেনিয়ার কাছে গিয়ে বলেছিলেন নিহতের ছয় বছর বয়সী মাশার কথা। সাবচাক একেবারেই পাত্তা দেননি। সুতরাং ওটা যে কথার কথা ছিল, সে রকম ভাবলে, তা খুব দোষের কিছু হবে না।
একজন সেলিব্রিটি বলে অনেকেই কসেনিয়ার ভক্ত। অনেকের জন্যই তিনি উদাহরণ। কিন্তু বাস্তব জীবনে তাঁর যে চেহারা দেখা গেল, সেটা তাঁর পর্দার জীবনের একেবারে বিপরীত।
এখন হয়তো-বা তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু এই পরিবর্তনটি আসবে সত্যিকারের দুটি মৃত্যুর পর!
তিন.
এই যে এত কথা বলা হলো, তাতে কি বোঝা যাচ্ছে, রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।
সেলিব্রিটি যদি অপরাধী হয়, হোক না সেটা নৈতিক অপরাধ, তারপরও তাঁকে দাঁড়াতে হয় বিবেকের কাঠগড়ায়।
দোহাই কেউ মনে করবেন না, এসব কথা বলে আমি অন্য কোনো দেশকে কটাক্ষ করছি।
সবকিছু ভালো থেকে ভালোতর হচ্ছে!

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। বলছি কসেনিয়া সাবচাকের কথা। লাস্যময়ী এই কোটিপতি রাশিয়ায় শুধু নন, সারা বিশ্বের অভিজাত মহলে ব্যাপক পরিচিত। যে ঘটনাটি ঘটেছে ৯ অক্টোবর, তাতে তিনি কোনো ধরনের অঘটন ঘটাননি। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা শোনার পর আপনারাই বলবেন, আসলে এখানে কসেনিয়ার কিছু করার ছিল কি না।
অনেকেই রাশিয়ায় পুতিনের লৌহশাসনের কথা বলেন। বলেন, সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। অথচ সেই রাশিয়ার একটি পত্রিকার সাংবাদিক যদি এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে, সংবাদপত্র এখনো তার মূল দায়িত্ব ভুলে যায়নি। তারা ন্যায় ও অন্যায়ের যুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর হিম্মত রাখে।
অনেকেই ভুলে যাননি, এই তো কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগরীর একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে একটি কমবয়সী মেয়ের আত্মহত্যাবিষয়ক খবর ছাপা হওয়ার পর আমাদের সাংবাদিক মহলের একটা বিশিষ্ট চেহারা ভেসে উঠেছিল। নগ্নভাবে মেয়েটিকে দোষারোপ করা হয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ ছাপা হয়নি অনেক বড় পত্রিকায়, যার দিকে ছিল সন্দেহের তির, তাকে পয়গম্বর বানানোর প্রতিযোগিতা হয়েছে।
সেই কথা মনে রেখেই আমরা রাশিয়ার গল্পটা বলব। বলার চেষ্টা করব, টাকা মানুষকে কতটা অমানবিক করে তোলে। এবং এখানে একবারও বলব না, করোনার ভয়াবহ বিস্তারের সময়টায় গার্মেন্টসশিল্পের কর্তাব্যক্তিরা কীভাবে শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে বাধ্য করেছিলেন। ফেরিতে, রাস্তায় ধাবমান মানুষদের ছবি দেখে আমরা অনুমান করে নিয়েছি, এ যেন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দানবের হাতে পড়েছি, যাদের হৃদয় আর মস্তিষ্ক দুই ধরনের কথা বলে। মস্তিষ্কের সঙ্গে হৃদয়ের কোনো যোগাযোগ নেই।
না, সে কথা এখানে বলা হবে না।
ঘটনাটা বলা যাক। ৯ অক্টোবর রাত ৯টার সময় রাশিয়ার দক্ষিণের শহর ক্রাসনাদারের কাছে আদলের আর ক্রাসনাইয়া পোলইয়ানায় কসেনিয়া সাবচাক যে মার্সেডিজ গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল একটি ফক্সওয়াগন গাড়ির। সেই গাড়িতে থাকা দুজন আরোহী নিহত হয়েছিলেন। আর একজন আরোহী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন হাসপাতালে।
দুর্ঘটনার পর নিজের দেহরক্ষীদের সাহায্যে কসেনিয়া সাবচাক তক্ষুণি আরেকটি গাড়ি জোগাড় করে তাতে চড়ে বসেছেন। এবং যেন কিছুই হয়নি, সে রকমভাবে দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা অ্যামবুলেন্স ডেকে আনেন। পুলিশকে খবর দেন।
সাংবাদিকদের কানে খবরটা পৌঁছায় পরদিন; ১০ অক্টোবর। তখনই জানা যায়, একটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য কসেনিয়া মস্কো থেকে এসেছিলেন সোচিতে। কনসার্ট শেষে মস্কো ফেরার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশে দলবলসহ রওনা হওয়ার পরই এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
এ কথা সত্যি, দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে মার্সেডিজ–এর চালক। দুর্ঘটনার সঙ্গে কসেনিয়া সাবচাকের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ছিলেন ভাড়া করা গাড়ির আরোহী মাত্র। ফলে এভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় আইনগত কোনো সংকটও তৈরি করেননি।
সংকট যেটা তৈরি হয়েছে, সেটা নৈতিক। এত বড় মাপের, এতটা জনপ্রিয় একজন মানুষ এত বড় একটা দুর্ঘটনার পর কীভাবে কোনো দায়িত্ব না নিয়ে জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন? শুধু কি তাই? এই দুর্ঘটনার পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে একটা পোস্ট করেন তিনি। কীভাবে সুখের নাগাল পাওয়া যায়, তা নিয়েই ছিল পোস্টটি।
দুর্ঘটনাটি নিয়ে কসেনিয়া সাবচাক প্রথম মুখ খোলেন ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টায়। তিনি লেখেন—‘আমি সেই গাড়িতে ছিলাম। গাড়িটাও আমার ছিল না, চালকও নয়। আমি গাড়িটাকে প্রতিযোগিতায় নামতে বলিনি। কেউই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়নি। যখন গাড়িটা যাচ্ছিল, তখন আমি জুম মিটিংয়ে ছিলাম, তার প্রমাণ রয়েছে। গাড়ির চালকই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এ কথা বলে তিনি নিজে মাথায় আঘাত পেয়েছেন, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন, তারপরও হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে মস্কোর প্লেনে ওঠার কথাই ভেবেছেন। তা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু সকাল সকাল ইনস্টাগ্রামে সুখ নিয়ে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিলেন কেন, তার উত্তরে কসেনিয়া বলছেন, ‘ওটা অলক্ষ্যে হাতের ছোঁয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজে দিতে চাননি।’
কথাটা বিশ্বাস করা যায় কিনা, সেটা আপনারাই বিচার করবেন।
এবার দেখুন, ডেইলি স্টর্মের সম্পাদক আনাস্তাসিয়া কাশেভারোভা বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে কী লিখেছেন: ‘আমিই পোস্টটা দিয়েছি। ঘোড়ার গাড়িটা আমার না, ঘোড়াটাও না। আমার সহকারী এইমাত্র আমাকে রান্নাঘর থেকে হল ঘরটায় নিয়ে এল। আমি খুব ভালো মেয়ে, এই দুর্ঘটনায় খুব বেশি আঘাত পেয়েছি। অন্যদের চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি। আমার খুব মাথা ব্যথা করছে। আমাকে সাহায্য করুন। আমার জন্য দোয়া করুন। অন্যদের জন্য দোয়া করে লাভ নেই। ওরা মরে গেছে। ওদের তো আর সাহায্য করতে পারবেন না। মরা মানুষের সাহায্য লাগে না। আমার সাংবাদিক বন্ধুরা অকারণেই এই দুর্ঘটনা নিয়ে বাড়িয়ে কথা বলছে!’ কসেনিয়াকে এভাবে ব্যঙ্গ করার পর তিনি লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, যারা কসেনিয়াকে স্পনসর করে, তারা যেন এখন তার দিক থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। একটা দৈত্যের জন্ম দিয়েছেন তারা। হৃদয়হীন, অহঙ্কারী, বিবেকহীন এক দৈত্য! স্পনসরেরা বহু আগে থেকেই সেটা জানে, এখন শুধু সম্পর্ক শেষ করে দেওয়াটাই তাদের দিক থেকে একমাত্র কাজ হতে পারে। সাবচাকের ক্যারিয়ারে ক্রুশ পুঁতে দেওয়ার সময় এসেছে। ওকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে কেউ কেউ বলছেন, এ মুহূর্তে কসেনিয়া সাবচাককে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বরং যারা নিহত হয়েছেন এই দুর্ঘটনায়, তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এদের মধ্যে আছেন টেলিভিশন ও রেডিও সাংবাদিক মাক্সিম কোনোনেঙ্কো।
তবে রুস্কি রেপার্তিওর–এর সহকারী সম্পাদক মারিনা আখমেদোভা ঝাঁঝের সঙ্গে লিখেছেন, ‘সামনের কয়েকটা দিন যে বিষয়টি আলোচনায় থাকবে, সেটি হলো, এয়ারপোর্টে যারা যাচ্ছিলেন ট্যাক্সিতে করে, তার যাত্রী কি এই ব্যাপারে অপরাধী? তিনি কি চালককে দ্রুত চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে চালক সীমাহীন গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে সামনের গাড়ির দুজন যাত্রীকে হত্যা করেছেন এবং তৃতীয়জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন আশঙ্কাজনক অবস্থায়? যদি সত্যিই নিরপেক্ষভাবে ভাবা যায়, তাহলে দেখা যাবে, হঠাৎ করে এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে গাড়ির চালকের খুব একটা গরজ থাকার কথা নয়। সে তো আর প্লেন মিস করছে না। যেভাবেই যাক না কেন, সে তার ভাড়া ঠিকই পেয়ে যাবে। সে তার গাড়ি জোরে চালাবে তখনই, যখন গাড়ির যাত্রী তাকে বলবে গতি বাড়াতে। সমাজবদ্ধ মানুষেরা সেই গাড়ির যাত্রীর নৈতিক অবস্থাটাও দেখবে, যে গাড়িটি দুজন মানুষকে হত্যা করেছে। তাহলে প্রশ্নটা হবে এ রকম: ট্র্যাজেডির জায়গা থেকে অন্য একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে যাত্রী কি এভাবে চলে যেতে পারেন? নৈতিকভাবে কি এভাবে চলে যাওয়া সম্ভব? এই কথা নিয়ে লেখালেখি চলতেই থাকবে এবং একসময় মানুষ তা ভুলে যাবে। এ কারণে ভুলে যাবে না যে, যাত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, এ কারণে ভুলে যাবে যে, এই যাত্রীর কাছ থেকে এই আচরণই আশা করা যায়, আর কিছুই সে শেখেনি।’
ফক্সওয়াগনের যে দুজন যাত্রী মারা গেছেন, তাঁদের একজন ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী ইকাতেরিনা তারাসোভা। তিনি মেডিটেশনের শিক্ষক। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘আমি বেঁচে থাকাকেই বেছে নিয়েছি, আমি বাঁচতে চাই, আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
৩৯ বছর বয়সী মার্সেডিজ চালক আলেগ ৎসোই এরই মধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি এখন পুলিশের জিম্মায় আছেন।
দুই.
কসেনিয়া আনাতোলিয়েভনা সাবচাক তাঁর ওভারকোটে যেন অন্যের রক্ত না লাগে, সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে এখন পুরো ওভারকোটটা মাখিয়ে ফেলেছেন মলমুত্রে। কাপুরুষতা, বিবেবহীনতাই সাবচাকের ভিত্তিমূল।
ভেবে দেখুন, সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, যা ঘটেছে তা বাস্তবজীবনে। এটা বাস্তবজীবনের দুর্ঘটনা, এটা বাস্তব জগতের মৃত্যুদৃশ্য। যে গাড়িতে কসেনিয়া ছিলেন, সেই গাড়িটাই আঘাত করেছে অন্য একটি গাড়িকে, সে গাড়ির আরোহীদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন, আর কসেনিয়া কী করেছেন? তিনি লাশগুলোকে ঘটনাস্থলে রেখেই প্লেনে করে মস্কো চলে গেছেন। সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, আশপাশে কেউ নেই, কেউ দেখবে না। সুতরাং কসেনিয়া কাউকে কিছু না বলে প্লেনে করে উড়ে যেতেই পারেন। যেহেতু কেউ চিনতে পারেনি, সুতরাং ইনস্টাগ্রামে পরবর্তী অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও পোস্ট করতে পারেন।
কিন্তু হায় কপাল! এত ঢাক ঢাক গুড়গুড়ের মধ্যেও অনেকে জেনে ফেলেছেন মার্সেডিজে ছিলেন কসেনিয়া!
কসেনিয়া লিখেছেন, তিনি মাথায় ব্যথা পেয়েছেন, এখানে ওখানে ছুলে গেছে। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট কী বলছে? ‘দুর্ঘটনায় কসেনিয়া সাবচাক আহত হননি, পুলিশ আসার আগেই তিনি দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।’ বিমানবন্দরে থাকা সিসি ক্যামেরা কী বলছে? ক্যামেরা বলছে, বেশ উৎফুল্ল মেজাজে কসেনিয়া ইমিগ্রেশন পার হয়ে প্লেনের দিকে যাচ্ছেন। এটা সেই দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট পরের ঘটনা।
কসেনিয়া অবশ্য লিখেছেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সাহায্য করব।’
বলেছেন তিনি। এ রকম অনেকেই বলেন। তারপর সে প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় ভেসে যায়। শুনুন, যিনি মারা গেছেন, তাঁর বান্ধবী কী বলছেন, তিনি এই দুর্ঘটনার পর কসেনিয়ার কাছে গিয়ে বলেছিলেন নিহতের ছয় বছর বয়সী মাশার কথা। সাবচাক একেবারেই পাত্তা দেননি। সুতরাং ওটা যে কথার কথা ছিল, সে রকম ভাবলে, তা খুব দোষের কিছু হবে না।
একজন সেলিব্রিটি বলে অনেকেই কসেনিয়ার ভক্ত। অনেকের জন্যই তিনি উদাহরণ। কিন্তু বাস্তব জীবনে তাঁর যে চেহারা দেখা গেল, সেটা তাঁর পর্দার জীবনের একেবারে বিপরীত।
এখন হয়তো-বা তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু এই পরিবর্তনটি আসবে সত্যিকারের দুটি মৃত্যুর পর!
তিন.
এই যে এত কথা বলা হলো, তাতে কি বোঝা যাচ্ছে, রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।
সেলিব্রিটি যদি অপরাধী হয়, হোক না সেটা নৈতিক অপরাধ, তারপরও তাঁকে দাঁড়াতে হয় বিবেকের কাঠগড়ায়।
দোহাই কেউ মনে করবেন না, এসব কথা বলে আমি অন্য কোনো দেশকে কটাক্ষ করছি।
সবকিছু ভালো থেকে ভালোতর হচ্ছে!
জাহীদ রেজা নূর

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। বলছি কসেনিয়া সাবচাকের কথা। লাস্যময়ী এই কোটিপতি রাশিয়ায় শুধু নন, সারা বিশ্বের অভিজাত মহলে ব্যাপক পরিচিত। যে ঘটনাটি ঘটেছে ৯ অক্টোবর, তাতে তিনি কোনো ধরনের অঘটন ঘটাননি। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা শোনার পর আপনারাই বলবেন, আসলে এখানে কসেনিয়ার কিছু করার ছিল কি না।
অনেকেই রাশিয়ায় পুতিনের লৌহশাসনের কথা বলেন। বলেন, সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। অথচ সেই রাশিয়ার একটি পত্রিকার সাংবাদিক যদি এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে, সংবাদপত্র এখনো তার মূল দায়িত্ব ভুলে যায়নি। তারা ন্যায় ও অন্যায়ের যুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর হিম্মত রাখে।
অনেকেই ভুলে যাননি, এই তো কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগরীর একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে একটি কমবয়সী মেয়ের আত্মহত্যাবিষয়ক খবর ছাপা হওয়ার পর আমাদের সাংবাদিক মহলের একটা বিশিষ্ট চেহারা ভেসে উঠেছিল। নগ্নভাবে মেয়েটিকে দোষারোপ করা হয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ ছাপা হয়নি অনেক বড় পত্রিকায়, যার দিকে ছিল সন্দেহের তির, তাকে পয়গম্বর বানানোর প্রতিযোগিতা হয়েছে।
সেই কথা মনে রেখেই আমরা রাশিয়ার গল্পটা বলব। বলার চেষ্টা করব, টাকা মানুষকে কতটা অমানবিক করে তোলে। এবং এখানে একবারও বলব না, করোনার ভয়াবহ বিস্তারের সময়টায় গার্মেন্টসশিল্পের কর্তাব্যক্তিরা কীভাবে শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে বাধ্য করেছিলেন। ফেরিতে, রাস্তায় ধাবমান মানুষদের ছবি দেখে আমরা অনুমান করে নিয়েছি, এ যেন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দানবের হাতে পড়েছি, যাদের হৃদয় আর মস্তিষ্ক দুই ধরনের কথা বলে। মস্তিষ্কের সঙ্গে হৃদয়ের কোনো যোগাযোগ নেই।
না, সে কথা এখানে বলা হবে না।
ঘটনাটা বলা যাক। ৯ অক্টোবর রাত ৯টার সময় রাশিয়ার দক্ষিণের শহর ক্রাসনাদারের কাছে আদলের আর ক্রাসনাইয়া পোলইয়ানায় কসেনিয়া সাবচাক যে মার্সেডিজ গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল একটি ফক্সওয়াগন গাড়ির। সেই গাড়িতে থাকা দুজন আরোহী নিহত হয়েছিলেন। আর একজন আরোহী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন হাসপাতালে।
দুর্ঘটনার পর নিজের দেহরক্ষীদের সাহায্যে কসেনিয়া সাবচাক তক্ষুণি আরেকটি গাড়ি জোগাড় করে তাতে চড়ে বসেছেন। এবং যেন কিছুই হয়নি, সে রকমভাবে দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা অ্যামবুলেন্স ডেকে আনেন। পুলিশকে খবর দেন।
সাংবাদিকদের কানে খবরটা পৌঁছায় পরদিন; ১০ অক্টোবর। তখনই জানা যায়, একটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য কসেনিয়া মস্কো থেকে এসেছিলেন সোচিতে। কনসার্ট শেষে মস্কো ফেরার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশে দলবলসহ রওনা হওয়ার পরই এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
এ কথা সত্যি, দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে মার্সেডিজ–এর চালক। দুর্ঘটনার সঙ্গে কসেনিয়া সাবচাকের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ছিলেন ভাড়া করা গাড়ির আরোহী মাত্র। ফলে এভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় আইনগত কোনো সংকটও তৈরি করেননি।
সংকট যেটা তৈরি হয়েছে, সেটা নৈতিক। এত বড় মাপের, এতটা জনপ্রিয় একজন মানুষ এত বড় একটা দুর্ঘটনার পর কীভাবে কোনো দায়িত্ব না নিয়ে জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন? শুধু কি তাই? এই দুর্ঘটনার পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে একটা পোস্ট করেন তিনি। কীভাবে সুখের নাগাল পাওয়া যায়, তা নিয়েই ছিল পোস্টটি।
দুর্ঘটনাটি নিয়ে কসেনিয়া সাবচাক প্রথম মুখ খোলেন ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টায়। তিনি লেখেন—‘আমি সেই গাড়িতে ছিলাম। গাড়িটাও আমার ছিল না, চালকও নয়। আমি গাড়িটাকে প্রতিযোগিতায় নামতে বলিনি। কেউই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়নি। যখন গাড়িটা যাচ্ছিল, তখন আমি জুম মিটিংয়ে ছিলাম, তার প্রমাণ রয়েছে। গাড়ির চালকই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এ কথা বলে তিনি নিজে মাথায় আঘাত পেয়েছেন, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন, তারপরও হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে মস্কোর প্লেনে ওঠার কথাই ভেবেছেন। তা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু সকাল সকাল ইনস্টাগ্রামে সুখ নিয়ে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিলেন কেন, তার উত্তরে কসেনিয়া বলছেন, ‘ওটা অলক্ষ্যে হাতের ছোঁয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজে দিতে চাননি।’
কথাটা বিশ্বাস করা যায় কিনা, সেটা আপনারাই বিচার করবেন।
এবার দেখুন, ডেইলি স্টর্মের সম্পাদক আনাস্তাসিয়া কাশেভারোভা বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে কী লিখেছেন: ‘আমিই পোস্টটা দিয়েছি। ঘোড়ার গাড়িটা আমার না, ঘোড়াটাও না। আমার সহকারী এইমাত্র আমাকে রান্নাঘর থেকে হল ঘরটায় নিয়ে এল। আমি খুব ভালো মেয়ে, এই দুর্ঘটনায় খুব বেশি আঘাত পেয়েছি। অন্যদের চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি। আমার খুব মাথা ব্যথা করছে। আমাকে সাহায্য করুন। আমার জন্য দোয়া করুন। অন্যদের জন্য দোয়া করে লাভ নেই। ওরা মরে গেছে। ওদের তো আর সাহায্য করতে পারবেন না। মরা মানুষের সাহায্য লাগে না। আমার সাংবাদিক বন্ধুরা অকারণেই এই দুর্ঘটনা নিয়ে বাড়িয়ে কথা বলছে!’ কসেনিয়াকে এভাবে ব্যঙ্গ করার পর তিনি লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, যারা কসেনিয়াকে স্পনসর করে, তারা যেন এখন তার দিক থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। একটা দৈত্যের জন্ম দিয়েছেন তারা। হৃদয়হীন, অহঙ্কারী, বিবেকহীন এক দৈত্য! স্পনসরেরা বহু আগে থেকেই সেটা জানে, এখন শুধু সম্পর্ক শেষ করে দেওয়াটাই তাদের দিক থেকে একমাত্র কাজ হতে পারে। সাবচাকের ক্যারিয়ারে ক্রুশ পুঁতে দেওয়ার সময় এসেছে। ওকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে কেউ কেউ বলছেন, এ মুহূর্তে কসেনিয়া সাবচাককে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বরং যারা নিহত হয়েছেন এই দুর্ঘটনায়, তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এদের মধ্যে আছেন টেলিভিশন ও রেডিও সাংবাদিক মাক্সিম কোনোনেঙ্কো।
তবে রুস্কি রেপার্তিওর–এর সহকারী সম্পাদক মারিনা আখমেদোভা ঝাঁঝের সঙ্গে লিখেছেন, ‘সামনের কয়েকটা দিন যে বিষয়টি আলোচনায় থাকবে, সেটি হলো, এয়ারপোর্টে যারা যাচ্ছিলেন ট্যাক্সিতে করে, তার যাত্রী কি এই ব্যাপারে অপরাধী? তিনি কি চালককে দ্রুত চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে চালক সীমাহীন গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে সামনের গাড়ির দুজন যাত্রীকে হত্যা করেছেন এবং তৃতীয়জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন আশঙ্কাজনক অবস্থায়? যদি সত্যিই নিরপেক্ষভাবে ভাবা যায়, তাহলে দেখা যাবে, হঠাৎ করে এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে গাড়ির চালকের খুব একটা গরজ থাকার কথা নয়। সে তো আর প্লেন মিস করছে না। যেভাবেই যাক না কেন, সে তার ভাড়া ঠিকই পেয়ে যাবে। সে তার গাড়ি জোরে চালাবে তখনই, যখন গাড়ির যাত্রী তাকে বলবে গতি বাড়াতে। সমাজবদ্ধ মানুষেরা সেই গাড়ির যাত্রীর নৈতিক অবস্থাটাও দেখবে, যে গাড়িটি দুজন মানুষকে হত্যা করেছে। তাহলে প্রশ্নটা হবে এ রকম: ট্র্যাজেডির জায়গা থেকে অন্য একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে যাত্রী কি এভাবে চলে যেতে পারেন? নৈতিকভাবে কি এভাবে চলে যাওয়া সম্ভব? এই কথা নিয়ে লেখালেখি চলতেই থাকবে এবং একসময় মানুষ তা ভুলে যাবে। এ কারণে ভুলে যাবে না যে, যাত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, এ কারণে ভুলে যাবে যে, এই যাত্রীর কাছ থেকে এই আচরণই আশা করা যায়, আর কিছুই সে শেখেনি।’
ফক্সওয়াগনের যে দুজন যাত্রী মারা গেছেন, তাঁদের একজন ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী ইকাতেরিনা তারাসোভা। তিনি মেডিটেশনের শিক্ষক। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘আমি বেঁচে থাকাকেই বেছে নিয়েছি, আমি বাঁচতে চাই, আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
৩৯ বছর বয়সী মার্সেডিজ চালক আলেগ ৎসোই এরই মধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি এখন পুলিশের জিম্মায় আছেন।
দুই.
কসেনিয়া আনাতোলিয়েভনা সাবচাক তাঁর ওভারকোটে যেন অন্যের রক্ত না লাগে, সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে এখন পুরো ওভারকোটটা মাখিয়ে ফেলেছেন মলমুত্রে। কাপুরুষতা, বিবেবহীনতাই সাবচাকের ভিত্তিমূল।
ভেবে দেখুন, সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, যা ঘটেছে তা বাস্তবজীবনে। এটা বাস্তবজীবনের দুর্ঘটনা, এটা বাস্তব জগতের মৃত্যুদৃশ্য। যে গাড়িতে কসেনিয়া ছিলেন, সেই গাড়িটাই আঘাত করেছে অন্য একটি গাড়িকে, সে গাড়ির আরোহীদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন, আর কসেনিয়া কী করেছেন? তিনি লাশগুলোকে ঘটনাস্থলে রেখেই প্লেনে করে মস্কো চলে গেছেন। সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, আশপাশে কেউ নেই, কেউ দেখবে না। সুতরাং কসেনিয়া কাউকে কিছু না বলে প্লেনে করে উড়ে যেতেই পারেন। যেহেতু কেউ চিনতে পারেনি, সুতরাং ইনস্টাগ্রামে পরবর্তী অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও পোস্ট করতে পারেন।
কিন্তু হায় কপাল! এত ঢাক ঢাক গুড়গুড়ের মধ্যেও অনেকে জেনে ফেলেছেন মার্সেডিজে ছিলেন কসেনিয়া!
কসেনিয়া লিখেছেন, তিনি মাথায় ব্যথা পেয়েছেন, এখানে ওখানে ছুলে গেছে। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট কী বলছে? ‘দুর্ঘটনায় কসেনিয়া সাবচাক আহত হননি, পুলিশ আসার আগেই তিনি দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।’ বিমানবন্দরে থাকা সিসি ক্যামেরা কী বলছে? ক্যামেরা বলছে, বেশ উৎফুল্ল মেজাজে কসেনিয়া ইমিগ্রেশন পার হয়ে প্লেনের দিকে যাচ্ছেন। এটা সেই দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট পরের ঘটনা।
কসেনিয়া অবশ্য লিখেছেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সাহায্য করব।’
বলেছেন তিনি। এ রকম অনেকেই বলেন। তারপর সে প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় ভেসে যায়। শুনুন, যিনি মারা গেছেন, তাঁর বান্ধবী কী বলছেন, তিনি এই দুর্ঘটনার পর কসেনিয়ার কাছে গিয়ে বলেছিলেন নিহতের ছয় বছর বয়সী মাশার কথা। সাবচাক একেবারেই পাত্তা দেননি। সুতরাং ওটা যে কথার কথা ছিল, সে রকম ভাবলে, তা খুব দোষের কিছু হবে না।
একজন সেলিব্রিটি বলে অনেকেই কসেনিয়ার ভক্ত। অনেকের জন্যই তিনি উদাহরণ। কিন্তু বাস্তব জীবনে তাঁর যে চেহারা দেখা গেল, সেটা তাঁর পর্দার জীবনের একেবারে বিপরীত।
এখন হয়তো-বা তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু এই পরিবর্তনটি আসবে সত্যিকারের দুটি মৃত্যুর পর!
তিন.
এই যে এত কথা বলা হলো, তাতে কি বোঝা যাচ্ছে, রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।
সেলিব্রিটি যদি অপরাধী হয়, হোক না সেটা নৈতিক অপরাধ, তারপরও তাঁকে দাঁড়াতে হয় বিবেকের কাঠগড়ায়।
দোহাই কেউ মনে করবেন না, এসব কথা বলে আমি অন্য কোনো দেশকে কটাক্ষ করছি।
সবকিছু ভালো থেকে ভালোতর হচ্ছে!

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। বলছি কসেনিয়া সাবচাকের কথা। লাস্যময়ী এই কোটিপতি রাশিয়ায় শুধু নন, সারা বিশ্বের অভিজাত মহলে ব্যাপক পরিচিত। যে ঘটনাটি ঘটেছে ৯ অক্টোবর, তাতে তিনি কোনো ধরনের অঘটন ঘটাননি। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা শোনার পর আপনারাই বলবেন, আসলে এখানে কসেনিয়ার কিছু করার ছিল কি না।
অনেকেই রাশিয়ায় পুতিনের লৌহশাসনের কথা বলেন। বলেন, সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। অথচ সেই রাশিয়ার একটি পত্রিকার সাংবাদিক যদি এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে, সংবাদপত্র এখনো তার মূল দায়িত্ব ভুলে যায়নি। তারা ন্যায় ও অন্যায়ের যুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর হিম্মত রাখে।
অনেকেই ভুলে যাননি, এই তো কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগরীর একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে একটি কমবয়সী মেয়ের আত্মহত্যাবিষয়ক খবর ছাপা হওয়ার পর আমাদের সাংবাদিক মহলের একটা বিশিষ্ট চেহারা ভেসে উঠেছিল। নগ্নভাবে মেয়েটিকে দোষারোপ করা হয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ ছাপা হয়নি অনেক বড় পত্রিকায়, যার দিকে ছিল সন্দেহের তির, তাকে পয়গম্বর বানানোর প্রতিযোগিতা হয়েছে।
সেই কথা মনে রেখেই আমরা রাশিয়ার গল্পটা বলব। বলার চেষ্টা করব, টাকা মানুষকে কতটা অমানবিক করে তোলে। এবং এখানে একবারও বলব না, করোনার ভয়াবহ বিস্তারের সময়টায় গার্মেন্টসশিল্পের কর্তাব্যক্তিরা কীভাবে শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে বাধ্য করেছিলেন। ফেরিতে, রাস্তায় ধাবমান মানুষদের ছবি দেখে আমরা অনুমান করে নিয়েছি, এ যেন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দানবের হাতে পড়েছি, যাদের হৃদয় আর মস্তিষ্ক দুই ধরনের কথা বলে। মস্তিষ্কের সঙ্গে হৃদয়ের কোনো যোগাযোগ নেই।
না, সে কথা এখানে বলা হবে না।
ঘটনাটা বলা যাক। ৯ অক্টোবর রাত ৯টার সময় রাশিয়ার দক্ষিণের শহর ক্রাসনাদারের কাছে আদলের আর ক্রাসনাইয়া পোলইয়ানায় কসেনিয়া সাবচাক যে মার্সেডিজ গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল একটি ফক্সওয়াগন গাড়ির। সেই গাড়িতে থাকা দুজন আরোহী নিহত হয়েছিলেন। আর একজন আরোহী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন হাসপাতালে।
দুর্ঘটনার পর নিজের দেহরক্ষীদের সাহায্যে কসেনিয়া সাবচাক তক্ষুণি আরেকটি গাড়ি জোগাড় করে তাতে চড়ে বসেছেন। এবং যেন কিছুই হয়নি, সে রকমভাবে দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা অ্যামবুলেন্স ডেকে আনেন। পুলিশকে খবর দেন।
সাংবাদিকদের কানে খবরটা পৌঁছায় পরদিন; ১০ অক্টোবর। তখনই জানা যায়, একটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য কসেনিয়া মস্কো থেকে এসেছিলেন সোচিতে। কনসার্ট শেষে মস্কো ফেরার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশে দলবলসহ রওনা হওয়ার পরই এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
এ কথা সত্যি, দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে মার্সেডিজ–এর চালক। দুর্ঘটনার সঙ্গে কসেনিয়া সাবচাকের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ছিলেন ভাড়া করা গাড়ির আরোহী মাত্র। ফলে এভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় আইনগত কোনো সংকটও তৈরি করেননি।
সংকট যেটা তৈরি হয়েছে, সেটা নৈতিক। এত বড় মাপের, এতটা জনপ্রিয় একজন মানুষ এত বড় একটা দুর্ঘটনার পর কীভাবে কোনো দায়িত্ব না নিয়ে জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন? শুধু কি তাই? এই দুর্ঘটনার পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে একটা পোস্ট করেন তিনি। কীভাবে সুখের নাগাল পাওয়া যায়, তা নিয়েই ছিল পোস্টটি।
দুর্ঘটনাটি নিয়ে কসেনিয়া সাবচাক প্রথম মুখ খোলেন ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টায়। তিনি লেখেন—‘আমি সেই গাড়িতে ছিলাম। গাড়িটাও আমার ছিল না, চালকও নয়। আমি গাড়িটাকে প্রতিযোগিতায় নামতে বলিনি। কেউই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়নি। যখন গাড়িটা যাচ্ছিল, তখন আমি জুম মিটিংয়ে ছিলাম, তার প্রমাণ রয়েছে। গাড়ির চালকই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এ কথা বলে তিনি নিজে মাথায় আঘাত পেয়েছেন, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন, তারপরও হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে মস্কোর প্লেনে ওঠার কথাই ভেবেছেন। তা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু সকাল সকাল ইনস্টাগ্রামে সুখ নিয়ে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিলেন কেন, তার উত্তরে কসেনিয়া বলছেন, ‘ওটা অলক্ষ্যে হাতের ছোঁয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজে দিতে চাননি।’
কথাটা বিশ্বাস করা যায় কিনা, সেটা আপনারাই বিচার করবেন।
এবার দেখুন, ডেইলি স্টর্মের সম্পাদক আনাস্তাসিয়া কাশেভারোভা বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে কী লিখেছেন: ‘আমিই পোস্টটা দিয়েছি। ঘোড়ার গাড়িটা আমার না, ঘোড়াটাও না। আমার সহকারী এইমাত্র আমাকে রান্নাঘর থেকে হল ঘরটায় নিয়ে এল। আমি খুব ভালো মেয়ে, এই দুর্ঘটনায় খুব বেশি আঘাত পেয়েছি। অন্যদের চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি। আমার খুব মাথা ব্যথা করছে। আমাকে সাহায্য করুন। আমার জন্য দোয়া করুন। অন্যদের জন্য দোয়া করে লাভ নেই। ওরা মরে গেছে। ওদের তো আর সাহায্য করতে পারবেন না। মরা মানুষের সাহায্য লাগে না। আমার সাংবাদিক বন্ধুরা অকারণেই এই দুর্ঘটনা নিয়ে বাড়িয়ে কথা বলছে!’ কসেনিয়াকে এভাবে ব্যঙ্গ করার পর তিনি লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, যারা কসেনিয়াকে স্পনসর করে, তারা যেন এখন তার দিক থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। একটা দৈত্যের জন্ম দিয়েছেন তারা। হৃদয়হীন, অহঙ্কারী, বিবেকহীন এক দৈত্য! স্পনসরেরা বহু আগে থেকেই সেটা জানে, এখন শুধু সম্পর্ক শেষ করে দেওয়াটাই তাদের দিক থেকে একমাত্র কাজ হতে পারে। সাবচাকের ক্যারিয়ারে ক্রুশ পুঁতে দেওয়ার সময় এসেছে। ওকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে কেউ কেউ বলছেন, এ মুহূর্তে কসেনিয়া সাবচাককে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বরং যারা নিহত হয়েছেন এই দুর্ঘটনায়, তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এদের মধ্যে আছেন টেলিভিশন ও রেডিও সাংবাদিক মাক্সিম কোনোনেঙ্কো।
তবে রুস্কি রেপার্তিওর–এর সহকারী সম্পাদক মারিনা আখমেদোভা ঝাঁঝের সঙ্গে লিখেছেন, ‘সামনের কয়েকটা দিন যে বিষয়টি আলোচনায় থাকবে, সেটি হলো, এয়ারপোর্টে যারা যাচ্ছিলেন ট্যাক্সিতে করে, তার যাত্রী কি এই ব্যাপারে অপরাধী? তিনি কি চালককে দ্রুত চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে চালক সীমাহীন গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে সামনের গাড়ির দুজন যাত্রীকে হত্যা করেছেন এবং তৃতীয়জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন আশঙ্কাজনক অবস্থায়? যদি সত্যিই নিরপেক্ষভাবে ভাবা যায়, তাহলে দেখা যাবে, হঠাৎ করে এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে গাড়ির চালকের খুব একটা গরজ থাকার কথা নয়। সে তো আর প্লেন মিস করছে না। যেভাবেই যাক না কেন, সে তার ভাড়া ঠিকই পেয়ে যাবে। সে তার গাড়ি জোরে চালাবে তখনই, যখন গাড়ির যাত্রী তাকে বলবে গতি বাড়াতে। সমাজবদ্ধ মানুষেরা সেই গাড়ির যাত্রীর নৈতিক অবস্থাটাও দেখবে, যে গাড়িটি দুজন মানুষকে হত্যা করেছে। তাহলে প্রশ্নটা হবে এ রকম: ট্র্যাজেডির জায়গা থেকে অন্য একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে যাত্রী কি এভাবে চলে যেতে পারেন? নৈতিকভাবে কি এভাবে চলে যাওয়া সম্ভব? এই কথা নিয়ে লেখালেখি চলতেই থাকবে এবং একসময় মানুষ তা ভুলে যাবে। এ কারণে ভুলে যাবে না যে, যাত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, এ কারণে ভুলে যাবে যে, এই যাত্রীর কাছ থেকে এই আচরণই আশা করা যায়, আর কিছুই সে শেখেনি।’
ফক্সওয়াগনের যে দুজন যাত্রী মারা গেছেন, তাঁদের একজন ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী ইকাতেরিনা তারাসোভা। তিনি মেডিটেশনের শিক্ষক। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘আমি বেঁচে থাকাকেই বেছে নিয়েছি, আমি বাঁচতে চাই, আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
৩৯ বছর বয়সী মার্সেডিজ চালক আলেগ ৎসোই এরই মধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি এখন পুলিশের জিম্মায় আছেন।
দুই.
কসেনিয়া আনাতোলিয়েভনা সাবচাক তাঁর ওভারকোটে যেন অন্যের রক্ত না লাগে, সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে এখন পুরো ওভারকোটটা মাখিয়ে ফেলেছেন মলমুত্রে। কাপুরুষতা, বিবেবহীনতাই সাবচাকের ভিত্তিমূল।
ভেবে দেখুন, সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, যা ঘটেছে তা বাস্তবজীবনে। এটা বাস্তবজীবনের দুর্ঘটনা, এটা বাস্তব জগতের মৃত্যুদৃশ্য। যে গাড়িতে কসেনিয়া ছিলেন, সেই গাড়িটাই আঘাত করেছে অন্য একটি গাড়িকে, সে গাড়ির আরোহীদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন, আর কসেনিয়া কী করেছেন? তিনি লাশগুলোকে ঘটনাস্থলে রেখেই প্লেনে করে মস্কো চলে গেছেন। সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, আশপাশে কেউ নেই, কেউ দেখবে না। সুতরাং কসেনিয়া কাউকে কিছু না বলে প্লেনে করে উড়ে যেতেই পারেন। যেহেতু কেউ চিনতে পারেনি, সুতরাং ইনস্টাগ্রামে পরবর্তী অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও পোস্ট করতে পারেন।
কিন্তু হায় কপাল! এত ঢাক ঢাক গুড়গুড়ের মধ্যেও অনেকে জেনে ফেলেছেন মার্সেডিজে ছিলেন কসেনিয়া!
কসেনিয়া লিখেছেন, তিনি মাথায় ব্যথা পেয়েছেন, এখানে ওখানে ছুলে গেছে। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট কী বলছে? ‘দুর্ঘটনায় কসেনিয়া সাবচাক আহত হননি, পুলিশ আসার আগেই তিনি দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।’ বিমানবন্দরে থাকা সিসি ক্যামেরা কী বলছে? ক্যামেরা বলছে, বেশ উৎফুল্ল মেজাজে কসেনিয়া ইমিগ্রেশন পার হয়ে প্লেনের দিকে যাচ্ছেন। এটা সেই দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট পরের ঘটনা।
কসেনিয়া অবশ্য লিখেছেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সাহায্য করব।’
বলেছেন তিনি। এ রকম অনেকেই বলেন। তারপর সে প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় ভেসে যায়। শুনুন, যিনি মারা গেছেন, তাঁর বান্ধবী কী বলছেন, তিনি এই দুর্ঘটনার পর কসেনিয়ার কাছে গিয়ে বলেছিলেন নিহতের ছয় বছর বয়সী মাশার কথা। সাবচাক একেবারেই পাত্তা দেননি। সুতরাং ওটা যে কথার কথা ছিল, সে রকম ভাবলে, তা খুব দোষের কিছু হবে না।
একজন সেলিব্রিটি বলে অনেকেই কসেনিয়ার ভক্ত। অনেকের জন্যই তিনি উদাহরণ। কিন্তু বাস্তব জীবনে তাঁর যে চেহারা দেখা গেল, সেটা তাঁর পর্দার জীবনের একেবারে বিপরীত।
এখন হয়তো-বা তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু এই পরিবর্তনটি আসবে সত্যিকারের দুটি মৃত্যুর পর!
তিন.
এই যে এত কথা বলা হলো, তাতে কি বোঝা যাচ্ছে, রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।
সেলিব্রিটি যদি অপরাধী হয়, হোক না সেটা নৈতিক অপরাধ, তারপরও তাঁকে দাঁড়াতে হয় বিবেকের কাঠগড়ায়।
দোহাই কেউ মনে করবেন না, এসব কথা বলে আমি অন্য কোনো দেশকে কটাক্ষ করছি।
সবকিছু ভালো থেকে ভালোতর হচ্ছে!

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।
মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।
মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।
১২ অক্টোবর ২০২১
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।
১২ অক্টোবর ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।
১২ অক্টোবর ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।
মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।
প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।
কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।
তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।
মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।
প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।
কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।
তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।
১২ অক্টোবর ২০২১
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় কর হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।
৪ দিন আগে
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
২৩ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
২৩ দিন আগে