ইয়াসিন আরাফাত

বিশ্বের যে কটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রয়েছে তার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও চীন অন্যতম। তিনটি দেশেরই পরস্পরের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং সীমান্ত বিরোধও রয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধটি মূলত কাশ্মীর নিয়ে, যা আগেই আলোচনায় এসেছে। কিছুদিন পরপরই এই কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের রাজনীতি। কিন্তু ইদানীং ভারতের সঙ্গে চীনের সংকটও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে এই দুই দেশ এখন প্রতিবেশীর বদলে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বেশি স্বীকৃত।
যত দিন যাচ্ছে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্তবিরোধ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। গত বছর লাদাখ সীমান্ত নিয়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। উভয় পক্ষের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবিরোধ নতুন নয়। এর আগেও এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে শেষ এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সেবার চার ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল অরুণাচল প্রদেশে। আর ১৯৬২ সালে ছোটখাটো একটি যুদ্ধ হয়েছিল এই দুই দেশের মধ্যে। সেই যুদ্ধের পর দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) ঠিক হয়। কিন্তু উভয় পক্ষের কারওই এ ক্ষেত্রে সম্মতি ছিল না। ফলে উত্তেজনাটি ছাইচাপা আগুনের মতো রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছায়াযুদ্ধের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, সামরিক খাতে দুই দেশের ব্যয় বৃদ্ধি এবং সীমান্তে সমর সমাবেশ ও বিক্ষিপ্ত বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা অন্তত এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।
শান্তি থেকে সংঘাতের পথে
আজকের চীন ও ভারতের দিকে তাকালে দুই দেশের মধ্যে থাকা সুদীর্ঘ বন্ধুত্বের সম্পর্ককে বানোয়াট মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্য। এই বন্ধুত্ব গুটিকয় বছরের নয়, ছিল হাজার বছরের। চীনের প্রাচীন সিল্করুট ধরে শুধু পণ্য নয়, শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণীও লেনদেন হয়েছে। ভারত ভূমি থেকে বৌদ্ধ ধর্মের চীন সফর এমনি এমনি হয়নি। জাপানের সাম্রাজ্যবাদ এই দু দেশ এক জোট হয়ে থামিয়েছে। শুধু তাই নয়, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শাসনকে যে কয়েকটি দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে ভারত অন্যতম।
চীন–ভারত বর্তমান যে সংকট, তার শুরু খুব বেশি আগে নয়। এটা আধুনিক সময়ের সংকট। বিশ্বের দুই জনবহুল ও এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ বলা যায় বেশ ভালোভাবেই প্রতিবেশী ধর্ম পালন করছিল। কিন্তু সংকট দেখা দেয় তিব্বত নিয়ে। দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে চীনকে নিজের বৈরী পক্ষ বানায় ভারত। এর পর থেকে এই সম্পর্ক আর কখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
১৯৬২ সালে পূর্ব কাশ্মীরের আকসাই চীন নিয়ে ভারত-চীন যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে ভারত হেরে যায় এবং চীন কাশ্মীরের পূর্বাঞ্চল দখল করে। যুদ্ধে চীনের ৭২২ সেনা এবং ভারতের ১ হাজার ৩৮৩ সেনা নিহত হয়। কিন্তু এ তো শুধু অঙ্কের হিসাব। সম্পর্ক তো আর অঙ্ক দিয়ে চলে না। সে সময় চীনের দখল করা আকসাই চীন দু দেশের সম্পর্কে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, যা আজও শুকায়নি।
এই ষাটের দশকেই ভারতের নানা প্রান্তে শুরু হয় মাওবাদী আন্দোলন। শুরু হয় নকশালবাড়ি আন্দোলন। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে—চীনের চেয়ারম্যান আমার চেয়ারম্যান। এই পরিস্থিতি দু দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। সঙ্গে যুক্ত হয় পাকিস্তানের সমীকরণ। পুরোনো মিত্র ভারতের সঙ্গে বৈরিতার সূত্র ধরে চীন জোট বাঁধে পাকিস্তানের সঙ্গে। ১৯৬৫ সালে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানকে অস্ত্র ও রসদ দিয়ে সরবরাহ করে চীন এই বৈরিতাকে আরও তীব্র করে। একই দশকে চীন ও ভারত আরও একবার মুখোমুখি হয়। তেমন বড় না হলেও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েক বছরের মধ্যে দুটি সংঘাত হওয়া তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। তারপর দু দশকের শান্তি। দুই দেশ ফের মুখোমুখি হয় ১৯৮৭ সালে। মাঝে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনের পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার মতো ছায়াযুদ্ধ তো রয়েছেই।
আবারও শান্তি
আশির দশকে সর্বশেষ মুখোমুখি অবস্থানের পর দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সমর্থ হয়। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দুই দেশে নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে তারা সফলও হয় বলা যায়। এটা এতটাই সফল হয় যে,২০০৮ সালে চীন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত হয়। এই সময়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্কের পরিসরও বাড়ায়। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু ওই যে পুরোনো ক্ষত এবং বিশ্ব মানচিত্রে আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা, তাই এর ছন্দপতন ঘটাল।
ছন্দপতন এবং নতুন করে সংঘাত
কিন্তু এই শান্তির সময়েও উভয় পক্ষ বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে সামরিক স্থাপনা তৈরি অব্যাহত রেখেছিল। মাঝেমধ্যেই এক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করত। কিন্তু শান্তি তো সব সময় থাকে না। চীন বাণিজ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর পুরোনো সিল্করুটকে জাগ্রত করার পদক্ষেপ নেয়। তার আশা ছিল এশিয়ার একটি দেশের এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গী হবে বাকি প্রতিবেশীরা। কিন্তু তত দিনে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেছে। এবং রেওয়াজ মেনেই চীনের ডাকে সাড়া দেয়নি। আর এখান থেকেই শুরু হয় নতুন বৈরিতা, যা প্রথম প্রকাশ্যে এল ২০১৭ সালে। ওই বছর দোকলাম সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ উত্তেজনা সংঘাতে রূপ নেয়।
উত্তেজনার শুরু দোকলাম সীমান্তে চীন সীমান্ত সড়ক সম্প্রসারণের চেষ্টা করলে। তখন হিমালয়-সংলগ্ন লাদাখের বিতর্কিত প্যাংগং লেকে চীনের সেনারা ভারতের সেনাদের উদ্দেশ্য করে পাথর ছোড়ে। তবে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় খুব বড় ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। এর পর তিন বছরের বিরতি। ২০২০ সালের ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আবার সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীনের সেনারা। ওই সংঘর্ষের ঘটনা ভারতের ২০ সেনাকে পিটিয়ে হত্যা করে চীনা সেনারা। তবে প্রথম দিকে চীন হতাহতের খবর স্বীকার করেনি। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাদাখে হওয়া সংঘর্ষে তাদের ৪ সেনা নিহত হয়েছিলেন। ওই সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করে চীন। ভারত অবশ্য দাবি করে চীনের আরও বেশি সেনা ক্ষয় হয়েছিল। জুনের সংঘর্ষের পর ভারতের লাদাখ ও চীন-নিয়ন্ত্রিত আকসাই-চীন এলাকায় দু দেশ হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছিল। ভারত ও চীনের মধ্যে মোট ২,১০০ মাইল সীমান্ত রয়েছে, যা বহু জায়গাতেই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ফ্যাক্টর
১৯৯৯-২০০০ সাল সময় থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারটিও রয়েছে। এই সহযোগিতা গত দুই দশকে অনেক দৃঢ় হয়েছে। ভারত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সামরিক জোটের অংশগ্রহণ করেছে। এদিকে গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্ক জটিল হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রকাশ্য বাণিজ্য বিরোধ। ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে তাই চীন মোটেই পছন্দ করেনি। চীন ও ভারতের মধ্যে বৈরিতার এমন একটা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন-ভারত সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আলোকে দেখতে গেলে এই সীমান্ত বিরোধ তাদের মধ্যকার শত্রুতার একটি প্রকাশ মাত্র।
বিরোধ দৃশ্যে থাকা অন্যরা
এই দ্বন্দ্বে দুই দেশের অন্য প্রতিবেশীরাও চুপ থাকেনি। তারাও কোনো না কোনোভাবে এই দ্বন্দ্বে বুঝে, না বুঝে, বা নিরুপায় হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। লাদাখে উত্তেজনার মধ্যেই ভারত সীমান্তের কয়েকটি জায়গা নিজেদের মানচিত্রে ঢুকিয়ে নিয়ে সংসদে নতুন বিল পাস করে নেপাল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, চীনের সমর্থনেই তখন এ কাজ করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি। এ নিয়ে দেশের ভেতরেই বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয় ওলি সরকারকে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী ওলির সুপারিশে প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। একই সঙ্গে নেপালের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর আগে দেশটিতে আগামী ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক সংকটে পড়ে নেপাল। মূলত, ওলির দল এনসিপির মধ্যে বিরোধের জেরে আইনসভা ভেঙে আগাম নির্বাচন ঘোষণার পদক্ষেপটি আসে। ওলির ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে তাঁর দলে বিভক্তি দেখা দেয়। এনসিপি কার্যত দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ওলি নিজে, অন্য পক্ষে পুষ্প কমল দহল।
সমীকরণে অবধারিতভাবেই ঢুকে পড়ে ভুটান। ভুটানের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে একাধিকবার দুই পক্ষ আলোচনায় বসেছে। বিশেষত ২০১৭ সালে দোকলামে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা চলার পর এ নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ে। গত বছরের জুনে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার সময় ভুটানের সঙ্গেও সীমান্ত সংঘাতে জড়ায় চীন। তখন অনেক বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করেন, ভারতকেই চাপে ফেলতে ভুটানের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করছে চীন। তাদের বক্তব্য, ভুটানের সীমান্তে বিতর্ক সৃষ্টি করলে পরোক্ষে তা আসলে ভারতের ওপরই চাপ বাড়াবে।
সমীকরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। উভয় পক্ষই নিজেদের পাশে বাংলাদেশকে চায়। লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ভ্যাকসিন দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে চীন। এই করোনার টিকা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। চলছে ঋণ ও বিনিয়োগ নিয়ে প্রতিযোগিতাও।
সমীকরণে আছে পাকিস্তান। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের কাশগড় থেকে পাকিস্তানের গোয়াদর পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তুলছে বেইজিং ও ইসলামাবাদ। পাকিস্তান-চীনের এই অর্থনৈতিক করিডর আজাদ কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তান এলাকা হয়ে চীন প্রবেশ করছে। এই গিলগিট-বালটিস্তানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে ভারত। আর এ নিয়েই মূলত ভারতের আপত্তি।
সব মিলিয়ে ভারত ও চীন দ্বৈরথে এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান শুধু নয় যুক্তরাষ্ট্র এবং সেই সূত্রে ন্যাটো জোটও এই দ্বৈরথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এক সময় যে দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও সহযোগিতাই ছিল একমাত্র বাস্তবতা, আজ তাকেই মনে হচ্ছে সুদূর। অথচ এই দ্বন্দ্বের ইতিহাস বেশি পুরোনো নয়। চাইলেই নিজেদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু তা মিটছে না। মিটছে না আঞ্চলিক আধিপত্যের আকাঙ্ক্ষার কারণে। উভয় দেশই এশিয়ায় নিজেদের একাধিপত্য চায়। উভয় পক্ষেরই সীমান্ত নিয়ে, বাণিজ্য সাম্য নিয়ে রয়েছে অনেক কিছু বলার। কিন্তু তারা সে কথা আলোচনার টেবিলে কূটনৈতিক ভাষায় না বলে বলছে বুলেটে–ছোরায়। আর এতে সেনাক্ষয় হচ্ছে উভয় পক্ষেরই। এই সেনাক্ষয়ের হিসাব সবার সামনে অঙ্কের মোড়কে এলেও মনে রাখা জরুরি সামরিক পোশাক পরিহিত যারা মারা যাচ্ছে এ সংঘাতে, তাঁরা আদতে মানুষই।
আরও পড়ুন:

বিশ্বের যে কটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রয়েছে তার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও চীন অন্যতম। তিনটি দেশেরই পরস্পরের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং সীমান্ত বিরোধও রয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধটি মূলত কাশ্মীর নিয়ে, যা আগেই আলোচনায় এসেছে। কিছুদিন পরপরই এই কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের রাজনীতি। কিন্তু ইদানীং ভারতের সঙ্গে চীনের সংকটও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে এই দুই দেশ এখন প্রতিবেশীর বদলে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বেশি স্বীকৃত।
যত দিন যাচ্ছে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্তবিরোধ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। গত বছর লাদাখ সীমান্ত নিয়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। উভয় পক্ষের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবিরোধ নতুন নয়। এর আগেও এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে শেষ এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সেবার চার ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল অরুণাচল প্রদেশে। আর ১৯৬২ সালে ছোটখাটো একটি যুদ্ধ হয়েছিল এই দুই দেশের মধ্যে। সেই যুদ্ধের পর দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) ঠিক হয়। কিন্তু উভয় পক্ষের কারওই এ ক্ষেত্রে সম্মতি ছিল না। ফলে উত্তেজনাটি ছাইচাপা আগুনের মতো রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছায়াযুদ্ধের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, সামরিক খাতে দুই দেশের ব্যয় বৃদ্ধি এবং সীমান্তে সমর সমাবেশ ও বিক্ষিপ্ত বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা অন্তত এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।
শান্তি থেকে সংঘাতের পথে
আজকের চীন ও ভারতের দিকে তাকালে দুই দেশের মধ্যে থাকা সুদীর্ঘ বন্ধুত্বের সম্পর্ককে বানোয়াট মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্য। এই বন্ধুত্ব গুটিকয় বছরের নয়, ছিল হাজার বছরের। চীনের প্রাচীন সিল্করুট ধরে শুধু পণ্য নয়, শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণীও লেনদেন হয়েছে। ভারত ভূমি থেকে বৌদ্ধ ধর্মের চীন সফর এমনি এমনি হয়নি। জাপানের সাম্রাজ্যবাদ এই দু দেশ এক জোট হয়ে থামিয়েছে। শুধু তাই নয়, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শাসনকে যে কয়েকটি দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে ভারত অন্যতম।
চীন–ভারত বর্তমান যে সংকট, তার শুরু খুব বেশি আগে নয়। এটা আধুনিক সময়ের সংকট। বিশ্বের দুই জনবহুল ও এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ বলা যায় বেশ ভালোভাবেই প্রতিবেশী ধর্ম পালন করছিল। কিন্তু সংকট দেখা দেয় তিব্বত নিয়ে। দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে চীনকে নিজের বৈরী পক্ষ বানায় ভারত। এর পর থেকে এই সম্পর্ক আর কখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
১৯৬২ সালে পূর্ব কাশ্মীরের আকসাই চীন নিয়ে ভারত-চীন যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে ভারত হেরে যায় এবং চীন কাশ্মীরের পূর্বাঞ্চল দখল করে। যুদ্ধে চীনের ৭২২ সেনা এবং ভারতের ১ হাজার ৩৮৩ সেনা নিহত হয়। কিন্তু এ তো শুধু অঙ্কের হিসাব। সম্পর্ক তো আর অঙ্ক দিয়ে চলে না। সে সময় চীনের দখল করা আকসাই চীন দু দেশের সম্পর্কে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, যা আজও শুকায়নি।
এই ষাটের দশকেই ভারতের নানা প্রান্তে শুরু হয় মাওবাদী আন্দোলন। শুরু হয় নকশালবাড়ি আন্দোলন। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে—চীনের চেয়ারম্যান আমার চেয়ারম্যান। এই পরিস্থিতি দু দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। সঙ্গে যুক্ত হয় পাকিস্তানের সমীকরণ। পুরোনো মিত্র ভারতের সঙ্গে বৈরিতার সূত্র ধরে চীন জোট বাঁধে পাকিস্তানের সঙ্গে। ১৯৬৫ সালে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানকে অস্ত্র ও রসদ দিয়ে সরবরাহ করে চীন এই বৈরিতাকে আরও তীব্র করে। একই দশকে চীন ও ভারত আরও একবার মুখোমুখি হয়। তেমন বড় না হলেও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েক বছরের মধ্যে দুটি সংঘাত হওয়া তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। তারপর দু দশকের শান্তি। দুই দেশ ফের মুখোমুখি হয় ১৯৮৭ সালে। মাঝে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনের পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার মতো ছায়াযুদ্ধ তো রয়েছেই।
আবারও শান্তি
আশির দশকে সর্বশেষ মুখোমুখি অবস্থানের পর দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সমর্থ হয়। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দুই দেশে নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে তারা সফলও হয় বলা যায়। এটা এতটাই সফল হয় যে,২০০৮ সালে চীন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত হয়। এই সময়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্কের পরিসরও বাড়ায়। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু ওই যে পুরোনো ক্ষত এবং বিশ্ব মানচিত্রে আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা, তাই এর ছন্দপতন ঘটাল।
ছন্দপতন এবং নতুন করে সংঘাত
কিন্তু এই শান্তির সময়েও উভয় পক্ষ বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে সামরিক স্থাপনা তৈরি অব্যাহত রেখেছিল। মাঝেমধ্যেই এক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করত। কিন্তু শান্তি তো সব সময় থাকে না। চীন বাণিজ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর পুরোনো সিল্করুটকে জাগ্রত করার পদক্ষেপ নেয়। তার আশা ছিল এশিয়ার একটি দেশের এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গী হবে বাকি প্রতিবেশীরা। কিন্তু তত দিনে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেছে। এবং রেওয়াজ মেনেই চীনের ডাকে সাড়া দেয়নি। আর এখান থেকেই শুরু হয় নতুন বৈরিতা, যা প্রথম প্রকাশ্যে এল ২০১৭ সালে। ওই বছর দোকলাম সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ উত্তেজনা সংঘাতে রূপ নেয়।
উত্তেজনার শুরু দোকলাম সীমান্তে চীন সীমান্ত সড়ক সম্প্রসারণের চেষ্টা করলে। তখন হিমালয়-সংলগ্ন লাদাখের বিতর্কিত প্যাংগং লেকে চীনের সেনারা ভারতের সেনাদের উদ্দেশ্য করে পাথর ছোড়ে। তবে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় খুব বড় ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। এর পর তিন বছরের বিরতি। ২০২০ সালের ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আবার সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীনের সেনারা। ওই সংঘর্ষের ঘটনা ভারতের ২০ সেনাকে পিটিয়ে হত্যা করে চীনা সেনারা। তবে প্রথম দিকে চীন হতাহতের খবর স্বীকার করেনি। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাদাখে হওয়া সংঘর্ষে তাদের ৪ সেনা নিহত হয়েছিলেন। ওই সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করে চীন। ভারত অবশ্য দাবি করে চীনের আরও বেশি সেনা ক্ষয় হয়েছিল। জুনের সংঘর্ষের পর ভারতের লাদাখ ও চীন-নিয়ন্ত্রিত আকসাই-চীন এলাকায় দু দেশ হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছিল। ভারত ও চীনের মধ্যে মোট ২,১০০ মাইল সীমান্ত রয়েছে, যা বহু জায়গাতেই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ফ্যাক্টর
১৯৯৯-২০০০ সাল সময় থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারটিও রয়েছে। এই সহযোগিতা গত দুই দশকে অনেক দৃঢ় হয়েছে। ভারত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সামরিক জোটের অংশগ্রহণ করেছে। এদিকে গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্ক জটিল হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রকাশ্য বাণিজ্য বিরোধ। ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে তাই চীন মোটেই পছন্দ করেনি। চীন ও ভারতের মধ্যে বৈরিতার এমন একটা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন-ভারত সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আলোকে দেখতে গেলে এই সীমান্ত বিরোধ তাদের মধ্যকার শত্রুতার একটি প্রকাশ মাত্র।
বিরোধ দৃশ্যে থাকা অন্যরা
এই দ্বন্দ্বে দুই দেশের অন্য প্রতিবেশীরাও চুপ থাকেনি। তারাও কোনো না কোনোভাবে এই দ্বন্দ্বে বুঝে, না বুঝে, বা নিরুপায় হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। লাদাখে উত্তেজনার মধ্যেই ভারত সীমান্তের কয়েকটি জায়গা নিজেদের মানচিত্রে ঢুকিয়ে নিয়ে সংসদে নতুন বিল পাস করে নেপাল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, চীনের সমর্থনেই তখন এ কাজ করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি। এ নিয়ে দেশের ভেতরেই বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয় ওলি সরকারকে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী ওলির সুপারিশে প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। একই সঙ্গে নেপালের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর আগে দেশটিতে আগামী ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক সংকটে পড়ে নেপাল। মূলত, ওলির দল এনসিপির মধ্যে বিরোধের জেরে আইনসভা ভেঙে আগাম নির্বাচন ঘোষণার পদক্ষেপটি আসে। ওলির ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে তাঁর দলে বিভক্তি দেখা দেয়। এনসিপি কার্যত দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ওলি নিজে, অন্য পক্ষে পুষ্প কমল দহল।
সমীকরণে অবধারিতভাবেই ঢুকে পড়ে ভুটান। ভুটানের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে একাধিকবার দুই পক্ষ আলোচনায় বসেছে। বিশেষত ২০১৭ সালে দোকলামে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা চলার পর এ নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ে। গত বছরের জুনে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার সময় ভুটানের সঙ্গেও সীমান্ত সংঘাতে জড়ায় চীন। তখন অনেক বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করেন, ভারতকেই চাপে ফেলতে ভুটানের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করছে চীন। তাদের বক্তব্য, ভুটানের সীমান্তে বিতর্ক সৃষ্টি করলে পরোক্ষে তা আসলে ভারতের ওপরই চাপ বাড়াবে।
সমীকরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। উভয় পক্ষই নিজেদের পাশে বাংলাদেশকে চায়। লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ভ্যাকসিন দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে চীন। এই করোনার টিকা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। চলছে ঋণ ও বিনিয়োগ নিয়ে প্রতিযোগিতাও।
সমীকরণে আছে পাকিস্তান। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের কাশগড় থেকে পাকিস্তানের গোয়াদর পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তুলছে বেইজিং ও ইসলামাবাদ। পাকিস্তান-চীনের এই অর্থনৈতিক করিডর আজাদ কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তান এলাকা হয়ে চীন প্রবেশ করছে। এই গিলগিট-বালটিস্তানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে ভারত। আর এ নিয়েই মূলত ভারতের আপত্তি।
সব মিলিয়ে ভারত ও চীন দ্বৈরথে এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান শুধু নয় যুক্তরাষ্ট্র এবং সেই সূত্রে ন্যাটো জোটও এই দ্বৈরথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এক সময় যে দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও সহযোগিতাই ছিল একমাত্র বাস্তবতা, আজ তাকেই মনে হচ্ছে সুদূর। অথচ এই দ্বন্দ্বের ইতিহাস বেশি পুরোনো নয়। চাইলেই নিজেদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু তা মিটছে না। মিটছে না আঞ্চলিক আধিপত্যের আকাঙ্ক্ষার কারণে। উভয় দেশই এশিয়ায় নিজেদের একাধিপত্য চায়। উভয় পক্ষেরই সীমান্ত নিয়ে, বাণিজ্য সাম্য নিয়ে রয়েছে অনেক কিছু বলার। কিন্তু তারা সে কথা আলোচনার টেবিলে কূটনৈতিক ভাষায় না বলে বলছে বুলেটে–ছোরায়। আর এতে সেনাক্ষয় হচ্ছে উভয় পক্ষেরই। এই সেনাক্ষয়ের হিসাব সবার সামনে অঙ্কের মোড়কে এলেও মনে রাখা জরুরি সামরিক পোশাক পরিহিত যারা মারা যাচ্ছে এ সংঘাতে, তাঁরা আদতে মানুষই।
আরও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

চীন–ভারত বর্তমান যে সংকট, তার শুরু খুব বেশি আগে নয়। এটা আধুনিক সময়ের সংকট। বিশ্বের দুই জনবহুল ও এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ বলা যায় বেশ ভালোভাবেই প্রতিবেশী ধর্ম পালন করছিল।
০৫ জুলাই ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

চীন–ভারত বর্তমান যে সংকট, তার শুরু খুব বেশি আগে নয়। এটা আধুনিক সময়ের সংকট। বিশ্বের দুই জনবহুল ও এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ বলা যায় বেশ ভালোভাবেই প্রতিবেশী ধর্ম পালন করছিল।
০৫ জুলাই ২০২১
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

চীন–ভারত বর্তমান যে সংকট, তার শুরু খুব বেশি আগে নয়। এটা আধুনিক সময়ের সংকট। বিশ্বের দুই জনবহুল ও এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ বলা যায় বেশ ভালোভাবেই প্রতিবেশী ধর্ম পালন করছিল।
০৫ জুলাই ২০২১
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৪ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চীন–ভারত বর্তমান যে সংকট, তার শুরু খুব বেশি আগে নয়। এটা আধুনিক সময়ের সংকট। বিশ্বের দুই জনবহুল ও এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ বলা যায় বেশ ভালোভাবেই প্রতিবেশী ধর্ম পালন করছিল।
০৫ জুলাই ২০২১
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৫ দিন আগে