ইয়াসিন আরাফাত
বিশ্বের যে কটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রয়েছে তার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও চীন অন্যতম। তিনটি দেশেরই পরস্পরের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং সীমান্ত বিরোধও রয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধটি মূলত কাশ্মীর নিয়ে, যা আগেই আলোচনায় এসেছে। কিছুদিন পরপরই এই কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের রাজনীতি। কিন্তু ইদানীং ভারতের সঙ্গে চীনের সংকটও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে এই দুই দেশ এখন প্রতিবেশীর বদলে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বেশি স্বীকৃত।
যত দিন যাচ্ছে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্তবিরোধ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। গত বছর লাদাখ সীমান্ত নিয়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। উভয় পক্ষের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবিরোধ নতুন নয়। এর আগেও এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে শেষ এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সেবার চার ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল অরুণাচল প্রদেশে। আর ১৯৬২ সালে ছোটখাটো একটি যুদ্ধ হয়েছিল এই দুই দেশের মধ্যে। সেই যুদ্ধের পর দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) ঠিক হয়। কিন্তু উভয় পক্ষের কারওই এ ক্ষেত্রে সম্মতি ছিল না। ফলে উত্তেজনাটি ছাইচাপা আগুনের মতো রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছায়াযুদ্ধের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, সামরিক খাতে দুই দেশের ব্যয় বৃদ্ধি এবং সীমান্তে সমর সমাবেশ ও বিক্ষিপ্ত বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা অন্তত এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।
শান্তি থেকে সংঘাতের পথে
আজকের চীন ও ভারতের দিকে তাকালে দুই দেশের মধ্যে থাকা সুদীর্ঘ বন্ধুত্বের সম্পর্ককে বানোয়াট মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্য। এই বন্ধুত্ব গুটিকয় বছরের নয়, ছিল হাজার বছরের। চীনের প্রাচীন সিল্করুট ধরে শুধু পণ্য নয়, শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণীও লেনদেন হয়েছে। ভারত ভূমি থেকে বৌদ্ধ ধর্মের চীন সফর এমনি এমনি হয়নি। জাপানের সাম্রাজ্যবাদ এই দু দেশ এক জোট হয়ে থামিয়েছে। শুধু তাই নয়, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শাসনকে যে কয়েকটি দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে ভারত অন্যতম।
চীন–ভারত বর্তমান যে সংকট, তার শুরু খুব বেশি আগে নয়। এটা আধুনিক সময়ের সংকট। বিশ্বের দুই জনবহুল ও এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ বলা যায় বেশ ভালোভাবেই প্রতিবেশী ধর্ম পালন করছিল। কিন্তু সংকট দেখা দেয় তিব্বত নিয়ে। দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে চীনকে নিজের বৈরী পক্ষ বানায় ভারত। এর পর থেকে এই সম্পর্ক আর কখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
১৯৬২ সালে পূর্ব কাশ্মীরের আকসাই চীন নিয়ে ভারত-চীন যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে ভারত হেরে যায় এবং চীন কাশ্মীরের পূর্বাঞ্চল দখল করে। যুদ্ধে চীনের ৭২২ সেনা এবং ভারতের ১ হাজার ৩৮৩ সেনা নিহত হয়। কিন্তু এ তো শুধু অঙ্কের হিসাব। সম্পর্ক তো আর অঙ্ক দিয়ে চলে না। সে সময় চীনের দখল করা আকসাই চীন দু দেশের সম্পর্কে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, যা আজও শুকায়নি।
এই ষাটের দশকেই ভারতের নানা প্রান্তে শুরু হয় মাওবাদী আন্দোলন। শুরু হয় নকশালবাড়ি আন্দোলন। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে—চীনের চেয়ারম্যান আমার চেয়ারম্যান। এই পরিস্থিতি দু দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। সঙ্গে যুক্ত হয় পাকিস্তানের সমীকরণ। পুরোনো মিত্র ভারতের সঙ্গে বৈরিতার সূত্র ধরে চীন জোট বাঁধে পাকিস্তানের সঙ্গে। ১৯৬৫ সালে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানকে অস্ত্র ও রসদ দিয়ে সরবরাহ করে চীন এই বৈরিতাকে আরও তীব্র করে। একই দশকে চীন ও ভারত আরও একবার মুখোমুখি হয়। তেমন বড় না হলেও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েক বছরের মধ্যে দুটি সংঘাত হওয়া তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। তারপর দু দশকের শান্তি। দুই দেশ ফের মুখোমুখি হয় ১৯৮৭ সালে। মাঝে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনের পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার মতো ছায়াযুদ্ধ তো রয়েছেই।
আবারও শান্তি
আশির দশকে সর্বশেষ মুখোমুখি অবস্থানের পর দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সমর্থ হয়। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দুই দেশে নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে তারা সফলও হয় বলা যায়। এটা এতটাই সফল হয় যে,২০০৮ সালে চীন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত হয়। এই সময়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্কের পরিসরও বাড়ায়। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু ওই যে পুরোনো ক্ষত এবং বিশ্ব মানচিত্রে আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা, তাই এর ছন্দপতন ঘটাল।
ছন্দপতন এবং নতুন করে সংঘাত
কিন্তু এই শান্তির সময়েও উভয় পক্ষ বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে সামরিক স্থাপনা তৈরি অব্যাহত রেখেছিল। মাঝেমধ্যেই এক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করত। কিন্তু শান্তি তো সব সময় থাকে না। চীন বাণিজ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর পুরোনো সিল্করুটকে জাগ্রত করার পদক্ষেপ নেয়। তার আশা ছিল এশিয়ার একটি দেশের এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গী হবে বাকি প্রতিবেশীরা। কিন্তু তত দিনে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেছে। এবং রেওয়াজ মেনেই চীনের ডাকে সাড়া দেয়নি। আর এখান থেকেই শুরু হয় নতুন বৈরিতা, যা প্রথম প্রকাশ্যে এল ২০১৭ সালে। ওই বছর দোকলাম সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ উত্তেজনা সংঘাতে রূপ নেয়।
উত্তেজনার শুরু দোকলাম সীমান্তে চীন সীমান্ত সড়ক সম্প্রসারণের চেষ্টা করলে। তখন হিমালয়-সংলগ্ন লাদাখের বিতর্কিত প্যাংগং লেকে চীনের সেনারা ভারতের সেনাদের উদ্দেশ্য করে পাথর ছোড়ে। তবে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় খুব বড় ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। এর পর তিন বছরের বিরতি। ২০২০ সালের ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আবার সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীনের সেনারা। ওই সংঘর্ষের ঘটনা ভারতের ২০ সেনাকে পিটিয়ে হত্যা করে চীনা সেনারা। তবে প্রথম দিকে চীন হতাহতের খবর স্বীকার করেনি। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাদাখে হওয়া সংঘর্ষে তাদের ৪ সেনা নিহত হয়েছিলেন। ওই সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করে চীন। ভারত অবশ্য দাবি করে চীনের আরও বেশি সেনা ক্ষয় হয়েছিল। জুনের সংঘর্ষের পর ভারতের লাদাখ ও চীন-নিয়ন্ত্রিত আকসাই-চীন এলাকায় দু দেশ হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছিল। ভারত ও চীনের মধ্যে মোট ২,১০০ মাইল সীমান্ত রয়েছে, যা বহু জায়গাতেই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ফ্যাক্টর
১৯৯৯-২০০০ সাল সময় থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারটিও রয়েছে। এই সহযোগিতা গত দুই দশকে অনেক দৃঢ় হয়েছে। ভারত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সামরিক জোটের অংশগ্রহণ করেছে। এদিকে গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্ক জটিল হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রকাশ্য বাণিজ্য বিরোধ। ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে তাই চীন মোটেই পছন্দ করেনি। চীন ও ভারতের মধ্যে বৈরিতার এমন একটা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন-ভারত সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আলোকে দেখতে গেলে এই সীমান্ত বিরোধ তাদের মধ্যকার শত্রুতার একটি প্রকাশ মাত্র।
বিরোধ দৃশ্যে থাকা অন্যরা
এই দ্বন্দ্বে দুই দেশের অন্য প্রতিবেশীরাও চুপ থাকেনি। তারাও কোনো না কোনোভাবে এই দ্বন্দ্বে বুঝে, না বুঝে, বা নিরুপায় হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। লাদাখে উত্তেজনার মধ্যেই ভারত সীমান্তের কয়েকটি জায়গা নিজেদের মানচিত্রে ঢুকিয়ে নিয়ে সংসদে নতুন বিল পাস করে নেপাল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, চীনের সমর্থনেই তখন এ কাজ করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি। এ নিয়ে দেশের ভেতরেই বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয় ওলি সরকারকে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী ওলির সুপারিশে প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। একই সঙ্গে নেপালের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর আগে দেশটিতে আগামী ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক সংকটে পড়ে নেপাল। মূলত, ওলির দল এনসিপির মধ্যে বিরোধের জেরে আইনসভা ভেঙে আগাম নির্বাচন ঘোষণার পদক্ষেপটি আসে। ওলির ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে তাঁর দলে বিভক্তি দেখা দেয়। এনসিপি কার্যত দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ওলি নিজে, অন্য পক্ষে পুষ্প কমল দহল।
সমীকরণে অবধারিতভাবেই ঢুকে পড়ে ভুটান। ভুটানের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে একাধিকবার দুই পক্ষ আলোচনায় বসেছে। বিশেষত ২০১৭ সালে দোকলামে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা চলার পর এ নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ে। গত বছরের জুনে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার সময় ভুটানের সঙ্গেও সীমান্ত সংঘাতে জড়ায় চীন। তখন অনেক বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করেন, ভারতকেই চাপে ফেলতে ভুটানের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করছে চীন। তাদের বক্তব্য, ভুটানের সীমান্তে বিতর্ক সৃষ্টি করলে পরোক্ষে তা আসলে ভারতের ওপরই চাপ বাড়াবে।
সমীকরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। উভয় পক্ষই নিজেদের পাশে বাংলাদেশকে চায়। লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ভ্যাকসিন দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে চীন। এই করোনার টিকা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। চলছে ঋণ ও বিনিয়োগ নিয়ে প্রতিযোগিতাও।
সমীকরণে আছে পাকিস্তান। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের কাশগড় থেকে পাকিস্তানের গোয়াদর পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তুলছে বেইজিং ও ইসলামাবাদ। পাকিস্তান-চীনের এই অর্থনৈতিক করিডর আজাদ কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তান এলাকা হয়ে চীন প্রবেশ করছে। এই গিলগিট-বালটিস্তানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে ভারত। আর এ নিয়েই মূলত ভারতের আপত্তি।
সব মিলিয়ে ভারত ও চীন দ্বৈরথে এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান শুধু নয় যুক্তরাষ্ট্র এবং সেই সূত্রে ন্যাটো জোটও এই দ্বৈরথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এক সময় যে দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও সহযোগিতাই ছিল একমাত্র বাস্তবতা, আজ তাকেই মনে হচ্ছে সুদূর। অথচ এই দ্বন্দ্বের ইতিহাস বেশি পুরোনো নয়। চাইলেই নিজেদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু তা মিটছে না। মিটছে না আঞ্চলিক আধিপত্যের আকাঙ্ক্ষার কারণে। উভয় দেশই এশিয়ায় নিজেদের একাধিপত্য চায়। উভয় পক্ষেরই সীমান্ত নিয়ে, বাণিজ্য সাম্য নিয়ে রয়েছে অনেক কিছু বলার। কিন্তু তারা সে কথা আলোচনার টেবিলে কূটনৈতিক ভাষায় না বলে বলছে বুলেটে–ছোরায়। আর এতে সেনাক্ষয় হচ্ছে উভয় পক্ষেরই। এই সেনাক্ষয়ের হিসাব সবার সামনে অঙ্কের মোড়কে এলেও মনে রাখা জরুরি সামরিক পোশাক পরিহিত যারা মারা যাচ্ছে এ সংঘাতে, তাঁরা আদতে মানুষই।
আরও পড়ুন:
বিশ্বের যে কটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রয়েছে তার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও চীন অন্যতম। তিনটি দেশেরই পরস্পরের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং সীমান্ত বিরোধও রয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধটি মূলত কাশ্মীর নিয়ে, যা আগেই আলোচনায় এসেছে। কিছুদিন পরপরই এই কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের রাজনীতি। কিন্তু ইদানীং ভারতের সঙ্গে চীনের সংকটও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে এই দুই দেশ এখন প্রতিবেশীর বদলে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বেশি স্বীকৃত।
যত দিন যাচ্ছে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্তবিরোধ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। গত বছর লাদাখ সীমান্ত নিয়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। উভয় পক্ষের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবিরোধ নতুন নয়। এর আগেও এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে শেষ এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সেবার চার ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল অরুণাচল প্রদেশে। আর ১৯৬২ সালে ছোটখাটো একটি যুদ্ধ হয়েছিল এই দুই দেশের মধ্যে। সেই যুদ্ধের পর দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) ঠিক হয়। কিন্তু উভয় পক্ষের কারওই এ ক্ষেত্রে সম্মতি ছিল না। ফলে উত্তেজনাটি ছাইচাপা আগুনের মতো রয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছায়াযুদ্ধের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, সামরিক খাতে দুই দেশের ব্যয় বৃদ্ধি এবং সীমান্তে সমর সমাবেশ ও বিক্ষিপ্ত বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা অন্তত এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।
শান্তি থেকে সংঘাতের পথে
আজকের চীন ও ভারতের দিকে তাকালে দুই দেশের মধ্যে থাকা সুদীর্ঘ বন্ধুত্বের সম্পর্ককে বানোয়াট মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্য। এই বন্ধুত্ব গুটিকয় বছরের নয়, ছিল হাজার বছরের। চীনের প্রাচীন সিল্করুট ধরে শুধু পণ্য নয়, শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণীও লেনদেন হয়েছে। ভারত ভূমি থেকে বৌদ্ধ ধর্মের চীন সফর এমনি এমনি হয়নি। জাপানের সাম্রাজ্যবাদ এই দু দেশ এক জোট হয়ে থামিয়েছে। শুধু তাই নয়, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শাসনকে যে কয়েকটি দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে ভারত অন্যতম।
চীন–ভারত বর্তমান যে সংকট, তার শুরু খুব বেশি আগে নয়। এটা আধুনিক সময়ের সংকট। বিশ্বের দুই জনবহুল ও এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ বলা যায় বেশ ভালোভাবেই প্রতিবেশী ধর্ম পালন করছিল। কিন্তু সংকট দেখা দেয় তিব্বত নিয়ে। দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে চীনকে নিজের বৈরী পক্ষ বানায় ভারত। এর পর থেকে এই সম্পর্ক আর কখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
১৯৬২ সালে পূর্ব কাশ্মীরের আকসাই চীন নিয়ে ভারত-চীন যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে ভারত হেরে যায় এবং চীন কাশ্মীরের পূর্বাঞ্চল দখল করে। যুদ্ধে চীনের ৭২২ সেনা এবং ভারতের ১ হাজার ৩৮৩ সেনা নিহত হয়। কিন্তু এ তো শুধু অঙ্কের হিসাব। সম্পর্ক তো আর অঙ্ক দিয়ে চলে না। সে সময় চীনের দখল করা আকসাই চীন দু দেশের সম্পর্কে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, যা আজও শুকায়নি।
এই ষাটের দশকেই ভারতের নানা প্রান্তে শুরু হয় মাওবাদী আন্দোলন। শুরু হয় নকশালবাড়ি আন্দোলন। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে—চীনের চেয়ারম্যান আমার চেয়ারম্যান। এই পরিস্থিতি দু দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। সঙ্গে যুক্ত হয় পাকিস্তানের সমীকরণ। পুরোনো মিত্র ভারতের সঙ্গে বৈরিতার সূত্র ধরে চীন জোট বাঁধে পাকিস্তানের সঙ্গে। ১৯৬৫ সালে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানকে অস্ত্র ও রসদ দিয়ে সরবরাহ করে চীন এই বৈরিতাকে আরও তীব্র করে। একই দশকে চীন ও ভারত আরও একবার মুখোমুখি হয়। তেমন বড় না হলেও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েক বছরের মধ্যে দুটি সংঘাত হওয়া তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। তারপর দু দশকের শান্তি। দুই দেশ ফের মুখোমুখি হয় ১৯৮৭ সালে। মাঝে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনের পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার মতো ছায়াযুদ্ধ তো রয়েছেই।
আবারও শান্তি
আশির দশকে সর্বশেষ মুখোমুখি অবস্থানের পর দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সমর্থ হয়। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দুই দেশে নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে তারা সফলও হয় বলা যায়। এটা এতটাই সফল হয় যে,২০০৮ সালে চীন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত হয়। এই সময়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্কের পরিসরও বাড়ায়। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু ওই যে পুরোনো ক্ষত এবং বিশ্ব মানচিত্রে আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা, তাই এর ছন্দপতন ঘটাল।
ছন্দপতন এবং নতুন করে সংঘাত
কিন্তু এই শান্তির সময়েও উভয় পক্ষ বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে সামরিক স্থাপনা তৈরি অব্যাহত রেখেছিল। মাঝেমধ্যেই এক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করত। কিন্তু শান্তি তো সব সময় থাকে না। চীন বাণিজ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর পুরোনো সিল্করুটকে জাগ্রত করার পদক্ষেপ নেয়। তার আশা ছিল এশিয়ার একটি দেশের এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গী হবে বাকি প্রতিবেশীরা। কিন্তু তত দিনে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেছে। এবং রেওয়াজ মেনেই চীনের ডাকে সাড়া দেয়নি। আর এখান থেকেই শুরু হয় নতুন বৈরিতা, যা প্রথম প্রকাশ্যে এল ২০১৭ সালে। ওই বছর দোকলাম সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ উত্তেজনা সংঘাতে রূপ নেয়।
উত্তেজনার শুরু দোকলাম সীমান্তে চীন সীমান্ত সড়ক সম্প্রসারণের চেষ্টা করলে। তখন হিমালয়-সংলগ্ন লাদাখের বিতর্কিত প্যাংগং লেকে চীনের সেনারা ভারতের সেনাদের উদ্দেশ্য করে পাথর ছোড়ে। তবে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় খুব বড় ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। এর পর তিন বছরের বিরতি। ২০২০ সালের ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আবার সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীনের সেনারা। ওই সংঘর্ষের ঘটনা ভারতের ২০ সেনাকে পিটিয়ে হত্যা করে চীনা সেনারা। তবে প্রথম দিকে চীন হতাহতের খবর স্বীকার করেনি। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাদাখে হওয়া সংঘর্ষে তাদের ৪ সেনা নিহত হয়েছিলেন। ওই সংঘর্ষের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করে চীন। ভারত অবশ্য দাবি করে চীনের আরও বেশি সেনা ক্ষয় হয়েছিল। জুনের সংঘর্ষের পর ভারতের লাদাখ ও চীন-নিয়ন্ত্রিত আকসাই-চীন এলাকায় দু দেশ হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছিল। ভারত ও চীনের মধ্যে মোট ২,১০০ মাইল সীমান্ত রয়েছে, যা বহু জায়গাতেই সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ফ্যাক্টর
১৯৯৯-২০০০ সাল সময় থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারটিও রয়েছে। এই সহযোগিতা গত দুই দশকে অনেক দৃঢ় হয়েছে। ভারত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সামরিক জোটের অংশগ্রহণ করেছে। এদিকে গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্ক জটিল হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রকাশ্য বাণিজ্য বিরোধ। ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে তাই চীন মোটেই পছন্দ করেনি। চীন ও ভারতের মধ্যে বৈরিতার এমন একটা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন-ভারত সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আলোকে দেখতে গেলে এই সীমান্ত বিরোধ তাদের মধ্যকার শত্রুতার একটি প্রকাশ মাত্র।
বিরোধ দৃশ্যে থাকা অন্যরা
এই দ্বন্দ্বে দুই দেশের অন্য প্রতিবেশীরাও চুপ থাকেনি। তারাও কোনো না কোনোভাবে এই দ্বন্দ্বে বুঝে, না বুঝে, বা নিরুপায় হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। লাদাখে উত্তেজনার মধ্যেই ভারত সীমান্তের কয়েকটি জায়গা নিজেদের মানচিত্রে ঢুকিয়ে নিয়ে সংসদে নতুন বিল পাস করে নেপাল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, চীনের সমর্থনেই তখন এ কাজ করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি। এ নিয়ে দেশের ভেতরেই বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয় ওলি সরকারকে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী ওলির সুপারিশে প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। একই সঙ্গে নেপালের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর আগে দেশটিতে আগামী ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক সংকটে পড়ে নেপাল। মূলত, ওলির দল এনসিপির মধ্যে বিরোধের জেরে আইনসভা ভেঙে আগাম নির্বাচন ঘোষণার পদক্ষেপটি আসে। ওলির ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে তাঁর দলে বিভক্তি দেখা দেয়। এনসিপি কার্যত দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ওলি নিজে, অন্য পক্ষে পুষ্প কমল দহল।
সমীকরণে অবধারিতভাবেই ঢুকে পড়ে ভুটান। ভুটানের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে একাধিকবার দুই পক্ষ আলোচনায় বসেছে। বিশেষত ২০১৭ সালে দোকলামে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা চলার পর এ নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ে। গত বছরের জুনে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার সময় ভুটানের সঙ্গেও সীমান্ত সংঘাতে জড়ায় চীন। তখন অনেক বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করেন, ভারতকেই চাপে ফেলতে ভুটানের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করছে চীন। তাদের বক্তব্য, ভুটানের সীমান্তে বিতর্ক সৃষ্টি করলে পরোক্ষে তা আসলে ভারতের ওপরই চাপ বাড়াবে।
সমীকরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। উভয় পক্ষই নিজেদের পাশে বাংলাদেশকে চায়। লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ভ্যাকসিন দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে চীন। এই করোনার টিকা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। চলছে ঋণ ও বিনিয়োগ নিয়ে প্রতিযোগিতাও।
সমীকরণে আছে পাকিস্তান। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের কাশগড় থেকে পাকিস্তানের গোয়াদর পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তুলছে বেইজিং ও ইসলামাবাদ। পাকিস্তান-চীনের এই অর্থনৈতিক করিডর আজাদ কাশ্মীরের গিলগিট-বাল্টিস্তান এলাকা হয়ে চীন প্রবেশ করছে। এই গিলগিট-বালটিস্তানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে ভারত। আর এ নিয়েই মূলত ভারতের আপত্তি।
সব মিলিয়ে ভারত ও চীন দ্বৈরথে এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান শুধু নয় যুক্তরাষ্ট্র এবং সেই সূত্রে ন্যাটো জোটও এই দ্বৈরথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এক সময় যে দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও সহযোগিতাই ছিল একমাত্র বাস্তবতা, আজ তাকেই মনে হচ্ছে সুদূর। অথচ এই দ্বন্দ্বের ইতিহাস বেশি পুরোনো নয়। চাইলেই নিজেদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু তা মিটছে না। মিটছে না আঞ্চলিক আধিপত্যের আকাঙ্ক্ষার কারণে। উভয় দেশই এশিয়ায় নিজেদের একাধিপত্য চায়। উভয় পক্ষেরই সীমান্ত নিয়ে, বাণিজ্য সাম্য নিয়ে রয়েছে অনেক কিছু বলার। কিন্তু তারা সে কথা আলোচনার টেবিলে কূটনৈতিক ভাষায় না বলে বলছে বুলেটে–ছোরায়। আর এতে সেনাক্ষয় হচ্ছে উভয় পক্ষেরই। এই সেনাক্ষয়ের হিসাব সবার সামনে অঙ্কের মোড়কে এলেও মনে রাখা জরুরি সামরিক পোশাক পরিহিত যারা মারা যাচ্ছে এ সংঘাতে, তাঁরা আদতে মানুষই।
আরও পড়ুন:
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
২০ ঘণ্টা আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
২ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২ দিন আগে