Ajker Patrika

‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’

গুঞ্জন রহমান
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৬
‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’ 

আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’ 

‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’ 

আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’ 

আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’ 

 ‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’ 

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’ 

এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।

কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে! 

ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’ 

শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে? 

রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ। 

 ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’ 

আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত