নার্সের নাম আলা

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে একটি সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হয়ে আবদুল আহাদ গেলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। এর আগেই ঢাকায় থাকতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল তাঁর কিডনিতে পাথর হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেছিলেন, পিজি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করিয়ে দেবেন। কিন্তু আবদুল আহাদ চাইলেন এই অপারেশনটা হোক মস্কোতে। সোভিয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সম্পাদককে বলা হলো ব্যবস্থা নিতে। তাঁরা সেভাবেই স্বাস্থ্য প্রতিবেদন নিয়ে এগোচ্ছিলেন। এ রকম সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের ব্যবস্থা হলো। মস্কো, লেনিনগ্রাদ, তবিলিসি, তাসখন্দ, সমরখন্দ ঘুরে দলটি ফিরে গেল বাংলাদেশে। রয়ে গেলেন আবদুল আহাদ, অপারেশন করাবেন বলে।

মস্কোতে তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামসুর রাহমান, যিনি জনসন নামেই পরিচিত। তিনি খোঁজ নিয়ে জানলেন, বাংলাদেশ থেকেও যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি হয়ে গেছে, এখন রোগীকে ঢাকা থেকে মস্কোয় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জনসন জানালেন, রোগী মস্কোতেই আছেন। হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে বলা হলো, কয়েক দিন সময় লাগবে ভর্তি হতে। তাতে সমস্যা নেই। স্বয়ং রাষ্ট্রদূত নিয়েছেন আবদুল আহাদের ভার।

হাসপাতালের নাম ভৎকিনস। সামান্য কিছু নিয়মকানুন সেরে চারজনের একটা ওয়ার্ডে দেওয়া হলো আবদুল আহাদকে। স্যুট খুলে পরতে বলা হলো হাসপাতালের পোশাক। কিন্তু কত লোক এই পোশাক ব্যবহার করেছে কে জানে। নিজের সুতির সুন্দর একটা রাত্রিবাস দেখিয়ে আবদুল আহাদ বললেন, এটা পরলে অসুবিধা আছে কি না। অনুমতি পেলেন। বাথরুমে গিয়ে দেখেন টয়লেট পেপার নেই। সেটা নাকি রোগীর নিজেরই নিয়ে আসার কথা। ফোন করে আনানো হলো টয়লেট পেপার। 
সেখানে সবচেয়ে কম বয়সী নার্সের নাম আলা। আলা এলেই ঘরটা আনন্দে ভরে যায়। রোগীরা যেন অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায়। আলা সবার সঙ্গেই ভালো ব্যবহার করেন। রুশ ভাষা ছাড়া আর কোনো ভাষা আলা জানেন না।

অপারেশনের পর প্রথম চোখ খুলেই আবদুল আহাদ দেখলেন আলার মুখ। মেয়েটা হাসিমুখে স্যুপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। রুশ ভাষায় বলছে, ‘স্যুপটা খেয়ে নাও।’ চামচে করে স্যুপ তুলে খাইয়ে দিল আলা। 

সূত্র: আবদুল আহাদ, আসা যাওয়ার পথের ধারে, পৃষ্ঠা ১৯৫-১৯৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত