আমিনুল ইসলাম নাবিল
‘আমরা এমন একটি সমাজের জন্য যুদ্ধ করছি যেখানে মানুষের বর্ণ নিয়ে কেউ চিন্তা করবে না।’ নেলসন ম্যান্ডেলার স্বপ্নের সেই সমাজ কি এসেছে? তাঁর এই ১০৩ তম জন্মদিনে দাঁড়িয়ে যদি চারপাশে তাকানো যায়, তবে ভীষণ হতাশভাবে বলতেই হবে—না, সেই সমাজ আসেনি।
আফ্রিকার থেম্বু রাজবংশে জন্ম নেওয়া নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন চিরজীবন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের। সে কথা তিনি রেখেছেন। যেখানেই বর্ণবাদের অস্তিত্ব দেখেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। সে লড়াইয়ে আপাত জয় পেয়ে যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় বসলেন, তখন নিজ প্রশাসনের অধীনে পাল্টা কোনো বৈষম্যের সমীকরণকে বাড়তে দেননি। বর্ণবাদ মানে তো বৈষম্যই। জাতি, ধর্ম, গোত্র, গায়ের রং, নারী–পুরুষ বা লৈঙ্গিক পরিচিতি ইত্যাদি নানা বিচারে কারও প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করাই তো বর্ণবাদ। আফ্রিকার প্রিয় মাদিবা, আমাদের ম্যান্ডেলা যেমনটা বলছেন—‘আমি বর্ণবাদকে ঘৃণা করি। কারণ, এটি একটি বর্বর বিষয়, তা সে কালো বা সাদা যেকোনো মানুষের কাছ থেকেই আসুক না কেন।’ হ্যাঁ, কালো বা সাদা কোনো অর্থেই তিনি বর্ণবাদকে বেড়ে উঠতে দেননি।
আফ্রিকায় বর্ণবাদের শুরুটা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে। এই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সারা জীবন কত সংগ্রাম করে গেছেন কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। শুরুটা হয়েছিল বোর্ডিং স্কুল শেষে তরুণ ম্যান্ডেলা যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ফোর্ট হেয়ারে ভর্তি হলেন, তখন। কর্তৃপক্ষের বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে সেখানে তিনি বিদ্রোহ করেন। সেই শুরু, তারপর বহু সংগ্রামে জড়িয়েছেন। এর জেরে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের মতো বিষয়গুলোর পুনরুল্লেখ এখন কিছুটা বাতুলতা বলে মনে হতে পারে। বরং দেখা যাক, যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর আজীবনের লড়াই, যার বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে আরেক কিংবদন্তি নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র প্রাণ দিলেন, সেই ধারণাটির কী হলো।
তবু মানুষের মনে হাজার বছর ধরে যে বিষ প্রবেশ করেছে, তার নিদান কি সহজে হয়? হয় না। হয়নি। তাই এখনো দেশে দেশে বর্ণবাদের অস্তিত্ব আমরা দেখি। এ ক্ষেত্রে ‘সুসভ্য’ বলে পরিচিত দেশগুলোর অবস্থা দেখেই চমকে উঠতে হয়।
আগেই বলা হয়েছে, বর্ণবাদ কখনো গায়ের চামড়ার রং দিয়ে হতে পারে, কখনো–বা আঞ্চলিকতা, পেশা ও গোত্র দিয়েও হতে পারে। এই তো কয়েক দিন আগের ঘটনা। চলতি বছরের ৮ মার্চ সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্ণবাদী আচরণ সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ব্রিটিশ রাজপুত্র হ্যারির স্ত্রী মেগান মর্কেল। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অনাগত সন্তানের ত্বকের রং কেমন হবে, তা নিয়েও রাজপরিবারের সদস্যেরা তাঁকে কথা শুনিয়েছেন।
মেগান এখানেই থামেননি। তিনি বলেছেন, তাঁকে বলা হয়েছে—ত্বকের রঙের কারণে তাঁর সন্তান আর্চিকে রাজকীয় খেতাব দেওয়া হবে না।
এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে সর্বত্র। একবিংশ শতাব্দীতে এসে ব্রিটিশ রাজ পরিবারে এমন বর্ণবাদী চিন্তাভাবনা বিস্মিত করে সবাইকে।
এর আগে ২০২০ সালের ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড, যা গোটা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। মৃত্যুর আগে বারবার তিনি বলেছিলেন একটি কথা—‘আই কান্ট ব্রিদ’। প্রতিবাদে শুরু হয় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন। ১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের মৃত্যুর পর এটিই যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের প্রতিবাদে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ শুধু যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ইউরোপে। সারা দুনিয়া থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। পুলিশে সংস্কার আনতে বাধ্য হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পুলিশের নির্যাতনে নিহত আফ্রিকান–আমেরিকানদের বিষয়গুলো সামনে আসতে শুরু করে। দেখা যায় পুলিশি নির্যাতনে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। এ সম্পর্কিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহতদের বেশির ভাগই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গরা তিনগুণ বেশি মারা যায়।
বর্ণবাদের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত নয় ক্রীড়াঙ্গনও। ইউরোপীয় ফুটবলে বর্ণবাদের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। ফুটবলের সর্বোচ্চ দুই সংস্থা ফিফা ও উয়েফা ‘সে নো টু রেসিজম’ নামের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেও বর্ণবাদকে ঠেকাতে পারছে না। সর্বশেষ ইউরোর ফাইনালে পেনাল্টি মিস করায় ইংল্যান্ডে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হওয়া ফুটবলারদের প্রসঙ্গ টানলে এর বেঁচেবর্তে থাকাটা আর কোনো গালগল্প মনে হয় না।
ক্রিকেটেও বর্ণবাদ অপরিচিত নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার অ্যান্ডেল ফেলুকায়োকে ‘কালো’ বলে সম্বোধন করে সমালোচিত হয়েছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সারফারাজ। বর্ণবাদ নিয়ে মুখ খুলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার বিশ্বকাপ জেতানো ড্যারেন স্যামি। আইপিএলে খেলার সময় তাঁকে কালু নামে ডাকা হতো। এ ছাড়া বর্ণবাদের শিকার হয়ে অলিম্পিক স্বর্ণপদক ওহাইও নদীতে ছুড়ে ফেলেছিলেন বক্সার মোহাম্মদ আলী।
বর্ণবাদ যেন আজ আমাদের প্রতিটি অন্তরে প্রবেশ করেছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বর্ণবাদ। সভ্যতার এই সময়েও সমাজে অনেকেই বিভিন্নভাবে বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন। ‘কালো’ বলে অনেক মেয়েরই বিয়ের আগে কটুকথা শুনতে হয়। তাই তো তাদের মধ্যে চলে ফরসা হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে গায়ের রং ফরসা করার বাজারের আকার ছিল প্রায় ৪৮০ কোটি ডলার।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এই বাজার ৮৯০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। এসব পণ্য ব্যবহারে ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া, কালশিটে দাগ পড়া ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি এসব পণ্যে থাকা মার্কারির কারণে কিডনির ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবে দেখা গেছে, আফ্রিকাতে প্রতি ১০ জন নারীর চারজন রং ফরসাকারী পণ্য ব্যবহার করে থাকেন।
চলমান করোনা মহামারির সময়ে বর্ণবাদ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক অধিকার বিষয়ক সংস্থা (এফআরএ) চলতি মাসের শুরুতে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘মহামারি এবং এর ফলাফল বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও কঠিন করে তুলেছে। জীবনের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে, বিশেষ করে দুর্বলেরা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এটি (মহামারি) বর্ণবাদী ঘটনা ব্যাপক মাত্রায় বাড়িয়েছে।’
না, ম্যান্ডেলা বা কিং কেউই তাঁদের স্বপ্নরাজ্যের দেখা পাননি। তাঁদের দেখানো স্বপ্নে যারা চোখ রাঙিয়েছিলেন, তাদের দিকে তাকিয়ে এখনো চোখ রাঙাচ্ছে বর্ণবাদের মতো রাক্ষস। এই একুশ শতকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে, আজকের প্রযুক্তির উল্লম্ফনের যুগে তথাকথিত শিল্পোন্নত ও সুসভ্য দেশগুলোয় বর্ণবাদের যে বিষ দেখা যাচ্ছে, তাকে কখনোই হঠাৎ করে চেপে বসা বলা যাবে না। মহামারির সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে চীনাদের (হলদে চামড়া বা ইয়োলো স্কিন) ওপর যেসব হামলা হলো, তার ব্যাখ্যা দিতে গেলে সেই বর্ণবাদের ভূতের দিকেই ফিরে যেতে হয়। আর ভূত মাত্রই উল্টো পা, পেছনে হাঁটা। মানুষ এগিয়েছে বলে যারা গালফোলা মন্তব্য করতে ভালোবাসে, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে নেলসন ম্যান্ডেলার এই ১০৩ তম জন্মদিনে দাঁড়িয়ে নিজের ভেতরবাড়িতে নজর বোলান। সেখানে বর্ণবাদী কোনো বিষ আছে কিনা দেখুন। মনে রাখবেন—বর্ণবাদ শুধু গায়ের বর্ণের কারণে হওয়া বৈষম্যকে বোঝায় না; জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, অঞ্চল বা এলাকা যেকোনো কারণেই কারও প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করলেই তাকে বর্ণবাদ বলে। মাদিবার জন্মদিন আমাদের কাছে অন্তত এটুকু চাইতে পারে।
‘আমরা এমন একটি সমাজের জন্য যুদ্ধ করছি যেখানে মানুষের বর্ণ নিয়ে কেউ চিন্তা করবে না।’ নেলসন ম্যান্ডেলার স্বপ্নের সেই সমাজ কি এসেছে? তাঁর এই ১০৩ তম জন্মদিনে দাঁড়িয়ে যদি চারপাশে তাকানো যায়, তবে ভীষণ হতাশভাবে বলতেই হবে—না, সেই সমাজ আসেনি।
আফ্রিকার থেম্বু রাজবংশে জন্ম নেওয়া নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন চিরজীবন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের। সে কথা তিনি রেখেছেন। যেখানেই বর্ণবাদের অস্তিত্ব দেখেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। সে লড়াইয়ে আপাত জয় পেয়ে যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় বসলেন, তখন নিজ প্রশাসনের অধীনে পাল্টা কোনো বৈষম্যের সমীকরণকে বাড়তে দেননি। বর্ণবাদ মানে তো বৈষম্যই। জাতি, ধর্ম, গোত্র, গায়ের রং, নারী–পুরুষ বা লৈঙ্গিক পরিচিতি ইত্যাদি নানা বিচারে কারও প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করাই তো বর্ণবাদ। আফ্রিকার প্রিয় মাদিবা, আমাদের ম্যান্ডেলা যেমনটা বলছেন—‘আমি বর্ণবাদকে ঘৃণা করি। কারণ, এটি একটি বর্বর বিষয়, তা সে কালো বা সাদা যেকোনো মানুষের কাছ থেকেই আসুক না কেন।’ হ্যাঁ, কালো বা সাদা কোনো অর্থেই তিনি বর্ণবাদকে বেড়ে উঠতে দেননি।
আফ্রিকায় বর্ণবাদের শুরুটা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে। এই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সারা জীবন কত সংগ্রাম করে গেছেন কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। শুরুটা হয়েছিল বোর্ডিং স্কুল শেষে তরুণ ম্যান্ডেলা যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ফোর্ট হেয়ারে ভর্তি হলেন, তখন। কর্তৃপক্ষের বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে সেখানে তিনি বিদ্রোহ করেন। সেই শুরু, তারপর বহু সংগ্রামে জড়িয়েছেন। এর জেরে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের মতো বিষয়গুলোর পুনরুল্লেখ এখন কিছুটা বাতুলতা বলে মনে হতে পারে। বরং দেখা যাক, যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর আজীবনের লড়াই, যার বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে আরেক কিংবদন্তি নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র প্রাণ দিলেন, সেই ধারণাটির কী হলো।
তবু মানুষের মনে হাজার বছর ধরে যে বিষ প্রবেশ করেছে, তার নিদান কি সহজে হয়? হয় না। হয়নি। তাই এখনো দেশে দেশে বর্ণবাদের অস্তিত্ব আমরা দেখি। এ ক্ষেত্রে ‘সুসভ্য’ বলে পরিচিত দেশগুলোর অবস্থা দেখেই চমকে উঠতে হয়।
আগেই বলা হয়েছে, বর্ণবাদ কখনো গায়ের চামড়ার রং দিয়ে হতে পারে, কখনো–বা আঞ্চলিকতা, পেশা ও গোত্র দিয়েও হতে পারে। এই তো কয়েক দিন আগের ঘটনা। চলতি বছরের ৮ মার্চ সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্ণবাদী আচরণ সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ব্রিটিশ রাজপুত্র হ্যারির স্ত্রী মেগান মর্কেল। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অনাগত সন্তানের ত্বকের রং কেমন হবে, তা নিয়েও রাজপরিবারের সদস্যেরা তাঁকে কথা শুনিয়েছেন।
মেগান এখানেই থামেননি। তিনি বলেছেন, তাঁকে বলা হয়েছে—ত্বকের রঙের কারণে তাঁর সন্তান আর্চিকে রাজকীয় খেতাব দেওয়া হবে না।
এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে সর্বত্র। একবিংশ শতাব্দীতে এসে ব্রিটিশ রাজ পরিবারে এমন বর্ণবাদী চিন্তাভাবনা বিস্মিত করে সবাইকে।
এর আগে ২০২০ সালের ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড, যা গোটা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। মৃত্যুর আগে বারবার তিনি বলেছিলেন একটি কথা—‘আই কান্ট ব্রিদ’। প্রতিবাদে শুরু হয় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন। ১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের মৃত্যুর পর এটিই যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের প্রতিবাদে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ শুধু যুক্তরাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ইউরোপে। সারা দুনিয়া থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। পুলিশে সংস্কার আনতে বাধ্য হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পুলিশের নির্যাতনে নিহত আফ্রিকান–আমেরিকানদের বিষয়গুলো সামনে আসতে শুরু করে। দেখা যায় পুলিশি নির্যাতনে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। এ সম্পর্কিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহতদের বেশির ভাগই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গরা তিনগুণ বেশি মারা যায়।
বর্ণবাদের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত নয় ক্রীড়াঙ্গনও। ইউরোপীয় ফুটবলে বর্ণবাদের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। ফুটবলের সর্বোচ্চ দুই সংস্থা ফিফা ও উয়েফা ‘সে নো টু রেসিজম’ নামের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেও বর্ণবাদকে ঠেকাতে পারছে না। সর্বশেষ ইউরোর ফাইনালে পেনাল্টি মিস করায় ইংল্যান্ডে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হওয়া ফুটবলারদের প্রসঙ্গ টানলে এর বেঁচেবর্তে থাকাটা আর কোনো গালগল্প মনে হয় না।
ক্রিকেটেও বর্ণবাদ অপরিচিত নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার অ্যান্ডেল ফেলুকায়োকে ‘কালো’ বলে সম্বোধন করে সমালোচিত হয়েছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সারফারাজ। বর্ণবাদ নিয়ে মুখ খুলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার বিশ্বকাপ জেতানো ড্যারেন স্যামি। আইপিএলে খেলার সময় তাঁকে কালু নামে ডাকা হতো। এ ছাড়া বর্ণবাদের শিকার হয়ে অলিম্পিক স্বর্ণপদক ওহাইও নদীতে ছুড়ে ফেলেছিলেন বক্সার মোহাম্মদ আলী।
বর্ণবাদ যেন আজ আমাদের প্রতিটি অন্তরে প্রবেশ করেছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বর্ণবাদ। সভ্যতার এই সময়েও সমাজে অনেকেই বিভিন্নভাবে বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন। ‘কালো’ বলে অনেক মেয়েরই বিয়ের আগে কটুকথা শুনতে হয়। তাই তো তাদের মধ্যে চলে ফরসা হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে গায়ের রং ফরসা করার বাজারের আকার ছিল প্রায় ৪৮০ কোটি ডলার।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এই বাজার ৮৯০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। এসব পণ্য ব্যবহারে ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া, কালশিটে দাগ পড়া ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি এসব পণ্যে থাকা মার্কারির কারণে কিডনির ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবে দেখা গেছে, আফ্রিকাতে প্রতি ১০ জন নারীর চারজন রং ফরসাকারী পণ্য ব্যবহার করে থাকেন।
চলমান করোনা মহামারির সময়ে বর্ণবাদ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক অধিকার বিষয়ক সংস্থা (এফআরএ) চলতি মাসের শুরুতে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘মহামারি এবং এর ফলাফল বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও কঠিন করে তুলেছে। জীবনের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে, বিশেষ করে দুর্বলেরা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এটি (মহামারি) বর্ণবাদী ঘটনা ব্যাপক মাত্রায় বাড়িয়েছে।’
না, ম্যান্ডেলা বা কিং কেউই তাঁদের স্বপ্নরাজ্যের দেখা পাননি। তাঁদের দেখানো স্বপ্নে যারা চোখ রাঙিয়েছিলেন, তাদের দিকে তাকিয়ে এখনো চোখ রাঙাচ্ছে বর্ণবাদের মতো রাক্ষস। এই একুশ শতকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে, আজকের প্রযুক্তির উল্লম্ফনের যুগে তথাকথিত শিল্পোন্নত ও সুসভ্য দেশগুলোয় বর্ণবাদের যে বিষ দেখা যাচ্ছে, তাকে কখনোই হঠাৎ করে চেপে বসা বলা যাবে না। মহামারির সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে চীনাদের (হলদে চামড়া বা ইয়োলো স্কিন) ওপর যেসব হামলা হলো, তার ব্যাখ্যা দিতে গেলে সেই বর্ণবাদের ভূতের দিকেই ফিরে যেতে হয়। আর ভূত মাত্রই উল্টো পা, পেছনে হাঁটা। মানুষ এগিয়েছে বলে যারা গালফোলা মন্তব্য করতে ভালোবাসে, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে নেলসন ম্যান্ডেলার এই ১০৩ তম জন্মদিনে দাঁড়িয়ে নিজের ভেতরবাড়িতে নজর বোলান। সেখানে বর্ণবাদী কোনো বিষ আছে কিনা দেখুন। মনে রাখবেন—বর্ণবাদ শুধু গায়ের বর্ণের কারণে হওয়া বৈষম্যকে বোঝায় না; জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, অঞ্চল বা এলাকা যেকোনো কারণেই কারও প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করলেই তাকে বর্ণবাদ বলে। মাদিবার জন্মদিন আমাদের কাছে অন্তত এটুকু চাইতে পারে।
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৩ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে